ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন হেয়ার্টেল একটি যান চালিয়ে দেখছেন৷ তবে তার মোটোরসাইকেলে যে প্রচলিত ইঞ্জিন বসানো আছে, বিকট শব্দ শুনলেই তা বোঝা যায়৷ অথচ এই যানের কার্বন নির্গমনের মাত্রা কার্যত শূন্য, যা এমনকি যে কোনো ইলেকট্রিক গাড়ির তুলনায়ও ভালো৷
সিমন প্যোলমান ও মার্টিন হেয়ার্টেল ইঞ্জিন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে প্রমাণ করতে চান যে ইন্টারনাল কম্বাশন ইঞ্জিনেরও ভবিষ্যৎ রয়েছে৷ এমনকি ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের তুলনায়ও সেটি নাকি আরও বেশি পরিবেশবান্ধব৷
প্রথম আইডিয়া হলো, কম্বাশন ইঞ্জিন মোটেই খারাপ নয়, বরং যা সেখানে ভরা হয় সেই জ্বালানির কুপ্রভাব থাকতে পারে৷ তাই পেট্রল বা ডিজেল না ভরে ইঞ্জিনে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে৷ আজকের ডিজেলের তুলনায় এই উৎস অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব৷
ডান দিকে নতুন গ্যাসের ইঞ্জিন, বামে ডিজেলচালিত ইঞ্জিন৷ ডিজেলের মতো এ ক্ষেত্রেও জ্বালানি কম্বাশন চেম্বারে ইগনাইট করা হয়, অর্থাৎ জ্বালানো হয়, যাতে ভবিষ্যতে গ্যাস ইঞ্জিন ডিজেলের মতোই কাজ করতে পারে৷ শুধু পার্টিকুলেট বা বস্তুকণা, নাইট্রিক অক্সাইড এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অনেক কম হবে৷ মার্টিন হেয়ার্টেল বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক গ্যাসের সুবিধা হলো, নীতিগতভাবে আমরা প্রায় এক চতুর্থাংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড সাশ্রয় করতে পারি৷ তবে একই সঙ্গে অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থের নির্গমনও এড়িয়ে চলতে হবে৷ আবার জ্বালানি ব্যবহারের মাত্রাও কম রাখতে হবে৷ আধুনিক কম্বাশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা সেটা করতে পারছি৷ কম্বাশন ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের দাবি কার্যকর করাই সেই গবেষণার লক্ষ্য৷ অর্থাৎ জলবায়ু সংরক্ষণ ও বাতাসের শুদ্ধতা বজায় রাখতে হবে৷’’
লন্ডন ভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিল’ বা ডাব্লিউইসি-এর ‘বিশ্ব জ্বালানি সম্পদ ২০১৬’ প্রতিবেদনে কোন জ্বালানি কী পরিমাণ ব্যবহত হচ্ছে তার হিসেব প্রকাশ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpaলন্ডন ভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিল’ এর ‘বিশ্ব জ্বালানি সম্পদ ২০১৬’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানি হচ্ছে তেল৷ মোট ব্যবহৃত জ্বালানির প্রায় ৩২.৯ শতাংশই হচ্ছে তেল৷ আর তেল উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে সৌদি আরব (বছরে ৫৬৯ মিলিয়ন টন), যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ৫৬৭ মিলিয়ন টন) ও রাশিয়া (বছরে ৫৪১ মিলিয়ন টন)৷
ছবি: picture-alliance/dpa২৯ শতাংশ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় তেলের পরেই আছে কয়লা৷ তবে নব্বই দশকের পর ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো কয়লা উৎপাদন কমেছে৷ বিশ্বের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৪০ ভাগ কাজে কয়লা ব্যবহৃত হয়৷ শীর্ষ তিন উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে চীন (বছরে ২ দশমিক ৬২ হাজার এমটিওই), যুক্তরাষ্ট্র (৫৬৯ এমটিওই) ও ভারত (৪৭৪ এমটিওই)৷ উল্লেখ্য, এমটিওই মানে হচ্ছে এক মিলিয়ন মেট্রিক টন অফ ওয়েল ইকুইভ্যালেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Roland Weihrauchতিন নম্বরে আছে গ্যাস (প্রায় ২৪ শতাংশ)৷ আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানির তালিকায় কয়লার (৪০ শতাংশ) পরে আছে গ্যাস (২২ শতাংশ)৷ শীর্য তিন গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ৬৯১ এমটিওই), রাশিয়া (বছরে ৫১৬ এমটিওই) ও ইরান (বছরে ১৭৩ এমটিওই)৷
