1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পোশাক কারখানায় অস্থিরতার কারণ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভারে তৈরি পোশাক কারখানায় অস্থিরতার নেপথ্যে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ‘ঝুট ব্যবসা' বলে জানা গেছে৷ তারা কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিক অসন্তোষকে কাজে লাগিয়েছেন৷ এই অভিযোগ খোদ পোশাক শ্রমিক নেতাদের৷

গার্মেন্টস কর্মী
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পোশাক খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে৷ ফাইল ফটোছবি: picture-alliance/NurPhoto/M. Hasan

তবে মালিকরা বলছেন দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে তৃতীয় পক্ষ এখানে সক্রিয়৷

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সোমবার রাত থেকেই সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করে৷ মঙ্গলবারও কিছু পোশাক কারখানা বন্ধ থাকলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ ও শ্রমিক নেতারা৷

শ্রমিক নেতারা মঙ্গলবার শিল্প উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷ বৈঠক শেষে তারা পোশাক শ্রমিকদের শান্ত থেকে কাজে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷

অন্যদিকে শিল্প মালিকরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে শিল্পের নিরাপত্তা চেয়েছেন৷

বাংলাদেশ পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘‘কিছু পোশাক কারখানায় অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা আছে৷ সেটা নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছিলে৷ কিছু কারখানায় বেতন বকেয়া, হাজিরা, বোনাস, টিফিন ভাতা ও শ্রমিক ছাঁটাই নিয়ে অন্তোষ ছিলো৷ এটা নিয়ে কয়েকদিন ধরে কিছুটা শ্রমিক অসন্তোষ ছিলো৷ কিন্তু সোমবার যে ৫০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যায় তা নিরাপত্তার কারণে৷ বহিরাগতরা বিভিন্ন পোশাক কারখানায় হামলা চালালে ওই কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়৷''

আমরা মনে করি, এবার যা ঘটেছে এর সঙ্গে শ্রমিকরা জড়িত নয়: রফিকুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘সরকার পরিবর্তনের পরও ঝুট ব্যবসার আধিপত্য ধরে রাখতে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা বহিরাগতদের দিয়ে পোশাক কারখানায় হামলা চালায়৷ পোশাক কারাখানার ওয়েসটেজ এই ঝুট ব্যবসায় আছে কোটি কোটি টাকা৷ আর এই ব্যবসা রাজনৈতিক প্রভাবশালীরাই নিয়ন্ত্রণ করেন৷’’

কয়েকদিন আগে থেকে পোশাক কারখানা এলাকায় অস্থিরতা শুরু হলেও ১ সেপ্টেম্বর প্রথম ১০টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, ওইদিন কয়েকটি কারখানায় হামলা হয়৷ ২ সেপ্টেম্বর পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে৷ হামলার কারণে ৫০টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়৷ মঙ্গলবারও ১০টির মতো কারখানা বন্ধ ছিলো৷ তারা নিরাপত্তার কারণে কারখানা খোলেনি৷

এই পরিস্থিতির শুরু হয় বিভিন্ন সময় ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে৷ তারা চাকরিচ্যুতদের কাজে ফিরিয়ে নেয়া এবং পোশাক কারখানায় কমপক্ষে ৫০ ভাগ পুরুষ নিয়োগের দাবিতে কয়েকদিন আগে আন্দোলন শুরু করেন৷ বাংলাদেশে পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের প্রায় ৮০ ভাগ নারী৷ ‘বেকার আন্দোলন' নামের ওই সংগঠনের নেতা শহীন আহমদে বলেন, ‘‘তবে পোশাক কারখানায় যারা হামলা করেছে তারা আমাদের কেউ নয়৷ আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছিলাম৷ যারা হামলা করেছে তারা বহিরাগত৷ তাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে৷''

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের সভাপতি সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘কারা ক্ষমতায় আসলো আর কারা ক্ষমতা ছাড়লো সেটা আমাদের বিষয় নয়৷ আমরা শ্রমিকরা শিল্প উৎপাদন ঠিক রাখতে চাই৷ আমাদের শ্রমিকদের কিছু দাবি-দাওয়া আছে সেগুলো আমরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আদায় করতে চাই৷ কিন্তু এখন যারা পোশাক কারখানায় হামলা করেছে তারা কোনো শ্রমিক নয়৷ কোনো একটি গোষ্ঠী এই খাতকে অস্থিতিশীল করতে এই হামলা চালিয়েছে৷ আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো কর্মসূচিও দেইনি৷ কোনো কোনো পোশাক কারখানায় অভ্যন্তরীণ কর্মসূচি ছিলো৷ তারই সুযোগ নিয়েছে হামলাকারীরা৷''

রানা প্লাজা ধস নিয়ে তথ্যচিত্র- 'কংক্রিট কবর কারাগার'

31:46

This browser does not support the video element.

গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভারে দেড় হাজারের বেশি পোশাক কারখানা আছে৷ একটি কারখানার শ্রমিকরা বাইরে এলেই এক-দেড় হাজার শ্রমিকের বিক্ষোভে পরিণত হয়৷ মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘‘কোনো কারখানার শ্রমিকরা বাইরে আসেনি৷ তারপরও হামলা কারা করলো সেটা তদন্ত হওয়া দরকার৷’’

‘‘শিল্প উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন শ্রমিকদের যে যৌক্তিক দাবি আছে তা ধীরে ধীরে পূরণ করা হবে৷ তাদের সময় দিতে হবে৷ আর এর সাথে ২০২৩ সালে ২০ হাজার শ্রমিককে আসামি করে যে ৪৩টি মামলা হয়েছে তা প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করেছি৷’’

আশুলিয়া এলাকায় মঙ্গলবারও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন৷ তারা কিছুক্ষণের জন্য সড়ক অবরোধ করেন৷

আশুলিয়া শিল্প পুলিশের এসপি মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, ‘‘মঙ্গলবার তিন-চারটি কাখানায় কিছুটা ঝামেলা ছিলো৷ আগের দিন বন্ধ করে দেয়া ওই কারাখানাগুলো মঙ্গলবারও না খোলায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন৷ রাস্তার পাশের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়কও অবেরোধ করেন৷ তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘সোমবার রাত থেকেই পুলিশ ও সেনা সদস্যরা যৌথ অভিযান শুরু করে৷ এখনো কারখানার নিরাপত্তায় টহল অব্যাহত আছে৷''

এদিকে মঙ্গলবার গাজীপুরে চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে বেশ কয়েকটি স্থানে পোশাক শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন৷ সকালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা গাজীপুর মহানগরীর ভোগরা বাইপাস, ছয়দানা, হাজির পুকুর, মালেকের বাড়ি, সাইনবোর্ড এলাকায় বিক্ষোভ করেন৷ শ্রমিক বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে শ্রমিকদের ইট-পাটকেলে শিল্প পুলিশের এএসপি মোশরাফ হোসেনসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন৷ পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন৷

ঝুট ব্যবসার আধিপত্যের জন্য স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা বহিরাগতদের দিয়ে পোশাক কারখানায় হামলা চালায়: মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান

This browser does not support the audio element.

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত এসপি ইমরান হোসেন বলেন, সকাল থেকেই গাজীপুরের বেশ কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন পোশাক কারখানার চাকরিচ্যুত শ্রমিকেরা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ করেন৷ একপর্যায়ে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে যানবাহন চলাচলে বাধা দেন৷ খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন৷ এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন৷’’

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘পোশাক কারখানায় সমস্যা কিছু না কিছু সবসময়ই থাকে৷ আমরা সেটা অভ্যন্তরীণভাবে সমাধান করি৷ কিন্তু এবার যা ঘটেছে তা অপ্রত্যাশিত৷ আমরা মনে করি এর সঙ্গে শ্রমিকরা জড়িত নয়৷ তৃতীয় কোনো পক্ষ যারা অস্থিতিশীল পরিবেশ করতে চায় তারা এটা করেছে৷ তাদের চিহ্নিত করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি৷’’

তিনি জানান, ‘‘সরকার ব্যবস্থা নেয়ার পর মঙ্গলবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে৷ মঙ্গলবার অল্প কিছু কারখানায় সমস্যা হয়েছে৷ বিভিন্ন সময় চাকরিচ্যুতরা এই সমস্যা করছে৷ আসলে হায়ার এন্ড ফায়ার একটা স্বাভাবিক ঘটনা৷ বেতন নিয়ে কোনো সমস্যা নাই৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