1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রচারণায় সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৪ ডিসেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশে এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় ঐতিহ্যগত ধারার চেয়ে এগিয়ে আছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ওয়েবসাইটসহ আরো অনেক নতুন নতুন কৌশল৷

Bangladesch Gebäude der Wahlkommission in Dhaka
ছবি: DW/M. M. Rahman

নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হবে প্রতীক বরাদ্দের পর৷ কিন্তু বাস্তবে অনলাইন এবং ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে আরো অনেক আগে৷  প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন কেনার সময়ই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শুরু হয়েছে কৌশলী প্রচারণা৷ দলীয় মনোনয়নপত্র কেনার পরই প্রার্থী বা তাঁদের সমর্থকরা তা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের নানা মাধ্যমে ‘পোস্ট' করে তাঁদের মাঠে থাকার কথা জানান দিয়েছেন৷ এরপর দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর মনোনয়নের চিঠি হাতে পেয়ে আরেক দফা প্রচারণা চলেছে ফেসবুকে৷ যাঁরা দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে পেরেছেন, তাঁদের কেউ কেউ ফেসবুক লাইভে এসে মনোনয়ন পাওয়ার কথা জানিয়ে দোয়াও চেয়েছেন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার নির্বাচনি প্রচারণায় দলগুলো বিজ্ঞাপনী সংস্থা, বিজ্ঞাপন নির্মাতা এবং ডিজিটাল মার্কেটিং যাঁরা করেন, তাঁরাও যুক্ত হচ্ছেন৷ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ‘পোস্ট' দেয়ার জন্য ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ বানানো হচ্ছে৷ আছে আকর্ষণীয় ‘স্টিল'  বিজ্ঞাপনও৷ এসব বিজ্ঞাপনে সেলিব্রেটি ছাড়াও সাধারণ মানুষকে মডেল হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে৷

ডিজিটাল নির্বাচনি প্রচারণায় এগিয়ে আছে আওয়ামী লীগ৷ প্রার্থীরা এখনো আলাদাভাবে তেমন প্রচার-প্রচারণা শুরু না করলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানা ধরনের ‘ভিডিও ক্লিপ' তৈরি করা হয়েছে৷ তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার সঙ্গে সঙ্গে আছে সব ধরনের ভোটারকে আকৃষ্ট করার নানা ‘ভিডিও ক্লিপ' ও ‘টেমপ্লেট'৷ সেখানে মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন ও উন্নয়ন-ভাবনা চুম্বক আকারে তুলে ধরা হচ্ছে৷ এমনকি সাংবাদিকদের কাজের সুবিধার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে ১০টি বুকলেটের একটি সেটও তৈরি করা হয়েছে৷ এসব কাজে নিয়োজিত আছেন দক্ষ পেশাজীবীরা৷

চয়নিকা চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

এই যেমন, একটি প্রোডাকশন হাউজের পক্ষ থেকে কাজ করছেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা একদম ‘মাস' লেভেলে গিয়ে ছোট ছোট ডকুমেন্টরির কাজ করছি৷ পদ্মা সেতু নিয়ে একটি কাজ করেছি পদ্মা সেতু এলাকায় গিয়ে৷ সেখানকার সাধারণ মানুষই কথা বলেছেন৷ এটি সব প্রাইভেট টিভি চ্যানেলে প্রচার করা হবে নির্বাচনের আগে৷''

তাঁর কথায়, ‘‘এটা আমি প্রাণের তাগিদেই করছি৷ টাকা-পয়সা এখানে মূল কথা নয়৷ আরো অনেকগুলো কাজ করব নির্বাচনের আগে৷ গানের ভিডিও-ও করবো৷ সেগুলো ইউটিউবেও যাবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘দেশটা যে ডিজিটাল প্রযুক্তির দিকে যাচ্ছে, তার সুবিধা সবাই নিতে পারেন৷ এবার নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় ডিজিটাল প্রযুক্তিই এগিয়ে থাকবে৷'' তাই ‘ডিজিটাল মার্কেটিং'-এর সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরাও সক্রিয় হয়েছেন নির্বাচনি প্রচারণায়৷

জেলায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রার্থীকে এই প্রচারণায় সহায়তা দিতে আলাদা আলাদা গ্রুপ তৈরি হচ্ছে৷ তাঁরা শুধু ফেসবুক বা ফেসবুক পেজ নয়, ওয়েবসাইট খুলেও নির্বাচনি প্রচারণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ এর সঙ্গে জড়িত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং ডিজিটাল মার্কেটার সুমন জাহিদ জানান, ‘‘এই গ্রুপগুলোতে ওয়েবপেজ ডেভেলপার, কন্টেন্ট প্রোভাইডার, সোশাল নেটওয়ার্ক এক্সপার্ট, ভিডিও এডিটর – সবই থাকছে৷ এরকম অনেকগুলো গ্রুপ এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে৷ এবার ডিজিটাল ক্যাম্পেইনের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ৷''

তাঁর মতে, ‘‘এবার ফেসবুক ছাড়াও ইউটিউব, টুইটার ও ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার হবে নির্বাচনি প্রচারণায়৷''

সুমন জাহিদ

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘প্রচলিত ধারার মিছিল, মিটিং, শোভাযাত্রা, পোস্টার প্রচারপত্র তো থাকছেই৷ কিন্তু ডিজিটাল ও অনলাইন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে একটা ‘ওয়েভ' তৈরি করা হচ্ছে৷ সেখানে মূল ‘ফোকাস' থাকবে উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ওপর৷ তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চমকপ্রদ সব ডিজিটাল প্রচার থাকবে৷''

