২০১৫ সালের সেই হামলায় প্রাণ হারিয়েছিল ১৩০ জন৷ সালাহ আব্দেসলামের আঙুলের একটা স্পর্শে মৃতের সংখ্যা ১৩১-ও হতে পারতো৷ আদালতে দাঁড়িয়ে সালাহ বললেন, আত্মঘাতী হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে স্বেচ্ছায় সেদিন সিদ্ধান্ত বদলেছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
২০১৫ সালের ১৩ নভেম্বরের সেই হামলার দায় স্বীকার করেছিল তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস৷
জার্মানি-ফ্রান্স ফুটবল ম্যাচ চলার সময় স্টেডিয়ামের বাইরে আত্মঘাতী বোমা ফাটায় তিন জঙ্গি৷ সালাহর দায়িত্ব ছিল এক কনসার্ট হলে হামলা চালানোর৷ কিন্তু অন্য জঙ্গিরা আত্মঘাতী হলেও ৩২ বছর বয়সি সালাহ অক্ষত অবস্থায় বাটাক্লানের কনসার্টস্থল থেকে পালিয়ে যান৷
তার বেঁচে যাওয়ার প্রকৃত কারণ এতদিন জানা যায়নি৷
হামলার পর সুইসাইড ভেস্ট ছুঁড়ে ফেলে নিজের শহর ব্রাসেলসে চলে যান সালাহ৷ ২০১৬ সালের এপ্রিলে সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷
২০১৫ সালের নভেম্বরের সিরিজ বোমা হামলায় অন্তত ২০ জন জড়িত ছিলেন বলে ফ্রান্সের পুলিশের সন্দেহ৷ তাদের মধ্যে ছয়জন এখনো পুলিশের নাগালের বাইরে৷ তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শুরু করা হয়৷ এছাড়া অন্তত পাঁচ জন সিরিয়ায় আইএস-এর হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তবে হামলায় সরাসরি জড়িতদের মধ্যে একমাত্র সালাহই এখনো বেঁচে আছেন৷
‘আমিই প্যারিস’
কোটি কোটি মানুষ সহমর্মিতা প্রকাশ করছে প্যারিসের প্রতি৷ শিল্পীরা আঁকছেন ছবি৷ যে শহরে প্রতি বছর কোটি মানুষ যায় মুগ্ধ হতে, সেই শহরের বুকে ১২৯টি নিরীহ প্রাণ কেড়ে নেয় সন্ত্রাসীরা৷ দেখুন প্যারিসের দুঃখে কাতর শিল্পীদের ছবি৷
ছবি: Twitter/@Zeli50/Chaunu
প্যারিসের জন্য শান্তি কামনা
বৃত্তের মধ্যে আইফেল টাওয়ারের এই ছবিটি এঁকেছেন শিল্পী জঁ জুলিয়েন৷ ছবির শিরোনাম, ‘পিস ফর প্যারিস’৷ প্যারিসের আক্রান্ত হওয়ার খবর জানার পরই আঁকা এই ছবিটি #PeaceForParis নামে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে৷ অনেকেই উল্কি এঁকে শরীরে রাখছেন #PeaceForParis, কেউ কেউ আবার পড়ছেন #PeaceForParis সম্বলিত টি-শার্ট৷
ফ্রান্সের কেরিক্যাচার শিল্পী #Baudry-ও তাঁর প্রিয় শহরে শত মানুষের আর্তনাদ দেখে ব্যথিত৷ তাঁর তুলিতে প্যারিস তাই রক্তে আবৃত৷ রক্তাক্ত প্যারিসের মাঝখান দিয়ে ক্ষীণ রেখা হয়ে বয়ে চলেছে সেন নদী৷ এ নদী অনমনীয়তার প্রতীক৷ শিল্পী যেন বোঝাতে চেয়েছেন সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত হামলায় যত রক্তই ঝরাক প্যারিসের জীবন নদীর মতো বয়ে যাবেই৷
ছবি: Twitter/@cyrilrtour/@hervebaudry
রক্তাক্ত পতাকা
#JeSuisParis নাম দিয়ে রক্তাক্ত পতাকার এই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন আরেক ক্যারিকেচার শিল্পী কার্লোস লাটুফ৷ এটিও ভীষণ সাড়া জাগিয়েছে৷
ছবি: Twitter/@ClaudeGaignard/@LatuffCartoons
দৈত্যের কবলে...
