ক্যানাডার মন্ট্রিয়লে সোমবার ভোরে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ একটি চুক্তিতে উপনীত হন৷ একে ২০১৫ সালে প্যারিসে সই হওয়া জলবায়ু চুক্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন ক্যানাডার পরিবেশমন্ত্রী স্টিভেন গিলবো৷
মন্ট্রিয়লে জাতিসংঘের উদ্যোগে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ছবি: Lars Hagberg/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
জলবায়ু রক্ষায় জাতিসংঘের উদ্যোগে গতমাসে মিশরে জলবায়ু সম্মেলন কপ২৭ অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ এর একমাস পর মন্ট্রিয়লে জাতিসংঘের উদ্যোগে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা সম্মেলনটি, যাকে কপ১৫ বলা হচ্ছে, চীনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু করোনার কারণে দেশটিতে বিদ্যমান কঠোর নীতির কারণে সম্মেলনটি ক্যানাডায় অনুষ্ঠিত হয়৷ তবে সম্মেলনের সভাপতির দায়িত্বে ছিল চীন৷
মিশরের জলবায়ু সম্মেলনের এক মাস পর আয়োজিত মন্ট্রিয়ল সম্মেলন নিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের তেমন মনোযোগ ছিল না৷ ফলে সম্মেলন থেকে বেশি কিছু আশা করা হচ্ছিল না৷ তবে চীনের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়া গেছে৷ এতে প্রকৃতি রক্ষায় বেশ কিছু অঙ্গীকার করা হয়েছে, যা বাস্তবায়ন করা বাধ্যতামূলক নয়৷ তারপরও একে ‘ভূমি ও সাগর রক্ষায় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুক্তি' বলে আখ্যায়িত করেছেন ক্যাম্পেন ফর নেচারের পরিচালক ব্রায়ান ও'ডনেল৷ আর চুক্তি সইয়ের পর ক্যানাডার পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটি এমন এক মুহূর্ত যা ইতিহাসে লেখা থাকবে, প্যারিসে যেমনটা হয়েছিল জলবায়ুর জন্য৷''
চুক্তিতে যা আছে:
বর্তমানে বিশ্বের ১৭ শতাংশ জমি ও ১০ শতাংশ সাগর সংরক্ষিত এলাকা বলে ধরা হয়৷ ২০৩০ সালের মধ্যে সংখ্যাটি ৩০-এ নিয়ে যেতে একমত হয়েছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ৷
আদিবাসীরা যেখানে বসবাস করেন সেই জমি দেখাশোনার দায়িত্ব তাদেরকেই দিতে হবে৷ বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আদিবাসীদের তাদের জমি থেকে উচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে৷ সই হওয়া চুক্তিতে এই বিষয়টি বন্ধ করতে দেশগুলো একমত হয়েছে৷
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নেয়া বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বর্তমানে বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে৷ ২০২৫ পর্যন্ত সংখ্যাটি বাড়িয়ে বছরে ২০ বিলিয়ন ও ২০৩০ পর্যন্ত প্রতিবছর ৩০ বিলিয়ন ডলার করে দিতে সম্মত হয়েছে ধনী দেশগুলো৷ তবে এই টাকা কোথায়, কীভাবে খরচ করা হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়নি৷ তাই অর্থ অপচয়ের আশঙ্কা করছেন সমালোচকেরা৷
কীটনাশক ও বিপজ্জনক রাসায়নিক ব্যবহারের ঝুঁকি অর্ধেকে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে৷
পরিবেশের ক্ষতি করে এমন প্রকল্প বাস্তবায়নে দেয়া মোট ভর্তুকির পরিমাণ ৫০০ বিলিয়ন ডলার কমাতে হবে কিংবা ঐ টাকা অন্যখাতে ব্যবহার করতে হবে৷
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিবছর তাদের কর্মকাণ্ড জীববৈচিত্র্যের উপর কতটা প্রভাব ফেলছে, সেই প্রতিবেদন দিতে অনুরোধ করা হবে৷ তবে এটা বাধ্যতামূলক নয়৷
প্রতিবেদন: টিম শাওয়েনব্যার্গ/জেডএইচ
পুড়ছে বিশ্ব, বাড়ছে সচেতনতা
জলবায়ু পরিবর্তনরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে নানা উদ্যোগ দেখা গেছে ২০১৯ সালে৷ পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে দাবানল, বন্যা আর ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রকৃতি রুষ্ট হলে কী ঘটতে পারে সেসম্পর্কে ধারণাও পাওয়া গেছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
জানুয়ারি: কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা
