নিজের হাতে নিজেরই বসতবাড়ি বানানোর কাজ সহজ নয়৷ সুইডেনের এক মিস্ত্রী প্রকৃতির কোলেই এমন অসাধ্য সাধন করেছেন৷ তবে এত পরিশ্রমের ফলে তাঁর ওজন কমে গেছে৷ নির্মাণের সময় ঘটেছে আরও অনেক কিছু৷
বিজ্ঞাপন
প্রকৃতির কোলে অভিনব বাড়ি
03:55
স্টকহোম শহরের উপকণ্ঠে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে বসতি এলাকায় আলান স্পিগেল-এর বাড়ি৷ স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তিনি সেখানে থাকেন৷ তুষার যুগের এক টিলার উপর কাঠের বাড়িটি শোভা পাচ্ছে৷ অন্যান্য অনেক প্রতিবেশীর মতো তিনি কিন্তু টিলায় কোনো পরিবর্তন করেন নি৷ আলান বলেন, ‘‘বাড়িকে প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে তৈরি করা প্রকৃতিকে বাড়ির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর প্রচেষ্টার তুলনায় অনেক বেশি স্বাভাবিক৷ ডিনামাইট দিয়ে টিলা ভাঙলে আবার তা ভরাট করে প্রকৃতিকে নতুন করে তৈরি করার চেষ্টা করতে হতো৷ প্রথমত সেটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল, দ্বিতীয়ত অত্যন্ত কুশ্রী হতো৷''
পেশায় ছুতোর মিস্ত্রী তাঁর এক স্থপতি বন্ধুর সঙ্গে তিনি বাড়ির নক্সা তৈরি করেন৷ অনেকগুলি কন্টেনার পরস্পরের সঙ্গে জুড়লে যেমন দেখায়, বাড়িটি অনেকটা সে রকম দেখতে৷ আলান স্পিগেল বলেন, ‘‘আমি নতুন জিনিস তৈরি করতে ভালোবাসি৷ যেমন দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবে আসবাবপত্র তৈরি করি৷ সবসময়ে কিছু উন্নতির চেষ্টা করি, আরও পাতলা বা শক্তিশালী করে গড়ি৷ আপনি সুইডেনে সাধারণ কাঠের বাড়ি চাইলে আমি চোখ বুজে তা গড়ে দিতে পারি৷ হাতুড়ি আর করাতের ব্যবহার জানলে অনেকের কাছেই কাজটি বেশ সহজ হয়ে উঠবে৷''
বাড়ি যখন নৌকা বা কন্টেনার
বাড়ির বিকল্প হিসেবে নৌকা, কনটেনার অথবা সার্কাসের গাড়িতে বসবাস করা আজকাল জার্মানিতেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷
ছবি: cc-by-nc-sa/Simon & Jasmine Dale
বাড়ি খুঁজছেন?
প্রতিটি মানুষেরই থাকার জন্য চাই মাথার গোঁজার একটা ঠাঁই৷ ছোট ছোট প্রাইভেট পাকা বাড়িগুলো জার্মানদের কাছে খুবই পছন্দের৷ হামবুর্গ, মিউনিখ বা ড্যুসেলডর্ফের মতো বড় শহরগুলোর ভালো এলাকার একটি বাড়িতে থাকার স্বপ্ন অনেকেরই৷ তবে সে সব বাড়ি কেনার সামর্থ্য খুব কম মানুষেরই আছে৷
ছবি: DW/Alterfalter
সার্কাসের গাড়ির প্রতি দুর্বলতা
আজকের দিনে যে বাড়ি কেনার জন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিতে না চায়, তার জন্য বিকল্প থাকার জায়গা হিসেবে রয়েছে ফ্ল্যাটবাড়ি৷ আচ্ছা,একটি সার্কাসের গাড়িতে থাকলে কেমন হয়, যদি চলন্ত গাড়িকে থাকার জন্য বাড়ির মতো করে তৈরি করা হয়?
