সোমবার প্যারিসে পুলিশ ভ্যানের উপর হামলার তদন্ত চলছে৷ হামলাকারী জেহাদি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে৷ ফ্রান্সের প্রশাসন সন্ত্রাসী হামলার হুমকি নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছে৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে শঁজেলিসে সড়কে এক ব্যক্তি গাড়ি বোঝাই অস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ে পুলিশের একটি ভ্যানে সামনে থেকে ধাক্কা মারে৷ গাড়িতে আগুন লেগে যাওয়ায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়৷ তবে প্রায় অলৌকিকভাবে এই হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি৷ পুলিশ প্রথমে এই হামলাকে সাধারণ দুর্ঘটনা হিসেবেই গণ্য করছিল৷ এক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান অনুযায়ী, তারা প্রথমে হামলাকারীকে গাড়ি থেকে বের করে গাড়ির আগুন নেভানোর চেষ্টা করে৷ পুলিশের সূত্রকে উদ্ধৃত করে এএফপি জানিয়েছে, সেই গাড়ির মধ্যে পরে কালাশনিকভ রাইফেল, দুটি হ্যান্ডগান ও গ্যাসের বোতল পাওয়া যায়৷
হামলাকারীর উদ্দেশ্য সফল হলে এই সন্ত্রাসী হামলার মারাত্মক পরিণতি হতে পারতো – এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ প্রেসিডেন্টের বাসভবন এলিসে প্রাসাদ ও মার্কিন দূতাবাসের কাছেই এমন এক হামলার প্রচেষ্টা কর্তৃপক্ষের জন্য নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠলো৷ উল্লেখ্য, গত বছর দক্ষিণে নিস শহরে হামলায় ৮৬ জনের মৃত্যুর পর থেকে একের পর এক হামলায় জর্জরিত হচ্ছে ফ্রান্স৷ গত এপ্রিল মাসেই শঁজেলিসে সড়কে পুলিশের বাসের উপর সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছিল৷ উল্লেখ্য, সম্প্রতি ফ্রান্সে পুলিশের উপর হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে৷
পুলিশ জানিয়েছে, ফ্রান্সের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি এই ব্যক্তি সম্পর্কে আগে থেকেই জানতো৷ তবে তার পরিচয় এখনো জানানো হয়নি৷ মঙ্গলবার পুলিশ তার পরিবারের ৪ সদস্যকে আটক করেছে৷ সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ৩১ বছর বয়সের হামলাকারী জাজিরি আডাম লোৎফি জেহাদি কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ছিল৷ ২০১৫ সাল থেকে সে ‘ব়্যাডিকাল ইসলামি আন্দেলন' নামের এক গোষ্ঠীর সদস্য ছিল৷
সংসদ নির্বাচনের ঠিক পরে এমন এক হামলার প্রচেষ্টা নতুন প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলছে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরার কলঁব বলেন, এর ফলে আবার স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, ফ্রান্সে হুমকির মাত্রা অত্যন্ত বেশি৷ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ গত মাসেই বলেছিলেন যে, তাঁর প্রশাসন নিরাপত্তা বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতার মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে৷ ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে প্যারিসে একাধিক সন্ত্রাসী হামলার পর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে নিরাপত্তা বাহিনীকে তদন্তের স্বার্থে তল্লাশি ও আটক করার এই বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছিল৷
সন্ত্রাস দমনে ইউরোপের প্রস্তুতি
১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে সাম্প্রতিক কালেও একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে ইউরোপ৷ ইউরোপের একাধিক দেশে এমন পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত বিশেষ সন্ত্রাস-দমন বাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
হামলার শিকার ইউরোপ
প্যারিস, ব্রাসেলস, নিস – ইউরোপের একের পর এক শহরের মানুষ ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে৷ শোক সামলে নেওয়ার পর বার বার প্রশ্ন উঠেছে, এমন হামলা কি প্রতিরোধ করা যেত? অথবা আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া কি সম্ভব হতো?
ছবি: Reuters/E. Gaillard
জার্মানির ‘জিএসজি ৯’
বন শহরের কাছে জার্মানির বিশেষ কমান্ডো বাহিনী ‘জিএসজি ৯’-এর ঘাঁটি৷ সন্ত্রাস দমনের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই ইউনিট জার্মানিতে সন্ত্রাসী হামলা ঘটলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়, যেমনটা সম্প্রতি মিউনিখে দেখা গেছে৷ ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকের সময় ইসরায়েলি পণবন্দি নাটকের পর এই বাহিনী গঠন করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
অস্ট্রিয়ার ‘একো কোবরা’
অস্ট্রিয়ার কেন্দ্রীয় ফেডারেল পুলিশ বাহিনীর এই ইউনিট সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলার জন্য সর্বদা প্রস্তুত৷ জার্মানির মতোই অস্ট্রিয়াও মিউনিখ অলিম্পিকে হামলার পরও নড়েচড়ে বসে৷ ১৯৭৮ সালে প্রথমে ‘জিইকে’ নামের বাহিনী তৈরি হয়৷ ২০০২ সালে তার নাম বদলে রাখা হয় ‘একো কোবরা’৷
ছবি: Getty Images
ফ্রান্সের ‘জিআইজিএন’
ফ্রান্সের জাতীয় পুলিশ বাহিনীর বিশেষ ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ সন্ত্রাসী হামলা, জিম্মি পরিস্থিতি, জাতীয় হুমকি ইত্যাদির সময় হস্তক্ষেপ করে৷ এই বাহিনী গঠনের পেছনেও কাজ করেছে ১৯৭২ সালে মিউনিখ হামলার ঘটনা৷ ১৯৭৪ সালে ‘জিআইজিএন’ বাহিনী গড়ে তোলা হয়৷
ফ্রান্সের আদলে ইটালিতেও ১৯৭৭ সাল থেকে এক ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ সক্রিয় রয়েছে৷ সন্ত্রাসী হামলা ঘটলে আকাশপথে দ্রুত মোতায়েন করা যায় এই বিশেষ বাহিনী৷ ভিআইপি-দের সুরক্ষার কাজেও লাগানো হয় এই বাহিনী৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
নেদারল্যান্ডস-এর ‘ডিএসআই’
২০০৬ সালে জাতীয় পুলিশ বাহিনীর ছত্রছায়ায় ‘ডিএসআই’ নামের এই বিশেষ ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ গঠন করা হয়৷ সন্ত্রাসবাদ ও চরম হিংসার পরিস্থিতিতে এই বাহিনী দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে পারে৷ এর আগে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের প্রক্রিয়ার দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে এই ইউনিট গঠন করা হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Van Dijl
স্পেনের ‘ইউইআই’
স্পেনে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার জন্য ‘ইউইআই’ নামের ‘ইন্টারভেনশন ফোর্স’ কাজ করছে ১৯৭৮ থেকে৷ সন্ত্রাসবাদ থেকে শুরু করে জিম্মি নাটক – যে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সামলাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই ইউনিটকে৷ এই বাহিনী সম্পর্কে প্রকাশ্যে বেশি তথ্য প্রকাশ করা হয় না৷