কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, ফ্রেঞ্চ ঐ তরুণের জন্ম ১৯৯৭ সালে, চেচনিয়ায়৷ শনিবার সন্ধ্যায় তিনি প্যারিসের জনাকীর্ণ পর্যটনকেন্দ্র কেন্দ্রীয় অপেরা হাউস ও ল্যুভ্রে মিউজিয়ামের মাঝামাঝি একটি জায়গায় হঠাৎ ছুরি নিয়ে হামলে পড়েন সাধারণ মানুষের ওপর৷ একজনকে হত্যা করেন এবং চারজনকে আহত করেন৷
পুলিশ এসে গুলি করে হত্যা করে হামলাকারীকে৷ তার সঙ্গে কোনো পরিচয়পত্র ছিল না৷
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এদুয়ার ফিলিপ জানান যে, পুলিশ ঘটনা শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, এবং পরের নয় মিনিটের মধ্যে হামলাকারীকে হত্যা করে৷
‘‘তা না হলে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়ত৷'' বলেন তিনি৷
রোববার সকালে তার বাবা-মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে৷ এপি জানিয়েছে যে, হামলাকারীর আগে কোনো অপরাধে জড়িত থাকার রেকর্ড নেই৷
ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ টুইটারে এর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ফ্রান্সকে আবারো রক্তপাতের চড়ামূল্য দিতে হলো, কিন্তু অপরাধীদের এক ইঞ্চিও ছাড় দেয়া হবে না৷''
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গিদের কার্যকলাপ মনিটরিং গ্রুপ সাইটের তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট৷ তবে কোনো প্রমাণ তারা উপস্থাপন করেনি৷
প্রত্যক্ষদর্শীরা এপিকে জানিয়েছেন যে, হামলাকারী শুরুতে ‘আল্লাহু আকবার' বলে চিৎকার করেন৷ উপস্থিত জনতা তখন রেস্টুরেন্ট ও বারগুলোর দিকে দৌঁড়াতে শুরু করেন৷
‘‘আমি অর্ডার নিচ্ছিলাম৷ প্রথমে দেখলাম এক তরুণী উদভ্রান্তের মতো রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়েন৷'' বলছিলেন একটি কোরিয়ান রেস্টুরেন্টের ওয়েটার জনাথন৷
তিনি জানান যে, ঐ তরুণীর শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল, এবং একজন তরুণ তাঁকে রক্ষা করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন৷ তখন হামলাকারী সরে পড়েন৷
মিলান নামের আরেক তরুণ প্রত্যক্ষদর্শী জানান যে, তিনি ঐ নারীর ঘাড় ও পা থেকে রক্ত ঝরতে দেখেন৷
‘‘ফায়ারম্যানরা তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছিলেন৷ আমি তখন দু-তিনটি গুলির শব্দ শুনতে পাই৷''
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, নিহত যুবকের বয়স ২৯ বছর৷ এছাড়া গুরুতর আহত ৩৪ বছর বয়সি এক যুবক ও ৫৪ বছর বয়সি এক নারীকে সাথে সাথেই হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল৷ পরে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান যে, বিপদ কেটে গেছে৷ তাঁরা বেঁচে আছেন৷
জেডএ/ডিজি (এপি)
মাদ্রিদ, ফ্রাংকফুর্ট, লন্ডন, প্যারিস, ব্রাসেলস, নিস, বার্সেলোনা – একের পর এক ভয়াবহ হামলার শিকার ইউরোপ৷ বড় শহরগুলিতে সন্ত্রাসের হুমকি নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তাও৷ গত ১৩ বছরে ইউরোপে বিভিন্ন হামলার তথ্য নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: REUTERS/Stringerস্পেনে হামলার এক দিন পরেই ফিনল্যান্ডের টুর্কু শহরে ছুরি চালিয়ে ২ জনকে হত্যা করে এক আততায়ী৷ তার ছুরির আঘাতে কমপক্ষে আরও ৬ জন আহত হয়েছে৷ পুলিশ তার পায়ে গুলি করে তাকে গ্রেফতার করেছে৷ গোটা দেশে সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Riihimakiপ্রথমে বার্সেলোনা, তারপর উপকূলবর্তী কামব্রিলস ও আলকানার শহর৷ পর পর তিনটি সন্ত্রাসী হামলার মুখে স্পেনের কাটালুনিয়া রাজ্য৷ বার্সেলোনা শহরে হামলার দায় স্বীকার করেছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস৷ এতে নিহত হন ১৩ জন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/O. Duranযুক্তরাজ্যের লন্ডনের একটি মসজিদের বাইরে মুসল্লিদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেয় এক ব্রিটিশ নাগরিক৷ এ ঘটনায় নিহত হন একজন, গুরুতর আহত হন অনেকেই৷ হামলাকারী অভিবাসীবিরোধী এবং মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷
ছবি: Reuters/Y. Mokলন্ডন ব্রিজে ঘুরতে আসা পথচারীদের ওপর গাড়ি তুলে দেয় তিন ইসলামি জঙ্গি৷ তাতেই থেমে থাকেনি তারা৷ গাড়ি হামলার পর কাছেই বোরো মার্কেটে ছুরি নিয়ে হামলা চালিয়ে ৮ জনকে খুন করে জঙ্গিরা৷
ছবি: Reuters/S. Wermuthঘটনাস্থল যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার৷ নর্থ ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার অ্যরেনায় আরিয়ানা গ্রান্ডের কনসার্টে আত্মঘাতি হামলায় নিহত হন ২২ জন৷