ছবি: cc-by-RowdyKittens
প্রকৃতির কাছাকাছি
‘আর্থ শিপ বাড়ি’– এই ট্রেন্ড বা প্রবণতা এসেছে অ্যামেরিকা থেকে৷ ছোট্ট ছোট্ট বাড়ি, যা আবর্জনা এবং কাঠের মতো প্রাকৃতিক সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়৷ জ্বালানী সাশ্রয় করা এই বাড়িগুলো আশেপাশের মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে৷
ছবি: flickr/Marvins_Dad
ইচ্ছে মতো জীবন যাপন
না, এই ছবিটি ‘লর্ড অফ দ্য রিংস’ সিনেমার কোনো দৃশ্য নয়৷ এই ছবির বাড়িটি দাঁড়িয়ে আছে ব্রিটেনের ওয়েলস রাজ্যে৷ দুজন মানুষ তাদের পরিবারের জন্য বাড়িটি তৈরি করেছেন৷ কম খরচে জীবনযাত্রা এবং পরিবেশের কাছাকাছি থাকার চিন্তাভাবনা থেকেই বাড়িটি বানানো হয়েছে৷
ছবি: cc-by-nc-sa/Simon & Jasmine Dale
পানিতে বসবাস
যারা ‘লর্ড অফ দ্য রিংস’ ছবির হবিটসদের মতো গুহায় বাস করতে চান, বড় শহরে জমি পাওয়া তাদের জন্য খুবই কঠিন ব্যাপার৷ আর সেজন্যই হামবুর্গ বা আমস্টারডামের মতো শহরে আরো বেশি মানুষকে নৌকায় থাকার জন্য টানে৷ আর টাকা থাকলে তো কথা নেই, ছাদ থেকে পুল – সবই বানানো যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/JOKER
বাড়ির পরিবর্তে কন্টেনার
বন্দরে যে জীবনযাপন করে, সে হয়তো প্রতিদিনই এই দৃশ্য দেখে৷ মালবাহী জাহাজ দিয়ে যে এতো সুন্দর থাকার বাড়ি বানানো যায়, সে কথা হয়তো অনেকেই বিশ্বাস করবেনা৷ হানোফার শহরের স্থপতি প্রোফেসর হান স্লাভিক জার্মানিতে কন্টেনার বাড়ি তৈরির কাজ প্রথম শুরু করেছেন৷
ছবি: DW/I. Wrede
জার্মানিতে বিরল
হান স্লাভিকের কন্টেনার তৈরি বাড়িকে বলা হয় ‘হোমবক্স’৷ তিন তলা এই বাড়িগুলোতে চারজন মানুষ থাকার ব্যবস্থা রয়েছে৷ জার্মনিতে এখনো এ ধরনের বাড়ি তেমন একটা দেখা যায়না৷ তবে সে তুলনায় হল্যান্ডে ছাত্রছাত্রীদের এ ধরনের থাকার বাড়ি বেশ জনপ্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
একার পরিবর্তে মিলেমিশে থাকা
জার্মানিতে ‘আমারিলিস’-এর মতো আবাসিক প্রকল্প খুবই জনপ্রিয়৷ এই প্রকল্পের আওতায় কয়েক প্রজন্মের মানুষ একই কমপ্লেক্সে বসবাস করেন৷ একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করেন৷ সেখানে সবারই আলাদা আলাদা ঘর রয়েছে, তবে বাগান এবং গাড়ি সবাই ভাগাভাগি করেন৷ যারা মানুষের সঙ্গ চান বা যৌথ পরিবারের সাথে থাকতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য এই বাড়িগুলি খুবই উপযোগী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/JOKER
8 ছবি1 | 8
এই দুই তলা বাড়িটিও তিনি নিজে তৈরি করেছেন৷ নীচের তলায় একটাই বড় ঘর৷ আলান ঠিক এমনটাই চেয়েছিলেন৷ তিনি ও তাঁর পরিবার চান, বাড়িটি যেন এক এক মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠুক৷ সেইজন্যে ঘরের মাঝেই রয়েছে রান্নাঘর৷ আলান বলেন, ‘‘সুইডেনে বছরের ৬ মাসই শীত থাকে৷ তাই বাসায়ই বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দেখা করতে হয়৷ স্পেনের সঙ্গে তুলনা করলে দেখবেন, সবাই বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বাইরে গিয়ে ডিনার সারে৷ কিন্তু সুইডেনে সেটা হয় না৷ লোকে রেস্তোরাঁয় যায় ঠিকই, কিন্তু সপ্তাহে ৩-৪ দিন নয়৷ তাই সুইডেনে এমন বাড়ি থাকা জরুরি, যেখানে বন্ধু-বান্ধবদের ডাকা যায়৷''
নিজের হাতে বাড়িটি তৈরি করেছেন আলান স্পিগেল৷ কঠোর পরিশ্রমের ফলে ১০ কিলো ওজন কমে গেছে৷ কারণ মিস্ত্রী হিসেবেও তিনি প্রথমবার অনেক কিছু করেছেন৷ কিছু বিঘ্নও ঘটেছে৷ আলান স্পিগেল বলেন, ‘‘আমি আবার রং চিনতে পারি না৷ সঙ্গে সবসময় একজন সহকারী ছিল৷ বাড়ি তৈরির সময় দু'জন মিলে কাজ করতাম, কারণ একা সব কাজ করা যায় না৷ এবং বাড়িটির চারটি রং রয়েছে৷ একটা গোটা দিন ধরে আমরা রং করছিলাম৷ একটি দেয়ালে রং করার পর দুপুরে আমার স্ত্রী এসে বললেন, ভুল রং করা হয়েছে৷ বন্ধুর উপর রাগ হয়ে গেল, কারণ আমি তো তাকে বলেইছিলাম যে আমি রং চিনি না৷ তখন সে বললো, সেও রং চেনে না!''
