বেলজিয়ামের দুর্বল রাষ্ট্রীয় কাঠামো নাকি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে৷ প্যারিসের অন্যতম আত্মঘাতী হামলাকারী ব্রাহিম আবদেসালাম প্রায় দু'সপ্তাহ আগে ব্রাসেলস থেকে প্যারিসে এসেছিল৷ সে শহরের মোলেনবেক এলাকায় একটা বার চালাতো৷ সেখানে মাদক চক্রের কারণে স্থানীয় মেয়র সেটি বন্ধ করার নির্দেশ দেন৷ এমন প্রেক্ষাপটে প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার আলোকে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসে পড়েছে৷ সেখানকার মোলেনবেক এলাকায় ইসলামি উগ্রবাদীদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করতে প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে৷
জার্মানির ‘ডেয়ার স্পিগেল' পত্রিকা এক প্রতিবেদনে বেলজিয়ামের জাতিগত দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটকে রাষ্ট্রের অচলাবস্থার জন্য দায়ী করেছে৷ ডাচভাষী ফ্লান্ডার্স ও ফরাসিভাষী ওয়ালোনিয়ার মধ্যে উত্তেজনার কারণে দেশটি এমন মাত্রায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ করতে বাধ্য হয়েছে, যে পারস্পরিক সমন্বয়ের অভাব প্রকট হয়ে পড়েছে৷ যেমন ব্রাসেলস শহরেই ১৯ জন মেয়র ও ৬টি ভিন্ন পুলিশ কর্তৃপক্ষ রয়েছে৷ বেলজিয়ামের সমস্যা নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন শেয়ার করেছেন টুইটার ব্যবহারকারীরা৷
প্যারিস হামলার পর সার্বিকভাবে ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নানা গাফিলতির অভিযোগ উঠছে৷ সমালোচকরা বলছেন, সব পক্ষ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করলে হয়তো এমন এক হামলা প্রতিরোধ করা যেত অথবা অপরাধী এবং তাদের নিয়ন্ত্রণকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করা সম্ভব হতো৷ ডেভিড মায়ার ফ্রান্সের নজরদারি অবকাঠামোর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷
দুর্বল অর্থনীতির কারণে ফ্রান্সের পক্ষে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ানোও সম্ভব নয় বলে মনে করিয়ে দিচ্ছে একাধিক সূত্র৷
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ১৩ই নভেম্বরের সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ১২৯ জন নিহত ও ৩৫২ জন আহত হয়েছে৷ কেঁপে উঠেছে গোটা বিশ্ব৷ বদলে গেছে অনেক কিছু৷
ছবি: Reuters/C. Allegriজার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ চলাকালীন প্যারিসে হামলার প্রাথমিক খবর আসতে থাকে৷
খবর পেয়ে প্যারিসের মানুষের মনে ভয় ও আতঙ্ক ছেয়ে যায়৷ কর্তৃপক্ষ মানুষকে বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দিয়েছিল৷
বাটাক্লঁ কনসার্ট হলে হেভি মেটাল সংগীত চলাকালীন সন্ত্রাসবাদীরা কিছু মানুষকে পণবন্দি করেছিল৷ রাত একটা নাগাদ পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে৷
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন৷ ফুটবল ম্যাচের বিরতির সময়ে তিনি স্টেডিয়াম ছেড়ে গিয়েছিলেন৷ তাঁকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়৷
ফ্রান্স ও জার্মানির জাতীয় দল এবং দর্শকরা কিন্তু স্টেডিয়াম ছেড়ে যাবার অনুমতি পাননি৷ সে সময়ে তাঁদের মনের অবস্থা কী ছিল, তা অনুমান করা যায়৷
প্রায় সব আততায়ী নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷ একজন সীমান্ত পেরিয়ে বেলজিয়ামে প্রবেশ করেছে৷ পুলিশ সূত্র অনুযায়ী হামলাকারীদের মধ্যে কমপক্ষে দু’জন বেলজিয়ামে বসবাস করতো৷
প্যারিসে একাধিক হামলায় আহত অনেক মানুষের অবস্থা সংকটজনক৷ ফলে নিহতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
প্যারিসে হামলার পর আন্তর্জাতিক স্তরেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ যেমন নিউ ইয়র্কে ফরাসি কনসুলেটের সামনে আরও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷
নিউ ইয়র্কে ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’-এর অ্যান্টেনায় ফরাসি জাতীয় রং ফুটিয়ে তোলা হয়৷ নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো বলেন, ‘‘আমরা ফরাসি জাতির সঙ্গে সংহতির বন্ধনে আবদ্ধ৷’’
ইউরোপের বুকে উগ্র ইসলামপন্থিদের দৌরাত্ম্য বিদেশি অভিবাসীদের স্বার্থের কতটা ক্ষতি করছে? নীচে মন্তব্য করুন৷
সংকলন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
