শিল্প কি বাস্তব জগতের সংকট থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে? বার্লিনের এক শিল্পী জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে প্রকৃতির শোষণের মতো বিষয় তুলে ধরতে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে নানা সৃষ্টির কাজে মেতে রয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
জুলিয়াঁ শারিয়ের-এর কোনো শিল্পসৃষ্টির শুরুতেই এক ঝুঁকিতে ভরা অভিযান থাকতেই হবে৷ তিনি বিশ্বের এমন সব জায়গায় যান, যেখানে মানুষ সহজে পা রাখার সাহস পায় না৷ তাঁর সর্বশেষ প্রকল্পের জন্য তিনি আইসবার্গের ছবি তুলেছেন৷ বিষণ্ণ ও কাব্যিক এক ছায়াছবিতে সেই দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে৷ জুলিয়াঁ বলেন, ‘‘আচমকা আলোর আড়ালে অতিকায় এই বস্তুর আবির্ভাব ঘটে৷ জাদুময় অথচ করুণ৷ ঠিক যেন কোনো অপেরার চূড়ান্ত দৃশ্য৷ এ যেন পরম ভাস্কর্য, পরম বস্তু, ধরাছোঁয়ার বাইরে৷ মানুষ কখনো এমন বস্তু তুলে নিয়ে প্রদর্শনীতে দেখাতে পারবে না৷’’
দুই বছর ধরে তিনি সুইজারল্যান্ড, আইসল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ডের মতো বিশ্বের অনেক বরফে ঢাকা অঞ্চল চষে বেড়িয়েছেন৷ মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ড্রোনের সাহায্যে তিনি ভিডিও তুলেছেন৷
প্রকৃতির জন্য ঝুঁকি নেন তিনি
03:02
বার্লিনে নিজের স্টুডিওতে তিনি সেই ভিডিও ও অন্যান্য শিল্পকর্মকে চূড়ান্ত রূপ দেন৷ জন্মসূত্রে তিনি সুইজারল্যান্ডে মানুষ৷ যেমন সীসা দিয়ে মোড়া নারকেল দিয়ে এক ইনস্টলেশন৷ সেই নারকেল তেজস্ক্রিয় বিকিরণের শিকার৷ বিকিনি অ্যাটল থেকে সেই নারকেল আনা হয়েছে৷ বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে অসংখ্য পরমাণু বোমা পরীক্ষা করেছে এবং যুদ্ধজাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে৷ সেই পদক্ষেপের পরিণাম নিয়ে জুলিয়াঁ শারিয়ের একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন৷ তার জন্য তাঁকে পানির গভীরে ডুব দিতে হয়েছে৷
বর্তমানে তিনি নিজের স্টুডিওতে অতিকায় এক বাতি তৈরি করছেন, যার মধ্যে তিনি ইন্দোনেশিয়ার পাম তেল ভরে দিচ্ছেন৷ সে দেশে পাম তেলের খেতের জন্য রেন ফরেস্ট ধ্বংস করা হচ্ছে৷ ২০১৮ সালে বার্লিনের কিছু সংগীতশিল্পীদের নিয়ে তিনি একটি পারফর্ম্যান্স সৃষ্টি করেছেন, যার মধ্যে প্রকৃতি শোষণ সম্পর্কে সচেতনতার বার্তা রয়েছে৷ জুলিয়াঁ শারিয়ের বলেন, ‘‘এ এমন এক পৃথিবী, যেখানে ভবিষ্যতে ‘তিন ডিগ্রি উষ্ণায়ন’-কে সেরা প্রাপ্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়৷ সেখানে এমন প্রশ্ন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক৷ এটা পুরোপুরি পাগলামি৷ এমন ঘটনা অবশ্যই আমার দৈনন্দিন জীবন বদলে দিচ্ছে৷ আমার শিল্পের মধ্যেও পরিবর্তন আনছে৷’’
জুলিয়াঁ শারিয়ের বেশ কয়েক বছর ধরে নিজের শিল্পকর্মের মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করছেন৷ ২০১২ সালে তিনি ভেনিসে পায়রার গায়ে খাবারের রং এঁকেছিলেন৷ স্থাপত্য বিয়েনালে উৎসবে সেগুলি স্বাধীন শিল্পকর্ম হয়ে উঠেছিল৷
গেয়ারহার্ড সনলাইটনার/এসবি
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...