আলাদীনের চেরাগের সেই দৈত্যও উঠে এসেছে শিল্পীর আঁকা ছবিতে৷ প্যারিসের আর কিছু না হোক আইফেল টাওয়ারটা তো সবাই চেনে৷ প্যারিসের প্রতীকই আইফেল টাওয়ার৷ গল্পের দৈত্যকে প্রদীপ ঘষে ডেকে আনলে সে তার মনিবের আদেশ পালন করতো৷ ছবিতে শিল্পী #MarianKamensky অশুভ শক্তি হিসেবে আইএস-কেই বানিয়েছেন দৈত্য৷ সেই দৈত্য গলা টিপে ধরেছে আইফেল টাওয়ারের৷
ছবি: Twitter/@DonzelliX/@MarianKamensky1
শোকে নুয়ে পড়া আইফেল টাওয়ার
শিল্পী চাউনু-র আঁকা এই ছবিতে সকল প্যারিসবাসীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে আইফেল টাওয়ারও নুয়ে পড়েছে শোকে৷ নুয়ে এক প্যারিসবাসীকে জড়িয়ে ধরে সমবেদনা জানাচ্ছে৷ নারীর মাথায় জ্যাকোবিন টুপি৷ ফরাসি বিপ্লবের স্মৃতি স্মরণ করিয়ে ফরাসিদের উদ্বুদ্ধ করে এই টুপি৷
ছবি: Twitter/@Zeli50/Chaunu
6 ছবি1 | 6
গত ছয় বছরে সেদিন সুইসাইড ভেস্ট না ফাটানোর বিষয়ে মুখ খোলেননি সালাহ৷ বুধবার প্যারিসের বিশেষ আদালতে শুনানি শুরুর পরও জানিয়েছিলেন, আইন অনুযায়ী তার নীরব থাকার অধিকার রয়েছে, তাই তিনি এ বিষয়ে কিছু বলবেন না৷ কিন্তু হামলায় শিকারদের পক্ষের এক উকিল হঠাৎ প্রেমিকাকে নিয়ে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করলে এতদিন গোপন করে রাখা তথ্যটি হঠাৎই জানিয়ে দেন সবাইকে৷
তিনি জানান, সেদিন শেষ মুহূর্তে ইচ্ছে করেই সুইসাইড ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেকেও উড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছিলেন, ‘‘হ্যাঁ, আমি শেষ মুহূর্তে বেল্টের বোতাম টেপার সিদ্ধান্ত বদলেছিলাম৷ না কাপুরুষতা থেকে বা ভয় থেকে তা করিনি, আসলে শেষ মুহূর্তে তা আর তা করতে চাইনি, ব্যাস...৷''
কিন্তু সুইসাইড ভেস্ট বিস্ফোরিত না হওয়া, নিজের বেঁচে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে হয়েছিল সালাহকে৷ আদালতে তিনি বলেন, ‘‘অন্যদের বলেছিলাম, বেল্টটা ঠিকভাবে কাজ করেনি৷ হ্যাঁ, সেদিন মিথ্যে বলেছিলাম৷ এবং সে কারণে লজ্জাও লাগছিল৷ অন্য জিহাদীদের চোখের দিকে তাকাতেও ভয় লাগছিল৷ তখন বয়স তো মাত্র ২৫৷ বিষয়টি নিয়ে আমি তখন সত্যিই লজ্জিত ছিলাম৷''
যে রাত বিশ্বকে বদলে দিল
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ১৩ই নভেম্বরের সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ১২৯ জন নিহত ও ৩৫২ জন আহত হয়েছে৷ কেঁপে উঠেছে গোটা বিশ্ব৷ বদলে গেছে অনেক কিছু৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
প্রাথমিক খবর
জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ চলাকালীন প্যারিসে হামলার প্রাথমিক খবর আসতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মানুষের মনে ভয়
খবর পেয়ে প্যারিসের মানুষের মনে ভয় ও আতঙ্ক ছেয়ে যায়৷ কর্তৃপক্ষ মানুষকে বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পণবন্দি নাটকের মঞ্চ
বাটাক্লঁ কনসার্ট হলে হেভি মেটাল সংগীত চলাকালীন সন্ত্রাসবাদীরা কিছু মানুষকে পণবন্দি করেছিল৷ রাত একটা নাগাদ পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে৷
ছবি: Reuters/C. Hartmann
বিহ্বল প্রেসিডেন্ট
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন৷ ফুটবল ম্যাচের বিরতির সময়ে তিনি স্টেডিয়াম ছেড়ে গিয়েছিলেন৷ তাঁকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়৷
ছবি: Reuters
স্টেডিয়ামে চাপা আতঙ্ক
ফ্রান্স ও জার্মানির জাতীয় দল এবং দর্শকরা কিন্তু স্টেডিয়াম ছেড়ে যাবার অনুমতি পাননি৷ সে সময়ে তাঁদের মনের অবস্থা কী ছিল, তা অনুমান করা যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Alexandre
হামলাকারীদের দশা
প্রায় সব আততায়ী নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷ একজন সীমান্ত পেরিয়ে বেলজিয়ামে প্রবেশ করেছে৷ পুলিশ সূত্র অনুযায়ী হামলাকারীদের মধ্যে কমপক্ষে দু’জন বেলজিয়ামে বসবাস করতো৷
ছবি: Getty Images/K. Tribouillard
আহতদের অবস্থা সংকটজনক
প্যারিসে একাধিক হামলায় আহত অনেক মানুষের অবস্থা সংকটজনক৷ ফলে নিহতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bureau
কড়া নিরাপত্তার বেড়াজাল
প্যারিসে হামলার পর আন্তর্জাতিক স্তরেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ যেমন নিউ ইয়র্কে ফরাসি কনসুলেটের সামনে আরও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
গোটা বিশ্বে সংহতি
নিউ ইয়র্কে ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’-এর অ্যান্টেনায় ফরাসি জাতীয় রং ফুটিয়ে তোলা হয়৷ নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো বলেন, ‘‘আমরা ফরাসি জাতির সঙ্গে সংহতির বন্ধনে আবদ্ধ৷’’