1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রণোদনার টাকা নিয়ে ছাঁটাই কেন?

৫ জুন ২০২০

জুন মাস থেকে শ্রমিক ছাঁটাই শুরুর আশঙ্কায় পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷ শ্রমিক নেতা এবং অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এর মধ্যে কোনো দুরভিসন্ধি আছে৷

সাম্প্রতিক ছবিছবি: bdnews24.com/M.Z. Ovi

তবে বিজিএমই'র সভাপতি রুবানা হক এরই মধ্যে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন৷ তিনি এসএমএস দিয়ে জানিয়েছেন, ছাঁটাইয়ের ঘোষণা নয়, আশঙ্কার কথা বলেছেন৷ বলেছেন, ছাঁটাই করতে হতে পারে৷ তিনি বলেছেন জুন মাস থেকে পোশাকের অর্ডার শতকরা ৫৫ ভাগ থাকবে৷ আর শ্রম আইন মেনেই ছাঁটাই করা হবে৷ এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে তাকে ফোন করলে তিনি ধরেননি৷ এসএমএস এ বলেছেন, আজ (শুক্রবার) কথা বলবেন না৷ তবে বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘‘ছাঁটাইয়ের ব্যাপারে এ ধরনের ঢালাও মন্তব্য নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না৷ আমাদের যে অর্ডার আছে, তাতে দিনে ৮ ঘন্টা কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব৷’’

ব্র্যাকের সর্বশেষ গবেষণা বলছে, তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি ২০১৯-এর এপ্রিলের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিলে ৮৪ শতাংশ কমেছে৷ গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে ৭ এপ্রিলের মধ্যে এক হাজার ১১৬টি কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷

বিজিএমইএ'র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আরশাদ জামাল দিপু গত ৩০ এপ্রিল বলেছিলেন, ‘‘৩০ ভাগের মতো অর্ডার বাতিল হয়েছে৷ আরো ২৫ থেকে ৩০ ভাগের মতো অর্ডার হোল্ড আছে৷ অর্ডার হোল্ড, বাতিল, বিলম্ব সব মিলিয়ে ৬০ ভাগ হবে৷ '' ‘‘তবে এই সব অর্ডার শেষ পর্যন্ত বাতিল হবে না৷ অর্ডার ফিরে আসছে৷ আবার কিছু অর্ডার হয়তো পরের বছর অ্যাডজাষ্ট হবে৷ সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত ২৫ ভাগ অর্ডার চূড়ান্তভাবে বাতিল হওয়ার আশঙ্কা করেন বিজিএমইএ'র এই সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট৷ কিন্তু শুক্রবার তাকে আবার এই বিষয়ে ফোন করলে তিনি ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে আর কথা বলতে রাজি হননি৷

সিরাজুল ইসলাম রনি

This browser does not support the audio element.

বিজিএমইএ'র হিসেবে দেশে মোট পোশাক কারখানা দুই হাজার ২৭৪টি ৷ সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোতে ২৪ লাখ ৭২ হাজার ৪১৭ জন শ্রমিক আছেন৷ যেসব কারখানা সরাসরি রপ্তানি করে তাদেরই সদস্য হিসেবে দেখায় বিজিএমই৷ এর বাইরেও সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করে এমন অনেক কারখানা আছে৷ সব মিলিয়ে কারখানা সাড়ে চার হাজারেরও বেশি৷ শ্রমিক ৪০ লাখের বেশি৷

গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, ‘‘পোশাক কারখানায় তো শ্রমিক ছাঁটাই অব্যাহত আছে৷ লকডাউন শুরুর পর থেকে আমাদের হিসেবে ৭০ হাজার শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে৷ ছাঁটাই অব্যাহত আছে৷ তারপরও জুন থেকে নতুন করে ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়ার কোনো কারণ নেই৷ আমার মনে হয়, এর মধ্যে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে৷ প্রণোদনার পাঁচ হাজার কোটি টাকা নেয়ার পর তাদের এই ঘোষণা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না৷’’ 

এদিকে বিজিএমই এখন পর্যন্ত ২৫০ জন পোশাক শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত বলে শিকার করলেও বাস্তবে এই সংখ্যা অনেক বেশি বলে দাবি করেন জলি তালুকদার৷ তিনি বলেন, ‘‘শ্রমিকরা করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের পুরো দায়িত্ব বিজিএমইএর নেয়ার কথা থাকলেও তারা নিচ্ছে না৷ বাস্তবে করোনায় আক্রান্ত হওয়া মানে চাকরি চলে যাওয়া৷ এটা নিয়ে শ্রমিকরা চরম আতঙ্কে আছেন৷’’

