প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকে প্রকৃতির ছবি তোলাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের স্টেফান ফর্স্টার৷ তিনি সাধারণত এমন জায়গার ছবি তুলতে পছন্দ করেন যেখানে খুব বেশি মানুষ যায়নি৷
বিজ্ঞাপন
সেসব জায়গার প্রতি পর্যটকরা বেশি আকৃষ্ট হতে পারেন ভেবে তিনি সেই স্থানগুলোর নাম উল্লেখ করেন না৷
ফর্স্টার বলেন, ‘‘আমার কাজের মধ্য দিয়ে আমি সবাইকে পৃথিবী আগে কেমন ছিল, ভবিষ্যতে কেমন হবে এবং কেমন থাকা উচিত, তা দেখাতে চাই৷ আমার কাছে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, আমি যেন প্রকৃতিকে একেবারে তার আসল রূপে দেখাতে পারি৷’’
ভালোবাসাকে পেশা বানিয়েছেন তিনি
04:32
সুইজারল্যান্ডের এই ফটোগ্রাফার ছবি তোলার জন্য বছরের প্রায় সাত মাস বাইরে থাকেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মানুষ অনেক সময় জানতে চায়, আমি কীভাবে এত সুন্দর করে ল্যান্ডস্কেপের ছবি তুলি৷ এ বিষয়ে আমার উত্তর সবসময় একই থাকে৷ আপনি একটা এলাকা যত ভালোভাবে চিনবেন, তত ভালোভাবে আপনি ঐ এলাকার সুন্দর ছবি তুলতে পারবেন৷’’
৩৪ বছর বয়সি এই ফটোগ্রাফার সুইজারল্যান্ডের ভিল শহরে থাকেন৷ প্রকৃতিকে নিজের মতো করে অনুভব করা- এই ছিল ফর্স্টারের ছোটবেলার ভালোবাসা৷ ফর্স্টার বলেন, ‘‘আমার মনে হয় সবারই একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে যখন তার নিজেকে খুব সুখী মনে হয়৷ আমার ক্ষেত্রে সেই সময়টা হচ্ছে তখন, যখন আমার পেছনে দরজাটা বন্ধ হয়ে যায়, আর আমি বনের দিকে ছুটে যেতে পারি৷ এই বন একসময় আইসল্যান্ড হয়ে যায়৷ আমার বয়স যখন ১৮ ছিল তখন আমি সেখানে গিয়েছিলাম৷ সেই স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তখন আমার কাছে শুধু ক্যামেরা ছিল৷ এভাবে ছবি তোলার বিষয়টি এসেছে৷ আসলে প্রকৃতির প্রতি আমার ভালোবাসার বাই-প্রোডাক্ট হচ্ছে ফটোগ্রাফি৷’’
বাংলাদেশের বিশ্বনন্দিত কিছু ছবি
বাংলাদেশের তরুণ আলোকচিত্রী তানভীর হাসান রোহান৷ব্যবসার ফাঁকে ছবি তোলা তাঁর নেশা৷ এ পর্যন্ত অর্জন করেছেন তিন শতাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার৷ রোহানের বিশ্বজয় করা কিছু আলোকচিত্র নিয়ে এ ছবিঘর৷
ছবি: Tanveer Hassan Rohan
প্লেইং ইন ডাস্টি ডাস্ক
এক পড়ন্ত বিকেলে ঢাকার পাশের এক মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ফুটবল খেলছিল কোনা এক বালুমহালে৷ তাদের খেলার বেশকিছু ছবি তোলেন আলোকচিত্রী৷ তবে সন্ধ্যার আগে খেলা শেষে আকাশে বালু উড়িয়ে আনন্দ করছিল তারা৷ ২০১৬ সালের সনি ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার জেতে ছবিটি৷
ছবি: Tanveer Hassan
Rohan
ফান বাথ
গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে ঢাকার এক নির্মাণাধীন উড়াল সেতুর নিচের পরিত্যক্ত জলাশয়ে আনন্দে মেতে ছিল শিশুরা৷ ২০১৪ সালের কোনো একদিন চলার পথে সে দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন রোহান৷ এ ছবিটি ২০১৭ সালের ম্যাগনাম ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডের ‘স্পেশাল জুড়ি ডিসটিঙ্কশন’সহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে৷
ছবি: Tanveer Hassan Rohan
স্যান্ড পোর্টার
মুন্সিগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর ঘাটে বালু শ্রমিকের এই ছবিটি রোহানের ক্যামেরায় ধরা পড়ে ২০১৬ সালে৷ পরের বছর ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ট্র্যাভেল ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার-এ পিপলস চয়েজ অ্যাওয়ার্ড জেতে ছবিটি৷
