চলতি বছরের শেষ দিকে ফ্রান্সের প্যারিসে জাতিসংঘের আয়োজনে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে৷ কিয়োটো প্রোটোকলের জায়গা নিতে পারে এমন একটি চুক্তির সন্ধান করা হবে সেখানে৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের প্রায় ১৯৪টি দেশের কর্মকর্তারা সম্মেলনে অংশ নেবেন৷ প্যারিস সম্মেলন সফল হবে বলে মনে করছেন জার্মানির পরিবেশমন্ত্রী বারবারা হেন্ডরিক্স৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন৷
বারবারা হেন্ডরিক্স: সম্মেলন সফল হবে বলে আমি আশাবাদী৷ এক্ষেত্রে সব দেশই যার যার মতো করে অবদান রাখবে৷ কিয়োটো প্রোটোকল যতটা সফল হওয়ার কথা ছিল ততটা হয়নি৷ কারণ কিছু দেশ তাতে অংশই নেয়নি৷ আর যারা নিয়েছিল তাদের মধ্যেও কেউ কেউ পরে বেরিয়ে গিয়েছিল৷
কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন৷ এবার সবার অংশগ্রহণে একটি চুক্তির কথা ভাবা হচ্ছে৷ সম্প্রতি চীনও এ ব্যাপারে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে৷ সম্মেলনের সাফল্যের মূল কথা হলো চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের সমান অংশগ্রহণ, যেটা এবার হবে বলে মনে হচ্ছে৷
প্যারিসেই যে একটি চুক্তির খোঁজ হচ্ছে তা নয়৷ বছর চারেক আগে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনেও একটি চুক্তি হবে বলে আশা করা হয়েছিল৷ কিন্তু সেটা হয়নি৷ এবার প্যারিসে কি ব্যতিক্রমী কিছু ঘটবে – ঘটলে কেন?
যেটা একটু আগে বললাম, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউস নির্গমনকারী দেশ চীন আর যুক্তরাষ্ট্র এবার একই অবস্থানে আছে৷ আগের সম্মেলনগুলোতে যেটা ছিল না৷ তাছাড়া কোপেনহেগেনে আমরা গ্লোবাল সাউথ (উত্থানশীল আর উন্নয়নশীল দেশ) গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোকে একটি কথা বোঝাতে পারিনি যে, জলবায়ু রক্ষার কাজ উন্নয়নের জন্য কোনো বাধা নয়৷ এবার আমরা তাদের সেটা বোঝাতে পারবো বলে আশা করছি৷ আমরা তাদের জ্বালানির চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দাম প্রতিযোগিতামূলক পরামর্শ দেবো৷
অতীতে জার্মানিকে জলবায়ু রক্ষায় পথপ্রদর্শক ভাবা হতো৷ এখন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোকে সেই অবস্থায় দেখা হচ্ছে৷ অন্তত ই-কার আর নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে৷ আপনার কি মনে হয়, জার্মানি কি তাঁর আগের অবস্থান ধরে রাখতে পারবে?
আমার তো মনে হয় জার্মানিকে এখনও এক্ষেত্রে পাইওনিয়ার হিসেবেই দেখা হয়৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে তো অবশ্যই৷ তবে ই-কারের দিক দিয়ে হয়ত আমরা নরওয়ে, নেদারল্যান্ডসের কাছ থেকে একটু পিছিয়ে আছি৷ তবে সেটা ভর্তুকি সংক্রান্ত নীতির কারণে, প্রযুক্তির দিক দিয়ে নয়৷
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে দ্বীপগুলো
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই শতকেই বিশ্বের অনেক মানুষ খাদ্যাভাবে পড়বে, বাড়বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানুষে মানুষে হানাহানি৷ আইপিসিসি-র রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পৃথিবীর স্বর্গ হারানোর পথে
বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সাগরে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷ মালদ্বীপ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত৷ ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে এটি পুরোপুরি তলিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের৷
ছবি: picture alliance/chromorange
বন্যার প্রকট আকার
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে বাংলাদেশ৷ নিম্ন ভৌগলিক অবস্থান এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে নানা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে দেশটি৷ সাগরের পানির উচ্চতা মাত্র তিন ফুট বেড়ে গেলেই দেশের অর্ধেক পানির নীচে তলিয়ে যাবে৷
ছবি: Tareq Onu
পানিতে নিমজ্জিত সম্পদ
সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে এরই মধ্যে দ্বীপগুলোর নিম্নাঞ্চল থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে শুরু করেছে অনেকেই৷ প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিরিবাটি দ্বীপপুঞ্জের কিছু গ্রাম এরই মধ্যেপানিতে তলিয়ে গেছে৷ ফসলি জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় বেশ চিন্তিত সেখানকার চাষীরা৷
ছবি: AFP/Getty Images
তাপমাত্রা বৃদ্ধি
আইপিসিসি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই শতকে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে ০.৩ থেকে ৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ এমনকি শিল্পকারখানা যেখানে বেশি সেখানে গড়ে ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে৷ ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রে পানির উচ্চতা বাড়বে ২৬ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার৷
ছবি: picture-alliance/AP
সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে বসবাস
সমুদ্রের পানি থেকে বাঁচার উত্তম পন্থা জানা আছে ডাচদের৷ প্রায় ১০০০ বছর আগে বন্যার হাত থেকে বাঁচতে তারা প্রথম পরিখা নির্মাণ করেছিল৷ এ কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে দুই তৃতীয়াংশ মানুষ নির্বিঘ্নে দিন কাটাচ্ছে সেখানে৷ তবে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়েও ভাবছে ডাচরা৷
ছবি: picture-alliance/Ton Koene
ডুবছে বিশ্ব ঐতিহ্য
ইটালির ভেনিস পুরোটাই পানি বেষ্টিত৷ তাই সেখানে বন্যা কোনো আকস্মিত ঘটনা নয়৷ কিন্তু চিন্তা বিষয় হল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরটি ক্রমেই পানির তলায় তলিয়ে যাচ্ছে৷ ইটালির সরকার ভেনিস রক্ষায় ৯.৬ বিলিয়ন ইউরোর একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷ বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষার এই প্রকল্প ২০১৬ সাল নাগাদ শেষ হবে৷
ছবি: AP
প্রাকৃতিক বিপর্যয়
আইপিসিসি-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এশিয়া ও ইউরোপে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ অন্যদিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলিতে পানি সংকট এবং খরা দেখা দেবে বলেও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে৷ এর ফলে ফসল ভালোমত হবে না, দেখা দেবে খাদ্য ঘাটতি৷
ছবি: dapd
কোনো মানুষ রেহাই পাবে না
আইপিসিসি-র সভাপতি রাজেন্দ্র পাচৌরি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা যদি ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায় তবে ঝুঁকির পরিমাণও সেই অনুপাতে বাড়বে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব থেকে বিশ্বের কোনো মানুষই রেহাই পাবেন না৷