একসময় ভারতীয় উপমহাদেশ তো বটেই, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল বাঙালি বিজ্ঞানীদের সুনাম৷ এখনও বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানীরা দারুণ সব আবিষ্কার করে চললেও তা রয়ে যাচ্ছে অগোচরে৷ কিন্তু কেন?
বিজ্ঞাপন
আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু, সত্যেন বোসরা নিজ গুণে জগদ্বিখ্যাত৷ কিন্তু বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানীদেরও আছে অভাবনীয় সাফল্য৷ ২০১২ সালে হিগস কণা আবিষ্কারের প্রবক্তাদের নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়৷ ‘ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ' বা সার্নের বিজ্ঞানীরা গড পার্টিকল বলে পরিচিত হিগস কণার সন্ধান পান৷ আর এই আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. লস্কর মোহাম্মদ কাশিফ৷
ড. কাশিফ বাংলাদেশে লেখাপড়া শেষে ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান৷ পিএইচডি করেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে৷ পিএইচডির প্রায় অর্ধেকটা সময় তাঁকে কাটাতে হয়েছে সার্নে৷ ডক্টরেট শেষে এখন তিনি সেখানেই কাজ করছেন৷
২০১৬ সালে যাতায়াত ব্যবস্থা বিষয়ক গবেষণাকর্মে বিশেষ অবদানের জন্য ‘ইয়ং রিসার্চার অফ দ্য ইয়ার', অর্থাৎ বর্ষসেরা তরুণ বিজ্ঞানীর পুরস্কার দেয়া হয় ক্যানাডার ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোর পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট বাংলাদেশি তরুণ ড. মনির মনিরুজ্জামানকে৷ ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ফোরাম বা আইটিএফ প্রতিবছর এই পুরস্কার দেয়৷
‘আবিষ্কারের পর তা যদি কাজে না লাগে তাহলে বিজ্ঞানীরা হতাশ হয়ে পড়েন’
২০১৩ সালে সেনেগালের একটি প্রযুক্তি মেলায় বাংলাদেশি এক বিজ্ঞানীরএকটি আবিষ্কার দেখে মুগ্ধ হয়েছিলে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ আর যা দেখে তিনি মুগ্ধ হন তা হলো ধান ক্ষেতে গুটি ইউরিয়া ছড়ানো সহজে বহনযোগ্য এবং কম দামের এপ্লিকেটর৷ এটার আবিষ্কারক ‘ইন্টারন্যাশনাল ফার্টিলাইজার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার' বা আইএফডিসি-র বাংলাদেশ কার্যালয়ে কর্মরত ড. ওহাব৷
এছাড়া ২০১০ সালে কলেরার কারণ আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. শাহ এম ফারুকের নাম৷ তখন আইসিডিডিআরবির মলেকুলার জেনেটিক্স বিভাগের প্রধান তিনি৷ তিনি এবং তাঁর গবেষক দল দেখিয়েছেন, এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার কারণে কলেরা হয়৷ এ ব্যাকটেরিয়াগুলোকে আগে নিরাপদ মনে করা হতো৷
বাংলাদেশে বিজ্ঞান গবেষণার প্রধান প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিসিএসআইআর৷ এর বাইরেও সরকারি, বেসরকারি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যক্তি পর্যায়েও আছে গবেষণা৷ বিজ্ঞানের পাশাপাশি আছে সামাজিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানও৷ এইসব প্রতিষ্ঠানে অনেক বিজ্ঞানী কাজ করলেও উল্লেখযোগ্য গবেষণা হাতে গোণা৷
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, গবেষণার জন্য যে উদ্যোগ এবং বরাদ্দ প্রয়োজন, বাংলাদেশে তা পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই৷ গুরুত্বপূর্ণ এসব আবিষ্কার দেশের ও দশের কাজে না লাগার এটাই প্রধান কারণ বলেও মনে করেন তাঁরা৷
বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা
বিজ্ঞানে বাংলাদেশিদের অবদান কখনোই কম ছিল না৷ ঐতিহ্যগতভাবেই বাঙালি বিজ্ঞানীরা অসামান্য অবদান রেখে গেছেন৷ সেখান থেকে কয়েকজনের আবিষ্কার তুলে ধরা হলো৷ এর বাইরেও আরো অনেকেই অসাধারণ সব কাজ করে সমৃদ্ধ করেছেন বিজ্ঞানকে৷
