বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় শেষ দুটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর পোশাকশিল্প কারখানাগুলো এখন চাপের মুখে৷ এতে বিদেশি ক্রেতারাও আতঙ্কিত৷ তবে এই ঘটনা দুটির পর থেকে পোশাক শিল্প কারখানাগুলোতে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে ‘ওয়ান কম্পোজিট মিলস' নামের একটি পোশাক কারখানার মালিক নাসির উদ্দিন মিয়াকেও গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে গত বছরের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দুটি৷ তাঁর কারখানায় রয়েছে মোট তিন হাজার শ্রমিক৷ তিনি বললেন, ‘‘কারখানায় কাজ করার সময় গরমে শ্রমিকদের কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম আমি যখন দেখি, তখন আমার খুব খারাপ লাগে৷ তাই আমি পুরো কারখানায়ই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করেছি, যাতে শ্রমিকদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়৷ আমিও যে একসময় দরিদ্র ছিলাম, সেকথা আমি ভুলে যাইনি৷''
নাসির উদ্দিন খুবই গর্বিত যে তাঁর কারখানার শ্রমিকদের জন্য তিনি বিনা খরচে চিকিৎসা প্রদান, মাতৃত্বকালীন ছুটি, বাচ্চাদের দেখাশোনার ব্যবস্থা, বাৎসরিক বোনাস, বিনা মূল্যে স্কুলের বই ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে পেরেছেন৷ তাছাড়া তাঁর পোশাক কারখানার চকচকে মেঝে, ‘ইমারজেন্সি এক্সিট' এবং ‘ফাস্ট এইড'-এর ব্যবস্থা থাকায় বিদেশি ক্রেতারাও খুব খুশি৷
পোশাক শিল্পে শ্রমশোষণ: ব্রিটেন থেকে বাংলাদেশ
দু মুঠো অন্নের সংস্থান করতে রানা প্লাজায় গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছিলেন এগোরো শ-রও বেশি মানুষ৷ যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের অনেকেরই বাকি জীবন কাটবে দুর্বিষহ কষ্টে৷ পোশাক শ্রমিকদের জীবনের এই নির্মমতার ইতিহাস কিন্তু অনেক দীর্ঘ৷
ছবি: DW/M. Mohseni
বৈশ্বিক শিল্প
প্রতিটি পোশাকে মিশে থাকে শ্রমিকের শ্রম-রক্ত-ঘাম৷ ১৯৭০-এর দশক থেকে ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো এশিয়া আর ল্যাটিন অ্যামেরিকার কিছু দেশ থেকে পোশাক কিনতে শুরু করে৷ খুব কম মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া যায় বলে দাম পড়ে কম, লাভ হয় বেশি৷ এমন সুযোগ ছাড়ে তারা! কম টাকায় পণ্য কিনবেন, ছবির মতো পোশক তৈরি হবে মিষ্টির দোকানে – তারপর আবার শ্রমিকের অধিকাররক্ষা, পরিবেশ দূষণ রোধ করবেন – তাও কি হয়!
