গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা জানালেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পোল্যান্ড ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক পাঠালে জার্মানি তাতে নাক গলাবে না।
বিজ্ঞাপন
জার্মানির তৈরি লিওপার্ড দুই ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে পাঠাতে আর কোনো বাধা থাকল না। জার্মানি জানিয়ে দিয়েছে, পোল্যান্ড ইউক্রেনকে ওই ট্যাঙ্ক পাঠালে জার্মানি আপত্তি করবে না। বস্তুত, অনেক দিন আগেই পোল্যান্ড ওই ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু জার্মানি অনুমতি না দিলে তা পাঠানো সম্ভব হচ্ছিল না। রোববারজার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক জানিয়ে দিয়েছেন, পোল্যান্ড পাঠাতে চাইলে জার্মানি তাতে নাক গলাবে না।
ইউক্রেনের হেলিকপ্টার কি দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত?
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্তত ১৭জন নিহত হয়েছেন৷ রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের পাশে হেলিকপ্টারটি কী কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে?
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
চলছে তদন্ত
বুধবার সকালে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর এর কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু হয়৷ তবে প্রাথমিকভাবে এটিকে দুর্ঘটনা বলেই মনে করছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা৷
ছবি: Igor Burdyga/DW
তিনটি বিষয় বিবেচনায়
কারণ অনুসন্ধানে তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় নিচ্ছেন ইউক্রেনের তদন্তকারী দল৷ একটি হলো, ফ্লাইটের নিয়মকানুন লঙ্ঘন করার কারণে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে৷ দ্বিতিয়টি হলো, হেলিকপ্টারটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে৷ তৃতীয় কারণ হিসেবে অনুমান করা হচ্ছে যে, হেলিকপ্টারটিকে ইচ্ছাপূর্বক বিধ্বস্ত করা হয়ে থাকতে পারে৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
নিহতের সংখ্যা নিয়ে সংশয়
বিধ্বস্ত হওয়ার পর নিহতের সংখ্যা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে৷ প্রথমে কর্তৃপক্ষ ১৬জন নিহত হয়েছেন জানালেও পরে মোট ১৮জন নিহতের কথা বলা হয়৷ তবে বার্তাসংস্থা ডিপিএর তথ্য অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ বিবৃতিতে ১৭জন নিহতের কথা জানিয়েছে৷
ছবি: REUTERS
শিশুদের নিয়ে শঙ্কা
ইউক্রেনের স্টেট ইমার্জেন্সি সার্ভিসের হেলিকপ্টারটি রাজধানী কিয়েভের নিকটবর্তী ব্রাভোরি শহরের একটি কিন্ডারগার্টেনে ধাক্কা মেরে পাশের একটি আবাসিক ভবনের কাছে বিধ্বস্ত হয়৷ কিয়েভের গভর্নর ওলেক্সি কুলেবা জানান, কিন্ডারগার্টেন ও আবাসিক ভবনের পাশে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় কিন্ডারগার্টেনটিতে শিশু, শিক্ষক ও কর্মকর্তারা ছিলেন৷ তাদেরকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Igor Burdyga/DW
নিহত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
এ দুর্ঘটনায় ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেনিস মোনাসতিরস্কি ও তার ফার্স্ট ডেপুটি এবং স্টেট সেক্রেটারিসহ অন্তত ১৭ জন নিহত হন৷ নিহতদের মধ্যে তিন শিশুও রয়েছে৷ ১০ শিশুসহ অন্তত ২২ জন আহত বলেও জানা গেছে৷ আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Igor Burdyga/DW
ছুটে আসেন উদ্ধারকর্মীরা
হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের পরপরই উদ্ধারকর্মীরা ছুটে এসে তৎপরতা চালাতে থাকে৷ উদ্ধারকর্মীদের সহযোগিতায় আহতদের হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়৷
ছবি: Nacho Doce/REUTERS
ঘটনাস্থলে মৃতদেহ
হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর দুর্ঘটনাস্থলে মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে৷ রাস্তায় থাকা গাড়ির পাশে পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে নিরাপত্তারক্ষীরা৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
