বুধবার ভোরে প্যারিসের উপকণ্ঠে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়েছে৷ এক নারী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে৷ সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক করেছে পুলিশ৷ বাড়ছে আন্তর্জাতিক তৎপরতা৷
বিজ্ঞাপন
প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার পর ফ্রান্স ও প্রতিবেশী দেশগুলিতে এই হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বিভিন্ন ব্যক্তিকে আটক করতে একাধিক অভিযান চালানো হচ্ছে৷ এর মধ্যে বুধবার ভোরে প্যারিসের উপকণ্ঠে স্যাঁ ডেনি এলাকায় নিরাপত্তার বাহিনীর অভিযানকে ঘিরে আশার আলো দেখা গিয়েছিল৷ প্যারিসে হামলার মূল ষড়যন্ত্রকারী আবদেলহামিদ আবাউদ সেখানে লুকিয়ে রয়েছে বলে পুলিশ সন্দেহ করছিল৷
অভিযানের সময় এক নারী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহত্যা করে৷ ৩ জনকে ঘটনাস্থলে এবং কাছাকাছি এলাকা থেকে আরও ২ জনকে আটক করা হয়৷ অভিযানের শেষে মৃতের সংখ্যা ২, আটক ৭ ব্যক্তি৷ তবে আবদেলহামিদ আবাউদকে সেখানে পাওয়া গেছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷ স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে উগ্রবাদীদের গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন৷ ২ জন পুলিশকর্মী ও ১ জন পথচারী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷
প্যারিস হামলার পর ফ্রান্সের চরম দক্ষিণপন্থি ন্যাশানাল ফ্রন্ট দলের নেত্রী মারিন ল্য পেন ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে আরও বিষাদগার শুরু করে দিয়েছেন৷ তাঁর প্রভাব আরও বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস৷
এদিকে মঙ্গলবার রাতে বোমাতঙ্কের কারণে প্যারিসগামী দু'টি যাত্রীবাহী বিমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডায় অবতরণ করতে বাধ্য হয়৷ অবশ্য দুটি বিমানেই তল্লাশি চালিয়ে কোনো বিস্ফোরক পাওয়া যায়নি৷
ফ্রান্স ও রাশিয়া সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট-এর উপর সামরিক হামলার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমন্বয় আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ আগামী ২৬শে নভেম্বর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করবেন৷
এর আগে ওলঁদ ২৪শে নভেম্বর ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে আইএস-এর বিরুদ্ধে অভিযানে বৃহত্তর জোট গড়ে তোলার বিষয়ে কথা বলতে চান৷
‘আমিই প্যারিস’
কোটি কোটি মানুষ সহমর্মিতা প্রকাশ করছে প্যারিসের প্রতি৷ শিল্পীরা আঁকছেন ছবি৷ যে শহরে প্রতি বছর কোটি মানুষ যায় মুগ্ধ হতে, সেই শহরের বুকে ১২৯টি নিরীহ প্রাণ কেড়ে নেয় সন্ত্রাসীরা৷ দেখুন প্যারিসের দুঃখে কাতর শিল্পীদের ছবি৷
ছবি: Twitter/@Zeli50/Chaunu
প্যারিসের জন্য শান্তি কামনা
বৃত্তের মধ্যে আইফেল টাওয়ারের এই ছবিটি এঁকেছেন শিল্পী জঁ জুলিয়েন৷ ছবির শিরোনাম, ‘পিস ফর প্যারিস’৷ প্যারিসের আক্রান্ত হওয়ার খবর জানার পরই আঁকা এই ছবিটি #PeaceForParis নামে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে৷ অনেকেই উল্কি এঁকে শরীরে রাখছেন #PeaceForParis, কেউ কেউ আবার পড়ছেন #PeaceForParis সম্বলিত টি-শার্ট৷
ফ্রান্সের কেরিক্যাচার শিল্পী #Baudry-ও তাঁর প্রিয় শহরে শত মানুষের আর্তনাদ দেখে ব্যথিত৷ তাঁর তুলিতে প্যারিস তাই রক্তে আবৃত৷ রক্তাক্ত প্যারিসের মাঝখান দিয়ে ক্ষীণ রেখা হয়ে বয়ে চলেছে সেন নদী৷ এ নদী অনমনীয়তার প্রতীক৷ শিল্পী যেন বোঝাতে চেয়েছেন সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত হামলায় যত রক্তই ঝরাক প্যারিসের জীবন নদীর মতো বয়ে যাবেই৷
ছবি: Twitter/@cyrilrtour/@hervebaudry
রক্তাক্ত পতাকা
#JeSuisParis নাম দিয়ে রক্তাক্ত পতাকার এই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন আরেক ক্যারিকেচার শিল্পী কার্লোস লাটুফ৷ এটিও ভীষণ সাড়া জাগিয়েছে৷
ছবি: Twitter/@ClaudeGaignard/@LatuffCartoons
দৈত্যের কবলে...
আলাদীনের চেরাগের সেই দৈত্যও উঠে এসেছে শিল্পীর আঁকা ছবিতে৷ প্যারিসের আর কিছু না হোক আইফেল টাওয়ারটা তো সবাই চেনে৷ প্যারিসের প্রতীকই আইফেল টাওয়ার৷ গল্পের দৈত্যকে প্রদীপ ঘষে ডেকে আনলে সে তার মনিবের আদেশ পালন করতো৷ ছবিতে শিল্পী #MarianKamensky অশুভ শক্তি হিসেবে আইএস-কেই বানিয়েছেন দৈত্য৷ সেই দৈত্য গলা টিপে ধরেছে আইফেল টাওয়ারের৷
ছবি: Twitter/@DonzelliX/@MarianKamensky1
শোকে নুয়ে পড়া আইফেল টাওয়ার
শিল্পী চাউনু-র আঁকা এই ছবিতে সকল প্যারিসবাসীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে আইফেল টাওয়ারও নুয়ে পড়েছে শোকে৷ নুয়ে এক প্যারিসবাসীকে জড়িয়ে ধরে সমবেদনা জানাচ্ছে৷ নারীর মাথায় জ্যাকোবিন টুপি৷ ফরাসি বিপ্লবের স্মৃতি স্মরণ করিয়ে ফরাসিদের উদ্বুদ্ধ করে এই টুপি৷