সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমন বেড়েছে৷ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের রাস্তার পাশে আবার জমতে শুরু করেছে ভিড়৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে রাস্তা থেকে ২৮০০ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে সরিয়ে নিয়েছে পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার প্যারিসের রাস্তা থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সরিয়ে নেয়ার অভিযান শুরু করে পুলিশ৷ এ অভিযানে অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশীই খুশি, কারণ, রাস্তার পাশ থেকে সরিয়ে তাদের অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ ফলে কেউ কেউ খুশিমনে আকস্মিক এ স্থানান্তরকে মেনে নিয়ে বলছিলেন, ‘‘আমরা মর্যাদা চাই৷'' প্যারিস নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে নিয়ে গিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ আরো কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে৷
সাম্প্রতিক সময়ের শরণার্থীদের স্রোত প্যরিসবাসীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে৷ স্থানীয়দের কেউ কেউ ভিনদেশি অতিথিদের সহায়তায় এগিয়ে এলেও অনেকে বিরক্তিও প্রকাশ করছেন৷ শরণার্থীদের আগমনে ক্ষুব্ধদের অনেকেই নিরাপত্তা এবং নিজেদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷
শরণার্থী সংকটের কিছু আইকনিক ছবি
ইউরোপে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী প্রবেশের ছবি গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে এবং মানুষের মতামত সৃষ্টিতে প্রভাব বিস্তার করেছে৷ অভিবাসন এবং অভিবাসনের ফলে সৃষ্ট ভোগান্তির এত ছবি আগে দেখেনি বিশ্ব৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
লক্ষ্য: টিকে থাকা
অনিশ্চিত যাত্রার ধকল সামলাতে হয় শারীরিক এবং মানসিকভাবে৷ ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে হাজার হাজার সিরীয় নাগরিক তুরস্ক হয়ে গ্রিসে জড়ো হয়েছেন৷ সে দেশের তিনটি দ্বীপে এখনো দশ হাজারের মতো শরণার্থী বসবাস করছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস অবধি ছয় হাজার নতুন শরণার্থী এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Messinis
পায়ে হেঁটে ইউরোপে
২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ গ্রিস ও তুরস্ক থেকে পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছে৷ ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, অর্থাৎ বলকান রুট ব্যবহার করে তাদের এই যাত্রার অধিকাংশই ছিল পায়ে হেঁটে৷ অভিবাসীদের এই যাত্রা বন্ধ হয়ে যায়, যখন রুটটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কয়েকটি দেশ সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷
ছবি: Getty Images/J. Mitchell
বৈশ্বিক আতঙ্ক
এই ছবিটি গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ তিন বছর বয়সি সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির মরদেহ তুরস্কে সমুদ্রতটে ভেসে ওঠে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে৷ ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরণার্থী সংকটের প্রতীকে পরিণত হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/DHA
বিশৃঙ্খলা এবং হতাশা
শেষ সময়ের ভিড়৷ ইউরোপে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুনে ক্রোয়েশিয়াতে এভাবে ট্রেনে এবং বাসে উঠতে দেখা যায় অসংখ্য শরণার্থীকে৷ ২০১৫ সালের অক্টোবরে হাঙ্গেরি সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং শরণার্থীদের জন্য কন্টেইনার ক্যাম্প তৈরি করে৷
ছবি: Getty Images/J. J. Mitchell
বিবেকবর্জিত সাংবাদিকতা
হাঙ্গেরির এক সাংবাদিক এক শরণার্থীকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়ার ভিডিও নিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ সার্বিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন হাঙ্গেরির একটি এলাকার সেই ঘটনায় আলোচিত সাংবাদিকের চাকুরি চলে যায়৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
উন্মুক্ত সীমান্ত নয়
২০১৬ সালের মার্চে বলকান রুট আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়ার পর সীমান্তগুলোতে আরো আবেগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়৷ হাজার হাজার শরণার্থী বিভিন্ন সীমান্তে আটকা পড়ে এবং তাদের সঙ্গে বর্বর আচরণের খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন স্থান থেকে৷ অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে৷