শহরবাসীর প্রতিক্রিয়া
হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর অনেকেই নিজেদের আত্মীয়স্বজনের খোঁজে ঘটনাস্থলে জড়ো হন৷ এসময় তাদের অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা
ফুল দিয়ে এভাবেই নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান মানুষ৷
ছবি: Igor Burdyga/DW
9 ছবি1 | 9
রোববার একটি ফরাসি টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বেয়ারবক। সেখানে তাকে ট্যাঙ্কের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। প্রশ্ন ছিল, পোল্যান্ড যদি জার্মানির কাছ থেকে অনুমতি না নিয়েই লিওপার্ড দুই ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে পাঠিয়ে দেয়, তাহলে জার্মানির অবস্থান কী হবে? বেয়ারবক বলেছেন, ''এখনো পর্যন্ত এবিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে পরিস্থিতি তেমন হলে জার্মানি নাক গলাবে না। পোল্যান্ড যা করবে, জার্মানি তা মেনে নেবে। কারণ মানুষের জীবন আগে। ইউক্রেনের মানুষকে বাঁচানোই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় কর্তব্য।''
লিওপার্ড দুই ট্যাঙ্ক অত্যাধুনিক। জার্মানি এই ট্যাঙ্ক তৈরি করে। কিন্তু ন্যাটোর বাইরে কোনো দেশকে জার্মানি এই ট্যাঙ্ক দিতে পারে না। পোল্যান্ডের কাছে জার্মানির তৈরি এই ট্যাঙ্ক আছে। বহুদিন ধরেই পোল্যান্ড এই ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে দিতে চাইছে। কিন্তু জার্মানি অনুমতি না দিলে পোল্যান্ড তা দিতে পারে না। জার্মানিও এখনো পর্যন্ত সেই অনুমতি দেয়নি। বস্তুত, গত সপ্তাহেই জার্মানিতে মার্কিন বিমানঘাঁটিতে বিরাট বৈঠক হয়েছে। সেখানেও এবিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অ্যামেরিকা এবং জার্মানি ইউক্রেনের হাতে নতুন করে ট্যাঙ্ক তুলে দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়নি। অ্যামেরিকা ইউক্রেনকে বিরাট পরিমাণ সামরিক সাহায্য দিলেও ট্যাঙ্ক দিতে চায়নি। জার্মানিও সেই পথেই হেঁটেছে। কিন্তু ইউক্রেন বেশ কিছুদিন ধরে পশ্চিমা দেশগুলির কাছে ট্যাঙ্ক চাইছে। এই পরিস্থিতিতে বেয়ারবকের এই মন্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইউক্রেনে যৌন সন্ত্রাসের অভিযোগ তদন্ত
রাশিয়ার দখলমুক্ত করা খেরসনে রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত শুরু হয়েছে৷ ধর্ষণ, গণহত্যা ইত্যাদির মতো সব অভিযোগই অবশ্য ‘বানোয়াট’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Anna Voitenko/REUTERS
তদন্তে দেশি-বিদেশি আইনজীবী
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই খেরসন দখল করে রাশিয়া৷ নভেম্বরের শুরুর দিকে শহরটি পুনরুদ্ধার করে ইউক্রেন৷রুশ সৈন্যরা চলে যেতেই খেরসনবাসীদের কাছ থেকে আসতে থাকে যৌন সন্ত্রাসসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ৷সম্প্রতি সেসব অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছেন ইউক্রেনের আইনজীবীরা৷ হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থা গ্লোবাল রাইটস কমপ্লায়েন্সের একটি দল এ কাজে সহায়তা করছে তাদের৷
ছবি: Anna Voitenko/REUTERS
অভিযোগের পাহাড়
ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় বলছে, খেরসনের বাসিন্দারা রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে ৫০ হাজারেরও বেশি অভিযোগ করেছেন৷অভিযোগগুলোর মধ্যে গণহত্যা এবং নানা ধরনের আগ্রাসী আচরণের অভিযোগ অসংখ্য৷ সেরকম অভিযোগগুলোর বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধা আদালত আইসিসি-তেও হতে পারে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয়৷ ওপরের ছবিতে খেরসনের একটি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ঘুরে দেখছেন এক তদন্তকারী৷
ছবি: Anna Voitenko/REUTERS
যেখানে রুশ সৈন্য সেখানেই নিপীড়ন, নির্যাতন!
