1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পোশাক শ্রমিকদের জন্য আশ্বাস আছে, অনেক পেশাজীবীর তা-ও নেই

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৪ জুলাই ২০২০

পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ঈদের আগে বেতন-বোনাসের আশ্বাস থাকলেও ব্যাংকার, সাংবাদিকসহ আরো কিছু পেশাজীবীদের সামনে তা-ও নেই৷ ঈদের আগে জুলাই মাসের বেতন তো দূরের কথা, বোনাস শেষ পর্যন্ত কতটুকু পাওয়া যাবে তারও ঠিক নেই৷

Bangladesch Dhaka Proteste von Textilarbeitern
ছবি: bdnews24.com/M.Z. Ovi

জুলাইয়ের বেতন-ভাতা পরিশোধে সরকার পোশাক কারখানার জন্য আরো তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ দেয়ায় শ্রমিকদের এবারের বেতন-বোনাস নিয়ে তেমন কোনো সংকটিকহবে না বলে মনে করেন বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান৷ এর আগে তাদের দুই দফায় মোট সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঋণ দেয়া হয়েছে৷ এবার তিন হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে শতকরা সাড়ে চার ভাগ হার সুদে৷

শ্রম মন্ত্রণালয় পোশাক কারখানায় আগামী ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে বোনাস এবং ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই মাসের কমপক্ষে অর্ধেক বেতন পরিশোধের নির্দেশনা দিয়েছে৷ কিন্তু ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, ‘‘এই নির্দেশনার মাধ্যমে সরকারই পোশাক শিল্পের মালিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে টালবাহানা করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে৷ তারা যেহেতু ঋণ পাচ্ছে, তাই জুলাই মাসের পুরো বেতনই দেয়ার দাবি করেছি আমরা৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘বোনাসের কোনো নীতিমালা নাই৷ যে যার মতো দেয়, কেউ আবার দেয় না৷ এটা মূল বেতনের সম পরিমাণ হতে হবে৷ ৩০ জুলাই বেতন না দিলে মালিকদের আর পাওয়া যাবে না৷ কারণ, ঈদের জন্য পোশাক কারখানা তখন বন্ধ হয়ে যাবে৷''

ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের হিসেবে করোনায় এ পর্যন্ত এক লাখ ১৫ হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছে৷ আর অনেক পোশাক কারখানা জুন মাসের বেতনই এখনো দেয়নি৷ তাদের ব্যাপারে বিজিইমএ বা সরকার কোনো কথা বলছে না৷ বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি জানান, ‘‘এক হাজার দুইশ'র মতো কারখানা জুন মাসেরই বেতন দেয়নি৷ আসলে তারা সরকারের নির্দেশনা মানে না৷ তাই আশঙ্কা করছি, এবার ঈদেও তারা বেতন- বোনাস দেবে না৷ তাই আগে থেকেই মনিটরিং দরকার৷''


বন্যার কারণে পোশাক শ্রমিকদেরঅনেক পরিবার বিপাকে আছে৷ তাই তাদের জন্য সরকারের আলাদা উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি৷ বিজিএমইএ'র হিসেবে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানা দুই হাজার ২৭৪টি৷ এইসব কারখানায় ২৪ লাখ ৭২ হাজার ৪১৭ জন শ্রমিক আছেন৷ কিন্তু বাস্তবে পোশাক কারখানার সংখ্যা সারাদেশে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি৷ কারণ, অনেক কারখানা আছে, যারা সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করে৷ এসব কারখানায় পঞ্চাশ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করেন৷ এরই মধ্যে করোনার কারণে পোশাক কারখানার যেসব অর্ডার বাতিল হয়েছিল তার প্রায় ৮০ ভাগ ফিরে এসেছে৷ নতুন অর্ডারও আসছে৷ বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বাতিল অর্ডার ফিরে আসা এবং নতুন অর্ডার আসার কথা স্বীকার করেন৷ তবে তিনি বলেন, পুরো মাত্রায় উৎপাদনে যেতে আরো সময় লাগবে৷ তার মতে, জুলাই মাসের জন্য সরকার তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়ায় এবার বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়৷ তারপরও এক হাজারের বেশি পোশাক কারখানা এখনো জুন মাসের বেতন কেন দিতে পারেনি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সরকার যে প্রণোদনা ঋণ দিচ্ছে, তা বিজিএমইএ'র সদস্যভুক্ত পোশাক কারখানাগুলো পায়৷ এর বাইরে আরো অনেক পোশাক কারখানা আছে, যারা সরাসরি রপ্তানি করে না৷ সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করে৷ সমস্যাটা তাদের নিয়েই হয়৷ সরকারকে তাই আমরা অনুরোধ করেছি তাদের জন্যও যেন আলাদা কোনো প্যাকেজের ব্যবস্থা করা হয়৷''