ছবি: Bibliothèque nationale de France
আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু
সবর্প্রথম উদ্ভিদে প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু৷ বিভিন্ন উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণার এক পর্যায়ে তার মনে হলো, বিদ্যুৎ প্রবাহে উদ্ভিদও উত্তেজনা অনুভব করে এবং সাড়া দিতে পারে৷ এর অর্থ, উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে৷ ১৯১০ সালের দিকে বিজ্ঞানী বসু তাঁর গবেষণার পূর্ণাঙ্গ ফলাফল বই আকারে প্রকাশ করেন৷
ছবি: Bibliothèque nationale de France
ড.কুদরাত-এ-খুদা
গবেষণা জীবনের এক পর্যায়ে, তিনি বনৌষধি, গাছগাছড়ার গুণাগুণ, পাট, লবণ, কাঠকয়লা, মৃত্তিকা ও অনান্য খনিজ পদার্থ নিয়ে কাজ করেন৷ বিজ্ঞানী হিসাবে তিনি ও তাঁর সহকর্মীদের ১৮টি আবিষ্কারের পেটেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে ন’টি পাটসংক্রান্ত৷ এর মধ্যে পাট ও পাটকাঠি থেকে রেয়ন, পাটকাঠি থেকে কাগজ এবং রস ও গুড় থেকে মল্ট ভিনেগার আবিষ্কার উল্লেখযোগ্য৷ দেশে বিদেশে তাঁর ১০২টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে৷
ছবি: hybridknowledge.info
সত্যেন্দ্রনাথ বসু
১৯২২ সালে পার্টিকেল স্ট্যাটিস্টিক্স নিয়ে সত্যেন বোসের গবেষণাটি, যেটি আইনস্টাইন নিজে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন, অনেকের ভাষায় ২০ শতকের সেরা দশ কাজের একটি৷ যদিও তিনি নোবেল পুরস্কার পাননি, কোয়ান্টাম থিওরির অনেক গবেষণার পথ খুলে দেয় তাঁর গবেষণা৷ কোয়ান্টাম ফিজিক্সের অনন্য আবিষ্কার ‘গডস পার্টিকেলস’ বা ‘ঈশ্বর কণা’-র নামকরণ করা হয়েছে, তাঁর ও আরেক পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগসের নামে – হিগস-বোসন পার্টিকেল৷
ছবি: public domain
পি সি রায়
বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পায়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ ১৮৯৫ সালে তিনি মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করেন যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে৷ এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার৷ তিনি তার সমগ্র জীবনে মোট ১২ টি যৌগিক লবণ এবং পাঁচটি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন৷
মেঘনাদ সাহা
মেঘনাদ সাহা পরমাণু বিজ্ঞান, আয়ন মণ্ডল, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা নিয়ে গবেষণা করেন৷ তাপীয় আয়নবাদ সংক্রান্ত তত্ত্ব উদ্ভাবন করে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন৷
আব্দুস সাত্তার খান
নাসা ইউনাইটেড টেকনোলজিস এবং অ্যালস্টমে কাজ করার সময়ে ৪০টিরও বেশি সংকর ধাতু উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানী খান৷ এই সংকর ধাতুগুলো ইঞ্জিনকে আরো হালকা করেছে, যার ফলে উড়োজাহাজের পক্ষে আরো দ্রুত উড্ডয়ন সম্ভব হয়েছে এবং ট্রেনকে আরো গতিশীল করেছে৷ তার উদ্ভাবিত সংকর ধাতুগুলো এফ-১৬ ও এফ-১৭ যুদ্ধবিমানের জ্বালানি সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে৷
ছবি: AP/NASA
ডাক্তার শাহ এম ফারুক
কলেরা রোগের কারণ আবিষ্কার করেছেন ডা. ফারুক৷ কলেরার ঘটক ‘ভিবরিও’ নামে এক ধরনের শক্তিশালী ব্যাক্টেরিয়ার সংস্পর্শে অন্যান্য ব্যাক্টেরিয়া এসে কীভাবে একে আরো কার্যকরী বা শক্তিশালী করে তোলে সেটিই ছিল তাঁর গবেষণা৷ আন্তর্জাতিক কলেরা রোগ গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআরবি-তে তিনি ও তাঁর গবেষণা দল এ আবিষ্কার করেন৷
ছবি: picture-alliance/Dr.Gary Gaugler/OKAPIA
ড. মাকসুদুল আলম
পাটের জিনের আবিষ্কারক ড. মাকসুদুল আলম৷ এই বাংলাদেশি জিনতত্ত্ববিদের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডাটাসফটের একদল উদ্যমী গবেষকের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সফলভাবে উন্মোচিত হয় পাটের জিন নকশা৷
