পোশাক কারাখানার ‘রিমিডিয়েশন' প্রকল্পে চলমান সংস্কারমূলক কাজ যাতে ভালোভাবে হয়, সেজন্য কিছু বাংককে ৭ মিলিয়ন ইউরো অনুদান দেবে জার্মানি৷ শিল্পের পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এই অনুদান ৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং বাংলাদেশে জার্মান দূতাবাস রবিবার এ বিষয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবানের একটি চুক্তি সই করেছে৷
ইআরডি-র অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আলকামা সিদ্দিকী এবং জার্মান রাষ্ট্রদূত টোমাস প্রিনৎস ‘ফিন্যান্সিং অফ এনভায়রোনমেন্ট অ্যান্ড সেফটি রেট্রোফিটস ইন দ্য বাংলাদেশ রেডিমেড গার্মেন্টস সেক্টর' নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এই চুক্তি সই করেন৷
এই প্রকল্পটি গার্মেন্ট কারখানাগুলোকে বিনিয়োগ এবং ত্রুটি দূর করার মাধ্যমে উন্নয়নের মধ্যে যে ধারণাগত দূরত্ব রয়েছে, তা দূর করবে৷ একই সঙ্গে শিল্পের ত্রুটি দূর করতে প্রকল্পের বাস্তবায়নে সহায়তা করবে বলে জার্মান দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে৷
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠনএ-র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রিমিডিয়েশন (ক্রটি দূর করা) প্রকল্পে যত ফান্ড আসছে, দাতারা সেখানে সুদ নিচ্ছে খুবই কম৷ তা কোনোভবেই শতকরা ০ দশমিক ৫ ভাগের বেশি না৷ কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো অনেক বেশি সুদ নিচ্ছে৷ এই সুদের হার শতকরা ১ ভাগের বেশি হওয়া উচিত নয়৷''
সিদ্দিকুর রহমান
তিনি বলেন, ‘‘অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স ভুক্ত পোশাক কারাখানাগুলো কাজের পরিবেশ ও নিরপত্তা নিয়ে সংস্কার কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে৷ কিন্তু ছোট ছোট অনেক কারাখানা এখনো পারেনি৷ যদি তাদের ‘সফট লোন' দেয়া হয়, তাহলে তারাও সংস্কার করতে পারবে৷ তা না হলে ওই কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, শ্রমিকরা বেকার হবে৷ তাই আসলেই ব্যাংকগুলোকে এই খাতে ঋণ দিতে দক্ষ এবং বিবেচক হতে হবে৷ তাই তাদের দক্ষতা বাড়াতে জার্মান সরকারের এই প্রকল্প কাজে আসবে আশা করি৷''
এর আগে বাংলাদেশের পোশাক খাতের উন্নয়নে ২০১৪ সালে ৫০ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেয়ার চুক্তি করে জার্মানি৷ তৈরি পোশাকের দাম বেশি দিতেও সম্মত হয়৷ ওই চুক্তির ফলে জার্মান সরকার বাংলাদেশের ১০টি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নে জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়৷
বিজিএমইএ-র সভাপতি বলেন, ‘‘জার্মানি বাংলাদেশের পোশাক কারখানার জন্য অনেক কাজ করছে৷ শুধু অনুদান বা সহায়তাই নয় তারা জিআইজেড-এর মাধ্যমেও পোশাক কারাখানার উন্নয়নে ভূমিকা রখাছে৷ এছাড়া একক দেশ হিসেবে এখন বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতেই বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়৷''
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বড় গন্তব্য এখন জার্মানি৷ চলতি অর্থ বছরে তৈরি পোশাক আমদানিতে একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলেছে দেশটি৷ চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৩ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য৷ একই সময়ে জার্মানিতে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে প্রায় ১৩ কোটি ডলার বেশি৷
বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিকদের পাশে জার্মানি
রানা প্লাজা বিপর্যয়ের দেড় বছর পর জার্মানি যে ‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’ চালু করেছে, সে উপলক্ষ্যে ফেডারাল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার বাংলাদেশ যান৷ নিজের চোখে দেখেন সেখানকার মানুষ ও তাঁদের উন্নয়নকে৷
