রবীন্দ্রনাথের আমল থেকেই শান্তিনিকেতনে পৌষমেলার ঐতিহ্য শুরু হয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর পৌষ উৎসব করে মেলার সূচনা হয়। গতবছর করোনার কারণে মেলা বন্ধ ছিল। এ বছর কেন বন্ধ, তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। অন্যদিকে, বোলপুরে বিকল্প পৌষমেলা শুরু হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী পৌষমেলা না হওয়ার দায় রাজ্য সরকারের উপর চাপিয়েছিলেন। পৌষ উৎসব পালন করে তিনি জানিয়েছিলেন, পৌষমেলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারকে তিনি চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু রাজ্য সরকার কোনো উত্তর দেয়নি। সে কারণেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ মেলা না করার সিদ্ধান্ত নেন।
শান্তিনিকেতনের প্রকৃতি মানেই লাল মাটির ঢাল আর ইউক্যালিপটাস বনের খোয়াই৷ প্রতি শনিবার সেই খোলা জায়গাতেই বসে হাট৷ নানাবিধ হস্তশিল্পের পসরা নিয়ে এই হাট এখন শান্তিনিকেতনের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayবীরভূম জেলার এই অঞ্চলের কাঁথার কাজ বেশ বিখ্যাত৷ খোয়াইয়ের হাটের পসরার এক বড় অংশ এই কাঁথার কাজ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayএক বড় সাঁওতাল বসত আছে শান্তিনিকেতনের লাগোয়া গ্রামগুলিতে৷ সাঁওতালদের নাচও খোয়াই হাটের অন্যতম আকর্ষণ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayশান্তিনিকেতনের কলা ভবনের ছাত্র-ছাত্রীরাও কেউ কেউ আসেন তাঁদের হাতে আঁকা ছবির সম্ভার নিয়ে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayজাঙ্ক জুয়লারি, বা ঝুটো গয়নার জন্যেও শান্তিনিকেতন প্রসিদ্ধ৷ তারও অঢেল আয়োজন থাকে খোয়াইয়ের হাটে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayতালপাতার ফুল, কুড়নো কাঠের ভাস্কর্য — যার ঐতিহ্য বহু বছরের, সেসব নিয়ে আদিবাসী শিল্পীরা নিজেরাই আসেন এই হাটে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayচট, বা বেতের ব্যাগ এই অঞ্চলের আরেকটি জনপ্রিয় হস্তশিল্প৷ অনেকেই কিনে নিয়ে যান এই গ্রামজ শৌখিনতা৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayপ্রথাগত ডোকরা শিল্পেও এখন আধুনিক মননের ছোঁয়া৷ নানা ধরনের ঘর সাজানোর সামগ্রী তৈরি হয় ডোকরা রীতিতে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayপোশাক তৈরির কাপড় থেকে তৈরি পোশাক, সবই মেলে খোয়াই হাটে৷ সব জামা-কাপড়েই স্থানীয় সূচিশিল্পের উজ্জ্বল অলঙ্করণ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayনেহাতই কমবয়সি, সদ্য হাত পাকিয়েছে হস্তশিল্পে, কিন্তু তার কাজও সমানভাবে নজর কাড়ে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayহাটের মাঝে জায়গায় জায়গায় বসে বাউল গানের আসর৷ অনেকেই গোল হয়ে ঘিরে বসে শোনেন সেই গান৷ খুশি হয়ে পাঁচ-দশ টাকা সম্মানদক্ষিণা দিয়ে যান৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayমেলা হবে, কিন্তু ভালো-মন্দ খাওয়ার আয়োজন থাকবে না, তাও কি হয়! খোয়াই হাটেও আছে রকমারি খাবারের সম্ভার৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayসন্ধে নামলে মেলা ভাঙে৷ যে যার বাড়ি ফেরেন৷ কিন্তু কানে থেকে যায় বাউল গানের সুর৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay কিন্তু রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সি এর উত্তরে বলেছেন, ''বিদ্যুৎ মিথ্যা বলছেন। রাজ্য সরকারের কাছে এমন কোনো চিঠি নেই।'' এই নিয়ে তীব্র চাপানউতোর চলছে।
বস্তুত, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতীর উপাচার্য হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকেই একের পর এক বিতর্ক লেগে আছে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীরা এবং আশ্রমিকদের একাংশ নানা অভিযোগ করেছেন।
বিশ্বভারতী আয়োজিত পৌষমেলা বন্ধ থাকলেও বিকল্প পৌষমেলার আয়োজন করেছে একটি সংগঠন। পৌষমেলার মাঠ থেকে সামান্য দূরে অন্য একটি মাঠে মেলার আয়োজন হয়েছে। প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর মেলার উদ্বোধন করেন। সাধারণত পৌঁষমেলায় যে সব রীতি পালন করা হয়, এই মেলার আয়োজনেও তা করা হয়েছে। পদযাত্রা করে গিয়ে মেলার উদ্বোধন হয়েছে।
মেলায় যারা যাচ্ছেন, তাদের সকলের মুখেই একই বিতর্কের কথা ঘুরছে। রাজ্যের মন্ত্রীর মন্তব্যের পর অবশ্য উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এখনো পর্যন্ত আর কোনো কথা বলেননি।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই, আনন্দবাজার)