ছবি: Bdnews24.com
ড. জামালউদ্দিন
বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর সৌর বিদ্যুৎ কোষ উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে ম্যারিল্যান্ডের কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং গবেষক বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. জামালউদ্দিন ইতিহাস গড়েছেন৷ ড. জামাল উদ্দিন এবং তার গ্রুপ সোলার সেল থেকে শতকরা ৪৩.৪ পুনঃব্যবহারযোগ্য শক্তি উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে যা বিশ্বে এই উৎপাদনের সর্বোচ্চ মাত্রা৷
শুভ রায়
বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম কিডনি তৈরি করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী শুভ রায়৷ এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানে অসামান্য কীর্তি৷ ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার সহযোগী অধ্যাপক শুভ রায় তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে কৃত্রিম কিডনি তৈরির কাজ শুরু করেন৷ চলতি দশকের গোড়ার দিকে দলটি ঘোষণা দেয় যে, তাঁরা কৃত্রিম কিডনি তৈরি করে তা অন্য প্রাণীর দেহে প্রতিস্থাপন করে সফল হয়েছে৷
ছবি: hybridknowledge.info
হরিপদ কাপালী
হরিপদ কাপালী ছিলেন এক প্রান্তিক কৃষক৷ কিন্তু তাঁর আবিষ্কার হরিধান কৃষিবিজ্ঞানের এক অনন্য সাফল্য৷ প্রকৃতির কাছ থেকেই শিক্ষা৷ প্রকৃতিতেই তাঁর গবেষণা৷ তাঁর নামে নামকরণ করা এই ধানটি অন্য যে কোনো ধানের চেয়ে উচ্চ ফলনশীল৷ এতে সার ও ওষুধও লাগে অনেক কম৷ সব মিলিয়ে সোনার বাংলার সোনালি আবিষ্কার হরিপদ কাপালীর হরিধান৷
ছবি: Bdnews24.com
11 ছবি1 | 11
বিজ্ঞান গবেষণায় সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও বরাদ্দ আশাব্যঞ্জক নয়৷ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিজ্ঞান ও গবেষণা খাতে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে৷ স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৬৬৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকার বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা৷ হিসাবে এটি মোট বাজেটের মাত্র ২ শতাংশ৷ তবে আগের বছর এটি ছিল আরও কম, মাত্র সাড়ে আট কোটি টাকা৷
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন এবং পদার্থ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আলি আসগর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সমস্যাটা হলো এখানে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের প্রয়োগ নেই৷ ফলে বড় ধরনের গবেষণাও হয় না৷ একটি আবিষ্কারের পর তা যদি কাজে না লাগে বা লাগানো না যায় তাহলে বিজ্ঞানীরা হতাশ হয়ে পড়েন৷ আর আবিষ্কারের সঙ্গে আর্থিক প্রাপ্তিও জড়িত৷ ফলে বাংলাদেশের মেধাবীরা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন৷ তারা বিদেশে গিয়েবিজ্ঞান গবেষণায় সাফল্য দেখাচ্ছেন৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশে বিজ্ঞান গবেষণার গৌরবময় ঐতিহ্য আছে৷ স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু প্রথম রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন৷ তাঁকে যে নোবেল পুরস্কার দেয়া উচিত ছিল, এখন মার্কিন বিজ্ঞানীরারাও তা স্বীকার করছেন৷ সত্যেন বোস তাঁর আবিষ্কার করা বোস কণার জন্য বিশ্বখ্যাত৷ তাঁর নাম আইস্টাইনের সঙ্গে উচ্চারিত হয়৷''
