জাতিসংঘের রিপোর্টে উঠে এলো ভয়াবহ ছবি। গত বছর অর্ধেকের বেশি নারীকে খুন করেছেন তার সঙ্গী বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা।
বিশ্বে অর্ধেকের বেশি নারী খুন হন সঙ্গী বা পরিবারের মানুষের হাতে। ছবি: JULIEN DE ROSA/AFP
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে, ২০২১ সালে ৪৫ হাজার নারী খুন হয়েছিলেন তাদের সঙ্গী বা পরিবারের মানুষের হাতে। জাতিসংঘের অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম এবং ইউএন উইমেন জানিয়েছে, প্রতি ঘণ্টায় পাঁচজনের বেশি নারী পরিবারের কোনো সদস্যের হাতে খুন হচ্ছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাস্তবে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি হতে পারে।
ঘর নিরাপদ নয়
জাতিসংঘের মতে, গতবছর বিশ্বজুড়ে ৮১ হাজার নারী খুন হয়েছেন। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত বছর খুন হওয়া মেয়েদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ মারা গেছেন তাদের সঙ্গী বা পরিবারের মানুষদের হাতে। তাই বোঝা যাচ্ছে, নারীদের কাছে ঘর খুব নিরাপদ জায়গা নয়।
বাড়িতেই সবচেয়ে কম নিরাপদ নারীরা
জাতিসংঘের একটি গবেষণা জানিয়েছে, ২০১৭ সালে অর্ধেকেরও বেশি নারী খুন হন পরিবারের কোনো সদস্যের হাতেই৷ বর্তমানে নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক নিজেদের বাড়িই৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/S. Moraes
পরিবারেই বিপদ...
জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সংস্থা ‘ইউএনওডিসি’র একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, শুধুমাত্র ২০১৭ সালেই ৮৭ হাজার নারীকে হত্যা করা হয়েছে৷ এর ৫৮ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৫০ হাজার হত্যাই সংগঠিত হয়েছে মৃত নারীদের পরিবারের কোনো সদস্যের দ্বারা৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/N. Pisarenko
ঘরের শত্রু...
২০১৭ সালে মোট ৩০ হাজার নারী খুন হয়েছেন তাদের সঙ্গী বা ভালোবাসার মানুষের হাতে৷ জাতিসংঘের তথ্য থেকে জানা গেছে, প্রতি ঘন্টায় ছয়জন নারী নিজের পরিচিত মানুষের হাতে খুন হন৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
ক্ষমতার অসাম্য
শুধু নারী মৃত্যুর হার বা কারণই নয়, এই প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য৷ পরিবারের ভেতরে নারী সব সময় পুরুষের তুলনায় কম ক্ষমতার অধিকারী হবার কারণেই বেশি অত্যাচারিত হয়৷ এর কারণ হিসাবে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে লিঙ্গবৈষম্যকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. R. Caivano
সবচেয়ে বেশি যেখানে...
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নারীরা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয় অ্যামেরিকা ও আফ্রিকার দেশগুলিতে৷ পরিবারের সদস্যদের হাতে নারীদের নিহত হবার সংখ্যাও এই দুই মহাদেশে সর্বোচ্চ৷
ছবি: Imago/Agencia EFEE. Guzman
সবচেয়ে কম যেখানে...
প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে, ‘‘নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা রুখতে কঠোর আইন ও নীতি থাকা সত্ত্বেও তা পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না৷’’ তবুও ইউরোপের দেশগুলিতে তুলনামূলকভাবে এই প্রবণতা সবচেয়ে কম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/A. Pitton
সমস্যার মোকাবিলা
নারীর ক্ষমতায়নের ওপর জোর দিয়েছে এই প্রতিবেদন৷ পাশাপাশি, নারীর সাথে ঘটা অন্যায়ের প্রতিরোধে বিভিন্ন দেশের সরকারকে দ্রুত বিচার করতেও পরামর্শ দেয় এই রিপোর্ট৷
ছবি: UNFPA Nicaragua/Joaquín Zuñiga
পুরুষদের ভূমিকা
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে পরামর্শ হিসাবে বলা হয়েছে, উন্নত আইনব্যবস্থা, সামাজিক নীতি-বদল ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির কথা৷ এই সব ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফলাফল পেতে হলে পুরুষদেরও উদ্যোগী হতে হবে বলে প্রতিবেদনটি জানায়৷
ছবি: Imago/ZUMA Press
7 ছবি1 | 7
তবে বিশ্বজুড়ে যত মানুষ খুন হয়েছেন, তার মধ্যে ৮১ শতাংশ হলো পুরুষ। কিন্তু নারী ও মেয়েরা লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। আর ২০২১ সালে এশিয়ায় মেয়েরা সবচেয়ে বেশি খুন হয়েছেন। মোট ১৭ হাজার আটশ মেয়ে খুন হয়েছেন এশিয়ায়।
ব্যবস্থা কোথায়?
জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নারীদের হত্যা বন্ধের কাজে খুব বেশি প্রগতি হয়নি। ইউরোপে পরিবারের মানুষদের হাতে মেয়েদের হত্যার পরিমাণ গত শতকে ১৯ শতাংশ কমেছে। অ্যামেরিকায় কমেছে ছয় শতাংশ।
ভাইয়ের হাতে খুন হওয়া পাকিস্তানের সেই বিতর্কিত মডেল
পাকিস্তানে নিজের ভাইয়ের হাতে খুন হয়েছেন বিতর্কিত মডেল কন্যা কান্দিল বেলুচ৷ ‘অনার কিলিং’ এর শিকার এই নারী সেদেশের ইন্টারনেট জগতে আলোড়ন তুলেছিলেন খোলামেলা ছবি প্রকাশ করে৷
ছবি: Instagram/quandeel_baloch
ফেসবুকে ‘লজ্জাজনক’ ছবি দেয়ায় খুন!
পাকিস্তানের মুলতানে নিজ বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় মডেল কান্দিল বেলুচকে৷ তাঁর ভাই ওয়াসিম আজিম দাবি করেছে, ফেসবুকে ‘লজ্জাজনক’ ছবি প্রকাশ করায় পরিবারের সম্মান রক্ষার জন্য বোনকে খুন করেছেন তিনি৷
ছবি: Facebook/Qandeel Baloch via Reuters
ইন্টারনেটে আলোচিত কান্দিল বেলুচ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত ছিলেন কান্দিল বেলুচ৷ রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা এই মডেলের টুইটার অনুসারীর সংখ্যা পয়তাল্লিশ হাজারের বেশি এবং ফেসবুকে তা প্রায় আট লাখ৷
ছবি: Instagram/quandeel_baloch
পাকিস্তানের ‘কিম কার্দাশিয়ান’
বেলুচকে অনেকে তুলনা করতেন মার্কিন টিভি অভিনেত্রী কিম কার্দাশিয়ানের সঙ্গে৷ ছবি শেয়ার করার ওয়েবসাইট ইন্সটাগ্রামে কার্দাশিয়ানের মতো করে তোলা বেশ কিছু ছবি, ভিডিও শেয়ার করেছিলেন তিনি৷ ছবিগুলো বেশ খোলামেলা৷ এর আগে পাকিস্তানের কোনো মডেলকে এভাবে ছবি পোস্ট করতে দেখা যায়নি৷
ছবি: Instagram/quandeel_baloch
‘নগ্ন’ হওয়ার ঘোষণা
চলতি বছর টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালে পাকিস্তান ভারতকে হারালে নগ্ন হয়ে নাচবেন বলে ঘোষণা দিয়ে তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন বেলুচ৷ পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে হেরে যাওয়ায় নগ্ন না হতে পারার দুঃখে কাঁদার একটি ভিডিও প্রকাশ করেন ইউটিউবে৷ পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা এই মডেল৷
ছবি: Instagram/quandeel_baloch
ইসলামের ‘কলঙ্ক’
তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সকল পদ হারান পাকিস্তানের মুফতি আবদুল কাভি৷ পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতা এবং ধর্মগুরু হিসেবে পরিচিত কাভি-কে ইসলামের ‘কলঙ্ক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন বেলুচ, কেননা, তাঁর দাবি ছিল, টিভিতে ধর্মের কথা বললেও আড়ালে তাঁর সঙ্গে অনৈতিক কিছু করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কাভি৷
ইন্টারনেটে সাহসিকতার নানা নমুনা রাখলেও ক্রমাগত বিতর্কের মাঝেই এক পর্যায়ে নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় পড়ে যান কান্দিল বেলুচ৷ খুন হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে তাই পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকজনের কাছেই নিজের নিরাপত্তা দাবি করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/R.S. Hussain
শাস্তি হবে কি?
উল্লেখ্য, পাকিস্তানে প্রতিবছর গড়ে এক হাজারের মতো ‘অনার কিলিং’ এর ঘটনা ঘটে৷ এগুলোকে হত্যাকাণ্ড হিসেবেই বিবেচনা করে বিচারের ব্যবস্থা থাকলেও পাকিস্তানের আইনে পরিবার চাইলে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেয়ার সুযোগ রয়েছে৷ আর এই সুযোগ নিয়ে অনেক সময় হত্যাকারী পার পেয়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/S.S. Mirza
7 ছবি1 | 7
তবে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সাল উত্তর অ্যামেরিকার মেয়েদের ক্ষেত্রে একেবারেই ভালো বছর নয়। কোভিড লকডাউনের ফলে নারীদের উপর অত্যাচার বেড়েছে বলে জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, তাদের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় আফ্রিকা, এশিয়ায় ক্ষেত্রে এই ধরনের কথা তারা বলতে পারছে না।
জাতিসংঘের আবেদন, লিঙ্গভিত্তিক অপরাধ বন্ধ করার জন্য সব দেশ যেন ব্যবস্থা নেয়। তারা যেন লিঙ্গসাম্যের নীতি নিয়ে চলে। নারীর উপর অত্যাচার বন্ধ করার জন্য যেন প্রতিটি সরকার যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ খরচ করে।