রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক শিল্প সংকটের মুখে রয়েছে৷ সংকট কাটাতে নেয়া হচ্ছে নানারকম ব্যবস্থা৷ এর মাধ্যমে পোশাক কারাখানার কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি যেসব ভবনের ত্রুটি রয়েছে তা বন্ধ করে দেয়া হবে৷
বিজ্ঞাপন
সাভারের রানা প্লাজায় মোট পাঁচটি পোশাক কারখানা ছিল৷ এসব কারখানায় সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি পোশাক শ্রমিক কাজ করতেন৷ বিজিএমইএ যে তালিকা তৈরি করেছে তাতে শ্রমিকের সংখ্যা ৩,৬১৯ জন৷ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপ থেকে মোট ৯৭৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ আর এসব লাশের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিকদের৷
ভবন ধস বা আগুন লেগে পোশাক শ্রমিকদের মৃত্যু নিয়ে অনেক কথা হলেও এ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি৷ গত ১১ বছরে রানা প্লাজার হিসেব ধরে বাংলাদেশে ১,৭০০ পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন আগুন অথবা ভবন ধসে৷ রানা প্লাজার আগে তাজরীন ফ্যাশানস-এ আগুন, ফিনিক্স ভবন ধসেও গার্মেন্টম শ্রমিক নিহত হন৷ কিন্তু পরে এর বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷
তবে এবার আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন যত দ্রুত সম্ভব আন্তর্জাতিক শ্রম আইন মেনে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার ভবনসহ কাজের পরিবেশ এবং শ্রমিক নিরাপত্তার মান উন্নয়নের তাগিদ দিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ইন্ডাস্ট্রি গ্লোবাল ইউনিয়ন আগামী ১৫ই মে'র মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার ভবনসহ মান উন্নয়নের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার জন্য বলেছে৷ এদিকে আন্তর্জাতিক পোশাক ক্রেতা ওয়াল্ট ডিজনি বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তারা বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৪০ কোটি ডলারের পোশাক কিনতো৷ যা বাংলাদেশি টাকায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা৷
এই অবস্থা মোকাবেলায় সরকার, বিজিএমইএ কাজ শুরু করেছে৷ পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী জানিয়েছেন যে, তারা ইতিমধ্যেই ঢাকায় ১৬টি এবং চট্টগ্রামে দুটি সহ মোট ১৮টি পোশাক কারখানার ভবনে ত্রুটি পেয়েছেন৷ এই কারাখানাগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে৷ তিনি জানান, আগামী ৩ মাসের মধ্যে সরকারের গঠিত টাস্কফোর্স দেশের সব পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে রিপোর্ট চূড়ান্ত করবে৷ আর তাতে যেসব ত্রুটিপূর্ণ ভবন পাওয়া যাবে সেসব ভবনকে সংক্ষিপ্ত সময় দেয়া হবে৷ সেই সময়ের মধ্যে যদি তারা ত্রুটি দূর করতে না পারেন তাহলে সেই পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে৷
বিজিএমইএ-র সভাপতি আতিকুল ইসলাম জানান, তাদের টাস্কফোর্সও কাজ শুরু করেছে৷ সারা দেশের পোশাক কারখানার ভবনসহ শ্রমিক নিরাপত্তা এবং কাজের পরিবেশ দেখবেন তারা৷ এই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ তিনি জানান, রানা প্লাজার পাঁচটি পোশাক কারাখানার শ্রমিকদেরও বেতন দেয়া শুরু করেছেন তারা৷ আর নিহত শ্রমিকদের পরিবার মোট ৭ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাবে৷ এছাড়া, পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন কিভাবে চালু করা যায়, তা নিয়েও কাজ চলছে বলে জানা গেছে৷
সাভারে ‘রানা প্লাজা’ ধসে বহু হতাহত
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷
ছবি: Reuters
আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷ সাভার মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার সকালে ফাটল দেখা দেয়ার পরপরই ওই ভবনে থাকা চারটি গার্মেন্ট কারখানা ও ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ তবে ২৪ এপ্রিল সকালে কারখানায় আবার কাজ শুরু হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বহু হতাহত
১০ মে সকাল পর্যন্ত ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে ১০৩৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ এসব লাশের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই’
ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বলছেন, ব্যাপক ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে৷ এমন ধ্বংসস্তূপ সরানোর মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই৷ এ কারণে উদ্ধারকাজ চালাতে সমস্যা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters
এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন
সাভারে ধসে পড়া বহুতল ভবনে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা৷ সকালে ভবন ধসের পরপরই স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতায় এগিয়ে আসেন৷ এরপর ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন৷
ছবি: Reuters
রক্ত চাই
ধ্বংসস্তুপ থেকে থেকে উদ্ধার করা শত শত আহতের জন্য প্রচুর রক্ত প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা৷ এজন্য ব্লগ, ফেসবুকের মাধ্যমে সকলকে রক্ত দানে আহ্বান জানানো হয়েছে৷ বিভিন্ন সংগঠনও রক্ত সংগ্রহে নেমেছে৷
ছবি: Reuters
জোর করে ঢোকানোর অভিযোগ
আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা দেয়ায় ঐ ভবনে থাকা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যেতে না চাইলেও মালিকরা তাদেরকে জোর করে ঢুকিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে৷
ছবি: Reuters
ইমারত বিধিমালা মানা হয়নি
‘রানা প্লাজা’ ইমারত বিধিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ করে নির্মিত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর৷ বুধবার দুপুরে তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন৷ বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷'' (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
হরতাল প্রত্যাহার
উদ্ধার তৎপরতা নির্বিঘ্ন এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার পথে বাঁধা দূর করতে হরতাল প্রত্যাহার করেছে বিএনপি৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷
ছবি: Harun Ur Rashid
সরকারের আশ্বাস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য যা যা করা দরকার তা করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার৷
ছবি: dapd
খালেদার শোক প্রকাশ
ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ উদ্ধারকাজ যথাযথভাবে চালাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ খালেদা জিয়া শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন৷