‘যারা সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করে, সমস্যাটা তাদের নিয়েই হয়’: সিদ্দিকুর রহমান

This browser does not support the audio element.

জানা গেছে, পোশাক কারখানার মালিকরা বোনাস দেন তাদের ইচ্ছামতো৷ কেউ ২০ ভাগ, কেউ ৫০ ভাগ৷ আবার কেউ দেন না৷ নিয়ম অনুযায়ী, মূল বেতনের সমপরিমাণ বোনাস দেয় এরকম কারখানার সংখ্যা হাতে গোনা৷ আর তারা এবার জুলাই মাসের বেতন ঈদের আগে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহের দেবেন বলে জানা গেছে৷ তবে বিজিএমইএ'র বাইরে আরো যে আড়াই-তিন হাজার কারখানা আছে সেখানে কী হবে কেউ বলতে পারছেন না৷

তাদের দেখার কেউ নেই

ব্যাংকগুলোর অধিকাংশই এরইমধ্যে জুলাই মাসের বেতন এবং ঈদের বোনাস পরিশোধ করেছে।  যারা বাকি আছে তারা রবিবারের মধ্যে পরিশোধ করবে। আর যে কয়েকটি ব্যাংক বেতন কমিয়েছে তারাও আনুপাতিক হারে বেতন বোনাস দিচ্ছে। সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা ঈদের আগেই জুলাই মাসের বেতন এবং বোনাস পচ্ছেন। বাকিরা শুধু বোনাস পাচ্ছেন। জুলাই মাসের বেতন পাবেন নির্ধারিত আগস্ট মাসের সাত তারিখের মধ্যে।

কিন্তু অনেক সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে এখনো জুন মাসেরই বেতন হয়নি৷ জুলাই মাসের বেতন ঈদের আগে পাওয়ার কোনো আশাই নেই বলে জানান ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য৷ বোনাসও হয়ত হবে না৷ যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বোনাস দেয়ও তাহলে আংশিক দেবে বলে মনে করেন তিনি৷ আর মাঝারি ও ছোট প্রতিষ্ঠানে এখন বেতন-বোনাস বলে কিছু নেই৷

‘সাংবাদিকদের ট্রেড ইউনিয়নের ব্যর্থতার কারণে গণমাধ্যম কর্মীদের অবস্থা শোচনীয়’: আহম্মদ ফয়েজ

This browser does not support the audio element.

গণমাধ্যম কর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ ‘আমাদের গণমাধ্যম আমাদের অধিকার'-এর প্রধান সমন্বয়ক ও নিউ এজ পত্রিকার সাংবাদিক আহম্মদ ফয়েজ বলেন, ‘‘পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন আছে৷ সরকারের মনিটরিং আছে, প্রণোদনা আছে, আন্তর্জাতিক চাপ আছে৷ তাই তারা শেষ পর্যন্ত বেতন আদায় করতে পারে৷ কিন্তু সাংবাদিকদের ট্রেড ইউনিয়নের ব্যর্থতার কারণে গণমাধ্যম কর্মীদের অবস্থা শোচনীয়৷ আমরা পোশাক শ্রমিকদের চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছি৷''

বিজিএমইকে তালিকা প্রকাশ করতে হয় কতজন শ্রমিক বেতন পেলো, কত শ্রমিকপেলো না৷ সংবাদমাধ্যকেও সেই তালিকা প্রকাশের জন্য এখন ইউনিগুলোর চাপ দেয়া উচিত বলে মনে করেন এই সাংবাদিক৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