বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক নিরাপত্তা উন্নয়নে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে ওয়ালমার্ট৷ এই ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে স্বল্প সুদে দেয়া হবে৷ বিজিএমইএ-র সহ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান এ তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
গত ২৫শে এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১,১২৯ জন পোশাক শ্রমিক নিহত হওয়ার পর, শ্রমিক নিরাপত্তার ব্যাপারে ক্রেতাদের দায়দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন ওঠে৷ জুলাই মাসে ওয়ালমার্ট ও গ্যাপসহ বেশ কয়েকটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ১০০ মিলিয়ন মর্কিন ডলার ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়৷ তারই অংশ হিসেবে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোকে ৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে বলে জানা গেছে৷ এ জন্য তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছে৷ অবশ্য বাংলাদেশের পোশাক কারখানার নিরপত্তা উন্নয়নে কী করণীয়, তা ঠিক করার পরই এই অর্থ দিতে চায় তারা৷
মৃত্যুকূপ থেকে যেভাবে ফিরলেন রেশমা
সাভারে ধসে পড়া ভবন থকে ১৭ দিন পর উদ্ধার করা হয় জীবিত রেশমাকে৷ এই সতের দিন তিনি কিভাবে কাটিয়েছেন? প্রশ্ন অনেকের মনে৷ চলুন উত্তর খোঁজা যাক৷
ছবি: Getty Images/AFP/STRDEL
সুস্থ আছেন রেশমা
সাভারে ধসে পড়া ভবন থকে ১৭ দিন পর উদ্ধার করা হয় জীবিত রেশমাকে৷ তিনি এখন সুস্থ আছেন৷ কিন্তু ধসে পড়া রানা প্লাজার মধ্যে কিভাবে সতের দিন কাটিয়েছেন তিনি? প্রশ্ন অনেকের মনে৷ চলুন ছবিতে উত্তর খোঁজা যাক৷
ছবি: Reuters
উদ্ধার অভিযান
১০ মে স্থানীয় সময় বিকেল সোয়া ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকর্মী রাজ্জাক ধসে পড়া ভবনের মধ্যে বেঁচে থাকা একজন মানুষের উপস্থিতি টের পান৷ সেই মানুষটি রেশমা৷ তিনি একটি ভাঙা পাইপ দিয়ে নিজের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন এবং তাঁকে বাঁচানোর অনুরোধ জানান৷ এরপর রড কেটে ভিতরে ঢুকে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে রেশমাকে বাইরে নিয়ে আসা হয়৷
ছবি: Getty Images/STRDEL
যেভাবে টিকে ছিলেন রেশমা
১৭ দিন রেশমা কি খেয়ে টিকে ছিলেন সেই প্রশ্ন অনেকের৷ উদ্ধারকর্মী রাজ্জাক জানান, ‘‘রেশমা যে তলায় আটকে ছিলেন সেটা অন্যান্য তলার মতো মিশে যায়নি৷ সেখানে হাঁটা-চলা এবং নড়া-চড়া করার কিছুটা সুযোগ ছিল৷ রেশমা তাঁকে জানান যে, ঐ জায়গায় বিভিন্ন ধরনের শুকনা ও জুস জাতীয় খাবার ছিল, যা তিনি খেয়েছেন৷ ৭ মে শুকনা খাবার শেষ হয়ে যায় আর রসালো খাবার যায় পচে৷ ফলে শেষের দু’দিন ধরে তিনি অভুক্ত ছিলেন৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/STRDEL
চিকিৎসকের ব্যখ্যা
ধ্বংসস্তূপের নীচে রেশমার এই ১৭দিন বেঁচে থাকার ঘটনাকে ডয়চে ভেলের কাছে ব্যাখা করেছেন মিটফোর্ড হাসপাতালের চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. মনি লাল আইচ৷ তিনি বলেন, ‘‘রেশমা ১৭ দিনে হৃদরোগ বা নিউরোলোজিক্যাল সমস্যায় পড়তে পারতেন৷ হয়ত মানসিক জোর এবং বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছার কারণেই তাঁকে সেই সমস্যায় পড়তে হয়নি৷ আর গবেষণায় প্রমাণিত যে নারীদের মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি৷’’
ছবি: Reuters
গোটা বিশ্বে আলোড়ন
রেশমাকে ১৭ দিন পর জীবিত উদ্ধারের খবরে গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত সাভারে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এই তরুণীকে দেখতে যান৷ রেশমাকে কেউ যাতে মানসিকভাবে পীড়া না দেয় সেজন্যও সবাইকে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা৷
ছবি: dapd
তৃতীয় নারী রেশমা
১৭ দিন ধরে অন্ধকারে ডুবে থাকা রেশমাকে উদ্ধারের খবরের সঙ্গে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে বিবিসি৷ এতে দেখা যাচ্ছে, এর আগে পাকিস্তানে একই রকম পরিস্থিতিতে নাকাশা বিবি নামক এক নারী পচা খাবার আর পানি খেয়ে টিকে ছিলেন ৬৩ দিন৷ আর হাইতির ইভান্স মোনসিজনাক টিকে ছিলেন ২৭ দিন৷ এই সময়ের পর তাদের জীবিত উদ্ধার করা হয়৷
ছবি: Getty Images
পরিবারের সঙ্গে দেখা
রেশমার মা জোবেদা খাতুন, দুই ভাই ও বোন আসমা গত কয়েকদিন ধরেই রয়েছেন সাভারে৷ হাসপাতালে রেশমার সঙ্গে দেখা করেছেন তারা৷ রেশমার বড় ভাই জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘‘বর্তমানে রেশমা ভালো আছে, সুস্থ আছে৷’’
ছবি: Reuters
বাড়ছে মৃতের সংখ্যা
এদিকে, সাভারে ভবন ধসে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে৷ গত ২৪ এপ্রিল ভবন ধসের পর ১২ মে অবধি উদ্ধার করা হয়েছে ১,১২৭ টি মৃতদেহ৷ নিহতদের মধ্যে ঠিক কতজন নারী আর কতজন পুরুষ – সেই হিসেব এখন আরা জানা যাচ্ছে না৷ অনেক মরদেহ পচে গেছে৷ গোটা বিশ্বে স্মরণকালের মধ্যে ভয়াবহতম ভবন ধস এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তবুও কি সতর্ক আমরা?