ছবি: Imagoনবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎসের মধ্যে পানি বা জলবিদ্যুতের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি৷ ২০১৫ সালে উৎপাদিত মোট নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রায় ৭১ শতাংশই এসেছে জলবিদ্যুৎ থেকে৷ আর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় তেল (৩৩ শতাংশ), কয়লা (২৯ শতাংশ) ও গ্যাসের (২৪ শতাংশ) পরেই আছে পানিবিদ্যুৎ (প্রায় ৭ শতাংশ)৷ শীর্ষ তিন উৎপাদনকারী চীন (বছরে ৯৬.৯ এমটিওই), ব্রাজিল (৩২.৯ এমটিওই) ও ক্যানাডা (৩২.৩ এমটিওই)৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Jourdierবিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় পাঁচ নম্বরে আছে এটি (৪ দশমিক ৪ শতাংশ)৷ অর্থাৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানির একটি উৎস পানিবিদ্যুতের (প্রায় ৭ শতাংশ) চেয়েও এর ব্যবহার কম৷ ইউরেনিয়াম উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে কাজাখস্তান (বছরে ২২ দশমিক ৮ হাজার টন), ক্যানাডা (৯ দশমিক ১৪ হাজার টন) ও অস্ট্রেলিয়া (৪ দশমিক ৯৮ হাজার টন)৷
ছবি: Kerry Skyringবিশ্বের মোট বিদ্যুতের ৭ শতাংশ আসে বায়ুবিদ্যুৎ থেকে৷ ২০১৫ সালে ৪৩২ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছিল৷ এর মধ্যে ৪২০ গিগাওয়াট অনশোর (ভূমি) ও ১২ গিগাওয়াট অফশোর, অর্থাৎ সাগরে বসানো টারবাইনের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়৷ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় ছয়ে আছে এটি (১.৪৪ শতাংশ)৷ শীর্ষ তিন বায়ুশক্তি উৎপাদনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ১৫.৮ এমটিওই), চীন (১৩.৬ এমটিওই) এবং জার্মানি (৪.৯৩ এমটিওই)৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Vaughn২০১৫ সালে সারা বিশ্বে মোট সৌরশক্তি উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২২৭ গিগাওয়াটে৷ ফলে মোট বিদ্যুতের এক শতাংশ এসেছিল সৌরশক্তি থেকে৷ সৌরশক্তি উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ চীন (৪৩ দশমিক ১ গিগাওয়াট), জার্মানি (৩৯ দশমিক ৬ গিগাওয়াট) ও জাপান (৩৩ দশমিক ৩ গিগাওয়াট)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Guptaজিওথার্মাল, ই-স্টোরেজ, মেরিন এনার্জি, বর্জ্য থেকে শক্তি, বায়োএনার্জি (যেমন বায়োমাস) ইত্যাদি সহ আরও অনেক উৎস দিয়েও জ্বালানি উৎপাদন করা হয়ে থাকে৷ ছবিতে আইসল্যান্ডের একটি জিওথার্মাল পাওয়ার স্টেশন দেখা যাচ্ছে৷ ডাব্লিউইসি-র প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন উপরের ‘+’ চিহ্নে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO দ্বিতীয় আইডিয়া হলো, আজকের প্রচলিত কম্বাশন ইঞ্জিনগুলিকে আরও পরিবেশবান্ধব করে তুলতে হবে৷ নিষ্কাশিত গ্যাস ব্যবহার করেই সেই কাজ করতে হবে৷
এ ক্ষেত্রে ভালভের মাধ্যমে সেই গ্যাস আবার ইঞ্জিন কম্পার্টমেন্টে ফিরিয়ে আনা হবে৷ নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা কমানোই এই কৌশলের লক্ষ্য৷ জ্বালানি সাধারণত ভালভের মাধ্যমে কম্বাশন চেম্বারে এনে ইগনাইট করানো হয়৷ উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ক্ষতিকারক নাইট্রিক অক্সাইড সৃষ্টি হয়৷
নিষ্কাশিত গ্যাসের একটা অংশ শীতল করে আবার কম্বাশন চেম্বারে ফিরিয়ে আনাই হলো এই কৌশলের বৈশিষ্ট্য৷ এই সব গ্যাস সেই চেম্বার ঠান্ডা করবে৷ ফলে অনেক কম পরিমাণ নাইট্রিক অক্সাইড সৃষ্টি হবে৷
ক্রিস্টিয়ান ফ্রিডল/এসবি