ছবি: DW/S. Burman
‘মেড ইন বাংলাদেশ’
রানা প্লাজা বিপর্যয় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্টস রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে৷ চালু হয়েছে ‘‘অ্যাকর্ড’’, ‘‘অ্যালায়েন্স’’ এবং ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’ মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, যার উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের গার্মেন্টস ওয়ার্কারদের কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা৷
ছবি: DW/S. Burman
একযোগে
জার্মান উদ্যোগের লক্ষ্য হলো, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এক করা৷ গাজিপুরের ডিবিএল গ্রুপ ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’-এ যোগ দিয়েছে ও ইতিমধ্যেই একাধিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করেছে৷ জার্মান উন্নয়নমন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং এই আশা প্রকাশ করেন যে, অন্যান্য সংস্থাও এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে৷
ছবি: DW/S. Burman
মোটরসাইকেলে
প্রায় দেড়’শ নতুন লেবার ইনস্পেক্টরদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে, কারখানাগুলোর পরিস্থিতির উপর নজর রাখার জন্য৷ কোনো সংকট ঘটলে যানজট এড়িয়ে চটজলদি অকুস্থলে পৌঁছানোর জন্য তাদের মোটরসাইকেল দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/S. Burman
লুডো খেলাও সচেতনতা বাড়ায়
গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকরা প্রধানত মহিলা, নিজেদের আইনি দাবিদাওয়া সম্পর্কে তাঁদের বিশেষ ‘জানকারি’ নেই৷ কাজেই কারখানায় ‘‘মহিলাদের কাফে’’ সৃষ্টি করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সেই সঙ্গে বিনোদনের জন্য লুডো খেলা৷
ছবি: DW/S. Burman
কাজের জায়গায়
পরিস্থিতি কিছুটা অন্যরকম৷ দিনে দশ থেকে চোদ্দ ঘণ্টা কাজ৷ ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’ এই অনলস কর্মীদের কাজের পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে চায়৷
ছবি: DW/S. Burman
রাজনীতিও শামিল
বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গাজিপুরের ডিবিএল গ্রুপের ফ্যাক্ট্রিতে জার্মান উন্নয়নমন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলারের সঙ্গে যোগ দেন এবং সহযোগিতা সম্পর্কে আলোচনা করেন৷ গার্মেন্টস শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি ঘটানোর জন্য সরকারের উদ্যোগ বিশেষভাবে প্রয়োজন৷
ছবি: DW/S. Burman
মিনি ফায়ার ব্রিগেড
গ্যার্ড ম্যুলার গাজিপুরে ডিবিএল গ্রুপের কারখানার নতুন ‘খুদে দমকল বাহিনীর’ উদ্বোধন করেন৷ এই ফায়ার ব্রিগেড এক কিলোমিটার ব্যাসের এলাকার মধ্যে অগ্নি নির্বাপণে সক্ষম৷ ম্যুলারের সঙ্গে ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ৷
ছবি: DW/S. Burman
চাইল্ড কেয়ার
শ্রমিক কল্যাণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে কারখানা প্রাঙ্গণে ডে-কেয়ার সেন্টার সৃষ্টি করে মহিলা শ্রমিকদের শিশুসন্তানদের দেখাশোনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Burman
সবে মিলে করি কাজ
জার্মান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা, মালিকপক্ষ, বিদেশি ক্রেতা এবং অপরাপর সংশ্লিষ্টরা সকলে একত্রিত হয়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করছেন৷
ছবি: DW/S. Burman
লক্ষ্য
বাংলাদেশ বর্তমানে ২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গার্মেন্টস রপ্তানি করে থাকে৷ সরকার সেটাকে ২০২১ সাল – অর্থাৎ দেশের পঞ্চাশতম বার্ষিকীর মধ্যে ৫০ বিলিয়নে দাঁড় করাতে চান৷ জার্মান উন্নয়ন মন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার গত ৭ই অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন৷