1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রতারিত প্রবাসীরা কারাগারে, প্রতারকদের মুক্ত জীবন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ সেপ্টেম্বর ২০২০

দেশে ফেরত আসা ৮৩ জন প্রবাসীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বিদেশে বাংলাদেশের ‘ভাবমূর্তি’ ক্ষুন্ন করার অভিযোগে৷ তাদের ‘অপরাধ’ তারা প্রতারিত হয়ে প্রতিবাদ করেছেন৷ কিন্তু প্রতারক দালালদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷

ছবি: Mortuza Rashed

যে ৮৩ জনকে মঙ্গলবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে ৮১ জন ভিয়েতনাম ফেরত৷ আর দুই জন কাতার ফেরত৷ কারাগারে পাঠনোর আগে ১৪ দিন তাদের ঢাকার তুরাগের দিয়াবাড়ির কোয়ারান্টিন সেন্টারে রাখা হয়৷ ভিয়েতনাম থেকে আসা আরো ২৫ জনকে অবশ্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷ গত ১৮ আগস্ট একটি বিশেষ বিমানে করে ভিয়েতনাম থেকে ১০৬ জন বাংলাদেশে আসেন৷ এরপরই তাদের কোয়ারান্টিনে নেয়া হয়৷

প্রবাস ফেরত ৮৩ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো মামলা হয়নি, ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে৷ তবে তাদের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে তুরাগ থানায়৷ তাতে বলা হয়েছে, এই প্রবাসীরা বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিদেশের কারাগারে আটক ছিলেন৷ তারা সেখানে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন

বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও তারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারেন৷ জিডিতে আরো অভিযোগ করা হয়েছে যে, তারা দেশে আসার পর কোয়ারান্টিন সেন্টারে বসে গ্রুপ ভিত্তিক রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড, ধ্বংসাত্মক কাজ ও কর্মসূচির পরিকল্পনা করছিল৷ তাদের ছেড়ে দেয়া হলে বা জামিন পেলে তারা পলাতক হয়ে দেশের মধ্যে ডাকাতি, দস্যুতা, খুন, পারিবারিক সহিংসতা ও জঙ্গি নাশকতামূলক অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে৷

অবশ্য এইসব অভিযোগের ব্যাপারে যে ২৫ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়নি তাদের একজন রাজু আহমেদ জানান, ‘‘ভিয়েতনামে আমাদের কেউই কোনো অপরাধে যুক্ত ছিলাম না৷ কারাগারেও ছিলাম না৷ আমাদের অপরাধ, আমরা প্রতারিত হয়ে ভিয়েতনামে বাংলাদেশি দূতাবাসে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলাম৷ আমাদের মধ্যে কেউ কেউ দূতাবাসের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেয়৷ কেউ কেউ জোরালো প্রতিবাদ জানায়৷ আমাদের মধ্য থেকে বছাই করে ৮১ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷ আর কোয়ারান্টিন সেন্টারে বসে আমরা কখন ছাড়া পেয়ে বাড়ি যাব তার জন্য ব্যাকুল ছিলাম৷ আমরা সরকারবিরোধী কাজের পরিকল্পনা করলাম কখন!’’

জেলে পাঠানোর খবর শুনে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন: ফায়েজা বেগম

This browser does not support the audio element.

তিনি অভিযোগ করেন, সাত মাস আগে দালালকে সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়ে ভিয়েতনাম যান৷ তাদের বিএমইটি কার্ডও ছিলো৷ তারপরও কোনো চাকরি বা কাজ তারা পাননি৷ উপরন্তু তাদের ছোট ছোট কক্ষে এক সঙ্গে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে৷ খাবার দেয়া হয়নি৷ সেই বাংলাদেশি দালালরা এখনো ভিয়েতনামে আছে৷ দূতাবাস তাদের চেনে৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রতারক দালালদের গ্রেপ্তার না করে নিরীহ প্রবাসীরা দেশে ফেরার পর তাদের জেলে পাঠানো হলো৷ এর চেয়ে অবিচার আর কি হতে পারে!’’

যাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাদের একজন ইসমাইল হোসেন৷ তার স্ত্রী ফায়েজা বেগম বলেন, ‘‘আমাদের টাকা গেল, আমার স্বামী জেলেও গেল৷ কোয়ারান্টিন শেষে তার ১ তারিখ (১ সেপ্টেম্বর) বাড়ি আসার কথা ছিলো৷ কিন্তু জেলে পাঠানোর খবর শুনে আমরা শ্বশুর শ্বাশুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷’’

তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, ‘‘আমার স্বামী দেশে ভালোই ছিলেন ৷ সাত মাস আগে দালালের প্রলোভনে সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে যান৷ সেখানে কোনো কাজ পাননি৷ তাকে কাজ না দিয়ে যে নির্যাতন করা হয়েছে তার ভিডিও আগেই আমাকে পাঠিয়েছেন৷ এই সাত মাস দুইটি সন্তান নিয়ে আমি বড় কষ্টে ছিলাম৷ এখন স্বামীকে জেলে পাঠানো হলো৷ কার কাছে এর বিচার আমি পাবো? আমার স্বামীকে কীভাবে ছাড়িয়ে আনব?’’

প্রবাসীদের বিরুদ্ধে জিডিটি করেছেন তুরাগ থানার সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) মো. আনোয়ারুল ইসলাম ১ আগস্ট৷ তিনিই জিডিটির তদন্ত করছেন৷ তিনি জিডিতি দাবি করেন, ‘‘এই প্রবাসীরা দিয়াবাড়ি কোয়ারান্টিন সেন্টারে বসে রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী কাজের পরিকল্পনা করছিল বলে সন্দেহ হয়েছে৷ গোপন সূত্রে আমি এই তথ্য পাই৷ তাই তাদের গ্রেপ্তার করে ৫৪ ধারায় কারাগারে পাঠিয়েছি৷’’ তারা কী ধরনের পরিকল্পনা করছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সেটা তদন্তে জানা যাবে৷ এখন আর কানো তথ্য আমার কাছে নাই৷’’

গোপন সূত্রে আমি এই তথ্য পাই: এসআই মো. আনোয়ারুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

তুরাগ থানার ওসি( তদন্ত) মো. শফিউল্লাহকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘‘৫৪ ধারায় আটক করা হয়েছে এইটুকু আমি জানি৷ এর বাইরে আমার কিছু জানা নাই৷ সব কিছু জানেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা(এসআই মো. আনোয়ারুল ইসলাম)৷’’

মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্র(আসক) এই প্রবাসীদের আইনগত সহায়তা দিচ্ছে৷ আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবীর জনান, তারা মঙ্গলবারই তাদের জামিন আবেদনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন৷ কিন্তু তাদের আদালতে হাজির না করে সরাসরি কারাগারে পাঠানো হয়৷ দুই-এক দিনের মধ্যেই জামিনের আবেদন করা হবে৷ তিনি জানান, ‘‘এই ৮৩ জনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে ঠিক একই অভিযোগে এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ২১৯ জন প্রবাসীকে কারাগারে পাঠানো হয়৷ এবার শুধু নামের বদল হয়েছে৷ আর সব অভিযোগ একই৷ কোনো পরিবর্তন নাই৷’’

গত জুলাই মাসেও কুয়েত থেকে ১৪১, কাতার থেকে ৩৯ এবং বাহরাইন থেকে ৩৯ জনসহ মোট ২১৯ জন প্রবাসী দেশে ফেরত আসেন ৷ তাদের বিভিন্ন অপরাধের সাজা মওকুফ করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়৷ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ তাদের সাজা মওকুফ করলেও বাংলাদেশের পুলিশ তাদের জেলে পাঠায়৷

আর এই সব বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বা সচিব কাউকেই পাওয়া যায়নি৷ তবে দায়িত্বশীল কয়েকটি জায়গায় কথা বলে জানাগেছে, ভিয়েতনামে বাংলাদেশি দূতাবাসের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ করার কারণেই প্রবাসীদের এই পরিণতি বরণ করতে হয়েছে৷ এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছু প্রবাসীর বিরুদ্ধে ভিয়েতনাম দূতাবাস দখল চেষ্টার অভিযোগও করেছিলেন৷

১০ জুলাইয়ের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