1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রতারিতরা কি টাকা ফেরত পাবেন?

২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

বাংলাদেশে আর্থিক প্রতারণার ব্যাপারে প্রতারকদের শেষ পরিণতি কী হয়? তারা কী শাস্তি পায়৷ আর শাস্তি পেলেও প্রতারিতরা কী তাদের টাকা ফেরত পান? আইনে প্রতারিতদের জন্য কী ব্যবস্থা আছে?

Symbolbild E-Book
ছবি: Shawn Hempel - Fotolia.com

বাংলাদেশে ই-কমার্সের নামে আর্থিক প্রতারণায় এখন আলোচনার তুঙ্গে আছে ইভ্যালি৷ প্রতিষ্ঠানটির এমডি মোহাম্মদ রাসেল সস্ত্রীক গ্রেপ্তার হয়েছেন৷ তাদের বিরুদ্ধে এপর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে৷ এরইমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ তাদের ‘ধামাকা' জাতীয় উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামে নানা অফারে যারা টাকা দিয়েছেন তাদের এখন মাথায় হাত৷ তারা অফিসের সামনে এখন জড়ো হচ্ছেন তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য৷ তাদের কেউ কেউ আবার বিশ্বাস করছেন রাসেলকে ছেড়ে দিলে তারা  টাকা ফেরত পাবেন৷ তাই তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনও করা হচ্ছে৷ কিন্তু ইভ্যালি টাকা ফেরত দেবে কীভাবে? তাদের সম্পদ আছে ৬৫ কোটি টাকার৷ আর দায় এক হাজার কোটি টাকারও বেশি৷
এরসঙ্গে আরো একটি উদাহরণ দেয়া যাক৷ পিরোজপুরের এহসান গ্রুপ হালাল ব্যবসার কথা বলে ১৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও তাদের সম্পদের পরিমান খুব সামান্যই৷ তাদের যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলো সাইনবোর্ড সর্বস্ব৷
ই-কমার্সের নামে ইভ্যালি ছাড়াও আরো নয়টি প্রতিষ্ঠান প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত৷ তাদের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার প্রতারণা ও পাচারের অভিযোগ রয়েছে৷ ওইসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা রয়েছে৷ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিতে সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়৷
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত নানা ধরনের ব্যবসার নামে প্রতারকরা ২১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে৷ এইসব প্রতারক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় হালের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আছে ডেসটিনি, যুবক, ইউনি পে টু ইউ ও নানা ধরনের কথিত সমবায় প্রতিষ্ঠান৷
বহুল আলোচিত ডেসটিনির মালিক রফিকুল আমিনের বিরুদ্ধে পাঁচ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগের পর তিনি গ্রেপ্তার হন৷ তিনি দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও প্রতারিতরা তাদের টাকা ফেরত পাননি৷ যুবক ও ইউনি পে টু ইউ-এর গ্রাহকদেরও একই অবস্থা৷
এই পরিস্থিতি কেন? এটার জন্য আইনি ব্যবস্থার দিকে তাকানো যাক৷ ইভ্যালি ও এহসান গ্রুপের বিরুদ্ধে ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় মামলা হয়েছে৷ বাংলাদেশে প্রতারণা বা আর্থিক প্রতারণার মামলা এই দুইটি ধারাতেই হয়৷ ৪০৬ ধারায় বিশ্বাস ভঙ্গের অপরাধ৷ যার সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড৷ আর ৪২০ ধারায় প্রতারণা ও আর্থিক প্রতারণা৷ যার সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড৷  দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম জানান,"দণ্ডবিধির এই মামলায় প্রতারিতদের অর্থ ফেরত পাওয়ার কোনো বিধান নাই৷ আদালতে অপরাধ প্রমাণ হলে রাষ্ট্র সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পারবে৷ আর এটা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার৷”
তিনি বলেন, দেওয়ানী মামলা করে প্রতারিতরা অর্থ ফেরত পেতে পারেন৷ কিন্তু সেই মামলা প্রমাণ করে আদলতের মাধ্যমে অর্থ ফেরত পেতে বছরের পর বছর লেগে যায়৷ এত ধৈর্য অনেকেরই থাকে না৷ আর  দুদক মানিলন্ডারিং-এর মামলা করে প্রতারকদের ব্যাংক একাউন্ট ও সম্পদ জব্দ করলে প্রতারিতরা তা থেকে অর্থ ফেরত পেতে পারেন৷ কিন্তু যারা প্রতারিত তাদের প্রমাণ করতে হবে তিনি কী পরিমাণ টাকা দিয়েছেন৷”
তবে প্রতারকদের সম্পদ বা হিসাবে কত টাকা আছে তা বিবেচনার বিষয়৷ টাকা না থাকলে ফেরত হবে কীভাবে?
খুরশিদ আলম বলেন,"রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো ক্ষতিপুরণের বিধান নেই৷ রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলে নীতিমালা তৈরি করে যাতে কেউ প্রতারিত না হয় তার ব্যবস্থা করা৷ ই-কমার্সের নীতিমালা শেষ পর্যায়ে করে আরো বিপদ হয়েছে৷ তখন অনেকেই বিশ্বাস করে গ্রাহক হয়েছে৷ তবে আইন করে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা করা যায়৷”
বাংলাদেশে ই-কমার্স তথা স্টার্টআপ কোম্পানি নিয়ে নীতি নির্ধারকদের ধারণা স্বচ্ছ নয়৷ তাই এই ধরনের বিপর্যয় ঘটছে বলে মনে করেন ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক৷ ফলে আইন ও নীতিমালা যা করা হচ্ছে তাও যথার্থ নয়৷ একটি স্টার্টআপ কোম্পানি শতকরা কত ভাগ দায় নিতে পারবে তার কোনো নীতি এখানে নেই৷ আর এই সুযোগ নিচ্ছে প্রতরকেরা৷ প্রতারিত গ্রাহকেরাও কোনো ক্ষতিপুরণ পান না৷ তিনি বলেন,"দণ্ডবিধিতে প্রতারতিদের অর্থ ফিরে পাওয়ার কোনোই সুযোগ নেই৷ আর মান্ডিলন্ডারিং মামলায় যিনি প্রতারিত তাকে চিহ্নিত করতে হবে যে কোন একাউন্টে তার কাছ থেকে নেয়া টাকা জমা আছে৷ কিন্তু টাকা আছে ৩০ লাখ৷ গ্রাহকদের পাওনা ৩০ কোটি৷”
এই ধরনের ঘটনায় দেওয়ানী মামলা করে টাকা পাওয়ার কোনো নজীর নেই৷ আর কোম্পানি দেউলিয়া ঘোষণা করে পাওনাদারদের তালিকা করে টাকা পাওয়া সম্ভব৷ কিন্তু সেখানেও একই কথা৷ টাকা তো থাকতে হবে?
তার মতে, এইসব কারণেই বাংলাদেশে শেষ পর্যন্ত প্রতারিতরা টাকা ফেরত পান না৷ আর ইভ্যালিসহ অন্যান্য প্রতারক প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রতারিতদের টাকা ফেরত পাওয়ার আশা দেখছেন না তিনি৷

ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক

This browser does not support the audio element.

খুরশিদ আলম

This browser does not support the audio element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