প্রজাতন্ত্র দিল্লির রাজপথের কুচকাওয়াজে নেতাজির ট্যাবলো পাঠাতে চেয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। দিল্লি তা বাতিল করায় শুরু বিতর্ক।
বিজ্ঞাপন
প্রতি বছরই ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির রাজপথে কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। স্বাধীনতার ৭৫তম বছর উপলক্ষে এবারের আয়োজন আরো বেশি। এই কুচকাওয়াজে সেনা বাহিনীর পাশাপাশি প্রতিটি রাজ্যও অংশগ্রহণ করে। রাজ্যগুলির তরফে একটি ট্যাবলো তৈরি করা হয় নির্দিষ্ট কোনো থিমে। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগেই সেই থিমের ভাবনা কেন্দ্রের কাছে পাঠাতে হয়। কেন্দ্র গ্রহণ করলে তবেই রাজ্য সেই থিমের ট্যাবলো নিয়ে কুচকাওয়াজে যোগ দিতে পারে।
২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন। সেই উপলক্ষে এবারের পশ্চিমবঙ্গের থিম নেতাজিকে নিয়েই করা হবে ঠিক হয়েছিল। সেইমতো কেন্দ্রের কাছে দরখাস্তও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্র তা বাতিল করে দেয়। তারপরেই কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত তিনি হতবাক। তার কথায়, ‘দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল। তাই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে বাংলার মানুষ ব্যথিত হয়েছেন।'
প্রজাতন্ত্র দিবসে কৃষকদের ট্রাক্টর-প্রতিবাদ
ভারতে প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন কৃষকদের অভিনব ট্রাক্টর প্যারেড। পুলিশের ব্যারিকেড সরিয়ে দিয়ে, কাঁদানে গ্যাস উপেক্ষা করে দিল্লিতে ঢুকল কৃষকদের ট্র্যাক্টর।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
শুরু সকাল থেকেই
রাজপথে তখন প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেড চলছে। আর দিল্লির সীমানায় শুরু হয়ে গেছে ট্রাক্টর নিয়ে কৃষকদের প্যারেড। সব মিলিয়ে আড়াই লাখ ট্রাক্টরের মিছিল বিভিন্ন সীমানায়।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
চার জায়গা দিয়ে প্রবেশ
দিল্লিতে কৃষকরা ট্রাক্টর নিয়ে ঢোকেন সিংঘু, টিকরি, গাজিপুর সহ চারটি রাস্তা দিয়ে। সিংঘু সীমানার ছবি।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
সঙ্গে ঘোড়াও
শুধু ট্রাক্টর নয়, ঘোড়ায় চেপেও এসেছিলেন প্রচুর কৃষক। তাঁরা মূলত পাঞ্জাবের কৃষক।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
পায়ে হেঁটেও
সকলেই যে ট্রাক্টর বা ঘোড়ায় ছিলেন তা নয়। পায়ে হেঁটেও আসছিলেন বহু কৃষক।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
ট্রাক্টর প্যারেডে নারীরাও
ট্রাক্টর প্যারেডে ছিলেন নারীরাও। কৃষক বিক্ষোভে শুরু থেকেই নারীরা অংশ নিয়েছেন।
অনেক কৃষকের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন জাতীয় পতাকা হাতেই তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙল
এই ট্রাক্টর প্যারেডের নির্দিষ্ট রুট তৈরি করে দিয়েছিল পুলিশ। শর্তও ছিল। প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরেই ট্রাক্টর প্যারেড করা যাবে। কিন্তু কৃষকরা সেই শর্ত মানেননি। তাঁরা ব্যারিকেড ভেঙে, সরিয়ে দিয়ে নিজেদের পথে চলতে শুরু করেন।
ছবি: Charu. K/DW
কাঁদানে গ্যাসেও কাজ হলো না
একদিকে পুলিশ, অন্যদিকে ট্র্যাক্টরে, ঘোড়ায়, পায়ে হেঁটে কৃষকরা। ব্যারিকেড ভেঙে কৃষকরা এগোতেই শুরু হলো কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো। তাতেও আটকানো গেল না ট্রাক্টর প্যারেড। কাঁদানে গ্যাসকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলল কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল। কৃষকদের অনমনীয় মনোভাবের কাছে হার মানল পুলিশের অবরোধ।
ছবি: Altaf Qadri/AP/picture alliance
লালকেল্লায় কৃষকরা
কিছু কৃষক পৌঁছে গেলেন লালকেল্লায়। প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডও শেষ হয় লালকেল্লায় এসে। সেই প্যারেড শেষ হওয়ার পর লালকেল্লায় গেরুয়া সহ দুইটি পতাকা তুলে দিলেন তাঁরা। যেখানে স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/N. Sharma
সাংবাদিক নিগ্রহ
লালকেল্লার সামনে আক্রান্ত হন টিভি সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানরা। ক্যামেরা ভেঙে দেয়া হয়।
ছবি: Charu. K/DW
কৃষক নেতাদের আবেদন
যোগেন্দ্র যাদবের মতো কৃষক নেতারা আবেদন জানান, পুলিশ যে রুট তৈরি করে দিয়েছিল, তা মেনে চলুন কৃষকরা। লালকেল্লায় তাঁরা যা করেছেন, তা মেনে নেয়া যায় না। তাঁরা এর নিন্দা করেন। সকলকে শান্তি বজায় রাখতে বলেন। তাঁর মতে, ৯৫ শতাংশ কৃষক ঠিকভাবে প্যারেড করেছেন। মাত্র কয়েকজন যা করেছেন, তার জন্য আন্দোলনের নিন্দা হচ্ছে।
ছবি: Charu. K/DW
12 ছবি1 | 12
স্বাধীনতা সংগ্রামে ঋষি অরবিন্দ থেকে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সকলে কী ভূমিকা নিয়েছিলেন তা মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা। তারপরেই ক্ষোভপ্রকাশ করে লিখেছেন, বাংলার ট্যাবলো বাদ দেওয়ার অর্থ স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার ইতিহাসকে উপেক্ষা করা। বাংলার মানুষ একে অপমান হিসেবেই মনে করছে।
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে খানিকটা হলেও সমস্যায় পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। সোমবার বিজেপি নেতা তথাগত রায় টুইট করে মোদীর কাছে একটি আবেদন করেছেন। তিনি লিখেছেন, নেতাজির ট্যাবলো নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী যেন বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন।
গতবছরও পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলো বাতিল করেছিল কেন্দ্র। সেবার কন্যাশ্রী-সহ একাধিক রাজ্যের প্রকল্প নিয়ে ট্যাবলো তৈরি করতে চেয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। সেই সংঘাত এবার নতুন মাত্রা পেয়েছে।
তবে এবার প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে ২৩ জানুয়ারি থেকে। কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, নেতাজিকে অসম্মান করার প্রশ্নই আসে না। বরং তাকে সম্মান জানাতেই এই সিদ্ধান্ত। এখন থেকে প্রতিবছর ২৩ জানুয়ারি থেকে প্রজাতন্ত্রদিবসের অনুষ্ঠান শুরু হবে। সূত্র জানাচ্ছে, প্রতিবছর সব রাজ্যের ট্যাবলো থাকে না। এবছরও কেরালা, বিহার সহ কিছু রাজ্যের ট্যাবলো নেই।
ঘটনা হলো, এবার ট্যাবলোর থিম ছিল স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী। সেই থিমের সঙ্গে যুক্ত না থাকা সত্ত্বেও কিছু রাজ্যের ট্যাবলো অনুমোদন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।