ড. আলি আসগরের মতে, ‘‘বাংলাদেশের গবেষক এবং বিজ্ঞানীদের গবেষণা এবং গাবেষণাপত্র এখনো আলোচিত৷ তরুণরা ভালো করছেন৷ কিন্তু সমস্যা হলো সেটা সংখ্যায় কম এবং হাতে গোণা৷ আর এর জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ৷ সেটা শুধু সরকারি পর্যায়ে নয়, বেসরকারি পর্যায়েও দরকার৷ বিশ্বে অনেক বড় আবিষ্কারের বিনিয়োগকারী কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান৷''
গবেষণা ও আবিষ্কারে অনুপ্রেরণা থাকতে হয়৷ উৎসাহ দিতে হয়, বছরের পর বছর অর্থ ঢালতে হয়৷ বাংলাদেশে এটার বড় অভাব বলে মনে করছেন ড. আলি আসগর৷
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের ১১ উদ্ভাবন
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) মূলত সায়েন্স ল্যাবরেটরি নামে পরিচিত৷ সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়৷ প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত কয়েকটি পণ্য ও প্রযুক্তি দেখে নেই চলুন৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
উদ্ভাবিত পণ্য ও প্রযুক্তির প্রদর্শন
ঢাকার এলিফেন্ট রোডের সায়েন্স ল্যাবরেটরি বা বিসিএসআইআর ক্যাম্পাসে ভেতরে দোতলা একটি ভবনে সম্প্রতি চালু হয়েছে বিসিএসআইআর ইনোভেশন গ্যালারি৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ইনোভেশন গ্যালারি
ভবনের দোতলায় বিশাল একটি ঘরজুড়ে ১৩টি তাকে প্রদর্শিত হচ্ছে বিসিএসআইআর-এর দুই শতাধিক উদ্ভাবিত বৈজ্ঞানিক পণ্য ও প্রযুক্তি৷ বিসিএসআইআর-এর দেশজুড়ে ১১টি শাখা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন এই সব৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ন্যাচারাল প্রিজারভেটিভ
বাংলাদেশে এখন এক আতঙ্কের নাম ফরমালিন৷ খাদ্যপণ্য বেশি সময় ভালো রাখার জন্য ব্যবহার করা হয় এই ফরমালিন৷ কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে এ খাবারই রূপ নেয় বিষে৷ সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন এমনই এক প্রিজারভেটিভ যা একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত৷ আর প্রিজারভেটিভ তৈরি করেছেন চা পাতার উচ্ছ্বিষ্ট, সবজি ও বিভিন্ন ফলের খোসা থেকে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
ফরমালিন ডিটেক্টর
বাংলাদেশে মাছসহ বিভিন্ন খাদ্যপন্যে মাত্রারিক্ত ফরমালিন ব্যবহারের ফলে সবসময়ই আতঙ্কে থাকেন ক্রেতারা৷ তবে বিসিএসআইআর উদ্ভাবিত ফরমালিন শনাক্তকরণ কিট ব্যবহার করে ঘরে বসেই যে কেউ পরিমাপ করতে পারবেন মাছ ও দুধে ফরমালিনের পরিমাণ৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
পলিমার মডিফাইড বিটুমিন
বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশের সড়কগুলোতে পিচ উঠে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে৷ ফলে বর্ষা মৌসুমের আগে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক সংস্কার করা হলেও সে টাকা জলেই যায়৷ আর এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সড়ক নির্মাণের জন্য বিসিএসআইআর উদ্ভাবন করেছে পলিমার মডিফাইড বিটুমিন৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
আর্সেনিক রিমুভাল ফিল্টার
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার নলকূপের পানিতে মাত্রারিক্ত আর্সেনিক রয়েছে৷ আর আর্সেনিকযুক্ত এ পানি ফুটিয়েও বিশুদ্ধ করা সম্ভব নয়৷ ঐ সব এলাকার মানুষের জন্য আশার আলো দেখিয়েছেন বিসিএসআইআর-এর বিজ্ঞানীরা৷ তাঁরা এমন এক ফিল্টার উদ্ভাবন করেছেন, যা পানি থেকে আর্সেনিক দূর করবে৷ আর খরচও খুবই কম৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
সোলার ফার্ম হ্যাট
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এটি পরিচিত মাথাল হিসেব৷ কাঠফাটা রোদ্দুর থেকে বাঁচতে গ্রামের কৃষকরা ব্যবহার করেন এটি৷ তবে সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত এ মাথাল কৃষকদের মাথায় কোমল বাতাসও দিবে৷ এই মাথালের ভেতরের এলইডি বাতিগুলো রাতের বেলা ঘরেও আলো দিবে৷ আর এ সব যুক্ত আছে মাথালের উপরের ছোট ছোট সোলার প্যানেলের সঙ্গে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