ছবি: picture-alliance/dpa
সবার জন্য পোশাক
বড় আঙ্গিকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পোশাক তৈরি প্রথম শুরু হয়েছিল ব্রিটেনে, অষ্টাদশ শতাব্দীর সেই শিল্পবিপ্লবের সময়টাতে৷ এখন বিশ্বাস করতে অনেকের হয়ত কষ্ট হবে, তবে ইতিহাস বলছে, শিল্পবিপ্লবের ওই প্রহরে ব্রিটেনের লন্ডন আর ম্যানচেস্টারও শ্রমিকদের জন্য ছিল আজকের ঢাকার মতো৷ শতাধিক কারখানা ছিল দুটি শহরে৷ শিশুশ্রম, অনির্ধারিত কর্মঘণ্টার সুবিধাভোগ, অল্প মজুরি, কারখানার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ – সবই ছিল সেখানে৷
ছবি: gemeinfrei
সেই যুক্তরাষ্ট্র এখন কর্তৃত্বে
যুক্তরাষ্ট্রেও পোশাকশ্রমিকরা স্বর্গসুখে ছিলেন না সব সময়৷ সেখানেও এক সময় কারখানায় আগুন লাগলে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ভেতরে রেখেই সদর দরজায় তালা লাগাতো৷ ১৯১১ সালে তাই নিউ ইয়র্কের ট্রায়াঙ্গেল শার্টওয়েস্ট ফ্যাক্টরিতে পুড়ে মরেছিল ১৪৬ জন শ্রমিক৷ মৃতদের অধিকাংশই ছিলেন নারী৷ মজুরি, কর্মঘণ্টা, কর্মপরিবেশ, নিরাপত্তা – কোনো কিছুই এশিয়ার এখনকার কারখানাগুলোর চেয়ে ভালো ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পোশাক শিল্পে চীন বিপ্লব
পোশাক রপ্তানিকারী দেশগুলোর মধ্যে চলছে সবচেয়ে কম খরচে পোশাক তৈরির প্রতিযোগিতা৷ রপ্তানিকারী দেশগুলোর মধ্যে চীনের অবস্থা সবচেয়ে ভালো৷ রপ্তানি সবচেয়ে বেশি, শ্রমিকদের মজুরিও খুব ভালো৷ চীনে একজন পোশাক শ্রমিক এখন মাস শেষে ৩৭০ ইউরো, অর্থাৎ, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৭ হাজার টাকার মতো পেয়ে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শ্রমশোষণ কাকে বলে...
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর সুমাংগলি৷ তামিল শব্দ ‘সুমাংগলি’-র অর্থ, ‘যে নববধু সম্পদ বয়ে আনে’৷ এলাকায় পোশাক এবং সুতা তৈরির প্রশিক্ষণের নামে খাটানো হয় প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মেয়েকে৷ দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করে তাঁরা হাতে পান ৬০ ইউরো সেন্ট, অর্থাৎ বাংলাদেশের মুদ্রায় ৬০ টাকা৷ সে হিসেবে মাস শেষে পান ১৮০০ টাকা৷ টাকাটা তাঁদের খুব দরকার৷ বিয়ের সময় বাবাকে তো যৌতুক দিতে হবে!
ছবি: picture-alliance/Godong
অধিকার আদায়ের করুণ সংগ্রাম
কম্বোডিয়াতেও অবস্থা খুব খারাপ৷ ৩ লক্ষের মতো পোশাক শ্রমিক আছে সে দেশে৷ কাজের পরিবেশ আর অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কেমন? মাসিক বেতন মাত্র ৫০ ইউরো, অর্থাৎ বাংলাদেশের মুদ্রায় বড় জোর ৫ হাজার টাকা৷ মালিকের কাছে শ্রমিকদের মানুষের মর্যাদা প্রাপ্তি সৌভাগ্যের ব্যাপার৷ মজুরি বাড়ানোর দাবিতে মিছিলে নেমে শ্রমিকরা মালিকপক্ষের গুলিতে মরেছেন – এমন দৃষ্টান্তও আছে সেখানে৷
ছবি: Reuters
ট্র্যাজেডি
গত ২৪শে এপ্রিল বাংলাদেশের রানা প্লাজা ধসে পড়ায় মারা যান ১১শ-রও বেশি তৈরি পোশাককর্মী৷ দেয়ালে ফাটল ধরার পরও সেখানে কাজ চালিয়ে যাওয়ায় এতগুলো জীবন শেষ হওয়াকে বিশ্বের কোনো দেশই ভালো চোখে দেখেনি৷ ঘটনার পর জার্মানির এইচঅ্যান্ডএম, কেআইকে এবং মেট্রোসহ বিশ্বের ৮০টির মতো পোশাক কোম্পানি শ্রমিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পোশাক রপ্তানিকারী কারখানাগুলোর সঙ্গে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে৷
ছবি: Reuters
আলোয় ঢাকা আঁধার
অভিজাত বিপণিবিতান কিংবা দোকানের পরিপাটি পরিবেশে ঝলমলে আলোয় ঝিকমিক করে থরে থরে সাজানো বাহারি সব পোশাক৷ দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায়৷ ক্রেতাদের ক’জনের মনে পড়ে রানা প্লাজা কিংবা অতীতের ব্রিটেন বা যুক্তরাষ্ট্রের ভাগ্যাহতদের কথা?
