1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খেলাপি ঋণের পরিমাণ হিসাবের চেয়ে দ্বিগুণ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ ডিসেম্বর ২০১৯

গত জানুয়ারিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেছিলেন, খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না৷ কিন্তু তাঁর কথাকে তোয়াক্কা না করে খেলাপি ঋণ বাড়ছেই৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ আরো ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেড়েছে৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ আরো ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেড়েছেছবি: DW

অর্থমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, শতকরা হারে খেলাপি ঋণ বাড়ছে না৷ কিন্তু তার এই হিসাবকে আমলে নিচেছন না অর্থনীতবিদরা৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসেবে এখন মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা৷ গত জুনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা৷ তিন মাসে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা৷ আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা৷ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা৷

গত ১১ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে জানিয়েছিলেন, আজ থেকে এক টাকাও খোলপি ঋণ বাড়বে তো না-ই, উল্টো ধীরে ধীরে কমবে৷’’ তিনি এ নিয়ে ব্যাংকের এমডিদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করেছেন বলেও তখন সাংবাদিকদের জানান৷

কিন্তু অর্থমন্ত্রীর ওই কথার পর তার কোনো প্রতিফলন বাস্তবে দেখা যায়নি৷ জানুয়ারি-মার্চ মাসেই প্রথম বারের মতো খেলাপি ঋণে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়৷ খেলাপি ঋণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়৷ ওই তিন মাসে খেলাপি ঋণ বাড়ে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা৷ পরের তিন মাসে জুন পর্যন্ত বেড়েছে ১ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা৷

সরকার কোনোভাবেই বড় খেলাপিদের ধরতে পারছে না: ড. নাজনীন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

অর্থমন্ত্রী এরপরও বারবার সংসদে দাবি করে আসছেন যে, খেলাপি ঋণ বাড়েনি৷ তিনি এবার এক নতুন ব্যখ্যা হাজির করেছেন৷ তার যুক্তি মোট ঋণের পরিমাণের সঙ্গে তুলনা করলে শতাংশ হারে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়েনি৷ তিনি ১৩ নভেম্বর সংসদে দাবি করেন,‘‘১৯৯১ সালে মোট  ১৯ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৩৯ কোটি টাকা৷ তখন খেলাপি ঋণ ছিল মোট ঋণের ২৬ দশমিক ১৪ শতাংশ৷ এখন মোট ৯ লাখ ৬২ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা৷ শতাংশ হিসেবে তা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৯৬ ভাগ৷ সেই হিসেবে আমাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়েনি৷’’

তিনি আরো একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন৷ আর তা হলো,‘‘ব্যাংকের সুদের হার বেশি থাকার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমছে না৷’’

তবে দেশের অর্থনীতিবিদরা অর্থমন্ত্রীর ওই দুই ব্যাখ্যার কোনোটির সাথেই একমত নন৷ বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ মনে করেন, ‘‘শতকরা হার দিয়ে খেলাপি ঋণ বাড়ছে না, এটা বলার কোনো সুযোগ নেই৷ আমরা দেখবো মোট টাকার অংকে দেশে ৯-১০ মাসে আরো ৩০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে৷ আর আমি মনে করি, উচ্চ সুদের হার ব্যাংক ঋণ নেয়াকে নিরুৎসাহিত করে৷ খেলাপি ঋণ আদায়ে এটা বাধা হতে পারে না৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এটা সত্য যে, অর্থমন্ত্রী এককভাবে হয়তো চেষ্টা করছেন৷ তার এই চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই৷ কিন্তু তাতে সফল হতে হবে৷ হিসাবের মারপ্যাঁচ করে লাভ নাই৷ আমার মতে, সরকারই এখন বড়  ঋণ খেলাপি৷ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে৷ এই ঋণ ফেরত দিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করা হোক৷’’

তিনি বলেন, ‘‘সরকার কোনোভাবেই বড় খেলাপিদের ধরতে পারছে না৷ তারা যে-কোনো একটি সুযোগ তৈরি করে পার পেয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতেই হবে৷ খেলাপি ঋণ আদায় করতেই হবে৷ কারণ, এই ঋণই অর্থনীতিকে এখন সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে৷’’

আমি অর্থমন্ত্রীর ব্যাখ্যার সাথে একমত না: ড. সেলিম রায়হান

This browser does not support the audio element.

খেলাপি ঋণের বাংলাদেশ ব্যাংক এখন যে হিসাব দিচ্ছে তা প্রকৃত হিসাব নয় বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সানেম’-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এখন খেলাপি ঋণ মোট ঋণের ১২ ভাগ৷ কিন্তু আইএমএফ গবেষণা করে বলছে, মোট ঋণের ২৫ ভাগ খেলাপি ঋণ৷ তাহলে আমাদের খেলাপি ঋণের পরিমান যা বলা হচ্ছে,  বাস্তবে তার দ্বিগুণেরও বেশি৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমি অর্থমন্ত্রীর ব্যাখ্যার সাথে একমত না৷ ১৯৯১ সালের সঙ্গে তুলনা করলে হবে না৷ ২০০৮-২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ মোট ঋণের ৬-৭ ভাগে নেমে এসেছিল৷ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে ব্যাংক খাতে সংস্কারের মাধ্যমে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছিল৷ কিন্তু গত ৮-১০ বছরে পরিস্থিতি আবার খারাপ হয়েছে৷ আর সুদেরহ হার বেশি হওয়ার কারণে খেলাপি ঋণ বেশি, এটা আমি মানতে পারছি না৷ আমার কাছে মনে হয়, খেলাপি ঋণ বেশি হওয়ার কারণে সুদের হার বেশি৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা যদি ঋণ খেলাপির তালিকাটি দেখি, তাহলে দেখব, যারা বড় তারা রাজনৈকিভাবে শক্তিশালী৷ তারা নানা রকমের অন্যায় সুবিধা পেয়েছেন৷ পুনঃতফসিলের নামে তাদের অন্যায় সুবিধা দেয়া হয়েছে৷ ব্যাংকের নিয়ম-কানুন পরিবর্তন করা হয়েছে৷ এবং তা ঋণ খেলাপিদের পক্ষেই গেছে৷ কোর ব্যবস্থা তো দূরের কথা, কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি৷ আর ব্যাংক কাঠোমোর দূর্বলতা তাদের সুযোগ করে দিয়েছে৷’’

গত বছর আগস্টের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