দুই পুলিশকর্মীকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হতে চায়নি প্যারিসের আততায়ী৷ জিহাদিদের উদ্দেশ্যে আরও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাবার আহ্বান জানিয়েছিল সে৷ এদিকে আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম জোরদার করতে চায় ওয়াশিংটন ও প্যারিস৷
বিজ্ঞাপন
সন্ত্রাসী হামলার মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ দুই দেশের সহযোগিতা আরও নিবিড় করার অঙ্গীকার করেছেন৷ ওলঁদ নিজে প্যারিসের মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে অরল্যান্ডো হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করে সংহতি প্রকাশ করেছেন৷ এ জন্য ওবামা টেলিফোনে তাঁকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷ তিনি প্যারিসে নিহত পুলিশ কমান্ডার ও তাঁর সঙ্গিনীর হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করে সহানুভূতি জানিয়েছেন৷ তথাকথিত ইসলামিক স্টেটকে ধ্বংস করতে দুই নেতাই বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন৷
এদিকে জানা গেছে যে, পুলিশ দম্পতির হত্যাকারী সম্ভবত আরও হত্যার ষড়যন্ত্র করছিল৷ সে ‘ভিআইপি'-দের একটি তালিকা তৈরি করে তার অনুগামীদের ইউরোপীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা চলাকালীন হত্যালীলা চালিয়ে এক ‘কবরখানা' সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়েছিল৷ পুলিশ তার বাড়িতে তিনটি ছুরিও খুঁজে পেয়েছে, যার মধ্যে একটি রক্তমাখা ছিল৷
পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর আগে প্যারিসের আততায়ী লারোসি আবালা এক ফেসবুক ভিডিও-র মাধ্যমে সে হামলার কথা স্বীকার করে জিহাদিদের উদ্দেশ্যে আরও এমন হত্যাকাণ্ড চালানোর ডাক দিয়েছিল৷ পরে ফেসবুক সেটি সরিয়ে নিয়ে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যে তারা এই হত্যাকাণ্ডের পর ফ্রান্সের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করছে৷
এই ঘটনার ফলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সরাসরি এমন ভিডিও সম্প্রচারের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিতর্ক চলছে৷
কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে আইএস?
পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতি, অধিকৃত এলাকায় কর চাপানো এবং প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি করে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট প্রায় ২০০ কোটি ডলার একত্র করেছে৷ তাতে তাদের আরও ২ বছর চলে যাবার কথা৷
ছবি: picture alliance/abaca
বেআইনি তেল বিক্রি
বেআইনি ভাবে পেট্রোলিয়াম বিক্রি আইএস-এর আয়ের প্রধান উৎস৷ সিরিয়া ও ইরাকে বেশ কিছু বড় তৈলকূপ আপাতত তাদের দখলে৷ মূলত তুরস্কের মধ্য দিয়েই তারা চোরাচালানের কাজ চালিয়ে থাকে৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, কালোবাজারে তেল বিক্রি করে আইএস-এর মাসে প্রায় ৪ কোটি ডলার আয় হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
ব্যাংক ডাকাতি
সিরিয়া ও ইরাকে কোনো এলাকা দখলের পর আইএস সবার আগে ব্যাংকগুলি কবজা করে ফেলে৷ মার্কিন প্রশাসনের ধারণা, এভাবে তারা ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে৷ শুধু মোসুল শহর দখল করেই তারা নাকি ৬২ কোটি ডলার লুট করেছিল৷ বছরে প্রায় ৫০,০০০ জিহাদি কর্মীর বেতন দিতে এই অর্থ যথেষ্ট৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
কর আদায় ও চাঁদাবাজি
আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষকে ৫ থেকে ১৩ শতাংশ আয়কর দিতে হয়৷ জার্মান সরকারের সূত্র অনুযায়ী, আইএস অ-মুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া করও আদায় করে৷ তাছাড়া চাঁদাবাজিও তাদের আয়ের আরেকটি উৎস৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি
‘জিহাদিরা’ আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস করতে অভ্যস্ত৷ তবে বেশি দামি অ্যান্টিক সম্পদ সযত্নে সরিয়ে ফেলে কালোবাজারে বিক্রি করে তারা৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করতে পিছপা হয় না এই গোষ্ঠী৷ তবে বিক্রিমূল্যের সঠিক অঙ্ক জানা নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মুক্তিপণ ও প্রচারণা
মানুষজনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় আইএস-এর দু-মুখী চাল৷ একদিকে এটা আয়ের একটা উৎস, অন্যদিকে এর মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রচারণার কাজও হয়ে যায়৷ কিছু ‘মূল্যবান’ জিম্মির শিরশ্ছেদ করে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপুল সাফল্য পায় আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সহানুভূতি দেখাতে চাঁদা
আইএস-এর প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ মানুষ গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ তারা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তহবিলে আর্থিক অবদান রাখে৷ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সূত্র অনুযায়ী সৌদি আরবে ২০১০ সাল থেকে ৮৬০ জন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের কাজে আর্থিক সাহায্য দেবার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে ১০০ জনের শাস্তি হয়েছে৷