1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পোশাক শ্রমিকদের মজুরি কমেছে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৪ এপ্রিল ২০১৯

নতুন মজুরি কাঠামোতে পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ার কথা বলা হলেও প্রকৃত অর্থে তাঁদের বেতন বাড়েনি, বরং কমেছে৷ টিআইবি তাদের এক গবেষণায় এই তথ্য প্রকাশ করেছে৷ শ্রমিক নেতা এবং অর্থনীতিবিদরাও এই গবেষণার সঙ্গে একমত৷ 

Textilfabrik in Rangun
ছবি: picture-alliance/dpa

মঙ্গলবার প্রকাশিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি-র প্রতিবেদনে বলা হয়, তৈরি পোশাক খাতে ২০১৮ সালের নতুন কাঠামোয় মজুরি বাড়েনি, প্রকৃতপক্ষে ২৬ শতাংশ কমেছে৷ গবেষণা বলছে, ২০১৩ সালের মজুরি বোর্ড অনুযায়ী প্রথম (এক) গ্রেডে মজুরি ছিল ৮ হাজার ৫০০ টাকা৷ আর ১৪ জানুয়ারি ঘোষিত প্রথম গ্রেডে নতুন মজুরি করা হয়েছে ১০ হাজার ৯৩৮ টাকা৷

কিন্তু শ্রমিকদের মজুরি (মূল বেতন) প্রতিবছর শতকরা ৫ ভাগ হারে বাড়ার (ইনক্রিমেন্ট) কথা৷ তাই ২০১৩ সালের বেতন কাঠামো অনুসারে ২০১৮ সালেই প্রথম গ্রেডে মজুরি হওয়ার কথা ছিল ১৩ হাজার ৩৪৩ টাকা৷ সেই হিসেবে এ মজুরি ২৮ শতাংশ, তথা ২ হাজার ৪০৫ টাকা কমেছে৷ একইভাবে প্রতিটি গ্রেডে নতুন কাঠামোতে ২৫ থেকে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত মজুরি কমেছে৷ অর্থাৎ গড়ে ২৬ শতাংশ মজুরি কমেছে৷

অপুষ্টিতে ভুগে অনেক শ্রমিক মারাও যায়:শামিম খান

This browser does not support the audio element.

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ সবচেয়ে কম মজুরির দেশ৷ জিডিপির হারে তুলনা করলে বাংলাদেশে মজুরি সব থেকে কম৷ বাংলাদেশে ন্যূনতম মজুরি ১০১ ডলার৷ অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ কম্বোডিয়ায় ১৯৭ ডলার, ভারতে ১৬০ ডলার, ভিয়েতনামে ১৩৬ ডলার, ফিলিপাইন্সে ১৭০ ডলার৷ কম্বোডিয়ার তুলনায় বাংলাদেশে ন্যূনতম মজুরি হওয়ার কথা ২০২ ডলার৷

‘তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন: অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক এই গবেষণাটি করেন টিআইবি-র ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) মো. মোস্তফা কামাল ও সহকারি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) নাজমুল হুদা মিনা৷ নাজমুল হুদা মিনা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইনক্রিমেন্টর বিষয়টি অবশ্য বিবেচনায় নিতে হলে একজন শ্রমিককে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত একই পোশাক কারখানায় কাজ করতে হবে৷ আমাদের পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমিক মাইগ্রেশন বেশি৷ ফলে এটার হিসাব অনেক জটিল৷'' 

আমিরুল ইসলাম আমিন বেতন বাড়ানোর মধ্যে বড় ধরণের ভেল্কিবাজি আছে

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ তৃনমূল গার্মেন্টম শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শামিম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন ন্যূনতম মজুরি ৮,২০০ টাকা৷ যদি চার সদস্যের একটি পরিবার বিবেচনা করা হয় তাহলে তাদের বাসা ভাড়া লাগে কমপক্ষে চার হাজার টাকা৷ এরপর খাবার খরচ আছে ৫-৬ হাজার টাকা৷ তারপর চিকিৎসা, যাতায়ত, শিক্ষাসহ আরো অনেক খরচ আছে৷ ফলে শ্রমিদের কম খেতে হয়৷ চিকিৎসা পায় না৷ অপুস্টিতে ভোগে অনেক শ্রমিক মারাও যায়৷''

তিনি বলেন, ‘‘শতকরা ৫ ভাগ হারে ইনক্রিমেন্ট হলে ২০১৩ সালের তুলনায় যে বেতন বাড়ার কথা ছিল তাও বাড়েনি৷ আর নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে৷ ২০১৩ সালে ২৫ টাকা কেজির চাল এখন ৫০ টাকা৷ এটাও বিবেচনায় নেয়া হয়নি৷ পুরোই আমাদের ফাঁকি দেয়া হয়েছে৷ আমরা চেয়েছিলামাম সর্বনিম্ন মজুরি ১৮ হাজার টাকা করা হোক৷ আর যে মজুরি বাড়ানো হয়েছে তা-ও সব পোশাক কারখানায় কার্যকর করা হয়নি৷''

 জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল ইসলাম আমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রতিবছর শতকরা ৫ ভাগ ইনক্রিমেন্ট, মূল্যস্ফীতি এ সব বাদ দিলেও এই বেতন বাড়ানোর মধ্যে আরো বড় ধরনের ভেল্কিবাজি আছে৷ মালিকরা যে বেতন বেড়েছে বলছেন তাতে গড়ে মূল বেতন হয়েছে মোট বেতনের ৫১ ভাগ৷ কিন্তু এর আগে মুল বেতন ছিল ৬০ ভাগ৷ বোনাস, ওভারটাইম এগুলো নির্ধারণ হয় মূল বেতনের ভিত্তিতে৷ ফলে যেটা হলো শ্রমিকরা এখন বোনাস, ওভারটাইম আনুপাতিকভাবে কম পাবেন৷'' 

আমি মনে করি মজুরি নিয়ে এই সমস্যা সব পোশাক কারখানার নয়: ড. নাজনীন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

টিআইবি-র এই গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ মনে করেন, ‘‘২০১৩ সালকে ভিত্তি ধরলে ২০১৮ সালে যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে, তাতে তখনকার ৫ হাজার টাকা ২০১৮ সালে ৮ হজার টাকার সমান৷ ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে সাধার মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নেয়া হয়নি৷ অথবা মূল্যস্ফীতির সমান বাড়ানো হয়েছে৷ তাহলে ইনক্রিমেন্ট বা অন্য বিষয় কেথায় যাবে? আমি মনে করি এই বেতন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘পোশাক কারখানার মালিকরা কিন্তু প্রতিশ্রতিবদ্ধ যে তাদের শ্রমিকদের বেতন ডাটাবেজ আকারে প্রকাশ করবেন৷ এটা প্রকাশ করা উচিত৷ তাহলে বেতন নিয়ে কোথায় কোনো অস্বচ্ছতা থাকলে বোঝা যাবে৷ সবাইকে দায়ী করা হবে না৷ আমি মনে করি মজুরি নিয়ে এই সমস্যা সব পোশাক কারখানার নয়৷'' 

আমরা যে শ্রমিকদের মাসে ৫০০ টাকা হাজিরা বোনাস দেই সেটাতো কেউ বলেন না: আমিরুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

তবে পোশাক কারখানার মালিকরা মনে করেন বেতন ভালো পরিমাণেই বাড়ানো হয়েছে৷ তনে এই বাড়ানো নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার হচ্ছে৷ ওমেগা স্টাইল লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির উল ইসলাম ডয়চে ভেলেক বলেন, ‘‘আমরা ন্যূনতম মজুরিটা দেই একদম অ্যান্ট্রি গ্রেডে ৮২০০ টাকা৷ যারা শিক্ষনবীশ তারা এটা পান৷ কিন্তু অন্যান্য গ্রেডে নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরির চেয়ে বাস্তবে অনেক বেশি দেই৷ এটা প্রতিযোগিতার বাজার৷ তাই দক্ষ শ্রমিকরা দর কষাকষি করে বেশি বেতন নেন৷ আর মূল বেতন কম হওয়ার কারণ হলো কিছু নতুন ভাতা যুক্ত হয়েছে৷ এই ভাতাগুলো দাবি করা হয়েছে, এবং সেগুলো আমরা দিয়েছি৷ অতীতের বিবেচনায় মূল বেতন অবশ্য এখন অনেক বেশি৷ আমরা যে শ্রমিকদের মাসে ৫০০ টাকা হাজিরা বোনাস দেই, সেটা তো কেউ বলেন না৷'' 

ক্রেতারা অনেক বছর ধরে পোশাকের দাম বাড়াচ্ছেন না সেটা তাদের বিবেচনা করা উচিত:নাজমুল হুদা মিনা

This browser does not support the audio element.

টিআইবি মনে করে, তৈরি পোশাক খাতে বেতনের স্বচ্ছতার জন্য কিছু পদক্ষেপ জরুরি৷ টিআইবি-র সহকারি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) নাজমুল হুদা মিনা বলেন, ‘‘আমরা বেতনের অস্বচ্ছতা সব কারখানায় পাইনি৷ কিছু কিছু কারখানায় পেয়েছি৷ এছাড়া সাব-কন্ট্রাক্টের কারখানাগুলোতে ন্যূনতম মজুরিও দেয়া হয় না৷ তাই আমরা একটি কমিটি গঠন করে ঔ ধরনের কারখানা খুঁজে বের করে ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করার জন্য বলেছি৷ শুধু তাই নয, ২০১৩ এবং ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন ধরে ইনক্রিমেন্ট সমন্বয়ের কথাও বলেছি৷ তবে আমরা মনে করি, গ্রহণযোগ্য মজুরি নিশ্চিত করার দায় ক্রেতাদেরও৷ এটা মালিকদের পক্ষে এককভাবে করা বড় চ্যালেঞ্জ৷ ক্রেতারা অনেক বছর ধরে পোশাকের দাম বাড়াচ্ছেন না৷ সেটা তাদের এখন বিবেচনা করা উচিত৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