লম্বা আলোচনার পর জার্মান সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত এক কমিশন ঘোষণা দিয়েছে যে, ২০৩৮ সালের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেবে জার্মানি৷ এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কার্বন নির্গমন কমানো৷ জার্মানিতে বর্তমানে উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৪০ শতাংশ আসে কয়লা থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Endig
ফেব্রুয়ারি: বরফ কমছে
পাঁচ বছর ধরে গবেষণার পর একদল বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, কার্বন নির্গমন কমানো না গেলে হিন্দু-কুশ-হিমালয়ের দুই-তৃতীয়াংশ বরফ ২১০০ সালের মধ্যে গলে যাবে৷ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর দশটি হিমালয়ের উপর নির্ভরশীল৷ আর সেসব নদীতে পানির অভাব দেখা দিলে আটটি দেশের খাদ্য এবং জ্বালানি উৎপাদন ব্যহত হবে৷ ফলে দুই বিলিয়নের মতো মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Sherpa
মার্চ: সাইক্লোনে কাহিল দক্ষিণ আফ্রিকা
জাতিসংঘের বিবেচনায় ‘‘দক্ষিণ গোলার্ধের অন্যতম প্রাণঘাতি ঘূর্ণিঝড়টি’’ মোজাম্মিক, জিম্বাবোয়ে এবং মালাউয়িতে আঘাত হানলে প্রায় এক হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন৷ ঘুর্ণিঝড়ে অনেক ফসল নষ্ট হয়ে যায় যা পরবর্তীতে খাদ্য সংকটের সৃষ্টি করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Onyodi
মে: ইউরোপে সবুজ বিপ্লব
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনে ভোটদানের হার বেড়েছে আর তাতে লাভবান হয়েছে পপুলিস্ট ঘরনার, এবং পরিবেশবাদী দলগুলো৷ ইউরোপের সবুজ দলগুলো ইউরোপীয় সংসদের ৭৫১ আসনের মধ্যে ৭৪টি জয় করেছে৷ জার্মানির সবুজ দল বিশ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে৷ আর এটা দলটির এখন অবধি সবচেয়ে বড় সাফল্য৷ ২০৩০ সাল নাগাদ কার্বন নির্গমন অন্তত ৫৫ শতাংশ কমাতে চায় সবুজ দল৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Fassbender
জুন: কয়লার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
কোলনের কাছে জার্মানির অন্যতম বড় উন্মুক্ত কয়লা খনিতে সমবেত হন কয়েক হাজার মানুষ৷ কয়লা খনিটি সম্প্রসারণে বহু বছরের পুরনো জঙ্গল সাফ করার বিরুদ্ধে সমাবেশে সমবেত হন চল্লিশ হাজারের মতো মানুষ৷ একই মাসে যুক্তরাজ্যের সংসদ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে প্রতীকী অর্থে ‘জলবায়ু জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেন৷
ছবি: picture-alliance/Geisler-Fotopress/C. Hardt
জুলাই: গরম বাড়ছে
গরমে পুড়েছে ইউরোপ মহাদেশ৷ অনেক স্থানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়ে যায়৷ সেসময় মানুষকে বাইরে কম বের হতে পরামর্শ দেয়া হয়৷ এমনকি ট্রেন লাইন অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়৷
ছবি: imago images/R. Traut
আগস্ট: আমাজনে আগুন
আমাজন জঙ্গলে আগুন লাগার হার চলতি বছর আগের তুলনায় বেড়ে গেছে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক হাজার অগ্নিনির্বাপক কর্মী নিয়োগ করা হয়৷
ছবি: AFP/C. de Souza
সেপ্টেম্বর: থুনবার্গ বনাম ট্রাম্প
কিশোরী অ্যাক্টিভিস্ট গ্রেটা থুনবার্গ, যার উৎসাহে গোটা বিশ্বে ‘ভবিষ্যতের জন্য শুক্রবার’ শীর্ষক পরিবেশবাদী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে, জাতিসংঘে জলবায়ু পরিবর্তনরোধে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্বনেতাদের তীব্র সমালোচনা করেছেন৷ জলবায়ু ইস্যুতে ট্রাম্পের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত তিনি৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Press/C. Minelli
নভেম্বর: ভেনিসে বন্যা
ইটালির খালের শহর ভেনিস গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা করছে৷ বেশ কয়েকদিন ধরে পানির নীচে থাকে ভেনিস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Bruno
ডিসেম্বর: কপ২৫
ইতোমধ্যে বিক্ষোভের কারণে পরিবর্তন হয়েছে ভেন্যু৷ চিলির বদলে স্পেনে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন কপ২৫৷ আমাদের ধরিত্রীর ভবিষ্যৎ ঠিক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাৎসরিক এই সম্মেলন৷