ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের অন্যতম ব্যস্ত ট্রেন স্টেশন গার দ্যু নর্দে এক ব্যক্তি ছুরি নিয়ে হামলা চালিয়েছে৷ হামলাকারীকে নিরস্ত্র ও আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সময় ভোর ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ফরাসি গণমাধ্যম৷ গার দ্যু নর্দ থেকে উত্তর ফ্রান্স ছাড়াও বেলজিয়াম, জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডসেও ট্রেন চলাচল করে৷
পুলিশ জানিয়েছে, নিরস্ত্র ও আটক করার আগে হামলাকারী বেশ কয়েকজনকে আহত করেছে৷ ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরার্দ ডারমানিন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ায় পুলিশকে ধন্য়বাদ জানিয়েছেন৷
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, আক্রান্তদের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তাও ছিলেন৷ তবে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটের কারণে এই পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হননি৷ তবে একজন যাত্রী ছুরি হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন, তার চিকিৎসা চলছে৷
এই ঘটনার ফলে কিছুক্ষণের জন্য স্টেশনটিতে রেল চলাচল বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছে রেল অপারেটর এসএনসিএফ৷
ঠিক কতজন এই হামলায় আহত হয়েছেন, তা জানায়নি কর্তৃপক্ষ৷ তবে ফরাসি গণমাধ্যম বিএফএম টিভি ‘অন্তত ছয় জন আহত হয়েছেন' জানিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে৷ হামলার কারণ সম্পর্কেও কিছু জানায়নি পুলিশ৷
তিন সপ্তাহ আগেই প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কুর্দিশ কালচারাল সেন্টারে এক বন্দুকধারী হামলা চালিয়ে তিন জনকে হত্যা করে৷ একটি রেস্টুরেন্ট এবং সেলুনে হামলায় আহত হন কয়েকজন৷ বর্ণবাদী চিন্তা থেকেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছিল বলে জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ৷
ফ্রান্সের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যা আছে
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ২০১৭ সালে জরুরি অবস্থায় প্রযোজ্য আইনের বেশ কিছু ধারা স্বাভাবিক অবস্থায়ও প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷
ছবি: REUTERS/Youssef Boudlal
চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা
সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দিহান ব্যক্তিরা নিজেদের শহর ছেড়ে অন্যত্র যেতে পারবে না এবং প্রয়োজন হলে তাদের নিয়মিত পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে হবে৷ এরকম মানুষদের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় নিষিদ্ধও করা যাবে৷ বলাবাহুল্য, আগে সাধারণত জরুরি অবস্থায় এমন আইন প্রয়োগ করতে পারতো ফরাসি সরকার, যার অর্থ হচ্ছে, একজনকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা৷
ছবি: Reuters/Ch. Platiau
ঘরতল্লাশি
শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের স্বার্থে যে-কারো ঘর তল্লাশি করতে পারবে কর্তৃপক্ষ৷ আগে জরুরি অবস্থার বাইরে এ ধরনের তল্লাশি অভিযান একজন বিচারকের আদেশক্রমে করা যেতো৷ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারির পর প্রথম সাত মাসে ৩,৬০০ বাড়িতে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়৷ এর মধ্যে শুধুমাত্র ছয়টি তল্লাশির সময় সন্ত্রাসবাদের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/L. Notarianni
উপসনালয় বন্ধের ক্ষমতা
উগ্রবাদ বা বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে যে কোনো উপসনালয় বন্ধ করে দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ৷ এর আগে ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতা মারিঁ ল্য পেন অভিযোগ করেছিলেন যে, তাঁদের উপর যুদ্ধ ঘোষণা করা উগ্র ইসলামপন্থার মোকাবিলায় ফ্রান্সের প্রচলিত আইন যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারছে না৷
ছবি: REUTERS/Christian Hartmann
বন্দর এবং বিমানবন্দরে পরিচয়পত্র পরীক্ষা
বন্দর এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দশ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে যে কারো পরিচয়পত্র পরীক্ষা করতে পারবে নিরাপত্তা বাহিনী৷ সরকারের প্রস্তাবিত ড্রাফটে অবশ্য বিশ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে এ ধরনের পরীক্ষা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছিল৷ কিন্তু অনুমোদিত আইনে সেটা কমিয়ে দশ বর্গকিলোমিটার করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/B. Tessier
পাবলিক ইভেন্ট ঘিরে নিরাপত্তা
সন্ত্রাসী হামলার কবলে পড়ার ঝুঁকি আছে এমন বড় পাবলিক ইভেন্টের নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থার মতো আইনি অধিকার পাবে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো৷ এই অধিকারের আওতায় তারা ভেন্যুর কাছাকাছি যে কোনো প্রপার্টিতে এবং সন্দেহভাজন যে কোনো মানুষকে তল্লাশি করতে পারবে৷ এছাড়া নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কর্মরত কোনো সরকারি কর্মী যদি উগ্র মতামত ধারণ করে, তাহলে তাকে বদলি বা চাকুরিচ্যুত করা যাবে৷