তবে তা সত্ত্বেও সুইডেনের ভিলা আলটোনা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে৷
আক্সেল প্রিমাভেসি/এসবি
আকাশ থেকে যখন বাড়ি ঝুলবে!
মাটিতে উঁচু বাড়ি বানানো এমন কি আর শক্ত৷ কিন্তু এ ধরনের একটি ‘স্কাইস্ক্রেপার’ বা গগনচুম্বী বাড়ি কি সত্যিই ‘স্কাই’, মানে আকাশ থেকে ঝোলানো সম্ভব? দৃশ্যত তারই প্রস্তুতি চলেছে...
ছবি: Clouds AO
অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণু থেকে ঝোলানো হবে যে ‘বাড়ি’
ধরিত্রীর বুকে জমি সীমিত৷ তাই বাড়ি তৈরি করার জন্য এখন পানি কিংবা আকাশের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে৷ ‘ক্লাউডস আর্কিটেক্ট’ বা ‘মেঘমণ্ডলের স্থপতিরা’ তাই এবার অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণু, সহজ কথায় উল্কাপিণ্ড থেকে বাড়ি ‘ঝোলানোর’ পরিকল্পনা করছেন৷ এভাবে যে বহুতল ভবনটি তৈরি হবে, তার নাম রাখা হবে আনালেম্মা টাওয়ার এবং তা হবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার৷ অবশ্য যদি সত্যিই তা তৈরি হয়...
ছবি: Clouds AO
ক্লাউডস আর্কিটেকচার
এই টাওয়ারের ভিত্তি কিন্তু মাটির পৃথিবীতে হবে না৷ নিউ ইয়র্কের ক্লাউডস আর্কিটেকচার অফিসের কল্পনা বা পরিকল্পনা অনুযায়ী গোটা বাড়িটা মজবুত তার দিয়ে ঝোলানো থাকবে পৃথিবীর চারপাশে চক্কর কাটা কোনো অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণু – সহজ ভাষায় উল্কাপিণ্ড থেকে৷
ছবি: Clouds AO
নিছক কল্পনা নয়
২০১৫ সালে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি একটি চলন্ত অ্যাস্টেরয়েডের উপর একটি রোভার যান নামিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, অ্যাস্টেরয়েড অবধি পৌঁছানো সম্ভব৷ মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা ২০২১ সালের মধ্যে একটি উপযুক্ত গ্রহাণু খুঁজে বার করতে চায়৷
ছবি: Clouds AO
জল আর বিদ্যুতের সরবরাহ
অ্যাস্টেরয়েড থেকে ঝোলানো আনালেম্মা টাওয়ারের বিদ্যুৎ আসবে সোলার প্যানেল থেকে, অপরদিকে বৃষ্টিবাদলা থেকে পাওয়া যাবে পানি৷ গোটা ভবনটির ব্যবহৃত পানি রিসাইকেল করা হবে৷
ছবি: Clouds AO
খুবই হাল্কা হবে মেঘের কোলে উল্কাপ্রাসাদ
আনালেম্মা টাওয়ারের ডিজাইনার অস্টাপ রুদাকেভিচ-এর বিবৃতি অনুযায়ী ভবনটি কার্বন ফাইবার বা অ্যালুমিনিয়ামের মতো অতি হাল্কা পদার্থ দিয়ে বানানো হবে৷
ছবি: Clouds AO
যেন গোটা শহর!
আনালেম্মা টাওয়ারে যে শুধু বসবাসের জায়গা থাকবে, এমন নয়৷ সেখানে অফিস-কাছারি থেকে শুরু করে বাজার, রেস্টুরেন্ট, শপিং সেন্টার, কাফে ইত্যাদি সবই থাকবে৷ ভবনের ওপরতলায় থাকবে অফিস৷ তলার দিকে থাকবে আবাসিক এলাকা, এছাড়া উপাসনা থেকে শুরু করে অন্তিম সংস্কারের স্থান৷
ছবি: Clouds AO
আপাতত অকল্পনীয়...
এরকম একটি ভবনে থাকতে কেমন লাগবে, তা আপাতত জানার কোনো উপায় নেই৷ তবে টাওয়ারের বাসিন্দারা পৃথিবীর এক বা একাধিক অপূর্ব দৃশ্য দেখবেন৷ কিন্ত কোনো কাজের জন্য সেই মাটির পৃথিবীতে আসতে হলে প্যারাশুট নিয়ে ঝাঁপ খেতে হবে না তো?!?