ইউক্রেনের যৌন সন্ত্রাস সংক্রান্ত অপরাধ বিচারের ইউনিটের সহকারি প্রধান আনা সোসোনস্কার দাবি- রুশ সৈন্যরা খেরসন ছেড়ে না যাওয়া ইউক্রেনীয়দের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে৷ রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়ার সৈন্যরা যেখানে গিয়েছে সেখানেই যৌন সন্ত্রাস, নির্যাতন, এমনকি হত্যাকাণ্ডও চালিয়েছে৷’’
ছবি: Anna Voitenko/REUTERS
প্রথম শুনানি
সম্প্রতি এক রুশ সৈন্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন এক ইউক্রেনীয় নারী৷ গত জুনে সেই মামলার প্রথম প্রাথমিক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়৷ অভিযুক্ত রুশ সৈন্যের অনুপস্থিতিতেই অনুষ্ঠিত হয় শুনানি৷
ছবি: Artur Widak/AA/picture alliance
৭০ জনের জবানবন্দি
ক্রাইমিয়া এবং সেভাস্তোপোল পুলিশের তদন্ত বিভাগের সহকারি প্রধান সেরহি ডোরোশিন জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ৭০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে৷তাদের অনেকেই বলেছেন, রুশ সৈন্যরা খেরসনে ১০টির মতো ডিটেনশন সেন্টার গড়ে তুলেছিল৷ সেখানে আটকে রেখেই তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়৷
ছবি: Anna Voitenko/REUTERS
রাশিয়ার দাবি
রাশিয়া সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে৷ সে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা (ওপরের ছবি) সব অভিযোগকে ‘বানোয়াট’ বলে উড়িয়েই দিয়েছেন৷ জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে রাশিয়ার সৈন্যদের বিরুদ্ধে সাধারণ নাগরিকদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগের কথা উঠে এসেছে৷ সে বিষয়ে রয়টার্সকে মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘‘এসব অভিযোগ পুরোপুরি গুজব এবং গুঞ্জননির্ভর৷’’
ছবি: Russian Foreign Ministry/REUTERS
6 ছবি1 | 6
রোববার জার্মানি এবং ফ্রান্স যৌথ বিবৃতি জারি করেও ইউক্রেনের পাশে থাকার কথা বলেছে। জার্মান চ্য্নেসলর ওলফ শলৎস প্যারিসে গেছিলেন দুই দেশের সম্পর্কের ৬০ বছর উদযাপন করতে। সেখানেই তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের জন্য সবরকম সাহায্য করতে প্রস্তুত জার্মানি। ইউক্রেনের উপর গোটা ইউরোপের শান্তি নির্ভর করছে। ফলে ইউক্রেনকে সবরকম সামরিক সাহায্য দেওয়া হবে।
রোববারই জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। বস্তুত, তার কয়েকঘণ্টার মধ্যেই ফরাসি টেলিভিশনে ওই মন্তব্য করেছেন বেয়ারবক।
এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁও জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক দেওয়ার বিষয়ে ফ্রান্সের কোনো আপত্তি নেই। ফলে গত সপ্তাহে ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক দেওয়ার বিষয়ে যে জট তৈরি হয়েছিল, এ সপ্তাহে তা খুলে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।