সব দক্ষিণপন্থি নেতা ও গোষ্ঠী, ফ্রান্সের ল্য পেন থেকে শুরু করে হাঙ্গেরির ওর্বান অথবা জার্মানির পেগিডা আন্দোলন, সকলেরই বক্তব্য এক: উদ্বাস্তুদের স্রোতে মিশে ইউরোপে আসছে সন্ত্রাসীরা৷ জাতিসংঘ অবশ্য এই ধারণার বিরোধিতা করেছে৷
ছবি: Getty Images/J. Mitchell
বিজ্ঞাপন
ফ্রান্সের দক্ষিণপন্থি ‘ন্যাশানাল ফ্রন্ট' দলের নেতা মারিন ল্য পেন গত সোমবারেই দাবি তোলেন যে, ফ্রান্সে যাবতীয় অভিবাসী গ্রহণ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে৷ ল্য পেন একটি বিবৃতিতে বলেন যে, শুক্রবার প্যারিসের আক্রমণে সংশ্লিষ্ট এক সন্ত্রাসী গতমাসে গ্রিসে এসে পৌঁছায়৷
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওর্বান সোমবার বুদাপেস্ট সংসদে বলেন যে, উদ্বাস্তু সংকটের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘‘দুর্বল, অনিশ্চিত ও অক্ষম'' হয়ে পড়েছে৷ এছাড়া ইইউ-এর সদস্যদেশগুলির মধ্যে উদ্বাস্তুদের বেঁটে নেওয়ার পরিকল্পনা বেআইনি ও তার ফলে ‘‘ইউরোপে সন্ত্রাসবাদ ছড়াবে''৷
উদ্বাস্তু পরিস্থিতি ও জার্মান রাজনীতি
জার্মানিতে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের আগমন শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনাকেই বিপদের মুখে ফেলেনি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও তার ছাপ ফেলেছে: চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর জনপ্রিয়তা আজ কমতির দিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
উদ্বাস্তু শিবিরে দাঙ্গা
হামবুর্গ শহরের ভিলহেল্মসবুর্গ এলাকায় শরণার্থীদের প্রাথমিক আশ্রয়কেন্দ্রটি ভরে যাওয়ায় আগন্তুকদের তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়৷ মঙ্গলবার (৬ই অক্টোবর) সেখানে আফগানিস্তান ও আলবেনিয়া থেকে আগত উদ্বাস্তুদের মধ্যে ব্যাপক দাঙ্গা বাঁধে৷ লোয়ার স্যাক্সনি-র ব্রাউনশোয়াইগ-এও অনুরূপভাবে আলজিরীয় ও সিরীয় উদ্বাস্তুদের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধে একটি চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Charisius
ইসলাম বিরোধীরা আবার মাথা চাড়া দিয়েছে
ড্রেসডেনে ইসলাম বিরোধী পেগিডা গোষ্ঠীর বিক্ষোভ সমাবেশে গত সোমবার প্রায় ন’হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন৷ বিক্ষোভকারীরা মূলত চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-কেই বর্তমান উদ্বাস্তু সংকটের জন্য দায়ী করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
ম্যার্কেল লাগাম টানলেন
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দৃশ্যত তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ের-এর গুরুত্ব কিছুটা খর্ব করে চ্যান্সেলরের দপ্তরের প্রধান পেটার আল্টমায়ার-কে শরণার্থী সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
উদ্বাস্তুর লাশ
টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের সালফেল্ড-এ অবস্থিত একটি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী আবাসে সোমবার একটি অগ্নিকাণ্ডের পর ২৯ বছর বয়সি এক ইরিট্রিয়ান উদ্বাস্তুর লাশ পাওয়া যায়৷ কিভাবে এই শরণার্থী প্রাণ হারিয়েছেন, তা এখনও অজ্ঞাত৷ তবে আবাসটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্নিসংযোগের কোনো হদিশ পুলিশ এখনও পায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে কোনো পন্থায়
