প্রচন্ড সংকটে গরিলা প্রজাতি
২৮ জানুয়ারি ২০১০গরিলাদেরকে দুইটি প্রজাতিতে ভাগ করা হয়৷ মানুষের সাথে গরিলার ডিএনএ-এর প্রায় ৯৭-৯৮% মিল রয়েছে৷ শিম্পাঞ্জিদের পরে এরাই মানুষের নিকটতম সমগোত্রীয় প্রাণী৷ গরিলারা নিরক্ষীয় বা উপনিরক্ষীয় বনাঞ্চলে বাস করে৷
আলবার্টাইন রিফ পর্বতের গরিলা
পাহাড়ি গরিলা আফ্রিকার আলবার্টাইন রিফ পর্বতে বাস করে, সমূদ্রসমতল হতে যে এলাকার উচ্চতা প্রায় ২২২৫ হতে ৪২৬৭ মিটার৷ সমতলের গরিলারা ঘন জঙ্গলে বাস করে৷ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই প্রজাতি এখন রয়েছে প্রচন্ড হুমকির মধ্যে৷ b#bসদ্য প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষ করে বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে গাছপালা কমে ফলফলাদি কমে গেলে খাদ্য সংকটে পড়বে গরিলা কিংবা বানর জাতীয় প্রাণীগুলো৷
আইইউসিএন যা বলছে
আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংস্থা আইইউসিএন বলছে, বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ বানর আর উল্লুক প্রজাতির প্রাণীই এখন বিলুপ্তির পথে৷ এ জন্য বনাঞ্চল উজাড় আর ব্যাপক হারে পশু শিকারকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ আইইউসিএন এর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গঠনগত দিক থেকে মানুষের সঙ্গে মিল রয়েছে এমন স্তন্যপায়ী প্রাণী বা প্রাইমেটের সংখ্যা যে হারে কমছে তা সত্যিই উদ্বেগজনক৷ বিপন্ন এসব প্রাণীর একটি রেড লিস্টও তৈরি করেছেন তারা৷
তালিকায় দেখা গেছে, শিম্পাঞ্জি, ওরাং-ওটাং, বানর এবং লেমুরের মতো ৬৩৪ প্রজাতির প্রাণীর ৪৮ শতাংশের অস্তিত্বই এখন ঝুঁকির মুখে৷ অথচ ৫ বছর আগেও এই সংখ্যা ছিলো ৩৯ শতাংশ৷ এক্ষেত্রে এশিয়ার চিত্র সবচেয়ে ভয়াবহ৷ এখানকার ৭১ শতাংশ প্রাইমেটই বিলুপ্তির পথে৷ আর আফ্রিকায় এই হার ৩৭ শতাংশ৷ প্রাইমেটদের বিলুপ্তির দিক দিয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ কম্বোডিয়া৷ দেশটির ৯০ ভাগ বানর প্রজাতির অস্তিত্বই হুমকির মুখে৷
খাদ্য নেই, পরিবেশ নেই
প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বে বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্যের যোগান দিতে এবং পরিবেশ দূষণ রোধে বায়োফুয়েল উত্পাদনের জন্য ক্রমেই বাড়ছে ফসলি জমির চাহিদা৷ সেজন্য দেদার গাছ কেটে উজাড় করা হচ্ছে বনভূমি৷ তার উপর কাঠ চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য তো আছেই৷ আর এসব কারণে ক্রমেই আবাসন হারাচ্ছে প্রাইমেটরা৷
গরিলা যখন খাবার
প্রাইমেটদের বিলুপ্তির আরেকটি বড় কারণ হলো, লোভনীয় খাবার হিসেবে এদের চাহিদা বৃদ্ধি৷ আফ্রিকার কোন কোন দেশে শিম্পাঞ্জি, গরিলা আর উল্লুকের মাংস খুবই প্রিয়৷ এমনকি গরু , মুরগি কিংবা মাছের চেয়েও এদের দাম অনেক বেশি৷ এছাড়া পোষা প্রাণী হিসেবে প্রাইমেটদের চাহিদা বাড়তে থাকায় বেড়ে গেছে বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসাও৷ চীনাদের সনাতন চিকিত্সা পদ্ধতিতেও প্রাইমেটদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে৷ তা মেটাতেও চলছে বন্যপ্রাণী নিধন৷