ছবি: DW/M. Mohseni
8 ছবি1 | 8
জার্মানির অন্যতম ইন্টারনেটভিত্তিক কোম্পানি ‘ক্লিংগেল', ক্রীড়া সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘উলস্পোর্ট' অথবা হিপি ঘরানার পোশাক প্রস্তুতকারী কোম্পানি ‘ডেসিগুয়াল' বা ‘পাউল আর স্মিথ' প্রতিবছরই বাংলাদেশে কমপক্ষে পাঁচ লাখের মতো পোশাকের অর্ডার দেয়৷ কাটা, সেলাই থেকে শুরু করে প্যাকেট করা পর্যন্ত সবই করা হয়ে থাকে ‘ওয়ান কম্পোজিট মিলস'-এর মতো বাংলাদেশি কারখানাগুলোতে৷
শুধু নাসির উদ্দিনই নন, বাংলাদেশের অনেক পোশাক কারখানার মালিকই এখন রাজধানী ঢাকার বাইরে কারখানা গড়ে তুলছেন৷ যেমন ঢাকার অদূরে গাজীপুরেই বাস করেন প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ৷ জাতীয় শ্রমিক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট আমিরুল হক আমির বলেন, ‘‘ঢাকার বাইরে অবস্থিত কারখানাগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত জায়গা এবং সেখানে কাজের পরিবেশও তুলনামূলকভাবে ভালো৷''
বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের সব পোশাক কারখানার অবস্থা ‘ওয়ান কম্পোজিট মিলস'-এর মতো নয়৷ গত বছর পোশাক কারখানা তাজরীন ফ্যাশানস-এ আগুন লাগার ফলে বহু শ্রমিককে জীবন দিতে হয়েছে৷ এর পরের দুর্ঘটনা রানা প্লাজা৷ পোশাক শিল্প কারখানা রানা প্লাজা ধসে পড়ায় মারা যায় অন্তত এক হাজার একশো পোশাক শ্রমিক৷ আর তারপর থেকেই বাংলাদেশের পোশাক শিল্প কারখানার মালিকদের ওপর সারা বিশ্বের ক্রেতাদের বিশেষ নজর৷
এ সব দুর্ঘটনা সত্ত্বেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা কিন্তু সারা বিশ্ব কমেনি, বরং বেড়েছে৷ ৫২ বছর বয়সি নাসির উদ্দিন বিশ্বাসের সাথে বলেন, বিদেশি টেক্সটাইল ব্যবসায়ীদের আমাদেরকে প্রয়োজন, তা না হলে তাঁরা কোথায় তাঁদের পণ্য তৈরি করবেন? তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে পাকিস্তানের চেয়ে স্থিতিশীল, মিয়ানমারের চেয়ে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শাখা অনেক বেশি সংগঠিত, ফিলিপিন্সের চেয়ে কারখানাগুলো অনেক বড় এবং ভারতের চেয়ে অনেক সস্তা৷''
সাভারে ‘রানা প্লাজা’ ধসে বহু হতাহত
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷
ছবি: Reuters
আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷ সাভার মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার সকালে ফাটল দেখা দেয়ার পরপরই ওই ভবনে থাকা চারটি গার্মেন্ট কারখানা ও ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ তবে ২৪ এপ্রিল সকালে কারখানায় আবার কাজ শুরু হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বহু হতাহত
১০ মে সকাল পর্যন্ত ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে ১০৩৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ এসব লাশের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই’
ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বলছেন, ব্যাপক ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে৷ এমন ধ্বংসস্তূপ সরানোর মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই৷ এ কারণে উদ্ধারকাজ চালাতে সমস্যা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters
এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন
সাভারে ধসে পড়া বহুতল ভবনে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা৷ সকালে ভবন ধসের পরপরই স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতায় এগিয়ে আসেন৷ এরপর ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন৷
ছবি: Reuters
রক্ত চাই
ধ্বংসস্তুপ থেকে থেকে উদ্ধার করা শত শত আহতের জন্য প্রচুর রক্ত প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা৷ এজন্য ব্লগ, ফেসবুকের মাধ্যমে সকলকে রক্ত দানে আহ্বান জানানো হয়েছে৷ বিভিন্ন সংগঠনও রক্ত সংগ্রহে নেমেছে৷
ছবি: Reuters
জোর করে ঢোকানোর অভিযোগ
আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা দেয়ায় ঐ ভবনে থাকা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যেতে না চাইলেও মালিকরা তাদেরকে জোর করে ঢুকিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে৷
ছবি: Reuters
ইমারত বিধিমালা মানা হয়নি
‘রানা প্লাজা’ ইমারত বিধিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ করে নির্মিত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর৷ বুধবার দুপুরে তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন৷ বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷'' (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
হরতাল প্রত্যাহার
উদ্ধার তৎপরতা নির্বিঘ্ন এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার পথে বাঁধা দূর করতে হরতাল প্রত্যাহার করেছে বিএনপি৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷
ছবি: Harun Ur Rashid
সরকারের আশ্বাস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য যা যা করা দরকার তা করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার৷
ছবি: dapd
খালেদার শোক প্রকাশ
ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ উদ্ধারকাজ যথাযথভাবে চালাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ খালেদা জিয়া শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
আন্তর্জাতিক চাপ ও পোশাক শ্রমিকদের প্রতিবাদের ফলে গত ডিসেম্বরে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৩,০০০ থেকে বেড়ে ৫,৩০০ টাকা হয়েছে৷ পোশাক শ্রমিক সংগঠনের কর্মী নাজমা আক্তার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘যখন থেকে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে, ঠিক তখন থেকেই শ্রমিকদের বাড়ির মালিকরাও ওঁদের ঘর ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে৷''
স্বাভাবিকভাবেই, এ নিয়ে চিন্তিত নাজমা৷ তিনি মাত্র ১১ বছর বয়সে পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেছিলেন৷ তবে আজকাল শিশুশ্রম আর আগের মতো একটা বড় সমস্যা নয়, বলেন নাজমা আক্তার৷ পোশাক শ্রমিকদের অধিকার, ছুটি, সময়মতো বেতন পাওয়া, খাওয়ার পানি – এ সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন নাজমা৷ এছাড়া তাঁর শ্রমিক সংগঠনের মাধ্যমে নারী কর্মী ও শ্রমিকরা তাঁদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারেন৷ বেতন, মাতৃত্বকালীন ছুটি ইত্যাদি দাবি নিয়ে তাঁরা কথা বলতে পারেন কারখানার মালিকদের সাথে৷
নাজমা আক্তারের কাছে অনেকেই আসেন, জানান তাঁদের কারখানার অব্যবস্থাপনার কথা৷ যেমন কারখানায় আলো-বাতাসের ব্যবস্থা নেই, ‘ইমারজেন্সি এক্সিট' বন্ধ থাকে বা খুলে দেওয়ার কেউ নেই, মালামাল রাখার ঘরে যাওয়ার পথ খুবই সরু – এ ধরণের নানা সমস্যার কথা জানান তাঁরা৷
বাংলাদেশে কর্মরত জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড-এর মাগনুস স্মিড জানেন, ‘‘বাংলাদেশের পোশাক শিল্প আইনটির বাস্তবায়ন করাই হলো বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ সেজন্য জিআইজেড ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন আইএলও একযোগে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার জন্য নিয়ন্ত্রণকারী বা পরিদর্শকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে৷ বাংলাদেশে মোট সাড়ে পাঁচ হাজার পোশাক কারখানার জন্য মাত্র ১৯ জন নিযন্ত্রণকারী ছিলেন৷ এবার এই সংখ্যা বাড়িয়ে ৪১ জন করা হবে বলে জানান মাগনুস স্মিড৷
জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড এবং আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন আইএলও বাংলাদেশের পোশাক কারখানার নিরাপত্তার জন্য একটি বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যাতে ইতিমধ্যেই স্বাক্ষর করেছে মোট ১০০টি প্রতিষ্ঠান৷ তাদের মধ্যে রয়েছে আডিডাস, লিডল, আলডি, এসপ্রি, কারস্টাট, কিক, মেট্রো, অটো, পুমা, রেভে, এস. অলিভার এবং চিবো৷