টুরিঙ্গিয়ায় এর আগেও উদ্বাস্তু আবাস হিসেবে চিহ্নিত বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে শরণার্থীদের আসা বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ যেমন বিশহাগেন-এর এই বাড়িটির ছাদ পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছে৷ গত সোমবার এখানে প্রথম উদ্বাস্তুদের আসার কথা ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gränzdörfer
ঘরে বাইরে
শরণার্থী সংকট এখন জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও টান ধরাচ্ছে৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের জোড়োয়া দল বাভারিয়ার সিএসইউ৷ তাদের প্রধান হর্স্ট জেহোফার সেপ্টেম্বর মাসের শেষে একটি দলীয় সম্মেলনে বক্তা হিসেব আমন্ত্রণ জানান হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান-কে, যিনি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে উদ্বাস্তুর স্রোত আটকানোর চেষ্টা করেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
হাওয়া যদি বদলায়
বাভারিয়ার অর্থমন্ত্রী মার্কুস জ্যোডার ইতিপূর্বেও বলেছেন: ‘‘আমরা (অর্থাৎ জার্মানি) বিশ্বকে বাঁচাতে পারি না৷’’ এমনকি তিনি অস্ট্রিয়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথাও চিন্তা করেছেন৷ তবে জ্যোডার যখন সম্প্রতি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার সীমিত করার কথা বলেন, তখন জেহোফার স্বয়ং সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
7 ছবি1 | 7
জার্মানিতে দক্ষিণপন্থি পেগিডা আন্দোলন – যাদের নামই হল ‘প্রতীচ্যের ইসলামীকরণের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমী ইউরোপীয়দের' জোট – যথারীতি তাদের সোমবারের ‘ডেমো' অব্যাহত রেখেছে৷ ড্রেসডেন শহরে দশ হাজার পেগিডা সমর্থকদের সামনে পেগিডা নেতা সিগফ্রিড ড্যাব্রিটৎস বলেন যে, প্যারিসের আক্রমণ ছিল ‘‘এমন একটি অভিবাসন নীতির পরিণাম, যা পুরোপুরি বিদেশি সংস্কৃতির সম্পূর্ণ ভিন্ন মূল্যবোধ সংযুক্ত মানুষদের এমন সব দেশে ও অঞ্চলে নিয়ে আসে, যেখানকার সংস্কৃতি এই অভিবাসীরা ঘৃণার চক্ষে দেখে''৷
জাতিসংঘ উদ্বাস্তুদের সন্ত্রাসবাদীদের পর্যায়ে ফেলার বিরোধিতা করেছে৷ জাতিসংঘের মুখপাত্র স্তেফানে জুয়ারিচ সোমবারেই বলেন, ‘‘বিপন্ন মানুষ, যারা নিজেরাই সহিংসতা থেকে পালাচ্ছে, তাদের দোষী করাটা সঠিক পন্থা হবে না''৷ জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী উর্সুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন সোমবার একটি জার্মান পত্রিকার সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘উদ্বাস্তুদের সন্ত্রাসবাদীর পর্যায়ে ফেলার মতো ভুল করা উচিত নয়''৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মিত্র জার্মান রাজনীতিক মিশায়েল ফুক্স ডিডাব্লিউ টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে সঞ্চালক টিম সেবাস্টিয়ানকে বলেন, ‘‘উদ্বাস্তুরা যে পিছনে মূল কারণ, এ কথা ঠিক নয়৷''
Michael Fuchs on Conflict Zone
26:04
This browser does not support the video element.
এসি/ডিজি (ডিডাব্লিউ)
প্রিয় পাঠক, আপনার কী মনে হয়? প্যরিস সন্ত্রাসের সাথে উদ্বাস্তুদের কি সম্পর্ক রয়েছে ? নীচের মন্তব্যের ঘরে লিখে জানান ৷