প্রবাল প্রাচীরের সঙ্গে প্যারট ফিশের কি কোনো সম্পর্ক আছে? বিজ্ঞানীরা বলছেন আছে৷ বিশ্বের কিছু অঞ্চলে প্যারট ফিশের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রবাল প্রাচীর৷ আর তাই প্রয়োজন মাছ বাঁচিয়ে রাখা, প্রকৃতির স্বার্থে৷
বিজ্ঞাপন
জুসন কাজুয়েরো, যারা ডাক নাম জা, দু'ঘণ্টা চেষ্টা করে অল্প কিছু মাছ ধরেছেন৷ দুঃখের বিষয় সবগুলো মাছই ছোট, একটিও প্রাপ্তবয়স্ক নয়৷ এগুলো বেচে তার নৌকার তেল খরচ উঠবে কিনা সন্দেহ আছে৷
প্যারট ফিশ ধরা জা-এর জন্য অন্য মাছ ধরার চেয়ে তিনগুন বেশি লাভজনক৷ এগুলোর মাংস বেশি নরম নয়, ফিলেট হিসেবে চমৎকার৷ এসব মাছের মাংস ছাড়া বাকিটা তার দরকার হয়না৷
তবে পরিবেশবিদরা উদ্বিগ্ন৷ গত এক দশক ধরে কনসারভেশন ইন্টারন্যাশনাল গবেষণা করছে, কেন প্রবাল প্রাচীর ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছে৷ দীর্ঘ সময় এটা ভাবা হয়েছিল পানির পিএইচ লেভেলের কারণে হয়ত এটা হচ্ছে৷ কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে শুধুমাত্র প্যারট ফিশের অভাবের কারণে এটা হচ্ছে৷
ব্রাজিলের শীর্ষ রিফ বিশেষজ্ঞরা এখন বুঝতে পেরেছেন প্রবাল প্রাচীর রক্ষা করতে চাইলে প্যারট ফিশও বাঁচাতে হবে৷ ১০০ কিলোমিটার লম্বা আব্রোলোস হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় প্রবাল প্রাচীর৷ এই ট্যুরে দু'টো প্রাচীর পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ এদের একটিতে মাছ ধরা যায়৷ অন্যটিতে নিষিদ্ধ৷
গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ হুমকির মুখে
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ এমনিতেই বিপর্যয়ের মুখোমুখি৷ সম্প্রতি সে দেশের সরকার রিফ এলাকার একটি বন্দর সম্প্রসারণের ঘোষণা দেয়ায় সমস্যা আরও বাড়তে যাচ্ছে৷
ছবি: imago/blickwinkel
বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ
ইউনেস্কো অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে ১৯৮১ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই প্রবাল প্রাচীর এলাকায় ৬২৫ রকমের মাছ, ১৩৩ প্রজাতির হাঙর সহ অন্যান্য বৃহদাকার সামুদ্রিক মৎস, অসংখ্য প্রজাতির জেলিফিশ, ঝিনুক, শামুক এবং ত্রিশটিরও বেশি প্রজাতির তিমি মাছ ও ডলফিন রয়েছে৷ কিন্তু দূষণ ও মানবসৃষ্ট কারণে গত কয়েক দশক ধরে এই রিফের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে রয়েছে৷
ছবি: imago/Harald Lange
বন্দর সম্প্রসারণ
১৯৮৪ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলের অ্যাবট বন্দরটি কয়লা রপ্তানিকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ সম্প্রতি সরকার এটার সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে৷ কিন্তু এতে রিফের পরিবেশ আরও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দক্ষিণ গোলার্ধের সবচেয়ে বড় বন্দর
সম্প্রসারণের পর অ্যাবট বন্দর দিয়ে প্রায় ১২০ মিলিয়ন টন কয়লা রপ্তানি করা সম্ভব হবে৷ ফলে এটিই হবে দক্ষিণ গোলার্ধের সবচেয়ে বড় বন্দর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভারতের কয়লা রপ্তানি