ছবি: Tanveer Hassan Rohan
নদী পার হওয়া
শীতে শুকিয়ে যাওয়া বড়াল নদী, তলানিতে জমেছে শ্যাওলা৷ সেখান থেকে নৌকা নিয়ে যাচ্ছিলেন একজন৷ নাটোরের বড়াই গ্রাম থেকে ছবিটি ক্যামেরাবন্দী করা হয় ২০১৭ সালে৷ এবছরই যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ফটো অ্যাওয়ার্ড-এ তৃতীয় স্থান অর্জন করে ছবিটি৷
ছবি: Tanveer Hassan
Rohan
জব্বারের বলি খেলা
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলি খেলার চূড়ান্ত পর্বের একটি মূহূর্তের ছবি এটি৷ ২০১৬ সালের বলকান ফটো অ্যাওয়ার্ড-এর ‘স্পোর্টস’ ক্যাটেগরিতে পুরস্কার জেতে ছবিটি৷
ছবি: Tanveer Hassan
Rohan
মরিচ শুকানোর ছবি
চাতালে লাল মরিচ শুকানোর এ ছবিটি বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে তোলা৷ এ ছবিও চেক প্রজাতন্ত্রের ওপেন এয়ার ফটো ফেস্টিভ্যালসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরুস্কার জিতেছে৷
ছবি: Tanveer Hassan Rohan
সুখী পরিবার
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে তোলা আলপনা গ্রামের একটি পরিবারের এ ছবি তোলা হয় গত বছর৷ ২০১৭ সালে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ আয়োজিত ডিফরেন্ট কাইন্ড অব ম্যান প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পায় ছবিটি৷
ছবি: Tanveer Hassan Rohan
ফায়ার ফাইটার্স
ঢাকার বাড্ডা এলাকায় এক বস্তিতে আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকল কর্মীরা৷ ২০১৫ সালে তোলা হয় ছবিটি৷ এ ছবি ফটো জার্নালিজম ক্যাটাগরিতে বেশ কিছু পুরস্কার পায়৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, রাশিয়ার ‘মস্কো ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড’-এ প্রথম পুরস্কার, ২১০৬-তে সারজাহ’র এক্সপোজার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ২০১৬-তে দ্বিতীয় পুরস্কার এবং ২০১৭-তে বুলগেরিয়ার ভৌবস ফটো অ্যাওয়ার্ডে প্রথম পুরস্কার৷
ছবি: Tanveer Hassan Rohan
খাঁচাবন্দি
খাঁচায় বন্দি কবুতর, পাশের জানালা দিয়ে উঁকি মারা এক শিশু৷ তার জীবনও অনেকটাই খাঁচা বন্দি৷ নারায়ণগঞ্জ থেকে ২০১৫ সালে তোলা হয় ছবিটি৷ ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭তম অ্যানুয়াল স্প্রিং ফটো কনটেস্টে পুরস্কৃত হয় ছবিটি৷
ছবি: Tanveer Hassan Rohan
ফড়িং এবং শিশির
ফড়িংয়ের মাথায় শিশির বিন্দু৷ ২০১৬ সালে তুরস্কের একটি প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয় ছবিটি৷
ছবি: Tanveer Hassan Rohan
জুম্মার নামাজ
বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জুম্মার নামাজের এ ছবিটি তোলা হয় ২০১৫ সালে৷ সৌদি আরবের আফান ইন্টারন্যাশনাল এক্সিবশন অব ফটোগ্রাফিতে পুরস্কার জেতে ছবিটি৷
ছবি: Tanveer Hassan
Rohan
একটি পরিবারের আনন্দ
হাজারো ভিড় ঠেলে ট্রেনে বসতে পারার আনন্দ সবার চোখে-মুখে৷ ঈদে এক পরিবারের বাড়ি ফেরার এ ছবিটি ঢাকার বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে তোলা হয় ২০১৫ সালে৷ এ বছরই প্যারিসের পিক্স-৩ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েছে ছবিটি৷
ছবি: Tanveer Hassan
Rohan
আধিপত্যের লড়াই
ঢাকার চিড়িয়াখানায় তোলা দুটি চিত্রা হরিণের এই ছবিটি গ্রিসের গ্রিক ফটো সার্কিট ২০১৭-তে স্বর্ণ পদক পায়৷
ছবি: Tanveer Hassan Rohan
একজন তানভীর রোহান
