বাংলাদেশে অক্টোবরে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের পর বহু শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তিনটি শ্রমিক ইউনিয়ন৷ তবে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, এমন তথ্য তাদের জানা নেই৷
বিজ্ঞাপন
গত অক্টোবরে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নামেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকেরা৷ এ সময় পুলিশের সঙ্গে সহিংসতায় চার শ্রমিক নিহত ও শতাধিক আহত হন৷ অজ্ঞাত পরিচয়ের কয়েকশজনের বিরুদ্ধে ভাংচুরের অভিযোগে মামলা করে পুলিশ৷
বাংলাদেশের শ্রমিকদের তিনটি সংগঠন বলছে, এই ঘটনার পর কারখানার মালিকেরা আন্দোলনে অংশ নেয়া শ্রমিকদের ছাঁটাই করছে৷ বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, ন্যাশনাল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিট কাউন্সিলের হিসাবে এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে অথবা তারা পালিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন৷ডুকাটি অ্যাপারেল নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক দেলোয়ার হোসেন৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি জানান ডিসেম্বরের শুরুর দিকে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়া এবং বকেয়া বেতন পরিশোধ না করেই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাকে কারখানাতেই ঢুকতে দেয়া হয়নি৷’’
ডুকাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়ের মিয়া জানান আন্দোলনের সময় ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক তার কারখানা ভাংচুর করেছেন৷ কিন্তু এজন্য কাউকে ছাঁটাই করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি৷ আন্দোলনের কারণে ১০ দিন বন্ধ থাকলেও তারা শ্রমিকদের পুরো বেতন পরিশোধ করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন৷ বলেন, ‘‘আমি আমার শ্রমিকদের এবং কারখানাকে পরিবারের মতন ভালোবাসি৷’’
বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবি
02:26
এদিকে মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান রয়টার্সকে জানিয়েছেন তিনি শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়ে অবগত নন৷ এই ধরনের ঘটনা নজরে আসলে তারা পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানান তিনি৷
রয়টার্স জানিয়েছে, এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশের শ্রম মন্ত্রণালয়৷
অন্যদিকে, আশুলিয়ার পুলিশ কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম বার্তা সংস্থাটিকে বলেছেন তারা আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণে কোনো শ্রমিককে গ্রেপ্তার করেননি৷
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরই দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ৷ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের পোশাকের বড় ক্রেতা৷ অক্টোবরের আন্দোলনের পর শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যাতে প্রতিশোধমূলক কোনো পদক্ষেপ নেয়া না হয় তা নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল অ্যাবাক্রম্বি অ্যান্ড ফিঞ্চ, আডিডাস, গ্যাপ, লেভি স্ট্রাউস, পুমা, পিভিএইচ ও আন্ডার আর্মর৷
এফএস/এসিবি (রয়টার্স)
নেদারল্যান্ডসে ইতিবাচক বাংলাদেশের ছবি
বাংলাদেশের শিল্পখাতের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরতে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে দুই দিনের বেস্ট অব বাংলাদেশ নজর কেড়েছে ইউরোপীয় উদ্যোক্তাদের৷ কী ছিল সেখানে দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Faisal Ahmed/DW
রপ্তানি বাজার
বাংলাদেশের রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ গত অর্থবছরে এই দেশগুলোতে ১৩৭৩ কোটি ডলার রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি৷ এই বাজারে অবস্থান আরো শক্তিশালী করতেই সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বেস্ট অব বাংলাদেশের আয়োজন৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
তৈরি পোশাক
ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানির সিংহভাগই আসে তৈরি পোশাক থেকে৷ সম্প্রতি এই রপ্তানি পরিমাণের দিক থেকে চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে৷ বেস্ট অব বাংলাদেশের প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো তাই বেশিরভাগই ছিল পোশাক শিল্পের৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
কৃষি ও খাদ্য
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানির তালিকায় খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প জায়গা করে নিয়েছে৷ বাংলাদেশের ৩৫ টি রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে৷ তার মধ্যে রয়েছে খাদ্য শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী কয়েকটি কোম্পানি৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
টেকসই পণ্য
ইউরোপের বাজারে পরিবেশবান্ধব সুতা ও কাপড়ের চাহিদা বাড়ছে৷ বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো সেদিকেও নজর দিচ্ছে৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
হ্যান্ডিক্রাফট
টেকসই ও প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ইউরোপের বাজারে হ্যান্ডিক্রাফট পন্যও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷ বাংলাদেশের এমন পণ্যের রপ্তানি সীমিত হলেও ভবিষ্যতে তা সম্ভাবনাময় হয়ে উঠতে পারে৷ একটি প্রতিষ্ঠান তাদের হাতের কাজ তুলে ধরেছে আগ্রহীদের কাছে৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
জামদানি
একসময় বাংলাদেশের মসলিনের খ্যাতি ছিল বিশ্বজোড়া৷ মসলিন না থাকলেও জামদানি বাংলাদেশের উচ্চমানের কাপড়ের সেই ঐতিহ্য বহন করে৷ ইউরোপে বাজারে জামদানি রপ্তানির সম্ভাবনা কতটা তা খতিয়ে দেখছে একটি প্রতিষ্ঠান৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
বাংলাদেশের ঐতিহ্য
প্রদর্শনীতে আয়োজকেরা বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতির সাথে ইউরোপীয়দের পরিচিতি করিয়ে দিতে চেয়েছে৷ তার অংশ হিসেবে নকশি কাঁথা সহ নানা কারুশিল্প রাখা হয়েছে৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
প্যানেল আলোচনা
বাংলাদেশের শিল্পের নানা দিক নিয়ে ছয়টি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই দিনের এই আয়োজনে৷ দেশের শিল্প খাতের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি, ইউরোপের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞরা এসব আলোচনায় অংশ নেন৷ টেকসই শিল্পের পাশাপাশি শ্রমিকদের সংগঠন করার স্বাধীনতা, দর কষাকষির ক্ষমতার দিকগুলোর উপর জোর দেন কোনো কোনো বক্তা৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
নিজস্ব ডিজাইন
তৈরি পোশাক শিল্পে ভবিষ্যৎ বাজার ধরতে প্রয়োজন নিজস্ব উদ্ভাবনী পোশাক৷ বেস্ট অব বাংলাদেশে দেশি কোম্পানিগুলোর তৈরি ডেনিম পণ্যের ফ্যাশন শো ছিল অন্যতম আকর্ষণ৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
বাংলাদেশের সিনেমা
প্রদর্শনীর প্রথম দিনে দেখানো হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম কুড়ানো বাংলাদেশের পাঁচটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র৷ ছবিতে নুহাশ হুমায়ূন পরিচালিত মশারি চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর একটি মুহূর্ত৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
নিয়মিত আয়োজন
বেস্ট অব বাংলাদেশের মূল আয়োজক বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ৷ সহযোগিতা করেছে নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো৷ আগামী বছরের ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর একই স্থানে এর দ্বিতীয় সংস্করণ করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
ছিল প্রতিবাদও
উদ্বোধনী দিনে ভেন্যুর বাইরে ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন নামে একটি বৈশ্বিক শ্রমিক সংস্থার প্রতিনিধিরা প্রতিবাদে অংশ নেন৷ তারা বাংলাদেশের শ্রমিক নেতা শহীদুল হত্যার বিচারসহ, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ২৩ হাজার টাকা মজুরির দাবি তোলেন৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির হয়েও তারা তাদের এসব দাবি তুলে ধরেন৷ বাংলাদেশের সরকারের প্রতিনিধিরা তার উত্তর দেন৷