প্রজাপতি নিশ্চয়ই দেখেছেন৷ কিন্তু জানেন কি, এক প্রজাতির প্রজাপতি কোনো এক অদৃশ্য টানে চার হাজার কিলোমিটার উড়ে চলে যায় এক জঙ্গলে৷ অথচ তাদের সেখানকার পথ দেখানোর কেউ নেই৷ তবুও কী ভাবে যায় তারা?
বিজ্ঞাপন
‘‘আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস না করলেও প্রজাপতিগুলোর আচরণ দেখার পর ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে ভাবতে শুরু করবেন৷ এদের সৌন্দর্য বিস্ময়কর, ''বলেন গ্লোরিয়া টাভেরা৷ মেক্সিকোর মিচোয়াকানে মনার্ক বাটাইফ্লাই বা প্রজাপতির অভয়াশ্রমের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি৷ বেশ কয়েক বছর ধরে এই দায়িত্বে থাকলেও প্রজাপতির আচরণ এখনও বিস্মিত করে তাঁকে৷
প্রতি বছর চার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কোটি কোটি প্রজাপতি এখানে আসে৷ ‘মারিপোসা মনার্কা'-র প্রধান গ্লোরিয়া টাভেরা বলেন, ‘‘তাদের মৌসুমী দেশান্তর তিন দেশে বিস্তৃত: ক্যানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকো৷ মনার্ক বাটারফ্লাই হচ্ছে একমাত্র পতঙ্গ, যারা অল্প সময়ের মধ্যে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে পারে৷ এই আচরণ অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়৷ তারা কীভাবে এমন এক জায়গায় আসে, যেখানে তারা আগে কখনো আসেনি? তাদের পূর্বপুরুষের পথ ধরেই তারা আসে৷ আর এটাই তাদের মাইগ্রেশনের অসাধারণ দিক৷ একই প্রজাপতি কখনো দ্বিতীয়বার আসে না৷''
২০১৫ সালের বাছাই প্রাণীরা
জার্মানিতে যে সব প্রাণীর বিশেষ সুরক্ষা প্রয়োজন, প্রতিবছর বিভিন্ন সংগঠন তাদের মধ্যে কয়েকটিকে নির্বাচন করে ‘‘২০১৫ সালের জীবজন্তু’’ হিসেবে তাদের নাম প্রকাশ করেছে৷ দেখা যাক কারা এবার এই সম্মান পেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Schmitt
হলুদরঙা গঙ্গাফড়িং
ইংরিজিতে বলে ‘ইয়েলো উয়িংড ডার্টার’, যাকে ‘‘২০১৫ সালের ফড়িং’’ হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে৷ জীবটি আজ সর্বাধিক বিপন্ন প্রজাতিগুলির রেড লিস্টে অন্তর্ভুক্ত৷ এর কারণ হল, জার্মানি থেকে জলাভূমি প্রায় লোপ পেয়েছে৷ ফড়িংটিকে চেনা যায় তার পাখার ডগায় হলদে দাগ দেখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. J. Los
বুনো খরগোশ
‘জার্মান বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সমিতি’ বুনো বাদামি খরগোশকে ‘২০১৫ সালের বন্যপ্রাণী’ বলে ঘোষণা করেছে৷ কৃষিকাজ বাড়ায় বুনো খরগোশের বাসস্থান ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে৷ চাষের জমির পাশে আলের জমি কিংবা ঝোপঝাড় কমে এসেছে৷ কাজেই জার্মানদের চিরপরিচিত বুনো খরগোশ আজ এ দেশে বিপন্ন প্রজাতির লাল তালিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
ড্যানিউব নদীর স্যালমন মাছ
জার্মানিতে এই সুস্বাদু মাছটি শুধু ড্যানিউব নদীর অববাহিকাতেই সীমাবদ্ধ৷ কিন্তু ড্যানিউব নদীতে বহু স্লুইস গেট বা জলকপাট বসানোর ফলে স্যালমন মাছগুলোর চলাফেরা ও ডিম পাড়ায় বাধা পড়েছে৷ নদীর বহু অংশ থেকে ড্যানিউব স্যালমন উধাও হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/A. Hartl
প্রজাপতিও পতঙ্গ
তাই জার্মানির ‘স্পেকট্যাকল পি’ব্লু’ বা রুপোলি-সবুজ নীলরঙা প্রজাপতি ২০১৫ সালের পতঙ্গ নির্বাচিত হয়েছে৷ ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে, সে হল পুরুষ; এ জাতের স্ত্রী প্রজাপতি সাদামাটা, কিছুটা বাদামি, ওপরে ফুটকি৷ এই জাতের প্রজাপতি পিঁপড়েদের সঙ্গে ‘সিমবায়োসিস’, মানে পারস্পরিক সুবিধা দিয়ে এবং নিয়ে বাঁচে৷ প্রজাপতির শূককীট থেকে যে মিষ্ট রস নির্গত হয়, তা পিপীলিকাদের প্রিয়; তাই পিঁপড়েরা শূককীটদের রক্ষা করে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Schmitt