সোলার চার্জিং ব্যাকপ্যাক
স্মার্টফোনের এই যুগে সবাই কম বেশি ভোগেন চার্জ নিয়ে৷ সেক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা ব্যাকপ্যাকটিই যদি চার্জার হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাতে সুবিধাটাই বেশি৷ সায়েন্স ল্যাবের বিজ্ঞানীরা এমনই এক ব্যাকপ্যাক আবিষ্কার করেছেন যার মাধ্যমে চার্জ করা যাবে সেলফোন৷ ব্যাকপ্যাকে থাকা সোলার প্যানেল থেকেই চার্জ হবে সেলফোন৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
সোলার ওভেন
এই ওভেন ব্যবহারের জ্বালানি খরচ নেই একেবারেই৷ রোদের তাপেই এ ওভেন দিয়ে রান্নাবান্নাসহ খাবার গরমও করা যাবে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
স্পিরুলিনা
স্পিরুলিনা হলো অতিক্ষুদ্র নীলাভ সবুজ সামুদ্রিক শৈবাল যা সূর্যালোকের মাধ্যমে দেহের প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করে৷ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, লৌহ ও একাধিক খনিজ পদার্থ৷ সাধারণ খাদ্য হিসেবে তো বটেই নানা রোগ নিরাময়ে মূল্যবান ভেষজ হিসেবে দেশে-বিদেশে স্পিরুলিনার প্রচুর চাহিদা রয়েছে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
নানা হারবাল পণ্য
বিসিএসআইআর-এর বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন নানারকম হারবাল পণ্য৷ এ সবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিম ও অ্যালোভেরার তৈরি হারবাল হ্যান্ডওয়াশ, ত্বক উজ্জ্বল ও লাবণ্যময় করার জন্য অ্যালোভেরা জেল ইত্যাদি৷ এছাড়াও আছে অ্যালোভেরা ভ্যানিশিং ক্রিম, অ্যালোভেরা বডি লোশন, অ্যালোভেরা লেমন ড্রিংক, হারবাল তুলসি চা, অ্যালোভেরা টুথপেস্ট, অ্যালোভেরা শ্যাম্পু, লেবুর পাতার তৈরি শেভিং লোশন ইত্যাদি৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
বায়োগ্যাস প্লান্ট
দু’ধরনের বায়োগ্যাস প্লান্ট উদ্ভাবন করেছেন সায়েন্স ল্যাবের বিজ্ঞানীরা৷ একটি ফিক্সড ডোম বায়োগ্যাস প্লান্ট এবং অন্যটি ফাইবার গ্লাস বায়োগ্যাস প্লান্ট৷ জ্বালানি সংকটের এই যুগে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এসব বায়োগ্যাস প্লান্ট বেশ জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হয়েছে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
অ্যালুমিনিয়াম ব্লক
বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত অ্যালুমিনিয়ামের জন্য বাংলাদেশ পুরোটাই আমদানি নির্ভর৷ সায়েন্স ল্যাবের বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন রকম ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য থেকে উদ্ভাবন করেছেন অ্যালুমিনিয়াম ব্লক, যা আমদানি নির্ভরতাকে কমাতে পারে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
বিশেষ আটা
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) উদ্ভাবন করেছে ‘হাই প্রোটিন সমৃদ্ধ আটা’৷ বাজারের যে কোনো আটা হতে এ আটা দ্বিগুণ প্রোটিন সমৃদ্ধ৷ এতে আছে ফাইটো-ক্যামিক্যালস, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, আইসোফ্লাভন, ক্যালসিয়াম এবং সব অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো-অ্যাসিড, যা মানব শরীরের প্রোটিন গঠনে এবং ক্যানসার, কোলেস্টোরল, অস্টিওপোরোসিস এবং ম্যাল-নিউট্রেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাসহ রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
14 ছবি1 | 14
আপনার এ বিষয়ে কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