২০১৪ সাল থেকে গড়ে প্রতিদিন একজন শরণার্থী শিশু মারা যাচ্ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ এঁদের বেশিরভাগের মৃত্যু ঘটছে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা আইওএম এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ রিও গ্রান্দে নদী পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার চেষ্টা করার সময় মেক্সিকান বাবা ও সন্তানের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বজুড়ে৷ এর কয়দিন পরই প্রকাশ হলো এই প্রতিবেদন৷
আইওএম-এর প্রতিবেদনটির শিরোনাম দেয়া হয়েছে- ফ্য়াটাল জার্নি৷ ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অন্তত ৩২ হাজার শরণার্থী নিহত হয়েছেন বা নিখোঁজ রয়েছেন৷ এর মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সির সংখ্যা ১,৬০০৷ এঁদের মধ্যে ৬ মাসের কম বয়সি শিশুও রয়েছে৷
গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, বাস্তব সংখ্যা প্রতিবেদনের চেয়েও বেশি হতে পারে৷ অনেকের মরদেহ কখনই শনাক্ত করা সম্বব হয়নি৷ শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা লিপিবদ্ধ করা আরও কঠিন, কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁদের বয়স নির্ধারণে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় না৷
ভয়াবহ ভূমধ্যসাগর
অভিবাসীদের সবচেয়ে ভয়ংকর যাত্রাপথ হিসেবে এরই মধ্যে চিহ্নিত হয়েছে ভূমধ্য়সাগর৷ ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে শুধু ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়েই প্রাণ হারিয়েছেন ১৭ হাজার নয়শ জনের বেশি মানুষ৷ এর মধ্য়ে ৬৭৮ জন শিশু৷
তবে নিহতদের ১২ হাজারের মরদেহ হয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি, অথবা পানি থেকে উদ্ধারই করা যায়নি৷
আফ্রিকায় যেতে গিয়ে মারা গেছে অন্তত ৩৩৭ শিশু৷ তবে এই অঞ্চলের সঠিক তথ্য সবসময় না পাওয়ার কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে৷ এদের মধ্য়ে ইউরোপ আসার লক্ষ্যে উত্তর আফ্রিকায় যেতে গিয়ে মারা গেছে ১৪৪ শিশু৷
বিশ্বে শরণার্থী কয়েক লক্ষ শিশু
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগ দিতে বা সংঘাত-সংঘর্য এড়াতেই শরণার্থী জীবন বেছে নিতে হয় শিশুদের৷ এছাড়া উন্নততর জীবন, ভালো জীবিকা এবং মৌলিক অধিকারের সন্ধানেও অনেকে দেশ ছাড়েন৷
২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে ইউনিসেফ জানিয়েছিল, বিশ্বজুড়ে তিন কোটি শিশু জন্মভূমি ছেড়ে অন্য দেশে বসবাস করছে৷ এর মধ্য়ে প্রায় সোয়া এক কোটি শিশু শরণার্থী এবং আরো ১০ লাখ শিশু অভিবাসনপ্রত্যাশী৷
‘এতিম’ শিশু শরণার্থীরা ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার
ইউরোপে আশ্রয় মিলছে শরণার্থীদের৷ খারাপ খবরও আসছে তাদের নিয়ে৷ সপ্তাহে একটি দেশেই অন্তত ৭০০ এমন শিশু আসছে যাদের বাবা-মা সঙ্গে নেই৷ ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অনেকেই৷ গ্রিসে শুরু হয়েছে শরণার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Djurica
বছরে ৫ লাখ শরণার্থী নেবে জার্মানি
কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী নিরাপদ এবং উন্নত জীবনের আশা নিয়ে প্রবেশ করেছে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ায়৷ জার্মানির ডেপুটি চ্যান্সেলর সিগমার গাব্রিয়েল জানিয়েছেন, আগামী কয়েক বছর জার্মানি বছরে ৫ লক্ষ করে অভিবাসনপ্রত্যাশী নিতে পারবে৷ তিনি আরো জানান, এত শরণার্থী নিলেও সরকার জনগণের ওপর বাড়তি করারোপ করবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
বাড়িতে শরণার্থী রাখতে আগ্রহী ব্রিটিশরা, সরকারের ওপর বাড়ছে চাপ
শিশু আয়লানের লাশের ছবি নিয়ে আলোড়নের পর বছরে ২০ হাজার শরণার্থী নিতে রাজি হয়েছে ব্রিটেন৷ তবে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের এই ঘোষণায় ব্রিটিশরাই সন্তুষ্ট নয়৷ এখনো অনেক ব্রিটিশ ইন্টারনেটে নিজের বাড়িতে শরণার্থী রাখার আগ্রহ প্রকাশ করে সরকারের প্রতি আরো উদার হবার আহ্বান জানাচ্ছেন৷ প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টিও একই দাবি তুলেছে৷ ব্রিটেন আরো বেশি শরণার্থী নেবে কিনা এ নিয়ে আলোচনা হবে সংসদে৷
ছবি: Reuters/T. Melville
গ্রিসে শরণার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ, শঙ্কিত ইইউ সভাপতি
শরণার্থী আর পুলিশের মধ্যে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়েছে গ্রিসের লেসবস দ্বীপে৷ আড়াই হাজারের মতো অভিবাসনপ্রত্যাশী এথেন্সে যাওয়ার জন্য জোর করে জাহাজে উঠতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়৷ তারপরই শুরু হয় সংঘর্ষ৷ এদিকে তুরস্কের কাছাকাছি দেশ হওয়ায় গ্রিসে সিরীয় শরণার্থীর ঢল অব্যাহত রয়েছে৷ ইইউ সভাপতি ডোনাল্ড টাস্ক এ নিয়ে শঙ্কিত৷ তিনি মনে করেন, সিরিয়া থেকে অবাধে লোক আসার এই ধারা আগামী কয়েক বছর ধরে চলতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AA/A. Mehmet
সুইডেনে ‘এতিম’ শিশু শরণার্থী
তাদের বাবা-মা বেঁচে আছে কিনা, বেঁচে থাকলে কোথায় আছে- শিশুরা তা বলতে পারেনা৷ প্রাণ বাঁচাতে একা একাই দেশ ছেড়ে তারা চলে এসেছে ইউরোপে৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে শুধু সুইডেনেই ৭০০-র মতো এমন শিশু আসছে৷ ওপরের ছবিটি হাঙ্গেরির৷
ছবি: Reuters/L. Balogh
পথে পথে শিশুনির্যাতন
শুধু সিরিয়া নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ, এমনকি আফ্রিকা অঞ্চল থেকেও আসছে শিশু শরণার্থী৷ ডেনমার্কের ওরেসুন্ড ব্রিজ হয়ে তারা ঢুকে পড়ছে সুইডেনে৷ শিশুদের অনেকেই আহত, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনে বিপর্যস্ত৷ চলন্ত ট্রাক থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে আহত হচ্ছে অনেকে৷ অনেকে আবার ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার৷ মানবপাচারকারীরাই করছে ধর্ষণ, নির্যাতন৷