বর্ম থাকলেও বিপন্ন
ইউরোপিয়ান পন্ড টার্টল বা পুকুরের কচ্ছপ ‘‘২০১৫ সালের সরীসৃপ’’ নির্বাচিত হয়েছে৷ হলদে ফুটকি দেওয়া কাছিমটি আজ শুধুমাত্র ব্রান্ডেনবুর্গে পাওয়া যায়৷ কচ্ছপ ধরা ও কেনাবেচা ছাড়াও, মধ্য ইউরোপের বেশ কয়েক প্রজাতির কচ্ছপের জন্য যেমন সূর্যকিরণ, তেমনই জলাভূমি আবশ্যক৷ কেননা জলের নীচেই কাছিমরা তাদের খাদ্য খুঁজে পায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Robert Schlesinger
যে প্রজাপতি গাছ ভালোবাসে
‘রেড আন্ডারউয়িং’ হল ২০১৫ সালের প্রজাপতি৷ পিছনের লালরঙা পাখাগুলো আসলে শত্রুকে ভয় দেখানোর জন্য: এগুলো অন্য রংয়ের নীচে লুকনো থাকে; একমাত্র বিপদ দেখলেই প্রজাপতি তার পাখা মেলে ধরে শত্রুকে ভয় দেখায়৷ তবে এই জাতের প্রজাপতির শূককীট পপলার আর উইলো গাছের পাতা খেতে ভালোবাসে - এবং সে ধরনের গাছ কমে আসার ফলে ‘রেড আন্ডারউয়িং’ শীঘ্রই লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/BUND
লাজুক বিজয়ী
২০১৫ সালের পাখি হল ‘গস’হক’ নামের একটি শিকরে বাজ৷ পাখিটিকে স্বল্পই দেখা যায়: হয় সে শিকার করছে কিংবা আকাশে চক্কর কাটছে৷ তাকে ২০১৫’র পাখি হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে কেননা তার মতো বহু শিকারী পাখি আজও মানুষের গুলিতে প্রাণ হারায় - যদিও গসহক শিকার সত্তরের দশক থেকেই নিষিদ্ধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jens Wolf
ভাঁড়ারের শামুক
ইংরিজি নাম ‘কেলার স্নেল’৷ এমনিতে খুব বেশি চোখে পড়ে না৷ দেখতে পাওয়া যাবে পাহাড়ের গুহায়, খনিগর্ভের সুড়ঙ্গে, মাটির তলার ভাঁড়ারঘরে৷ ঠাণ্ডা আর বরফের হাত থেকে বাঁচার জন্য যে সব জীব মাটির তলায় আশ্রয় খোঁজে, তাদেরই প্রতিনিধি এই ভাঁড়ারের শামুক৷ তাই সে যে ২০১৫ সালের ‘গুহাবাসী প্রাণী’ নির্বাচিত হয়েছে, তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই৷
ছবি: K. Bogon
8 ছবি1 | 8
ইকোসিস্টেমের উপর প্রজাপতির প্রভাব
প্রজাপতিরা অবশ্যই সুন্দর৷ কিন্তু ইকোসিস্টেমের উপর তারা কি কোনো প্রভাব ফেলছে? অবশ্যই৷ জার্মানির অর্থায়নে এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট ইনিশিয়েটিভের উদ্যোগে পরিচালিত এক পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকৃতিতে প্রজাপতির অবদান তথ্য, উপাত্ত দিয়ে প্রমাণের চেষ্টা চলছে৷
জিআইজেড এর ফিডেরিকো স্টার্নফেল্ড এই বিষয়ে বলেন, ‘‘মনার্ক বাটারফ্লাই একটি প্রতীক৷ আর স্থানীয়দের কাছে এই জঙ্গল এক প্রাকৃতিক চিড়িয়াখানা৷ তবে এটার অন্যান্য গুরুত্বও রয়েছে৷ এখানকার গাছগুলো কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নিয়ে আমাদের উপকার করছে৷ এখানে নিউট্রিয়েন্ট সাইকেল সচল রয়েছে৷ তাছাড়া পানি পরিশোধন ব্যবস্থাসহ সকল প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াই এখানকার জঙ্গল এবং পর্বতমালায় ঠিকভাবে কাজ করছে৷''
জঙ্গলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
তবে জঙ্গলটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক৷ মোনার্ক বাটারফ্লাই দেখতে অনেক পর্যটক এখানে আসেন৷ তাদের কেউ কেউ মনে করেন, এটা অনেকটা রূপকথার জঙ্গল৷
মনার্ক বাটাইফ্লাইয়ের আবাসনের আশেপাশে বসবাসরত মানুষদের অর্থ আয়ের এক উৎস এই পর্যটকরা৷ ফলে এই জঙ্গলকে রক্ষা করা নিজেদের দায়িত্ব মনে করে তারা৷