ইউরোপভিত্তিক ক্রেতা গ্রুপ 'অ্যাকর্ড' বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তা ত্রুটি পেয়েছে৷ তারা জানিয়েছে যে, তাদের পরিদর্শনে দেশের কারখানাগুলোয় মোট ৮০ হাজার নিরাপত্তা সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
‘দ্য অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ' সংক্ষেপে অ্যাকর্ড বাংলাদেশের এক হাজার ১০৬টি কারখানা পরিদর্শন করে৷ এই পরিদর্শনে বাইরে থেকে নিরাপত্তা প্রতিনিধিদেরও নিয়োগ করা হয়৷ পরিদর্শন গ্রুপটিতে ‘এইচঅ্যান্ডএম' ও ‘কেয়ারফর'-এর ১৮৯ জন বাণিজ্যিক প্রতিনিধি ছিলেন ৷
অ্যাকর্ড-এর প্রধান নিরাপত্তা পরিদর্শক ব্র্যাড লোবেন বলেছেন, ‘‘আমরা কারখানা পরিদর্শন করে নিরাপত্তায় অনেক অরাজকতা দেখেছি৷ কারখানার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে খুবই কম পরিবর্তন হয়েছে৷'' পরিদর্শনের সময় কারখানার অগ্নি এবং বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ও ভবনের কাঠামোগত অবস্থা দেখা হয়েছে৷ এখন এইসব বিষয় নিয়ে কারখানা মালিকদের সঙ্গে কাজ করছেন পরিদর্শকরা৷
অ্যাকর্ড জানায়, তাদের নিরাপত্তা পরিদর্শক দল নিরাপত্তা সমস্যায় জর্জরিত ১৭টি কারখানা এখনই বন্ধের জন্য বাংলাদেশ রিভিউ কমিটিকে বলেছে৷ এর কারণ, তাদের মতে এই ভবনগুলো যে কোনো সময় ধসে পরতে পারে৷ এছাড়া ১১০টি কারাখানা ভবন ত্রটিপূর্ণ হলেও তা চালু রেখেই নিরাপত্তা সমস্যার সমাধান করা যাবে জানিয়েছে তারা৷
অ্যাকর্ড মনে করে, সাধারণভাবে কোনো কোনো ভবনের ওপরের তলার জিনিস-পত্র সরিয়ে ফেলে নিরাপত্তা বাড়ানো যায়৷ তবে এর সঙ্গে ‘কলাম' শক্তিশালী করা এবং অনুমোদিত অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করতে হবে৷
অ্যাকর্ড প্রতিটি কারখানার নিরাপত্তা উন্নয়নে দুই লাখ ৫০ হাজার ডলার করে সহযোগিতা প্রদান করবে বলে জানিয়েছে৷ গ্রুপটির আন্তর্জাতিক অপারেশন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক অ্যালান রবার্ট বলেন, ‘‘কিছু কিছু কারখানার ক্ষেত্রে এ ব্যয় দাঁড়াবে এক মিলিয়ন ডলার৷''
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির বর্ষপূর্তি
২৪শে এপ্রিল, ২০১৩৷ সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছের সুউচ্চ ভবন ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ল বিকট শব্দে৷ ধসের আশঙ্কাকে আমলে না নেয়ার পরিণাম ১,১৩৫ জন পোশাক শ্রমিক, করুণ মৃত্যু৷ আহত এক হাজারেরও বেশি মানুষের এখনো দিন কাটে আতঙ্কে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাঁচা আর বাঁচানোর লড়াই
ভবন মালিক সোহেল রানার অর্থলিপ্সার নির্মম শিকার পোশাক শ্রমিকদের বাঁচানোর জন্য সরকারি উদ্যোগের অপেক্ষায় বসে থাকেননি সাধারণ মানুষ৷ দূর দূরান্ত থেকে ছুটে এসে একরকম খালি হাতেই অনেকে নেমে পড়েন উদ্ধার কাজে৷ নিজেদের প্রাণ বাজি রেখে বহু পোশাক শ্রমিককে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনেন তাঁরা৷
ছবি: Reuters
অসহায়ত্ব
আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সুযোগ-সুবিধার অভাব থাকলেও, ঘটনাস্থলে উদ্ধারকর্মীর কমতি ছিল না৷ তবুও অনেকেই চলে গেছেন স্বজনদের কাঁদিয়ে৷ এ ছবির মতো অবস্থাতেও উদ্ধার করতে হয়েছে অনেক মৃতদেহ৷ ৮০০-রও বেশি মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা গেলেও, অনেকের পরিচয় আজও জানা যায়নি৷ কিছু লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে৷ কিন্তু ৮৭ জনের জন্য নতুন করে নমুনা চাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রেশমার ফেরা