প্রাণী বিশেষজ্ঞদের আশংকা, মানুষের এসব বৈরী আচরণের কারণে এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে রেড কলোবাস নামে বিরল ধরণের বানেরর দুটি প্রজাতি৷ গত ২৫ বছরে বভিয়ার প্রজাতির কোন রেড কলোবাসই দেখা যায়নি৷ আর ১৯৭৮ সালে একমাত্র জীবিত মিস ওয়াল্ড্রন রেড কলোবাসটির মৃত্যু হয়েছে বলে তাদের আশংকা৷ প্রাইমেটদের দ্রুত বিলুপ্তির কারণে জীব বৈচিত্র্য হারানোর পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে খুব দ্রুত, এমনই আশংকা প্রাণী বিশেষজ্ঞদের৷
বাংলাদেশের ১০ প্রজাতির বানর
এবার চলুন দৃষ্টি দিই বাংলাদেশের দিকে৷ বাংলাদেশের ১০ প্রজাতির বানরের মধ্যে ৮টিই কোনো না কোনোভাবে হুমকির সম্মুখীন৷ এদের মধ্যে সবচেয়ে বিপন্ন উল্লুক৷ আকার, আকৃতি ও আচরণের কারণে সহজে দৃষ্টি কাড়ে গোরিলা কিংবা শিম্পাঞ্জির মতো দেখতে লেজহীন এই উল্লুক৷ তবে আশঙ্কার বিষয় - উপযুক্ত আশ্রয় ও খাদ্যাভাবে বাংলাদেশে মহাবিপন্ন প্রজাতির তালিকায় থাকা উল্লুকের টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে৷ গত দুই দশকে এর সংখ্যা তিন হাজার থেকে কমে নেমে এসেছে ৩০০-এ৷
বন্যপ্রাণীবিদদের মতে, বিশ্বব্যাপী বিপন্নপ্রায় উল্লুক বাংলাদেশে মহাবিপন্ন প্রজাতি হিসাবে চিহ্নিত৷ ক্রমশ এদের আবাসস্থল বিলুপ্ত হয়ে পড়ায় বানরপ্রজাতির মধ্যে সবগুলোই কোনো না কোনোভাবে হুমকির সম্মুখীন৷
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ট্রাস্ট (ডব্লিউটিবি)- এর তথ্যমতে, বাংলাদেশেরর উত্তর-পূর্ব (বৃহত্তর সিলেট) ও দক্ষিণ-পূর্ব (চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম) এলাকার বন ছাড়াও ভারত (উত্তর-পূর্বাংশ), মিয়ানমার (পশ্চিমাংশ) এবং চীনে উল্লুক দেখা যায়৷ উল্লুক প্রাইমেটস্ গ্রুপের একটি হলো লেজার এপ, অন্যটি গ্রেটার এপ৷ আর এই গ্রেটার এপ-এর আওতায় রয়েছে শিম্পাঞ্জি, গরিলা, ওরাং৷
প্রসঙ্গ: লাওয়াছড়া
বাংলাদেশে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান উল্লুকের অন্যতম আবাস৷ এছাড়া সিলেটের বড়লেখা, লাঠিটিলা, সাগরনাল, গাজীপুর টি স্টেট, চাউতলি, আদমপুর, হরিণছড়া, রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের দিঘিনালা, বাঘাইছড়ি (সাজেক, শিজক), পাবলাখালী অভয়ারণ্য, করেরখাট, হাজারিখিল অভয়ারণ্য, বাইশারি, ব্যাঙডোবা, কর্ণফুলী, রামপাহাড় (কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান), রামু, থানচি, সাতঘর, ফাসিয়াখালী, দোপাছড়ি, সাঙ্গু, আলিকদম, রাজঘাট, ভোমারিয়াঘোনা, হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান, ইনানি, উখিয়া (থানখালি), টেকনাফ ও আপার রিজু এলাকায় উল্লুক দেখা যায়৷ বাংলাদেশে টিকে থাকা উল্লুকের মধ্যে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রায় ৫০টি এবং কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে ৮০-৯০টি উল্লুক রয়েছে৷
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক