ট্রাম্পের সামাজিক সুরক্ষা নীতির সমালোচনা করলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
জো বাইডেনছবি: Nam Y. Huh/AP Photo/picture alliance
বিজ্ঞাপন
ক্ষমতায় আসার পর ডনাল্ড ট্রাম্পের নীতি নিয়ে, বিশেষ করে সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ক নীতির কঠোর সমালোচনা করলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার পর মঙ্গলবার শিকাগোতে প্রথম জনসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি।
বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষদের নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে বাইডেন বলেন, সামাজিক নিরপাত্তার ক্ষেত্রে বর্তমান প্রেসিডেন্ট খড়্গহস্ত ধারণ করেছেন।
অ্যামেরিকায় লক্ষাধিক মানুষ সরকারের সামাজিক সুরক্ষার উপর নির্ভরশীল। ট্রাম্পের নতুন শাসনকালে, বিশেষ করে ইলন মাস্কের পরামর্শে দেশে ব্যাপক হারে ব্যয় সংকোচনের নীতি নিয়েছে সরকার। ফলে, অনেকেরই আশঙ্কা, এই ক্ষেত্রে ব্যয় কমালে বিপদে পড়বেন সাধারণ মানুষ।
অ্যামেরিকাতে প্রায় সাত কোটি ৩০ লক্ষ মানুষকে বাৎসরিক ভাতা দেওয়া হয়। তার জন্য খরচ হয় বছরে এক লক্ষ ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
ট্রাম্পের শুল্ক বসানোর ফলে শেয়ার বাজারে ওঠাপড়া, মন্দার আশঙ্কা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নতুন হারে শুল্ক ঘোষণার প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়ে। শেয়ার বাজারে ধস। মন্দার আশঙ্কা বাড়ছে।
ছবি: Michael Probst/AP/picture alliance
অর্থনীতিতে প্রভাব
অ্যামেরিকা, ইউরোপ, এশিয়ার শেয়ার বাজারে পরপর তিনদিন ধরে টালমাটাল অবস্থা দেখা গেছে। বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হওয়ার আশঙ্কায় শেয়ার বাজারে অর্থ ঢালতে ভয় পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের আর্থিক বৃদ্ধির উপর এই সিদ্ধান্ত ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, বাজার অস্থির হবে, সরবরাহ শৃঙ্খল বাধাপ্রাপ্ত হবে। আর্থিক মন্দা দেখা দিতে পারে।
ছবি: Brendan McDermid/REUTERS
শেয়ার বাজারের ওঠাপড়া
ট্রাম্প শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকে বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজার নিম্নমুখি। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সোমবার শূন্য দশমিক দুই শতাংশ নিচে নেমেছে, ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ৩৪৯ পয়েন্ট পড়েছে। টোকিওর শেয়ার বাজার সোমবার সাত দশমিক আট শতাংশ পড়েছিল। মঙ্গলবার তা ছয় শতাংশ বেড়েছে। ভারতেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। সিওলে দুই শতাংশ বেড়েছে। তাইওয়ানে পাঁচ শতাংশ কমেছে। অস্ট্রেলিয়ায় চার দশমিক দুই শতাংশ কমেছে।
ছবি: Michael M. Santiago/AFP/Getty Images
মন্দার আশঙ্কা
জেপি মরগ্যান মনে করে, মন্দার সম্ভাবনা এখন ৬০ শতাংশ। ডয়েশ ব্যাংক একটি রিপোর্টে বলেছে, ট্রাম্পের শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রভাব ২০২৫ সালে ও পরবর্তী দশকে ব্যাপকভাবে পড়বে। এবিএন অ্যামরোর রিপোর্ট বলছে, চলতি কোয়ার্টারে ইইউ-র আর্থিক বৃদ্ধি শূন্যর আশেপাশে থাকবে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মনে করছে, অ্যামেরিকায় মন্দার সম্ভাবনা প্রায় ৩৫ শতাংশ। মুডিস মনে করছে, খুব তাড়াতাড়ি অ্যামেরিকা মন্দার মুখে পড়বে।
ছবি: John Angelillo/UPI Photo via Newscom/picture alliance
চীনের প্রত্যাঘাত
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের পাল্টা হিসাবে মার্কিন পন্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা ঘোষণা করেছে চীন। ট্রাম্প এর আগে চীনের পণ্যে ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছিলেন। তাছাড়া বিশ্বের সব দেশের উপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক বসিয়েছেন তিনি। তারই জবাব দিয়েছে চীন।
ছবি: Ng Han Guan/AP/picture alliance
ট্রাম্পের হুমকি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, চীন যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে তিনি চীনের উপর আরো ৫০ শতাংশ শুল্ক বসাবেন। সেক্ষেত্রে চীনের পণ্যের উপর সবমিলিয়ে ৯৪ শতাংশ শুল্ক বসবে।
ছবি: Samuel Corum/SIPA USA/picture alliance
ইইউ-র ভাবনা
ইউরোপীয় কমিশন মার্কিন পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক বসানোর কথা ভাবছে। আগামী ৯ এপ্রিল ইইউ-র দেশগুলি এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। ট্রাম্প বলেছেন, ইইউ-কে গাড়ি-সহ অন্য মার্কিন পণ্য কিনতে হবে। না হলে তাদের উপর শুল্ক কম করা হবে না।
ছবি: Jean-Christophe Verhaegen/AFP/Getty Images
কী করছে এশিয়ার দেশগুলি?
ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলি পাল্টা শুল্ক বসানোর রাস্তায় হাঁটছে না। ভারত কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক কম করেছে। অন্য বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছেন, তিন মাসের জন্য যেন নয়া হারে শুল্ক স্থগিত রাখা হয়। পাকিস্তান শুল্ক নিয়ে আলোচনা করছে। অন্যরাও আলোচনা করছে বা করবে।
ছবি: CA Press Wing
তেলের দাম কমেছে
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে। সোমবার অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলার কমে গেছে। এর ফলে রাশিয়ার মতো দেশগুলি খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ, তাদের অর্থনীতি তেল, খনিজ ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নির্ভরশীল।
ছবি: Fatemeh Bahrami/AA/picture alliance
8 ছবি1 | 8
বাইডেন যা বললেন
অশীতিপর এই সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, " ১০০ দিনেরও কম সময়ে এই নতুন প্রশাসন অকল্পনীয় ক্ষতি করেছে। সামাজিক সুরক্ষার উপর কোপ বসিয়েছে।"
বাইডেন বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কেবলমাত্র একটি সরকারের নীতি নয়, বরং সামগ্রিক ভাবে দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা।
ট্রাম্পের নাম না করে তিনি প্রেসিডেন্টকে 'দিস গাই' বলে সম্বোধন করেন। তার বক্তব্য চলাকালীন একাধিকবার তাকে থামতে দেখা যায়। বার্ধক্যজনিত কারণে বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে অব্যাহতি নেন।
হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া
অন্যদিকে, সামাজিক সুরক্ষা খর্ব করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস। ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লিভিট বলেন, "অ্যামেরিকার করদাতা নাগরিকদের প্রতি ট্রাম্প দায়বদ্ধ। তাদের সামাজিক সুরক্ষার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।"
রিপাবলিকানরা সাবেক প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো কমেন্ট ছাড়াই ট্রাম্প বাইডেনের অন্য অসংলগ্ন বক্তব্যের ভিডিও পোস্ট করেন।