রানা প্লাজা ধসের ১৭তম দিনে ঘটে বিস্ময়কর এক ঘটনা৷ ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে আর কাউকে জীবন্ত উদ্ধার করা সম্ভব নয় ভেবে সাধারণ উদ্ধারকারীদের অনেকে যখন ঘরে ফিরছেন, তখনই প্রায় সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ২২ বছর বয়সি পোশাক শ্রমিক রেশমাকে৷
ছবি: Reuters
এখনো কাঁদে প্রাণ
ধসের পর ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন অনেকে৷ বিজিএমইএ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিয়েছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা৷ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১২৭ কোটি টাকা জমা হয়েছে ঠিকই, তবে বিতরণ করা হয়েছে ২২ কোটি টাকা৷ ভবন ধসের বর্ষপূর্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের মুখে শোনা গেছে হতাশা আর ক্ষোভের কথা৷ পপি বেগমকে কেড়ে নিয়েছে রানা প্লাজা৷ ঢাকার জুরাইন কবরস্থানে তাঁর কবর জিয়ারত করতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন বোন রোজিনা৷
ছবি: DW/M. Mamun
মায়ের কান্না
জুরাইন কবরস্থানে রশিদা খাতুনের কবরের পাশে সফুরা খাতুন৷ ভবন ধসের প্রায় দশ মাস পর, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি পেয়েছিলেন সন্তানের লাশ খুঁজে পাওয়ার সান্ত্বনা৷
জুরাইন কবরস্থানে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করতে মূলত তাঁদের পরিবারের সদস্যরাই এসেছিলেন৷ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির বর্ষপূর্তিতে আয়োজন ছিল অনেক, তবে জুরাইন কবরস্থানে ভিড় ছিল না তেমন৷ সেখানে এভাবেই হারানো স্বজনের ছবি হাতে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছিলেন এক নারী৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রদর্শনী
রানা প্লাজা ধসের ছবি নিয়ে ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী৷ বাংলাদেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত ৬০ জন আলোকচিত্র সাংবাদিকের তোলা ছবি স্থান পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ফুলের জলসা
রানা প্লাজা ধসে নিহতদের ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছে বেশ কিছু শ্রমিক সংগঠন৷
ছবি: DW/M. Mamun
মোনাজাত
জুরাইন কবরস্থানে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত৷
ছবি: DW/M. Mamun
10 ছবি1 | 10
তিনি জানান, ‘‘পোশাক ত্রেতা এবং কারাখানার মালিকরা শ্রমিক নিরাপত্তার ব্যাপারে আগের চেয়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন৷ ৪০০টি কারখানার নিরাপত্তা ত্রুটি ঠিক করতে কাজ শুরুর ব্যাপারে তাঁরা একমত হয়েছেন৷''
অপরদিকে, অ্যামেরিকার নেতৃত্বাধীন ক্রেতা গ্রুপ ‘অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কাস সেফটি' সংক্ষেপে অ্যালয়েন্স জানিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশে ৫৮৭টি কারাখানা ঘুরে দেখেছে৷ তাদের ২৬ বাণিজ্যিক প্রতিনিধির মধ্যে ‘ওয়ালমার্ট', ‘গ্যাপ' ও ‘টার্গেট'-এর মতো প্রতিষ্ঠান যুক্ত রয়েছে৷
গ্রুপটির সিনিয়র উপদেষ্টা ইয়ান স্পলদিং বলেন, ‘‘পরিদর্শন করার কাজটা তেমন কোনো কঠিন কাজ নয়৷ কিন্তু এর পরের কাজটাই সবচেয়ে কঠিন৷''
ইউরোপ ও অ্যামেরিকার বড় দুই ক্রেতা গ্রুপ অ্যাকর্ড এবং এবং অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের এক হাজার ৭০০টি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেছে৷ তারা কারখানার নিরাপত্তা ও শ্রমিকদের আর্থিক সমৃদ্ধির জন্য কারখানা মালিকদের সঙ্গে কাজ করছে৷
গত বছরের এপ্রিল মাসে ঢাকার অদূরে সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর, বাংলাদেশের পোশাক কাখানায় শ্রমিক নিরাপত্তা, শ্রমিকদের মজুরি এবং অধিকার নিয়ে সমালোচনা হয়৷ এরপরই ক্রেতাদের দুটি গ্রুপ পোশাক কারখানার নিরপত্তা উন্নয়নে কাজ শুরু করে৷