1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রটোকল ভেঙে হাসিনাকে মোদীর অভ্যর্থনা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৭ এপ্রিল ২০১৭

শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে মোদী সরকার৷ নরেন্দ্র মোদী তাঁর আচরণে তা বুঝিয়েও দিয়েছেন৷ কিন্তু আন্তরিকতার এই সর্বোচ্চ প্রকাশের পর বাংলাদেশের প্রত্যাশা কতটুকু পুরণ হবে!

Indien Sheikh Hasina mit Narendra Modi
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup

শেখ হাসিনার চলতি ভারত সফরের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসাব হয়তো চারদিন পর মেলানো যাবে৷ কিন্তু সফরের শুরুটা অনেক আন্তরিক, আলো ঝলমল এবং আতিথেয়তায় পূর্ণ৷ কথা ছিল প্রটোকল মেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পালাম বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন ভারতের ভারি শিল্প, পাবলিক অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী৷ কিন্তু আন্তরিকতায় প্রটোকল ভাঙলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তিনি নিজেই বিমানবন্দরে হাজির হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশ সময় দুপুর একটায়৷ আর তিনি বিমানন্দরে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে যান কোনো প্রটোকল ছাড়াই৷

এখানেই শেষ নয়৷ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানানোর  পর তিনি তাঁর উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেননি৷ তিনি অভ্যর্থনা জানানোর ছবিসহ পরপর দু'টি টুইট করেন৷ প্রথম টুইটে মোদী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরে অভ্যর্থনা জানাতে পেরে আমি আনন্দিত৷'' আর প্রায় একই সময়ে পরের টুইটে মোদী বলেন, ‘‘আমি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ৷''

এরও আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সর্বোচ্চ সম্মান জানিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন হারদ্রাবাদ হাউজে সফরের সময় তাকে থাকার আমন্ত্রণ জানানো হয়৷ শেখ হাসিনার ভারত সফর শুরুর দিনই শুক্রবার ভারতের ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য হিন্দু'-তে একটি কলাম লেখেন৷ সেই কলামের শিরোনামের বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘বন্ধুত্ব একটি বহমান নদী৷' সেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি শান্তিতে বিশ্বাস করি৷ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসই শান্তি নিয়ে আসে৷ আমাদের মাঝে কিছূ মতপার্থক্য আছে৷ তবে আমি বিশ্বাস করি শান্তিপূর্ণভাবে এর সমাধান সম্ভব৷ সীমান্তচুক্তির মাধ্যমে আমরা আমাদের ইচ্ছাশক্তি দেখিয়েছি৷ তিস্তা চুক্তি নিয়েও কথা চলছে৷ আমি আশাবাদী, প্রতিবেশী দেশের মানুষ ও নেতাদের ওপর আমার আস্থা আছে৷ আমি জানি, পানি অপ্রতুল৷ কিন্তু দুই দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য আমাদের পানি বণ্টন করতে হবে৷''

শান্তনু মজুমদার

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেছেন, ‘‘আমরা লালন, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ও জীবনানন্দকে ভাগাভাগি করেছি৷ আমাদের ভাষায় মিল রয়েছে৷ আমরা পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি ভাগাভাগি করছি৷ সুন্দরবন আমাদের দুই দেশেরই গর্ব৷ এটা নিয়ে আমাদের কোনো বিরোধ নেই৷ তাহলে পানি বণ্টন নিয়ে কেন থাকবে?''

বলা বাহুল্য, তিস্তার পানিই এবারের সফরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়৷ বাংলাদেশের মানুষেরও জিজ্ঞাসা – তিস্তার পানি পাওয়া যাবে তো?

নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতা গ্রহণের পর এটা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ভারত সফর৷ এর আগে ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ সালে মোদী ঢাকা সফর করেন৷ তখন তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে কিছু হয়নি৷

২০১১ সালেই ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর বাংলদেশ সফরের সময় তিস্তা পানি চুক্তির প্রবল আশা জেগেছিল৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বিরোধিতায় সে আশা নিরাশায় পরিণত হয়৷

 

আর ২০১০ সালে সবশেষ ভারত সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তাই সাত বছর পর তাঁর ভারত সফরে তিস্তাই প্রধান ইস্যুতে পরিণত হয়৷ কিন্তু  ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শংকর যা বলেছেন তাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না৷ তিনি সফর শুরুর আগের দিন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘তিস্তা নিয়ে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় নাটকীয় কিছু ঘটার ইঙ্গিত নেই৷''

এর একদিন আগে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘‘তিস্তায় তো পানি নেই৷'' এই সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মমতার দেখা হবে ভারতের রাষ্ট্রপতির নৈশভোজে৷ প্রধানমন্ত্রীর মধ্যাহ্ন ভোজেও দেখা হচ্ছে৷ কিন্তু তিস্তার পানি নিয়ে তাঁর মনের কথা আগেই বলে দিয়েছেন মমতা৷

বাংলাদেশও প্রধানমন্ত্রীর সফর শুরুর আগেই বিষয়টি বুঝে গেছে৷ তাই ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মেয়াজ্জেম আলী সফর শুরুর একদিন আগে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা তাদের বলবো, অনেক সময় গড়িয়ে গেছে, কাজেই যথাসম্ভব ত্বরান্বিত করে আমরা চাই একটি টাইম ফ্রেম৷ আমরা তিস্তা চুক্তির জন্য একটি সময়সীমা চাই৷''

রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মেয়াজ্জেম আলী আরো বলেন, ‘‘তিস্তার পানি নিয়ে আমরা অনেক অপক্ষো করেছি৷ কথা ছিল পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের পরে কিছু হবে৷ এখন তো সবকিছু শেষ হয়ে গেছে৷ কাজেই আমরা চাই এর দ্রুত সমাধান৷''

এ পর্যন্ত যা খবর, তাতে এই সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে৷ কিন্তু এরমধ্যে তিস্তা নেই৷ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে, এবার তিস্তা চুক্তি সই হচ্ছে না৷ তবে আছে সামরিক সহযোগিতা স্মারক৷

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘কী কী প্রাপ্তি হলো, কতটা চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হলো, এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ এ ধরণের সফরে সব মহলের নজর থাকে একটি বা দু’টি অ্যাজেন্ডার দিকে৷ ২০টা বা তারও বেশি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হওয়া কোনো বিষয় নয়৷ এই সফরের মূল্য নির্ধারিত হবে তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে কতটা অগ্রগতি হলো তার ওপর ভিত্তি করে৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘ভারতীয় সংবাদমাধ্যমও যদি দেখেন, তারাও কিন্তু তিস্তা ইস্যু নিয়ে কথা বলছে৷ তাই এই সফর মূল্যায়িত হবে তিস্তা ইস্যু নিয়ে৷ আর হয়ত সামরিক চুক্তি বা সমঝোতা নিয়ে কথা হবে৷ এই একটি বা দু'টি ইস্যুর বেশি নয়৷’’

আর সামরিক সহযোগিতা স্মারক বা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশে বিরোধিতা আছে৷ অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি এরই মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে সামরিক সহযোগিতা বা চুক্তির বিরোধিতা করেছে৷ শুক্রবার দলটির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘‘আমাদের প্রধান সমস্যা তিস্তা৷ তিস্তা ছাড়া অন্য কোনো সহযোগিতা বা চুক্তি চাই না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