তাঁর কথায়, ‘‘নির্বাচন কমিশনের নীতি মেনে পোস্টার ব্যানার ও বিলবোর্ডেও আধুনিকতা আসছে৷ এখন সব প্রিন্টই জিজিটাল প্রিন্ট৷''

উঠোন বৈঠকও নির্বাচনি প্রচারণার একটি কার্যকর কৌশল৷ কোনো বাড়ির আঙিনায় বা খোলা জায়গায় ওই এলাকার সীমিত সংখ্যক ভোটারের মধ্যে প্রচারণার কৌশল৷ এভাবেই নির্বাচনি প্রচারণা নিয়ে কাজ করছেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফিল্ম সোসাইটির সাবেক সভাপতি মীর রেজওয়ান মাহমুদ তন্ময়৷ তিনি জানান, ‘‘উঠান বৈঠকে প্রার্থীরা সাধারণত যেতে পারেন না৷ এতে তাঁদের কর্মী-সমর্থকরা ‘ওয়ান টু ওয়ান' কথা বলতে পারেন৷ প্রতিশ্রুতির কথা জানাতে পারেন৷ এটা বেশ কার্যকর হয়৷''

জানা গেছে, তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের যে তরুণ-তরুণীরা নতুন ভোটার হয়েছেন, তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় গ্রুপ করে প্রচারণার কাজে লাগানো হবে৷ এঁদের ওরিয়েন্টেশনও চলছে৷ এই কাজে সহায়তার জন্য নির্বাচনের মনোনয়ন চেয়েও যেসব তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা মনোনয়ন পাননি, তাঁদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে৷

মীর রেজওয়ান মাহমুদ তন্ময় বলেন, ‘‘এটা বেশ কাজে দেয়৷ তরুণরা তরুণদের আকৃষ্ট করতে পারে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘স্থানীয় পর্যায়ে গান, উন্নয়ন সংবাদ, সামনে যা আসছে এসব নিয়ে অডিও প্রোডকশনও হচ্ছে৷''

মীর রেজওয়ান মাহমুদ তন্ময়

This browser does not support the audio element.

ওদিকে বিএনপিও নির্বাচনি প্রচারের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ তবে এখন পর্যন্ত তারা একটু পিছিয়ে আছে বলেই সাধারণ দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে৷ সাবেক ছাত্র নেতা ও যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা রেজা পাহলভী মাসুম বিএনপির প্রচার-প্রস্তুতিতে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের একজন৷ তিনি জানান, ‘‘আমরা আন্দোলনে থাকায় নির্বাচনি প্রচারণার প্রস্তুতি নিতে একটু সময় নিচ্ছি৷ তবে আমরাও ডিজিটাল ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে নির্বাচনি প্রচারণায় গুরুত্ব দেবো৷ আমরা সেভাবেই কাজ করছি৷ আমাদের মূল ‘ফোকাস' থাকবে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা৷''

এবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন লন্ডন থেকে, স্কাইপে৷ এরপর ফেসবুক লাইভে এসে তিনি নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন৷ জানা গেছে, তারেক রহমান নির্বাচনে এই পদ্ধতি অব্যাহত রাখবেন৷ রেজা পাহলভী বলেন, ‘‘বিএনপির নেতা-কর্মীরা আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি থেকে কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই৷''

বাংলাদেশে এবার নির্বাচনি প্রচারণায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এবং তথ্য প্রযুক্তিই প্রাধান্য বিস্তার করবে বলে মনে করেন কন্টেন্ট ম্যাটারস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী রফিকুল্লাহ রোমেল৷ তিনি বলেন, ‘‘আড়াই কোটির বেশি নতুন ভোটার৷ কেউ মনে করতে পারেন গ্রামের তরুণরা এখনো তথ্য-প্রযুক্তির আওতায় আসেননি৷ আসলে তা ঠিক নয়৷ তাঁদের মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন৷ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন প্রায় সবাই৷''

রেজা পাহলভী মাসুম

This browser does not support the audio element.

তাঁর কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত যেসব কন্টেন্ট সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, তা আমার কাছে খুব বেশি কার্যকর মনে হয় না৷ সংক্ষেপে বিভিন্ন দলের কাজের তুলনা করার মতো কন্টেন্ট কম৷ তবে নির্বাচনের আগে হয়ত আসবে৷ অনেকেই এ সব নিয়ে কাজ করছেন বলে আমি জানি৷''

মোবাইল, এসএমএস এবার নির্বাচনের প্রচারণায় বড় একটি জায়গা দখল করবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ আর অল্প খরচে ‘বাল্ক এসএমএস' দেয়ার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান আছে৷ ঢাকাসহ শহর এলাকায় ভোটারদের ফোন নাম্বার সরবরাহের প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে৷ টেলিফোন অপারেটররা সরাসরি সহায়তা করবেন না৷

নির্বাচনি প্রচারণায় দু'দলেই তারকারা অংশ নেবেন৷ অংশ নেবেন সেলিব্রেটিরা৷ এ জন্য দু'দলই এলাকাভিত্তিক টিম এবং ‘শিডিউল' তৈরি করছে৷এবার নির্বাচনি ফ্যাশনও আসতে পারে৷ নৌকা মার্কার শাড়ি বা ধানের শীষের টি শার্ট-এর বিজ্ঞাপন এরই মধ্যে চোখে পড়ছে৷

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এরই মধ্যে ভুয়া নিউজেরও ছড়াছড়ি৷ এবার এই ভুয়া খবর নির্বাচনের একটি ‘বড় আপদ' হিসেবে দেখা দিতে পারে৷

প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