1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গোপনে বিদেশিদের ঘৃণা করেন ৭০ শতাংশ জার্মান: সাহাবুদ্দিন

৭ জুলাই ২০২৩

ইউরোপীয় সমাজে বর্ণবাদ নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন জার্মানির গ্রিন পার্টির রাজনীতিক সাহাবুদ্দিন মিয়া৷ গত ৪৪ বছর ধরে জার্মানিতে আছেন তিনি৷ দুই বার ফেডারেল নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে তার৷

Deutschland Rassistischer Anschlag Rostock Lichtenhagen 1992 Protest
ছবি: Wolfram Steinberg/AP Photo/picture alliance

ডয়চে ভেলে: বিশ্বজুড়ে বর্ণবাদ বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ কী বলে মনে করেন আপনি?

সাহাবুদ্দিন মিয়া: বর্ণবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা সেটা আমি বলতে পারব না৷ তবে, আমি বিগত ৪৪ বছর ধরে জার্মানিতে বসবাস করছি৷ আমি বলব, গত ৪৪ বছরে বর্ণবাদ অনেকটা কমেছে৷ কিন্তু অর্থনৈতিক কারণে বিশ্বে বর্ণবাদের নাম দিয়ে বা ধর্মের নাম দিয়ে কাউকে শাসন করছে, কাউকে শোষণ করছে৷ এগুলো কিন্তু বর্ণবাদের সঙ্গে ওইভাবে জড়িত নয়৷

আপনার কাছে কী মনে হয়, এটা শুধুই রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কারণ? নাকি শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ অথবা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে অভিবাসীদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব, নাকি এটি রাজনীতিবিদ এবং মিডিয়ার পরিকল্পিত কার্যক্রম? 

আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, সেক্ষেত্রে আমি বলব প্রবাসীদের সঙ্গে স্থানীয়দের দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে যে কথা বলা হয়, তা সত্য নয়৷ এখানে দুটি ঘটনা আছে৷ একটি ঘটনা হলো, এমন এলাকা রয়েছে যেখানে কোন প্রবাসী নেই৷ তাদের সঙ্গে প্রবাসীদের কোন সম্পর্ক নেই৷ প্রবাসীদের সম্পর্কে তাদের কোন কিছু জানা নেই৷ আমি নিজেও বলব যে, কোন অজানা জিনিস যদি আমার সামনে হাজির হয়, তাহলে আমি চেষ্টা করবো সেটিকে দূরে রাখার জন্য৷ কাজেই সেটা ঠিক নয়৷

এখানে কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে যে বিরূপ মনোভাব সেটা কিন্তু সব দলের মধ্যেই আছে৷জার্মানিতে এএফডি একটি পার্টি, তাদের কথা আলাদা কিন্তু৷ পূর্ব জার্মানিতে তারা খুবই জনপ্রিয়৷ যদিও এখন জার্মানি এক৷ এটা কিন্তু এমন নয় যে সেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে বর্ণবাদ অথবা বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে৷ যেভাবে আমরা এখানে (পশ্চিম জার্মানিতে) জনগণের সঙ্গে কথা বলেছি, মেশার চেষ্টা করেছি৷ এটা কিন্তু ওখানে হয়নি৷ ফলে পূর্ব জার্মানিতে এএফডির সমর্থক আমাদের এই এলাকা থেকে অনেক বেশি৷

সম্প্রতি দুটি নির্বাচনে এএফডি মনোনীত প্রার্থীরা জয়লাভ করেছে এবং বিগত সংসদ নির্বাচনেও জার্মানির ১৬টি প্রদেশের মধ্যে একমাত্র  টুরিঙ্গিয়ায় এএফডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে৷ কিন্তু বিশ্বব্যাপী ডানপন্থিদের যে উত্থান, জার্মানিতে এএফডি এবং অন্যান্য জায়গায় যে সব দল রয়েছে, তাদের উত্থানও কিন্তু বর্ণবাদ বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে৷

এটা একটা কারণ অবশ্যই৷ আমি যদি বাংলাদেশের উদাহরণ দেই, যদিও আমি বাংলাদেশে ৪৪ বছর ধরে নেই৷ সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ কিছু করে থাকলে, সেটা কে কেন্দ্র করে হিন্দুদের ঘরবাড়ি ভাঙা হচ্ছে৷ কোথাও বিপরীতটাও হচ্ছে৷ যেমন, ভারতে মুসলমানদের ঘরবাড়ি ভাঙা হচ্ছে৷ এটাও কিন্তু তাদের রাজনৈতিক নীতিমালা, যে নীতিমালা বাস্তবায়ন করে তারা উপরে যেতে চায়৷ এই সব ধ্বংসাত্মক কাজকর্ম তারা মিডিয়াতে প্রকাশ করে এবং চেষ্টা করে জনগণের সমর্থন নেয়ার জন্য৷ আমাদের পূর্ব জার্মানিতেও তাই হচ্ছে৷

আমরা যদি পূর্ব জার্মানি, ভারত, বাংলাদেশকে বাদও দেই তাহলেও কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে ফ্রান্সে সতেরো বছরের তরুণ নাহেল পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর যে দাঙ্গা-সংঘর্ষ চলছে, সেটি কী শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি দীর্ঘদিনের চেপে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ?

