ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং ক্রেতারা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কাজের পরিবেশ উন্নয়নের তাগিদ দিচ্ছে৷ তা নাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহারের কথা বলেছে৷
বিজ্ঞাপন
সাভারের রানা প্লাজায় মোট ৫টি তৈরি পোশাক কারখানা ছিল৷ সেই ভবন ধসের পরই চাপ তীব্র হয়েছে৷ এর আগে তাজরীন ফ্যাশানস-এ আগুনের পর পরিস্থিতি জটিল হতে থাকে৷ দাবি উঠতে থাকে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কাজের পরিবেশ এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তার৷
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট রীতিমত প্রস্তাব পাশ করে বলেছে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার উন্নতি না হলে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে শুল্ক এবং কোটামুক্ত সুবিধা পাবেনা৷ বাংলাদেশ এই সুবিধা পাওয়ায় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানি হয় ইউরোপে৷ গত বছর বাংলাদেশ তার মোট পোশাক রপ্তানির ৬০ ভাগ পাঠিয়েছে ইউরোপে৷ তার পরিমাণ প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ এদিকে বাংলাদেশ তৈরি পোশাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পায়না৷ তবে পাওয়ার জন্য দেন দরবার এবং শুনানি চলছে৷ কিন্তু কাজের পরিবেশ এবং শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে সে আশা পূরণ নাও হতে পারে৷
সাভারে ‘রানা প্লাজা’ ধসে বহু হতাহত
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷
ছবি: Reuters
আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷ সাভার মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার সকালে ফাটল দেখা দেয়ার পরপরই ওই ভবনে থাকা চারটি গার্মেন্ট কারখানা ও ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ তবে ২৪ এপ্রিল সকালে কারখানায় আবার কাজ শুরু হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বহু হতাহত
১০ মে সকাল পর্যন্ত ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে ১০৩৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ এসব লাশের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই’
ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বলছেন, ব্যাপক ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে৷ এমন ধ্বংসস্তূপ সরানোর মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই৷ এ কারণে উদ্ধারকাজ চালাতে সমস্যা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters
এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন
সাভারে ধসে পড়া বহুতল ভবনে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা৷ সকালে ভবন ধসের পরপরই স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতায় এগিয়ে আসেন৷ এরপর ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন৷
ছবি: Reuters
রক্ত চাই
ধ্বংসস্তুপ থেকে থেকে উদ্ধার করা শত শত আহতের জন্য প্রচুর রক্ত প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা৷ এজন্য ব্লগ, ফেসবুকের মাধ্যমে সকলকে রক্ত দানে আহ্বান জানানো হয়েছে৷ বিভিন্ন সংগঠনও রক্ত সংগ্রহে নেমেছে৷
ছবি: Reuters
জোর করে ঢোকানোর অভিযোগ
আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা দেয়ায় ঐ ভবনে থাকা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যেতে না চাইলেও মালিকরা তাদেরকে জোর করে ঢুকিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে৷
ছবি: Reuters
ইমারত বিধিমালা মানা হয়নি
‘রানা প্লাজা’ ইমারত বিধিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ করে নির্মিত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর৷ বুধবার দুপুরে তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন৷ বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷'' (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
হরতাল প্রত্যাহার
উদ্ধার তৎপরতা নির্বিঘ্ন এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার পথে বাঁধা দূর করতে হরতাল প্রত্যাহার করেছে বিএনপি৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷
ছবি: Harun Ur Rashid
সরকারের আশ্বাস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য যা যা করা দরকার তা করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার৷
ছবি: dapd
খালেদার শোক প্রকাশ
ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ উদ্ধারকাজ যথাযথভাবে চালাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ খালেদা জিয়া শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার এই পরিস্থিতির জন্য প্রধানত মালিকদের দায়ী করেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘মালিকদের অতি মুনাফা লোভী মনোভাবের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ তারা শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা দিতে চান না৷ কম মজুরিতে যেনতেন পরিবেশে পোশাক তৈরি করে মুনাফা লোটে৷ শ্রম আইন মানেনা এবং শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ তাদের জন্য ব্যয় করেনা৷'' তবে তিনি মনে করেন এজন্য ক্রেতাদেরও দায় নিতে হবে৷ তারা বাংলাদেশ থেকে কম দামে পোশাক কিনতে চান৷ তাই তারা যতই বলুন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছেনা৷ কার্যকরভাবে পোশাক কারখানার শ্রমিকের কল্যাণ চাইলে এত কম দামে পোশাক কেনার মানসিকতা ছাড়তে হবে৷
এদিকে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র সহ সভাপতি শহীদুল আজিম ডয়চে ভেলেকে জানান, তারা আন্তর্জাতিক চাপ বিবেচনায় রেখেই পোশাক শিল্পের কাজের পরিবেশ এবং শ্রমিক নিরাপত্তার জন্য কাজ করছেন৷ কিছু কারখানা বন্ধও করে দেয়া হয়েছে ঝঁকিপূর্ণ ভবন এবং অগ্নি নিরাপত্তা না থাকার কারণে৷ আর কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হবে বলে জানান তিনি৷ এজন্য সরকার, বিজিএমইএ একযোগে কাজ করছে৷ তিনি আরও বলেন, নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা হলে পোশাক শ্রমিকদের মজুরিও বাড়বে৷ তাঁর কথা, আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা করে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এগিয়ে যাবে৷
তবে তিনি মনে করেন, ক্রেতাদের পোশাকের সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দেয়া উচিত৷ প্রতিযোগিতামূলকভাবে কম দামে পোশাক কেনার যে মানসিকতা, তা বাদ দিতে হবে৷ তাদের বুঝতে হবে সঠিক কর্মপরিবেশ, নিরাপত্তা এবং শ্রমিকদের বেতনের ওপরই পোশাকের দাম নির্ধারণ করা উচিত৷ এই দু'টিকে আলাদাভাবে বিবেচনার কোন সুযোগ নাই৷