ঢাকায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা তানভীর রোহানের৷ পৃথিবীতে ঘুরে ঘুরে সুন্দর সুন্দর মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করা তাঁর নেশা৷ আলোকচিত্রের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে ‘পজিটিভ বাংলাদেশ’কে তুলে ধরাই তাঁর অন্যতম লক্ষ্য৷ তাঁর তোলা ছবি এ পর্যন্ত অর্জন করেছে তিন শতাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার৷ এছাড়া ছবির প্রদর্শনীও হয়েছে পঁয়তাল্লিশটিরও বেশি দেশে৷
ছবি: privat
14 ছবি1 | 14
যতটা সম্ভব পৃথিবীকে আদিম রূপে দেখাতে চান এই প্রখ্যাত ফটোগ্রাফার৷ তিনি মাঝেমধ্যে লেন্স ফিল্টার ব্যবহার করেন, ছবি সম্পাদনাও করেন, কিন্তু কখনও রং নিয়ন্ত্রণ করেন না৷
উত্তর আইসল্যান্ডের অমসৃণ অঞ্চল তার খুবই প্রিয়৷ তাই বারবার সেখানে ফিরে যান তিনি৷
‘আইল্যান্ডস অফ দ্য নর্থ’ নামে একটি ছবির বই প্রকাশ করেছেন তিনি৷ গ্রিনল্যান্ড, নরওয়ে, ফ্যারো আইল্যান্ডস এবং অবশ্যই আইসল্যান্ডের ছবি তুলতে প্রায় ৮০ বার ঐ অঞ্চলে গেছেন তিনি৷
এই বইয়ের জন্য তাকে ছয় হাজার ছবি থেকে ১৬০টি ছবি বেছে নিতে হয়েছে৷ কঠিন কাজ৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা আমার কাজের ভালো লাগার সময় নয়৷ ভালো লাগার সময় হচ্ছে বাইরে থাকা৷ ছবি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমি একেবারেই আবেগী নই৷ অফিস, স্টুডিওতে তালা লাগিয়ে, মোবাইলে এয়ারপ্লেন মোড অন করে আমি ছবি দেখা শুরু করি৷ এক্ষেত্রে আমি বেশি সময় নেই না৷ যদি কোনো ছবি আমার প্রথমেই ভালো না লাগে, তাহলে আমি আর সেটা দেখি না৷’’
বর্তমানে প্রায় ৪০ শতাংশ ছবি ড্রোন দিয়ে তোলেন ফর্স্টার৷ এর ফলে কোনো জায়গা নষ্ট না করেই সেখানকার ছবি তোলা যায়৷ ছবি তুলতে ফর্স্টার প্রায়ই এমন জায়গায় যান যেখানে আগে কেউ যায়নি৷ পর্যটকদের ভিড় এড়াতে তিনি ছবি তোলার জায়গার নাম উল্লেখ করেন না৷ কারণ তার কাজ হলো, পৃথিবী কত সুন্দর, শুধু তা তুলে ধরা৷
আন্দ্রেয়াস লাইক্সনারিং/জেডএইচ
২০১৫ সালের ছবিঘরটি দেখুন...
ড্রোন দিয়ে তোলা তিমির ছবি
ড্রোন এখন অনেক কাজেই ব্যবহার হচ্ছে৷ ছবি তোলা এর মধ্যে একটি৷ ছবিঘরে ড্রোন দিয়ে তোলা সাগরে তিমিদের চলাচলের কিছু ছবি দেখা যাবে৷
ছবি: NOAA, Vancouver Aquarium
তিমির আচরণ জানা
সাগরে তিমিদের আচরণ সম্পর্কে আরও ভালো করে জানতে মার্কিন বিজ্ঞানীরা এবার ড্রোনের সাহায্য নিচ্ছেন৷ ‘ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ার এডমিনিস্ট্রেশন’-এর বিজ্ঞানীরা ড্রোনের মাধ্যমে তিমির শিকার ধরার পদ্ধতি ও সামাজিক আচরণ জানার চেষ্টা করছেন৷
ছবি: NOAA, Vancouver Aquarium.
অন্তরঙ্গ মুহূর্ত
সাগরের পানির স্তর থেকে প্রায় ৪০ মিটার উঁচু থেকে ড্রোন দিয়ে ছবি তোলা হয়৷ ফলে তিমিরা ছবি তোলার বিষয়টি বুঝতে পারে না৷ তাই তারা স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করতে পারে৷ ছবিতে দুটো তিমিকে এক অন্তরঙ্গ মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: NOAA, Vancouver Aquarium
নতুন সুযোগ
ড্রোন ব্যবহারের কারণে বিজ্ঞানীরা এখন একসঙ্গে অনেকগুলো প্রাণী পর্যবেক্ষণ করতে পারছেন৷ তাদের শারীরিক অবস্থার দিকেও নজর রাখা যাচ্ছে৷
ছবি: NOAA, Vancouver Aquarium.
পার্থক্য জানা
বামের ছবিটি ভালো করে খেয়াল করুন৷ সেখানে একটি মা তিমির সঙ্গে তার বাচ্চাকে দেখা যাচ্ছে৷ পাশের ছবিটিও তাই৷ কিন্তু বুঝতেই পারছেন বামের চেয়ে ডানের তিমির শারীরিক অবস্থা অনেক ভালো৷ এরকম ছবির কারণে বিজ্ঞানীরা তিমিদের মধ্যে থাকা এরকম পার্থক্য ও তার কারণ বোঝার চেষ্টা করতে পারছেন৷
ছবি: NOAA
একটি পরিবার
এরা একই পরিবারের সদস্য৷ ছবির মতোই এই জাতের তিমিরা জীবনের বেশিরভাগ সময় একসঙ্গে চলাফেরা করে৷ ড্রোন না থাকলে কি এমন ছবি দেখা সম্ভব হতো?