সাভার ভবন ধসের পর কতটা সতর্ক হয়েছে বাংলাদেশ? এই প্রশ্ন অনেকর মনে৷ বিশেষ করে, যে পোশাক খাত বাংলাদেশকে গোটা বিশ্বের কাছে পরিচিত করে তুলছে, সেই খাতের শ্রমিকদের নিরাপত্তায় সরকার কতটা সচেষ্ট? সর্বশেষ খবর হচ্ছে, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক শিল্পের যে নেতিবাচক ‘ইমেজ’ তৈরি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতেই এই পদক্ষেপ৷
ছবি: Reuters
‘আমাদের ব্যর্থতার প্রতীক’
শান্তিতে নোবেল জয়ী বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনূস গত ৯ মে একটি নিবন্ধের একাংশে লিখেছেন, ‘‘সাভার ট্র্যাজেডি জাতি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতার প্রতীক৷ রানা প্লাজার ফাটল ফেটে ভবন ধসে দেখিয়ে দিলো আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যে বিশাল ফাটল ধরেছে সেটা আমলে না নিলে জাতিও এরকম ধসের ভেতর হারিয়ে যাবে৷’’
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র সহ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ওয়ালমার্টের এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক৷ তিনি মনে করেন এই ঋণ সহায়তা ছোট ছোট কারখানাগুলোর শ্রমিক নিরপত্তা এবং কর্ম পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক হবে৷ তবে বড় কারখানাগুলো শ্রমিক নিরাপত্তার উন্নয়নে নিজেরাই কাজ করছে৷ আর তাদের কাজ মনিটরিং করছে বিজিএমইএ৷ ওদিকে ওয়ালমার্ট বাংলাদেশের ২৮০টি পোশাক কারখানার ওপর নজর রাখছে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, শ্রমিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার প্রধান কারণ দুর্বল কারখানা ভবন৷ রানা প্লাজা ধসই তার প্রমাণ৷ ত্রুটিপূর্ণ অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আরেকটি কারণ৷ গত নভেম্বরে তাজরীন ফ্যাশানস-এ আগুন লেগে ১১২ জন পোশাক শ্রমিক নিহত হন৷ তাঁর মতে, ওয়ালমার্টের এই ঋণ দিয়ে কারাখানা ভবন নির্মাণ বা অগ্নি-নিরাপত্তার যন্ত্রপাতি কেনা সম্ভব নয়৷ কারণ তার জন্য ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তেমন কোনো অর্থ নয়৷ তাই এই ঋণের অর্থ দক্ষতা উন্নয়নে ব্যবহার করা যায়৷ পোশাক কারখানাগুলো যাতে শ্রমিক নিরাপত্তা এবং কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাধ্য হয়, সেই ধরণের নজরদারি প্রতিষ্ঠান ও জনবল গড়ে তোলা যায়৷ পোশাক কারখানাগুলোতে অগ্নি-নিরাপত্তার জন্যও দক্ষ জনবল, প্রশিক্ষণ দেয়া যায়৷
অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, এই কাজগুলো করা গেলে শ্রমিক নিরপত্তা বাড়বে৷ উন্নতি হবে কর্ম পরিবেশের৷ তাঁর মতে, বাংলাদেশে ঋণের টাকা অপচয় বা অপব্যবহরের অনেক নজির আছে৷ আছে এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যবহারের উদাহরণ৷ তাই এই ঋণ যেন আসলেই শ্রমিকদের স্বার্থে ব্যবহার হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে বলেন মনে করেন ড. হেলাল৷