ছবি: Reuters/D. Hoganএকটি ট্রাক হাইজ্যাক করে সুইডেনের স্টকহোমের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মধ্যে চালিয়ে দেয় হামলাকারী৷ এতে মারা যান চার পথচারী৷
ছবি: Reuters/A. Wiklundএই ঘটনায় একটি ভাড়া করা এসইউভি গাড়ি লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার ব্রিজে পথচারিদের ওপর তুলে দেয় হামলাকারী৷ এ ঘটনায় চারজন মারা যান৷ এরপর গাড়ি থেকে নেমে এক পুলিশ অফিসারকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে হামলাকারী৷
ছবি: DW/A. Frymann Rouchহামলার অস্ত্র হাইজ্যাক করা ট্রাক৷ এবার ঘটনাস্থল জার্মানির বার্লিন৷ বার্লিনের ক্রিসমাস মার্কেটে ভিড়ের মধ্যে চালানো এ হামলায় নিহত হন ১২ জন৷
ছবি: picture alliance / NurPhotoফ্রান্সের পর্যটননগরী নিসে চলছিল বাস্তিল দিবস উদযাপনের আয়োজন৷ ফলে ভিড়ও ছিল অস্বাভাবিক৷ আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ট্রাক হামলা চালিয়ে ৮৬ জনকে হত্যা করে হামলাকারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Langsdonবেলজিয়ামের ব্রাসেলস বিমানবন্দর ও সাবওয়েতে আত্মঘাতি হামলায় ৩২ জন নিহত হন, আহত হন শতাধিক৷ ইউরোপের অন্যান্য শহরে হামলায় এই হামলাকারীরাই জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/bsnyderফ্রান্সের প্যারিসে বাতাক্লঁ কনসার্ট হল ও আরো কয়েকটি এলাকায় একযোগে হামলা চালায়৷ নিহত হন ১৩০ জন৷ হামলাকারীরা জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের অনুসারী ছিল৷
ছবি: Reutersডেনমার্কের কোপেনহেগেন৷ এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন চলচ্চিত্র নির্মাতা ফিন ন্যোরগর্ট৷ এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যও আহত হন৷ একদিন পর একই হামলাকারী (যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে ওমর আল-হোসাইন নামে) একটি সিনাগগে হামলা চালিয়ে এক নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যা করে৷ পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় হামলাকারী৷
ছবি: Reuters/H. Hanschkeফ্রান্সের প্যারিসে ব্যাঙ্গাত্মক পত্রিকা শার্লি এব্দোর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ১৭ জনকে হত্যা করা হয়৷ জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদা এই ঘটনার দায় স্বীকার করে৷ শার্লি এবদোয় মুসলিমদের মহানবী হযরত মোহাম্মদকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করার প্রতিশোধ বলে উল্লেখ করা হয় ঘটনাটিকে৷
ছবি: picture-alliance/Pixsell/S. Strukicবেলজিয়ামের ব্রাসেলসে এক ইহুদি জাদুঘরে কালাশনিকভ রাইফেল নিয়ে হামলা চালিয়ে চার জনকে হত্যা করে হামলাকারী৷ অভিযুক্ত ব্যক্তি সিরিয়ায় আইএস-এর হয়ে যুদ্ধ করেছে বলে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Y. Boudlalআল-কায়েদার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত দুই জঙ্গি লন্ডনের রাস্তায় লি রিগবি নামের এক ব্রিটিশ সৈন্যকে তাড়া করে এবং কুপিয়ে হত্যা করে৷
ছবি: picture alliance/AP Photoআল-কায়েদার সাথে সংশ্লিষ্ট এক বন্দুকধারী ফ্রান্সের টুলুস শহরে তিন ইহুদি স্কুলছাত্র, এক ইহুদি রাবাই এবং তিন প্যারাট্রুপারকে হত্যা করে৷
ছবি: REUTERSআন্ডার্স বেরিং ব্রেইভিক নামের এক মুসলিমবিদ্বেষী হামলাকারী, নরওয়ের অসলোতে বোমা হামলা চালায়৷ এরপর নরওয়ের উটোয়া দ্বীপের এক যুব ক্যাম্পে গুলি চালিয়ে ৭৭ জনকে হত্যা করে৷
ছবি: dapdশার্লি এব্দোর অফিসে হামলার ঘটনা৷ মুসলিমদের মহানবী হযরত মোহাম্মদের কার্টুন চিত্র প্রকাশ করায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় ম্যাগাজিনটির অফিসে৷ তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি৷
ছবি: picture-alliance/abacaজার্মানির ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে ইসলামি জঙ্গি আরিদ উকা গুলি চালিয়ে দুই মার্কিন বৈমানিককে হত্যা করে৷ হামলাকারী আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের কর্মকান্ড নিয়ে একটি ভুয়া ভিডিও দেখে এ হামলায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে৷
ছবি: APলন্ডনে আল-কায়েদার সাথে জড়িত চার আত্মঘাতি জঙ্গি তিনটি সাবওয়ে ট্রেন এবং একটি বাসে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়৷ এই ঘটনায় ৫২ জন যাত্রী নিহত হন৷
ছবি: APস্পেনের মাদ্রিদে চারটি ট্রেনে অফিসগামী যাত্রীদের ওপর বোমা হামলা চালানো হয়৷ মোট নিহত হন ১৯১ জন যাত্রী৷
ছবি: AP