পোশাক আইন অমান্যকারী নারীদের খুঁজতে ইরানে স্মার্ট ক্যামেরা
৯ এপ্রিল ২০২৩
নারীরা পোশাকবিধি মানছেন কীনা তা নজরদারিতে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে ইরানের কর্তৃপক্ষ৷ এর মাধ্যমে আইন অমান্যকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়া হবে বলে শনিবার ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
যেসব নারীরা জনপরিসরে পোশাকবিধি মানবেন না তাদেরকে বিভিন্ন স্থানে বসানো স্মার্ট প্রযুক্তি ও ক্যামেরা দিয়ে চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরানের পুলিশ৷ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইন অমান্যকারীকে ছবিসহ প্রমাণ পাঠিয়ে সতর্কবার্তা এবং পুনরায় আইনভঙ্গের পরিণাম সম্পর্কে অবহিত করা হবে৷
ইরানের পুলিশ প্রধান আহমাদ রেজা রাদান রাষ্ট্রীয় টিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘পরবর্তী শনিবার থেকে যারা পর্দা করবেন না তাদের স্মার্ট যন্ত্রের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হবে৷''
হিজাব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কারণে ইরানের ধর্মীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়া এবং নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে চলায় এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে পুলিশ৷ ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা খবরটি প্রচার করেছে৷
বিবৃতিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে, সামাজিক রীতি যথাযথভাবে মানা হচ্ছে কীনা তারা যাতে তা গুরুত্বের সাথে দেখভাল করে৷
১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর ইরানে শরিয়া আইনে নারীদের পোশাকের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়৷ আইন অনুযায়ী জনসম্মুখে তাদের চুল ঢাকা এবং এমন লম্বা, ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে যাতে শরীরে অবয়ব প্রকাশিত না হয়৷ আইন অমান্যকারীদের জরিমানা ও গ্রেপ্তারের বিধান রয়েছে৷
এদিকে শনিবার নতুন করে আরদাবি শহরের কয়েকটি স্কুলের ছাত্রীরা সন্দেজনক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷ চলতি বছরের শুরুতেও এমন একাধিক ঘটনায় কয়েকশো শিক্ষার্থী আক্রান্ত হন৷
এফএস/এআই (রয়টার্স, এফএস)
ইরানে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ঠেকাতে বিষ প্রদান!
ইরানের ১৫টি শহরের অন্তত এক হাজার মেয়ে শিক্ষার্থী বিষাক্ত গ্যাস হামলার শিকার হয়েছে৷ ইরানের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রীর দাবি- মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ঠেকাতে এমন হামলা চালানো হয়েছে৷
ছবি: Hasan Sarbakhshian/AP/picture alliance
এক হাজার ছাত্রী আক্রান্ত
গত কয়েক মাসে ইরানের ১৫টি শহরের বিভিন্ন স্কুলের প্রায় এক হাজার ছাত্রী বিষাক্ত গ্যাস হামলার শিকার হয়েছেন৷ অভিভাবকদের অভিযোগ, পরিস্থিতি সামলাতে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সরকার৷
ছবি: Social Media/via REUTERS
আক্রান্তদের অভিজ্ঞতা
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা হঠাৎ করেই বিশেষ ধরনের গন্ধ পাচ্ছিল৷ যেমন পচা ডিমের, পচা ফলের বা শক্তিশালী পারফিউমের৷ এরপর তাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল৷ কারো কারো মাথা ঘুরছিল৷ এর ফলে অনেতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন৷
ছবি: Allison Bailey/NurPhoto/picture alliance
যেখান থেকে শুরু
ইরানের কোম শহরে একটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রথম এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন৷ এরপর একে একে ইরানের ১৫টি শহরের বিভিন্ন স্কুল থেকে একই ধরনের অভিযোগ আসে৷
ছবি: Diego Radames/SOPA Images/ZUMA Press Wirepicture alliance
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য
এমন ঘটনার প্রেক্ষাপটে দেশটির স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ ভাহিদি এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, মানসিক চাপে থাকার কারণে এবং ভয় পেয়েই নাকি মেয়েরা শারীরিকভাবে অসুস্থ অনুভব করছিল৷ যদিও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এমনটা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷
ছবি: Allison Bailey/NurPhoto/picture alliance
সন্দেহ স্বাস্থ্য উপমন্ত্রীর
ইরানের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী ইউনেস পাহানি অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন৷ তার বক্তব্য, ‘‘মেয়েদের স্কুল বন্ধ করতেই এমন হামলা চালানো হচ্ছে৷’’ বিষয়টি ইতিমধ্যে দেশের সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে৷ বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি৷
ছবি: tejaratnews
আতঙ্কে অভিভাবকেরা
ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্কুলের সামনে প্রতিবাদ করছেন অভিভাবকেরা৷ রাজধানী তেহরানের বাসিন্দা এক মা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অনেক অভিভাবাকই মেয়েদের স্কুলে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷’’
ছবি: Isna
শিক্ষকদের বিক্ষোভ
এদিকে ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ইরানিয়ান টিচার্স ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন৷ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে সংগঠনটির সদস্য মোহাম্মদ হাবিবি বলেন, ‘‘এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের জানা থাকা উচিত যে, আমাদের সর্বোচ্চ সীমারেখা হলো শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা৷’’