প্যারিসের পুলিশ সদরদপ্তরে ছুরিহামলায় চারজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন৷ শহরটির মেয়র শোক প্রকাশ করে টুইট করেছেন৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবারের এ ঘটনায় থমকে গেছে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস৷ ঘটনার পর শহরের মেয়র আনে হিদালগো নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘‘পুলিশ সদরদপ্তরে দুপুরের ভয়াবহ হামলার কারণে প্যারিস আজ নিজের জন্য কাঁদছে৷'' পুলিশ বা সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনাটি সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে কিছু জানানো হয়নি৷ তবে পুলিশের ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকর্তা লইক ট্র্যাভার্স সাংবাদিকদের এমন একটি ঘটনার কথা জানিয়ে বলেছেন, হামলাকারী পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন৷ ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ৷
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ, প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্দ ফিলিপে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফ কাস্টনার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷ পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, হামলাকারী ২০০৩ সাল থেকে পুলিশ সদরদপ্তরে প্রশাসনিক কাজ করে আসছিলেন৷ তবে গত ১৬ বছরে কখনো তার মধ্যে অপরাধপ্রবণতা লক্ষ্য করা যায়নি৷ প্যারিসের প্রসিকিউটর রেমি হেইৎস জানান, হামলার উদ্দেশ্য জানতে ৪৫ বছর বয়সি হামলাকারীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ৷ তিনি আরো জানান, হামলায় নিহতদের একজন নারী৷
এসিবি/জেডএইচ (ডিপিএ, রয়টার্স)
ফ্রান্সের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যা আছে
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ২০১৭ সালে জরুরি অবস্থায় প্রযোজ্য আইনের বেশ কিছু ধারা স্বাভাবিক অবস্থায়ও প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷
ছবি: REUTERS/Youssef Boudlal
চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা
সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দিহান ব্যক্তিরা নিজেদের শহর ছেড়ে অন্যত্র যেতে পারবে না এবং প্রয়োজন হলে তাদের নিয়মিত পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে হবে৷ এরকম মানুষদের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় নিষিদ্ধও করা যাবে৷ বলাবাহুল্য, আগে সাধারণত জরুরি অবস্থায় এমন আইন প্রয়োগ করতে পারতো ফরাসি সরকার, যার অর্থ হচ্ছে, একজনকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা৷
ছবি: Reuters/Ch. Platiau
ঘরতল্লাশি
শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের স্বার্থে যে-কারো ঘর তল্লাশি করতে পারবে কর্তৃপক্ষ৷ আগে জরুরি অবস্থার বাইরে এ ধরনের তল্লাশি অভিযান একজন বিচারকের আদেশক্রমে করা যেতো৷ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারির পর প্রথম সাত মাসে ৩,৬০০ বাড়িতে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়৷ এর মধ্যে শুধুমাত্র ছয়টি তল্লাশির সময় সন্ত্রাসবাদের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/L. Notarianni
উপসনালয় বন্ধের ক্ষমতা
উগ্রবাদ বা বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে যে কোনো উপসনালয় বন্ধ করে দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ৷ এর আগে ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতা মারিঁ ল্য পেন অভিযোগ করেছিলেন যে, তাঁদের উপর যুদ্ধ ঘোষণা করা উগ্র ইসলামপন্থার মোকাবিলায় ফ্রান্সের প্রচলিত আইন যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারছে না৷
ছবি: REUTERS/Christian Hartmann
বন্দর এবং বিমানবন্দরে পরিচয়পত্র পরীক্ষা
বন্দর এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দশ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে যে কারো পরিচয়পত্র পরীক্ষা করতে পারবে নিরাপত্তা বাহিনী৷ সরকারের প্রস্তাবিত ড্রাফটে অবশ্য বিশ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে এ ধরনের পরীক্ষা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছিল৷ কিন্তু অনুমোদিত আইনে সেটা কমিয়ে দশ বর্গকিলোমিটার করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/B. Tessier
পাবলিক ইভেন্ট ঘিরে নিরাপত্তা
সন্ত্রাসী হামলার কবলে পড়ার ঝুঁকি আছে এমন বড় পাবলিক ইভেন্টের নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থার মতো আইনি অধিকার পাবে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো৷ এই অধিকারের আওতায় তারা ভেন্যুর কাছাকাছি যে কোনো প্রপার্টিতে এবং সন্দেহভাজন যে কোনো মানুষকে তল্লাশি করতে পারবে৷ এছাড়া নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কর্মরত কোনো সরকারি কর্মী যদি উগ্র মতামত ধারণ করে, তাহলে তাকে বদলি বা চাকুরিচ্যুত করা যাবে৷