1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রতারণায় ভরা চাকরির বাজার

সমীর কুমার দে, ঢাকা২৫ মে ২০১৬

চাকরি দরকার৷ কিন্তু সে দরকার মেটাতে গিয়ে সামান্য অসতর্কতা ও ভুলে প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে বড় বিপদে পড়েন অনেকে৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চাকরি সন্ধানে সহায়তা করার মতো সরকারি প্রতিষ্ঠান নেই বলেই চাকরির বাজারে প্রতারণা বেশি৷

ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman

ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডে অফিস সহকারী পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়৷ চাকরি প্রত্যাশী অনেকেই আবেদন করেন৷ আবুল কালাম নামে একজন অন্যদের সঙ্গে এই পদে চাকরি পেতে পরীক্ষাও দেন৷ এ সময় তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন অবসরপ্রাপ্ত দুই সেনাসদস্য৷ তিন লাখ টাকা দিলে তার চাকরি হবে বলে জানানো হয়৷ অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য হওয়ায় কালাম তাঁকে বিশ্বাস করেন৷ জমি বিক্রি করে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের হাতে ওই টাকা তুলে দেন৷ এরপর তাঁকে নিয়োগপত্র দেয়া হয়৷ চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে তিনি দেখেন তার নিয়োগপত্রটি ভুয়া৷ গরিব পরিবারের সন্তান কালামের মাথায় তখন আকাশ ভেঙে পড়ে৷

কী করবেন বুঝতে না পেরে দ্রুত ছুটে যান ব়্যাব অফিসে৷ ব়্যাব বিষয়টির তদন্ত করতে গিয়ে দেখে শুধু কালাম নয়, এমন ১৩ জনের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা করে মোট ৩৯ লাখ টাকা নিয়েছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য আবুল কাশেম (৫২), নাসির উদ্দীন (৪৬) ও পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সদস্য তারেক হাসানসহ ৫ জন৷ গত ২৯ এপ্রিল ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ব়্যাব৷

আহসানউল্লহ খানের সাক্ষাৎকার

This browser does not support the audio element.

ব়্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ তখন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘‘ভুক্তভোগীরা নিয়োগপত্র নিয়ে চাকরিতে যোগ দিতে গেলে জানতে পারে তাদের নিয়োগপত্র ভুয়া৷ এই চক্র তখন ভুক্তভোগীদের নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে৷ এমনকি বিষয়টি গোপন রাখতে ‘গুম' করার হুমকিও দেয় তারা৷'' ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতেই পরে পাঁচজনকে আটক করা হয়৷

সর্বশেষ গত ৬ মে সেনাবাহিনী ও বিজিবিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে ব়্যাব৷ গ্রেপ্তারকৃতরা চাকরি প্রার্থীদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বিভিন্ন গোপনীয় স্থানে নিয়ে প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা ও মেডিক্যাল চেকআপ সম্পন্ন করে নিয়োগপত্র দেয়৷ ওই নিয়োগপত্র নিয়ে কর্মস্থলে যোগদান করতে গিয়ে তারা বিপাকে পড়েন৷ পরে ব়্যাব প্রতারকদের গ্রেপ্তার করে৷ শুধু এই দু'টি ঘটনা নয়, প্রতিনিয়তই সাধারণ চাকরি প্রত্যাশীরা এ ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন৷

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান – এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আহসান উল্লাহ খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থাপনা না থাকায় বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনেকে প্রতারিত হচ্ছেন৷ তবে ব্যাংকিং ব্যাবস্থায় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ার পর পরীক্ষা নেয় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ বিভাগ৷ এরপর তারা আমাদের কাছে একটি তালিকা দিলে সে অনুযায়ী মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়৷ এখানে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই৷ কিন্তু সব সেক্টরে তো আর এ ধরনের ব্যবস্থাপনা নেই৷ ফলে অনেকক্ষেত্রে প্রতারণার ঘটনা ঘটছে৷''

বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোও চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য পৃথক বিভাগ খুলেছে৷ সপ্তাহে একদিন চাকরির তথ্য ও এ সংক্রান্ত প্রস্তুতির খবরাখবর নিয়ে দুই থেকে চার পাতা ছাপা হচ্ছে৷ সেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির খোঁজ খবর ও কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখা করা হচ্ছে৷ তারপরও সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে দিক নির্দেশনা না আসায় শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন৷ কে কোন দিকে চাকরির জন্য ছুঁটবেন, তার কোনো নির্দেশনা নেই৷

দৈনিক সমকালে ‘চাকরি নিয়ে' নামে সপ্তাহে একদিন দুই পাতার ক্রোড়পত্র বের হচ্ছে৷ এই পাতাটির সম্পাদনা করেন সিনিয়র সহ-সম্পাদক রুদ্র আরিফ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘সরকারের তরফ থেকে কোনো নির্দেশনা না থাকায় আমরাই চাকরি প্রত্যাশীদের একটা দিক নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করি৷ দিন দিন আমাদের এই বিভাগ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ চাকরি প্রত্যাশীদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করেই সামনে আমরা এটা ট্যাবলয়েড আকারে চার পাতার আয়োজন করতে যাচ্ছি৷ শুধু তাই নয়, আমরা যে প্রধান শিরোনামটি করব, সেখানে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধানের একটা সাক্ষাত্‍কারও থাকবে৷ তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানে কিভাবে পরীক্ষা দিতে হবে তার একটা নির্দেশনা পাবেন শিক্ষার্থীরা৷ আসলে আমাদের উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের চাকরি সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেয়া৷''

বাংলাদেশে সিভিল সার্ভিসে ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগের দায়িত্ব পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি)৷ সরকারি কোনো দপ্তর থেকে কোনো পোস্ট খালি হওয়ার তথ্য জানানো হয় পিএসসিকে৷ এরপর পিএসসি সার্কুলার দেয়৷ তারা কয়েক ধাপে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইবা নিয়ে নিয়োগ দিয়ে থাকে৷ তবে এই দফতর থেকে চাকরি প্রত্যাশীদের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয় না৷ ফলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়েই পরীক্ষায় বসতে হয় শিক্ষার্থীদের আর ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা নিতে গিয়েই প্রতারিত হচ্ছেন অনেকে৷

রুদ্র আরিফের সাক্ষাৎকার

This browser does not support the audio element.

‘এইচআর কাইটস' নামে একটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী চাকরি প্রত্যাশীদের বাছাই করে থাকে৷ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার সাউদ বিন মাসউদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমার হাতে বাছাই করা ৪ লাখ বায়োডাটা রয়েছে৷ বাংলাদেশের বহু প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে তাদের চাহিদা পাঠিয়ে থাকে৷ আমরা সে অনুযায়ী পরীক্ষা নিয়ে তাদের কর্মী পাঠিয়ে থাকি৷ আমরা কোনো কর্মীর কাছ থেকে অর্থ নেই না৷ যারা আমাদের চাহিদা দেয় তাদের কাছ থেকে একটা কমিশন নেই৷'' তাঁর মতে, ‘‘বাংলাদেশে এখন মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় খোলার সময় এসেছে৷ যেখানে চাকরি প্রত্যাশীরা তাদের বায়োডাটা দিয়ে রাখবে৷ সেখান থেকে যার যে লাইন সে অনুযায়ী সেইসব জায়গায় পাঠানো হবে৷''

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