পুলিশ জানিয়েছে, প্যারিসের স্টেশনে দাঁড়িয়ে মুসলিম নারী নিজেকে উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছিলেন। তখন পুলিশ গুলি করে।
বিজ্ঞাপন
ওই নারীর বয়স ৩৮ বছর। তিনি ছিলেন বোরখা পরিহিতা। মাঝেমধ্যে 'আল্লাহু আকবর' বলছিলেন বলেও পুলিশ জানিয়েছে। তিনি হুমকি দিয়ে বলছিলেন, নিজেকে উড়িয়ে দেবেন। তাতে অন্যরাও প্রাণ হারাবে।
প্যারিসের পুলিশ প্রধান নুনেজ জানিয়েছেন, ওই নারী পুলিশের নির্দেশ মানতে অস্বীকার করেন। তারপর পুলিশ তাকে গুলি করে। তার তলপেটে গুলি লেগেছে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে গুলি লাগার পর দেখা যায়, তার সঙ্গে কোনো বিস্ফোরক ছিল না।
ফ্রান্সে সমস্যার মূলে কি বর্ণবাদ এবং ঔপনিবেশিক অতীত?
ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে ফ্রান্স। কিন্তু ক্ষোভ এবং রাগ থেকেই যাচ্ছে। কেন বারবার অশান্ত হচ্ছে ফ্রান্স? কারণ খুঁজে দেখলো ডিডাব্লিউ।
ছবি: Pascal Rossignol/REUTERS
ব্যাপক সহিংসতা
গত কয়েকদিন ধরে প্যারিস এবং ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি শহরে সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে। পুলিশের গুলিতে ১৭ বছর বয়সি নাহেলের মৃত্যুর পর বিক্ষোভের জেরে গাড়ি, বাস পুড়েছে। দোকানের কাচ ভাঙা হয়েছে, লুট হয়েছে। এক মেয়রের বাড়ি আক্রান্ত হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
ছবি: Alexandre Marchi/MAXPPP/dpa/picture alliance
লাখো মানুষের প্রতিবাদ
দেশজুড়ে কয়েক লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাদের সেই বিক্ষোভ প্রায়ই সহিংস হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, যে পরিমাণ সহিংসতা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, তাতে তারা অবাক হয়ে গেছে। প্যারিস-সহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। তারপরেও বিক্ষোভ থামেনি।
ছবি: Cyril Dodergny/picture alliance/dpa/MAXPPP
কেন এই প্রতিবাদ?
ট্রাফিক আইন ভাঙার জন্য নাহেলকে গুলি করে হত্যা করে ফ্রান্সের পুলিশ। প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ বলেছেন, ''পুলিশের গুলিতে নাহেলের মৃত্যুর কোনো ক্ষমা নেই, এর কোনো ব্যাখ্যা নেই।'' কিন্তু সত্যিই কি এর কোনো ব্যাখ্যা নেই? নাকি, বিশেষজ্ঞরা অন্য কথা বলছেন?
ছবি: Nacho Doce/REUTERS
'আসল কারণ বর্ণবাদ'
নিউ ইয়র্কের স্টোনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক ক্রিস্টাল ফ্লেমিংয়ের মতে, ''এই হত্যা একেবারেই ব্যাখ্যার অতীত নয়। এর পিছনে কোনো রহস্যও নেই। এটা হলো নিখাদ বর্ণবাদ। আর ফ্রান্সে এই হত্যার প্রতিবাদে যে সহিংসতা হয়েছে, তা ওই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কারণে।''
ছবি: Nacho Doce/REUTERS
ঔপনিবেশির অতীত
ফ্লেমিং মনে করেন, ''বর্ণবাদের পাশাপাশি ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক অতীতও এর জন্য দায়ী। ঔপনিবেশিক জনগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে।'' ষোড়শ থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ফ্রান্স ঔপনিবেশিত শক্তি ছিল।
ছবি: Juan Medina/REUTERS
সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা কার জন্য?
বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবের মূল কথা ছিল, সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা। তবে সেটা ছিল শুধু ফরাসি পুরুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। উপনিবেশের মানুষ সমান অধিকারের কথা ভাবতে পারেননি। তাদের প্রতিদিনের জীবন ছিল অত্যাচার সহ্য করে বেঁচে থাকার কাহিনি। পুরুষ ও নারীদের জোর করে ফরাসি সংস্কৃতি ও ভাষার সঙ্গে মিশে যেতে হয়েছে।
ছবি: Franck Fife/REUTERS
মাক্রোঁর মতে
মাক্রোঁ মনে করেন, ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক সময়ে প্রচুর অপরাধ হয়েছে। তিনি সাবেক উপনিবেশ থেকে নিয়ে আসা শিল্পদ্রব্য ফেরত দিচ্ছেন। আলজেরিয়া ও রাওয়ান্ডাতে ফ্রান্সের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে কমিশন গঠন করেছেন। কিন্তু ফ্লেমিং মনে করেন, এটা যথেষ্ট নয়। অনেকেই বলেন, ফ্রান্সের উচিত, অতীত ভুলের সব দায় স্বীকার করে নেয়া।
ছবি: Ludovic Marin/AFP
অতি-দক্ষিণপন্থিদের মত
এর উল্টোদিকের মেরুতে আছেন লে পেনের মতো অতি-দক্ষিণপন্থি রাজনীতিকরা। তারা মনে করেন, সাবেক কলোনিগুলিকে ফ্রান্স অনেক কিছু দিয়েছে। পেন ২০১৭ ও ২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়েছেন। ভবিষ্যতে তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে অনেকে মনে করেন। ফ্লেমিং বলছেন, ''ফরাসি সরকার নিজেদের বর্ণবাদী মনে করে না। কিন্তু তারা জাতিগত জনগণনাও করে না।''
ছবি: JB Autissier/PanoramiC/imago images
'বর্ণবাদী পুলিশ'
লেখিকা ও অধিকাররক্ষাকর্মী রোখায়া ডিয়ালোর মতে, ''ফরাসি পুলিশের বর্ণবাদী মনোভাবের জন্য এই হত্যা হয়েছে এবং তার প্রতিক্রিয়ায় সহিংসতা হয়েছে।'' তবে ফরাসি সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু সমীক্ষা বলছে, কোনো কৃষ্ণাঙ্গ ও আরবকে ফরাসি পুলিশ রাস্তায় অন্যদের তুলনায় অন্তত ২০ বার বেশি থামায়। এই কৃষ্ণাঙ্গ ও আরবদের অনেকের পূর্বপুরুষ সাবেক ফরাসি কলোনি থেকে এসেছিলেন।
ছবি: Patrick Hertzog/AFP
গরিবরা শহরতলিতে
অতীতে গরিবরা ফ্যারিসের শহরতলিতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। সরকার এই শহরতলির উন্নতির দিকে বিশেষ নজর দেয়নি বলেও অভিযোগ। নাহেল যেখানে থাকতেন, সেখানকার বাসিন্দা সোনিয়া ফালনিকর ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''এই জায়গায় একটা বঞ্চনার কাহিনি আছে। গরিবি আছে। কষ্ট আছে। এটাও মনে হয়, আমরা এর থেকে বেরোতে পারব না।''
ছবি: Juan Medina/REUTERS
10 ছবি1 | 10
পুলিশ প্রথমে জানিয়েছিল, একজন অফিসার একটি গুলি চালিয়েছে। পরে সরকারিভাবে বলা হয়, দুইজন অফিসার আটটি গুলি চালিয়েছে।
দুইটি তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একটি ওই নারীর আচরণ নিয়ে, অন্যটা পুলিশের গুলিচালনা নিয়ে।
সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, এর আগেও টহলদারি সেনাকে হুমকি দিয়েছিলেন ওই নারী।