ধুলা এবং রক্তে ঢাকা এক শিশু৷ পাঁচবছর বয়সি ওমরানের এই ছবিটি প্রকাশ হয় ২০১৬ সালে৷ আয়লান কুর্দির ছবির মতো এই ছবিটিও গোটা বিশ্বকে আরেকবার নাড়িয়ে দেয়৷ সিরীয়ায় গৃহযুদ্ধ কতটা বিভৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং সিরীয়রা কতটা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তার এক প্রতীক হয়ে ওঠে ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Aleppo Media Center
অজানা নতুন ঠিকানা
গ্রিক-ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তের ইডোমিনিতে নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় হাঁটছেন এক সিরীয় নাগরিক৷ ইউরোপে তাঁর পরিবার নিরাপদ থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তাঁর৷ ডাবলিন রেগুলেশন অনুযায়ী, একজন শরণার্থী প্রথম ইউরোপের যে দেশে প্রবেশ করেন, সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে হবে৷ ফলে যারা আরো ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন, তাদের অনেককে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
সহযোগিতার আশা
বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রবেশের কারণে জার্মানি অভিবাসন নীতি আরো কড়া করে ফেললেও এখনো শরণার্থীদের প্রথম পছন্দ জার্মানি৷ ইউরোপের আর কোনো দেশ জার্মানির মতো এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থী নেয়নি৷ ২০১৫ সালে সঙ্কট শুরুর পর থেকে দেশটি ১২ লক্ষ শরণার্থী নিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা
ইউরোপে শরণার্থী প্রবেশের সংখ্যা চলতি বছর কমেছে, তবে থেমে যায়নি৷ বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মরছে অনেকে৷ বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছর এখন অবধি সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছে প্রায় দু’হাজার মানুষ৷ গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
10 ছবি1 | 10
চলতি গ্রীষ্মে ইউরোপে মূলত আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমন আবার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে৷ সমুদ্র পথে আসতে গিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত দুই হাজার মানুষ মারা গেছেন৷
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী এসেছে ইটালিতে৷ এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই দেশটিতে এসেছে মোট ৮৫ হাজার আর ৮৫ হাজারের মধ্যে ১০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীই এসেছে গত এক মাসে৷ এ পরিস্থিতিতে ইটালিকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে ই্উরোপীয় ইউনিয়ন৷
জীবন বাজি রেখে ইউরোপের পথে
অভিবাসনের আশায় বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকেই ইউরোপে আসছেন৷ ইটালির ‘পাসো ডেলা মর্তে’ হয়ে ইউরোপের আরো উত্তরের দেশগুলোতে আসতে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন অনেকে৷ ফটোসাংবাদিক ফেডেরিকো স্কপা ছিলেন তেমন শরণার্থীদের সঙ্গে....
ছবি: DW/F.Scoppa
গহীন জঙ্গল, দুর্গম পথ
জঙ্গলের ভেতর দিয়ে সভয়ে এগিয়ে চলেছে আফগান কিশোরদের একটি দল৷ সব সময় ভয় – পুলিশ যদি দেখে ফেলে! এই ভয় নিয়ে, দুর্গম পাহাড়ি পথ ধরেই পেরোতে হবে ‘ডেথ পাস টু ফ্রান্স’৷ যাত্রা শেষ হতে এখনো ১২ কিলোমিটার বাকি৷
ছবি: DW/F.Scoppa
পদে পদে বিপদ
ইটালির ভেনটিমিগলিয়া শহর আর ফ্রান্সের মেতোঁর মাঝখান দিয়ে এক সময় হাইওয়ের টানেলের ভেতর দিয়ে, কখনো রেলপথ ধরে, কখনো বা গিরিপথ ধরে হেঁটে হেঁটে এগিয়ে যেতে হয়৷ যে কোনো মু্হূর্তেই ঘটে যেতে পারে সমূহ বিপদ৷
ছবি: DW/F.Scoppa
তীব্র গতি, দৃষ্টি ক্ষীণ
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের্ অনেকেই প্রাণ হাতে নিয়ে এই হাইওয়ে টানেল ধরে ধরে হেঁটে পৌঁছাতে চান ফ্রান্স৷ জীবনের ঝুঁকি তাদের প্রায় প্রতি পদক্ষেপে৷
ছবি: DW/F.Scoppa
প্রকৃতির আশ্রয়ে, প্রকৃতির ভরসায়
কীভাবে যেতে হবে তা না জেনে, সঙ্গে কোনো খাবার না নিয়েও ‘ডেথ পাস’ দিয়ে যাত্রা শুরু করেন অনেকে৷ প্রকৃতির উদারতাই তাদের একমাত্র ভরসা৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতীয় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুখতে ফরাসি সরকার তৈরি করেছিল এই প্রাচীর৷ শান্তির পতাকাও ওড়ানো হয় তখন৷ ইটালি ও ফ্রান্স সীমান্তের এই এলাকটি অভিবাসন প্রত্যাশীদের খুব পরিচিত রুট৷
ছবি: DW/F.Scoppa
ওই দেখা যায়..
৩০০ মিটার দূরেই ‘ডেথ পাস’-এর শীর্ষ বিন্দু৷ সেদিকেই তাকিয়ে আছে সদ্য কৈশোর উত্তীর্ন তিন অভিবাসন প্রত্যাশী৷ এখানে অনেকেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে৷ পুলিশ ধরলেই ফিরিয়ে দেয় ইটালিতে৷