রেকর্ড হারে গলছে গ্রিনল্যান্ডের বরফ
সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ার অন্যতম কারণ গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলে যাওয়া৷ এর ফলে বাংলাদেশের একটি অংশের মতো বিশ্বের অনেক এলাকা ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে৷ নতুন গবেষণা বলছে, সেই গ্রিনল্যান্ডের বরফ এখন গলছে রেকর্ড হারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ZB/P. Pleul
বিচ্ছিন্ন গ্রিনল্যান্ড
আর্কটিক ও অ্যাটলান্টিকের মাঝে নিঃসঙ্গ কিন্তু বিরাট দ্বীপদেশ গ্রিনল্যান্ড৷ সেখানে বরফের প্রাচুর্যের মাঝে বসতি গড়েছেন কিছু মানুষ৷ এর ৮০ ভাগ বরফে ঢাকা৷ এই ভূখন্ডের পরিবেশের প্রভাব আছে সারাবিশ্বে৷
ছবি: Imago/J. Kruse
সবাই জানে বরফ গলছে
বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বরফ যে গলছে, তা সবারই জানা৷ এখন প্রতিবছর প্রায় আধা ইঞ্চি করে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে৷ গবেষকরা এই বিষয়টির ওপর কয়েক বছর ধরে ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছেন৷
ছবি: Woods Hole Oceanographic Institution/Sarah Das
নতুন গবেষণা
এ বিষয়ে পরিবেশ গবেষণা বিষয়ক জার্নাল নেচারে নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷ সেখানে গত ৩৫০ বছর ধরে বরফ কী মাত্রায় গলছে, তা দেখানো হয়েছে৷ দেখা গেছে, গত কয়েক দশকে বরফ গলার মাত্রা বেড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ গতিতে৷ প্রাক-শিল্পযুগের চেয়ে বর্তমানে বরফ গলার হার ৫০ ভাগ বেশি৷
ছবি: M. Osman/Woods Hole Oceanographic Institution
গ্রিনল্যান্ডে যা আগে দেখা যায়নি
গবেষণার জন্য ছবিতে যেমন দেখা যাচ্ছে, গ্রিনল্যান্ডে এমন ড্রিল ব্যবহার করে আইসকোর বা নমুনা তোলা হয়েছিল৷ এসব নমুনা বিশ্লেষণ করে গবেষকরা ১৬৫০ সালের বরফ গলার হারও নির্ণয় করতে পেরেছেন৷ দীর্ঘমেয়াদী হিসেবে দেখা গেছে, গত সাড়ে তিনশ’ বছরে বরফ গলার হার আগের ৮ হাজার বছরের চেয়েও বেশি৷
ছবি: Woods Hole Oceanographic Institution/Sarah Das
নন-লিনিয়ার আইস মেল্টিং
গবেষকরা এই বরফ গলার হারকে ‘ননলিনিয়ার’ বলছেন৷ অর্থাৎ হিসেব মেনে ঝুঁকির মাত্রা বাড়ছে না৷ যেমন, আগে যেখানে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় যতটা বরফ গলত, এখন ততটা উষ্ণতার কারণে দ্বিগুণ বা তার বেশি বরফ গলছে৷
ছবি: Imago/blickwinkel
গ্রিনল্যান্ডের বরফ গললে কী হবে
গ্রিনল্যান্ডের যে আইসশিট তা যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা রাজ্যের সমান৷ এত বড় বরফের চাক যদি গলে যায়, তাহলে সমুদ্রের উচ্চতা ৭ মিটার বা ২৩ ফুট বেড়ে যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/M.Tama
ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
কোনো কোনো গবেষকের মতে, সমুদ্রের পানির উচ্চতা তিন ফুট বাড়লেই বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ২০ ভাগ তলিয়ে যাবে৷ বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় প্রথম দিকে রাখা হয়৷ সেক্ষেত্রে গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলার নতুন এ খবর বাংলাদেশের জন্য যে সুখকর নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