অ্যাবট বন্দর সম্প্রসারণের অন্যতম একটি কারণ ভারতে কয়লা রপ্তানি৷ ভারতের দুটি কোম্পানি – জিভিকে এবং আদানি গ্রুপ – মাইনিং কোম্পানি হ্যানকক প্রোস্পেকটিং-এর সঙ্গে মিলে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড এলাকার খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করতে চায়৷ এরপর সেটা অ্যাবট বন্দর দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে৷
ছবি: AFP/Getty Image
হুমিকর মুখে প্রবাল
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের কোরাল এমনিতেই হুমকির মুখে রয়েছে৷ বন্দর সম্প্রসারণের পর সেই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: imago/blickwinkel
কচ্ছপদের যে সমস্যা হবে
গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের কচ্ছপরা বিভিন্ন দ্বীপের সৈকতের বালুতে যৌনক্রিয়া করে থাকে৷ এক্ষেত্রে বালুর তাপমাত্রা একটা বড় ব্যাপার৷ বড় বন্দরের কারণে আশেপাশের এলাকার তাপমাত্রা বেড়ে গেলে সেক্ষেত্রে কচ্ছপরা বিপদে পড়তে পারে৷
ছবি: Mark Kolbe/Getty Images
আখ চাষও সমস্যা
অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূল জুড়ে থাকে আখের খেতে ব্যবহৃত কীটনাশকের একটা অংশ রিফের পানিতে পড়ে সামুদ্রিক প্রাণীদের জীবন বিপন্ন করছে৷ এর সঙ্গে বন্দরের সম্প্রসারণ কাজ যুক্ত হওয়ায় সমস্যা আরও বাড়বে৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
রোনাল্ডো ফ্রান্চিনি এখনকার পানি মনিটর করছেন৷ তিনি মাছের প্রজাতি, প্রবাল শ্রেণি এবং শ্যাওলার ঘনত্বের হিসেব রাখছেন৷ তিনি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন, যে এখানে সম্প্রতি ব্যাপক হারে মাছ ধরা হয়েছে৷
প্যারট ফিশ জা-এর মতো জেলেদের জীবনে সচ্ছলতা এনে দিয়েছে৷ এখন তারা এটা হারাতে চান না৷ তারা এখন তাদের নৌকার জন্য ইঞ্জিন কিনতে পারেন৷ ফলে দ্রুত তীরে ফিরে আসা যায়৷ ১৫ বছর আগে জা-এর বাবা ইউসুফ প্রথম প্যারট ফিশ ধরা শুরু করেন৷ তিনি বলেন, শুরুর দিকে পর্যাপ্ত বড় মাছ ছিল৷ পরবর্তীতে সেগুলো খাওয়া ফ্যাশনে পরিণত হয়৷
অন্যদের মতো জা-ও জানেন ৫০ সেন্টিমিটার বড় না হওয়া পর্যন্ত এ সব মাছ প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে না৷ তবে বাকি সবার মতো তিনিও মনে করেন, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা মোটেই সমাধান হতে পারে না৷ তবে শেষ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আসতেও পারে৷ গবেষকরা এমন এক জায়গায় গিয়েছেন যেখানে পাঁচ বছর আগে মাছ শিকার নিষিদ্ধ হয়৷ শুরুতে তারা বড় মাছ দেখেননি৷ কিন্তু পরে বুঝতে পারেন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে৷ এখানে প্রাপ্তবয়স্ক মাছ রয়েছে৷ নিষেধাজ্ঞায় মনে হচ্ছে কাজ হয়েছে৷
স্বাস্থ্যবান প্রবাল প্রাচীর দেখতে সুন্দর৷ এটা এমন জায়গা যেখানে প্যারট ফিশ নিরাপদে বাড়তে পারে৷ সব জায়গা এমন করতে চাইলে অনেক কাজ এবং ধৈর্য্য প্রয়োজন৷ আর সে কাজ পানির চেয়ে মাটিতে বেশি৷