জার্মানির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিলস আনেন সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন৷ সেই সফর নিয়ে ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি রোহিঙ্গা সংকট ও পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে কথা বলেছেন৷
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, বাংলাদেশেরপোশাক শ্রমিকদের বর্তমান ন্যূনতম মজুরি খুবই কম৷ তাই শ্রমিকদের আয় বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি, কর্তৃপক্ষ ও এনজিওদের সঙ্গে জার্মানি কাজ করছে বলে জানান জার্মান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী৷ তবে এক্ষেত্রে ইউরোপীয় ক্রেতাদেরও কেনাকাটার অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে, বলে মনে করেন তিনি৷
বাংলাদেশ সফরে জার্মান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পোশাক শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন৷ রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পোশাক কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশের কিছুটা উন্নতি হলেও পরিস্থিতি এখনও সন্তোষজনক নয়, বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
জার্মান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আনেন মনে করেন,রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে এখনও অনেক সময় লাগতে পারে৷ তাঁরা নিরাপদে মিয়ানমারে ফিরতে পারবেন বলে এখনও মনে করেন না রোহিঙ্গারা৷ তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ফেরার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকার ও সাধারণ মানুষের এখনও বেশ আপত্তি আছে৷ সেটি কমাতে ভারত ও চীনের সঙ্গে জার্মানি আলোচনা করছে, বলে জানান জার্মান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী৷
বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিকদের পাশে জার্মানি
রানা প্লাজা বিপর্যয়ের দেড় বছর পর জার্মানি যে ‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’ চালু করেছে, সে উপলক্ষ্যে ফেডারাল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার বাংলাদেশ যান৷ নিজের চোখে দেখেন সেখানকার মানুষ ও তাঁদের উন্নয়নকে৷
ছবি: DW/S. Burman
‘মেড ইন বাংলাদেশ’
রানা প্লাজা বিপর্যয় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্টস রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে৷ চালু হয়েছে ‘‘অ্যাকর্ড’’, ‘‘অ্যালায়েন্স’’ এবং ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’ মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, যার উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের গার্মেন্টস ওয়ার্কারদের কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা৷
ছবি: DW/S. Burman
একযোগে
জার্মান উদ্যোগের লক্ষ্য হলো, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এক করা৷ গাজিপুরের ডিবিএল গ্রুপ ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’-এ যোগ দিয়েছে ও ইতিমধ্যেই একাধিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করেছে৷ জার্মান উন্নয়নমন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং এই আশা প্রকাশ করেন যে, অন্যান্য সংস্থাও এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে৷
ছবি: DW/S. Burman
মোটরসাইকেলে
প্রায় দেড়’শ নতুন লেবার ইনস্পেক্টরদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে, কারখানাগুলোর পরিস্থিতির উপর নজর রাখার জন্য৷ কোনো সংকট ঘটলে যানজট এড়িয়ে চটজলদি অকুস্থলে পৌঁছানোর জন্য তাদের মোটরসাইকেল দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/S. Burman
লুডো খেলাও সচেতনতা বাড়ায়
গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকরা প্রধানত মহিলা, নিজেদের আইনি দাবিদাওয়া সম্পর্কে তাঁদের বিশেষ ‘জানকারি’ নেই৷ কাজেই কারখানায় ‘‘মহিলাদের কাফে’’ সৃষ্টি করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সেই সঙ্গে বিনোদনের জন্য লুডো খেলা৷
ছবি: DW/S. Burman
কাজের জায়গায়
পরিস্থিতি কিছুটা অন্যরকম৷ দিনে দশ থেকে চোদ্দ ঘণ্টা কাজ৷ ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’ এই অনলস কর্মীদের কাজের পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে চায়৷
ছবি: DW/S. Burman
রাজনীতিও শামিল
বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গাজিপুরের ডিবিএল গ্রুপের ফ্যাক্ট্রিতে জার্মান উন্নয়নমন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলারের সঙ্গে যোগ দেন এবং সহযোগিতা সম্পর্কে আলোচনা করেন৷ গার্মেন্টস শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি ঘটানোর জন্য সরকারের উদ্যোগ বিশেষভাবে প্রয়োজন৷