এটা দীর্ঘদিনের চেপে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ৷ আমিও তাই বলব৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সংবাদ হচ্ছে একজন অভিবাসীকে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু যদি কোন ফরাসি নাগরিককে হত্যা করা হতো তাহলে কী এই দাঙ্গা ঘটত? এটা হলো আমার প্রশ্ন৷ এই দাঙ্গার পেছনেও অনেক কারণ রয়েছে, যেগুলো রাজনৈতিকভাবে সমাধান করা হয়নি৷ ফ্রান্সে অভিবাসীদের সব অধিকার দেয়া হয়নি৷ অভিবাসী হিসেবে আমরা যখন এক ধাপ আগাতে পারি, আমরা অনেক খুশি হই৷ কিন্তু ফ্রান্সের সরকার আমাদের মন খারাপ করার জন্য যে আইনানুগ ব্যবস্থা রেখেছেন, সেই ব্যবস্থাকে তারা এখনো পরিবর্তন করছে না৷

ফ্রান্সে দাঙ্গার পেছনের অনেক কারণ রাজনৈতিকভাবে সমাধান করা হয়নি: সাহাবুদ্দিন মিয়া

This browser does not support the audio element.

জার্মানিতে এখনো ৭০ শতাংশ জার্মান মনে মনে বিদেশিদের ঘৃণা করেন, কিন্তু তা তারা প্রকাশ করেন না৷ যে কারণে আমরা বুঝতে পারি না৷ এই মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে ডানপন্থি  রাজনৈতিক দলগুলো এমন একটা অবস্থা তৈরি করে যে, আমরা প্রবাসীরাই সেখানে দায়ী৷ ফ্রান্সে এবার অভিবাসীরা জেগে উঠেছেন৷ তবে তারা যা করেছেন, গাড়িতে আগুন দেয়া, বাড়িতে আগুন দেয়া, তা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ৷ সেটা প্রবাসী হোক কিংবা সে দেশের নাগরিক হোক, আমি মনে করি সেটা করা কিছুতেই ঠিক হয়নি৷

কিন্তু অভিবাসীদের ক্ষেত্রে যে আইন বা নীতি প্রয়োগ হচ্ছে, তা কিন্তু স্থানীয় নাগরিকদের বেলায় হচ্ছে না৷ এটাতো একটা পরিষ্কার বৈষম্য৷

হ্যাঁ, তা অবশ্যই৷ তবে আমি বলব, সেটা সংখায় অনেক কম৷ এক হাজার পুলিশের মাঝে যদি একজন পুলিশ খারাপ হয়, তাহলে তো আমি সব পুলিশকে দোষ দিতে পারছি না৷ আর জার্মানি, ফ্রান্সের মতো দেশে পুলিশ অন্যায় করে থাকলে, পুলিশেরও কিন্তু বিচার হয়৷ কাজেই এজন্য গাড়িতে, ঘরবাড়িতে আগুন দেয়া এটা কোনভাবেই কাম্য নয়৷

জার্মানিসহ পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো দক্ষ কর্মীর তীব্র সংকটে রয়েছে৷ জার্মানির প্রায় ২০ লাখ দক্ষ কর্মী প্রয়োজন এই মুহূর্তে, যে কারণে সাম্প্রতিক সময়ে তারা তাদের অভিবাসন আইন সংস্কারও করছে৷ আপনি কী মনে করেন বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের চলমান সংকটে তারা বিদেশি কর্মীদের এখানে এসে কাজ করতে আকৃষ্ট করতে পারবে?

এখানে শুধু চামড়ার রঙই মুখ্য নয়৷ আমি যেহেতু এখানে রাজনীতি করছি, তাই আমি এটা সব সময়ই বলি যে, অন্য দেশ থেকে দক্ষ কর্মী পাবে না সব সময়৷ এখানে আসতে হলে জার্মান ভাষা শিখতে হবে, যা একটি কঠিন ভাষা৷ এখন একটা দেশে এসে যদি আমার এক থেকে দেড় বছর লেগে যায় ভাষা শিখতেই, তাহলে আমি কাজ শুরু করব কখন?