শ্রমিক ছাঁটায়ের এই ঘোষণাকে অন্যায্য এবং অমানবিক বলে মনে করেন মজুরি বোর্ডের সাবেক সদস্য ও জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকার প্রণোদনাসহ আরো অনেক সহায়তা দিচ্ছে গার্মেন্টস মালিকদের৷ অর্ডার আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে৷ অনেক ক্রেতা অর্ডার বাতিল করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ আমার মনে হয়, সামনে বাজেট, তাই নতুন কোনো সুবিধা নিতে এই ঢালাও ছাঁটাইয়ের কথা বলা হচ্ছে৷’’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘করোনার মধ্যে শ্রমিকরা কাজ করলেও আক্রান্তদের তেমন কোনো চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না৷’’

শ্রমিক নেতারা বলছেন, শ্রমিক ছাঁটাইয়ের এই কথা তোলার মধ্য দিয়ে মালিকরা শ্রম আইনে ৩০ ধারারও সুযোগ নিতে চাইছেন৷ তারা পাওনা না দিয়েই শ্রমিকদের বিদায় করতে চাইছেন৷ শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. উত্তম কুমার দাস বলেন, ‘‘শ্রম আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী যাদের চাকরির বয়স কমপক্ষে এক বছর হবে, তাদের এক মাসের আগাম নোটিশ দিয়ে ছাঁটাই করতে হবে৷ আর তাদের চাকরির প্রতি বছরে একটি করে মূল বেতনের সমপরিমাণ টাকা দিতে হবে৷ এরসঙ্গে তাদের ছুটিসহ অন্যান্য পাওনা দিতে হবে৷ কিন্তু ছাঁটাই করতে হলে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত শ্রমিক দেখাতে হবে৷’’

তার মতে, ‘‘বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় ৩০ ভাগের মতো শ্রমিকের চাকরির বয়স এক বছরের কম৷ ছাঁটাই হলে তারা কোনো সুবিধা পাবেন না৷’’

ড. নাজনীন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

আর শ্রম আইনের ৩০ ধারায় শ্রমিকের পাওনা দিতে ৩০ কর্মদিবস সময় দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু ভারতের আইনে শ্রমিকের ছাঁটাই কার্যকর হওয়ার দিন থেকেই সব পাওয়না দিয়ে দেয়ার বিধান আছে৷

বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে এখন করোনা মহামারি চলছে৷ তাই এই সময়ে শুধু ব্যবসার কথা চিন্তা করে ছাঁটাই অন্যায্য মনে করছেন এই আইনজীবী এবং অর্থনীতিবিদরা৷ তারা বলছেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় পোশাক শিল্পের মালিকদের সরকারও সহায়তা করছে৷ তাই এখানে সংখ্যাতিরিক্ত শ্রমিক বিবেচনায় এখনই ছাঁটাই গ্রহণযোগ্য নয়৷

বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদন ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘নাম মাত্র শতকরা দুই ভাগ সুদে তারা পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা পেয়েছেন৷ এ দিয়ে তারা তিন মাসের বেতন দিতে পারেন৷ মার্চ থেকে ধরলেও তাদের রপ্তানি তো পুরো বন্ধ হয়ে যায়নি৷ আর এখনো ৫৫ ভাগ অর্ডার আছে৷ এগুলোর সমন্বয় করলে আরো অন্তত দুই-তিন মাস চালিয়ে যাওয়া সম্ভব৷ এর বাইরে শতকরা পাঁচ ভাগ সুদে ৩০ হাজার কোটি টাকার শিল্পঋণও তারা পাচ্ছেন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আপতকালীন এই প্রণোদনার বাইরে তাদের নগদ সহায়তা অব্যাহত আছে৷ বছরে পোশাক কারখানাগুলোকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মতো নগদ সহায়তা দেয়া হয়৷ কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াত দেয়া হয়৷ এত সুবিধা পাওয়ার পরও তারা হঠাৎ করেই শ্রমিক ছাঁটায়ের এই ঘোষণা দিয়ে অমানবিক কাজ করেছেন৷’’

ড. নাজনীন আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশের পোশাকখাত সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত হয়েছে সরকারের নানা সুবিধা নিয়ে৷ শ্রমিকের ঘামে৷ তাই দেশের এই খারাপ সময়ে দেশকেও তাদের দেয়ার আছে৷ তাদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে কর্মসংস্থান ধরে রাখার জন্য৷ তাই শ্রমিক ছাঁটাই না করে তাদের বাঁচিয়ে রাখাই পোশাক কারখানার মালিকদের এখন প্রধান কাজ৷’’

২১ মের ছবিঘর দেখুন... 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