ছবি: DW/S. Burman
মিনি ফায়ার ব্রিগেড
গ্যার্ড ম্যুলার গাজিপুরে ডিবিএল গ্রুপের কারখানার নতুন ‘খুদে দমকল বাহিনীর’ উদ্বোধন করেন৷ এই ফায়ার ব্রিগেড এক কিলোমিটার ব্যাসের এলাকার মধ্যে অগ্নি নির্বাপণে সক্ষম৷ ম্যুলারের সঙ্গে ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ৷
ছবি: DW/S. Burman
চাইল্ড কেয়ার
শ্রমিক কল্যাণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে কারখানা প্রাঙ্গণে ডে-কেয়ার সেন্টার সৃষ্টি করে মহিলা শ্রমিকদের শিশুসন্তানদের দেখাশোনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Burman
সবে মিলে করি কাজ
জার্মান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা, মালিকপক্ষ, বিদেশি ক্রেতা এবং অপরাপর সংশ্লিষ্টরা সকলে একত্রিত হয়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করছেন৷
ছবি: DW/S. Burman
লক্ষ্য
বাংলাদেশ বর্তমানে ২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গার্মেন্টস রপ্তানি করে থাকে৷ সরকার সেটাকে ২০২১ সাল – অর্থাৎ দেশের পঞ্চাশতম বার্ষিকীর মধ্যে ৫০ বিলিয়নে দাঁড় করাতে চান৷ জার্মান উন্নয়ন মন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার গত ৭ই অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন৷
ছবি: DW/S. Burman
10 ছবি1 | 10
রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি যেন আন্তর্জাতিক বিশ্বের চোখের আড়ালে পড়ে না যায় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় জার্মানি৷ জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সদস্য এবং আগামী বছর থেকে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে জার্মানি এই বিষয়ে কাজ করবে বলে জানান আনেন৷ তিনি বলেন, বিশ্বে নতুন কোনো সংকট তৈরি হলে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি চাপা পড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কায় আছে বাংলাদেশ৷
রোহিঙ্গাদের ফেরা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারকে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে বলে মনে করেন জার্মান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী৷ আন্তর্জাতিক বিশ্বকে এ লক্ষ্যে কাজ করতে হবে বলে জানান তিনি৷
বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের কথা
জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, নভেম্বরের ১৯ থেকে ২১ তারিখ, এই তিনদিনে বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে শত শত রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
সহিংসতা
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৮৬ জন প্রাণ হারিয়েছে৷ গৃহহীন হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার জন৷ অক্টোবরের ২৭ তারিখে তোলা এই ছবিতে ঐ রাজ্যের একটি গ্রামের বাজার দেখা যাচ্ছে, যেটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল৷ শিশুরা সেখান থেকে বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহ করছে৷
ছবি: Reuters/Soe Zeya Tun
পালিয়ে বাঁচা
সহিসংতা থেকে বাঁচতে নভেম্বরের ১৯ থেকে ২১ তারিখ শত শত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীরা৷ উপরের ছবিটি ২১ নভেম্বরের৷ কক্সবাজারের কুটুপালাং শরণার্থী কেন্দ্রে বসবাসরত রোহিঙ্গা নারীরা নতুন আসা শরণার্থীদের দেখছেন৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
নতুন শরণার্থী
মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়ে কুটুপালাং শরণার্থী কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন নতুন শরণার্থীরা৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
ধরা পড়ায় কান্না
অবৈধভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত পার হওয়ায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা তাদের ধরেছে৷ মুসলিম নারী ও তাঁর সন্তানরা তাই কাঁদছেন৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
অপেক্ষা
কুটুপালাং ক্যাম্পে ঢোকার অপেক্ষায় নতুন আসা রোহিঙ্গারা৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
সন্তানসহ মা
মুসলিম এই রোহিঙ্গা নারী তাঁর সন্তানকে নিয়ে কুটুপালাং শিবিরে ঢোকার অপেক্ষায় আছেন৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
শরণার্থী শিশু
কুটুপালাং শরণার্থী কেন্দ্রের রোহিঙ্গা শিশুরা স্কুলে পড়াশোনার ফাঁকে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
আদি বাসিন্দা
কুটুপালাং ক্যাম্পে নিজেদের বাড়িতে শিশুরা৷
ছবি: Reuters/M.P.Hossain
বাড়ির আঙিনায়
একজন রোহিঙ্গা নারী তাঁর সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে কুটুপালাং শরণার্থী শিবিরে তাঁর বাড়ির সামনে বসে আছেন৷