দুই নম্বর হলো, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে সেরকম দক্ষ কর্মী তৈরি করার কোন ব্যবস্থা নেই৷ তাই আমার প্রস্তাব ছিল, এখানে যারা ইতিমধ্যে রয়েছেন অভিবাসী, তাদের মধ্য থেকে খোঁজ নিয়ে তাদের পড়ালেখার যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রের জন্য তৈরি করা হোক৷ ছাত্র হিসেবে যারা এসেছেন তাদের কথা আলাদা৷ কিন্তু আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে যারা রয়েছেন, আশ্রয় আবেদন তাদের শেষ হয়ে যাওয়ার পর অনেকেই তারা বাধ্য হয়েছেন চলে যাওয়ার জন্য৷ এমন হয়েছে কাজের জায়গা থেকে ধরে এনে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ এ কারণেই কর্মীর অভাবটা দেখা দিয়েছে৷

এখানে যেমন দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে তেমনি অদক্ষ কর্মীরও প্রয়োজন রয়েছে৷ গ্যাস্ট্রনমিতে তো দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন নেই৷ ফলে নতুন যে আইন করেছে, তা দিয়ে আসলে প্রতিবছর দুই লাখ কর্মীর চাহিদা থাকলেও তার দশ শতাংশও পূরণ হবে না৷

এই দেশে অবস্থানরতদের কাজের সুবিধা না দিয়ে বাইরে থেকে নতুন করে কর্মী আনার সংবাদ ফলাও করে প্রচার করা এটাতো পরিষ্কার বৈষম্য৷  এই নীতি তো এখানকার নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হচ্ছে না৷

এটা ঠিক এই বৈষম্য এখানে আছে৷ কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির মালিক এখানে কর্মী খুঁজছেন এবং তিনি দেখবেন না লোকটি সাদা, বাদামি কিংবা কালো বর্ণের কি না৷ তিনি চাইবেন, তার দক্ষতা আছে কিনা৷ কিন্তু দক্ষ কর্মী বাইরে থেকে আনব বললেই যে নিয়ে আসতে পারব, সেটা আমি মনে করি না৷ কারণ ইউরোপের অন্যান্য দেশ, যেমন: বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, পর্তুগাল, স্পেন থেকে লোক এসেও এখানে থাকছেন না৷ কারণ, নতুন ভাষা শিখে নতুন পরিবেশে পরিবার পরিজন ছেড়ে থাকাটা সহজ নয়৷

অভিবাসীরা কিভাবে এই বৈষম্য, বর্ণবাদ নিরসনে ভুমিকা রাখতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

আসলে বর্ণবাদ তো আর একদিনের ব্যাপার না, বহুদিনের ব্যাপার৷ একসময় এশিয়া, আফ্রিকাকে ইউরোপ কলোনি করে রেখেছিল, শোষণ করেছিল৷ আফ্রিকান লোকজনকে পায়ে শেকল দিয়ে জার্মানরা পর্যন্ত কাজ করিয়েছে৷ এই সমস্যা সমাধান হতে আরও লম্বা সময় দরকার৷ তবে আমাদের উচিত হবে, শুধু নিজেদের কমিউনিটির মধ্যে না থেকে যে যেখানে কাজ করছে, থাকছি আশেপাশের সবার সঙ্গে মেশা, কথা বলা৷ আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হবে এটা৷

ভাষা শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ ভাষা না জানলে কোন দেশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় না৷ ফলে তারাও আমাদের সঙ্গে মিশতে পারছেন না, আমাদের থেকে আলাদাই থাকছে৷ আমি  চাই যে এই বিষয়টা দূর হোক৷ আমার সঙ্গে কেউ না মিশলে তো সে বলতে পারছে না, আমি কেমন৷ আমি দুই বার ফেডারেল নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছি৷ নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চে এদেশীয় অন্যান্য নেতা-কর্মীর সঙ্গে একসঙ্গে বসেছি৷ ফলে আমার এলাকায় মানুষজন আমাকে দেখেছেন, আমার সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে৷ আমি দীর্ঘদিন আমার শহরে গ্রিন পার্টির প্রধান ছিলাম৷ যে কারণে এখন আমার শহরে বর্ণবাদ নেই বললেই চলে৷ এভাবে যদি সবাই আমরা চেষ্টা করি নিজ নিজ অবস্থান থেকে, আমার মনে হয় এক সময় বর্ণবাদ বিলীন হয়ে যাবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