1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘হাসপাতালের পাশে হাত-পায়ের স্তূপ’

হোসাইন আব্দুল হাই১২ ডিসেম্বর ২০১২

রোকনের মতো অসংখ্য সন্তান তাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে দেশ স্বাধীন করেছেন৷ অথচ সেই পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা রোকনকে সন্ত্রাসীরা খুন করে বলে প্রিয় মাতৃভূমির বর্তমান অবস্থা নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন মুক্তিযোদ্ধা কাওসার বেগম৷

Historisches Bangladesch Hospital mit alten Rettungswagen während der Freiheitskämpfe von Bangladesch, 1971; Copyright: Dr. Sitara Rahman
ছবি: Dr. Sitara Rahman

‘‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল৷ তার নাম রোকন৷ বাপ-মায়ের একমাত্র ছেলে ছিল সে৷ যুদ্ধ করতে গিয়ে তার পায়ে গুলি লাগে এবং সঠিক চিকিৎসা না হওয়ার কারণে তাঁবুতে থাকতে থাকতে পায়ে গ্যাংগ্রিন হয়ে গিয়েছিল৷ পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়৷ কিন্তু তখন তার পা কেটে ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না৷ কিন্তু সে এটা শুনে খুব হাউমাউ করে কাঁদছিল যে, আমার পা-টা বাঁচান৷ তখন আমাদের উপর দায়িত্ব পড়ল যে, যেভাবেই হোক তাকে বুঝিয়ে রাজি করাতে হবে পা কেটে ফেলার জন্য৷ তাকে তখন আমরা দীর্ঘসময় ধরে বুঝালাম যে, এই পা না কাটলে তোমার সারা শরীরে ধীরে ধীরে পচন ধরবে৷ হাসপাতালের অন্যান্য বিছানায় থাকা আরো অনেক আহত মুক্তিযোদ্ধা ছেলেটির অবস্থা দেখছিল৷ অথচ তাদেরও অনেকের হাত নেই কিংবা পা নেই এমন অবস্থা ছিল৷ শেষ পর্যন্ত তারা এসে ছেলেটিকে বুঝালো যে, ‘রোকন, দেখো, আমাদের কারো হাত নেই, পা নেই৷ যুদ্ধে গিয়ে আমরা ঐ পশ্চিমা হায়েনাদের মুখে ছুঁড়ে দিয়েছি৷ তাতে কি আমাদের কোন ক্ষতি হয়েছে? আমরা সবকিছু দিয়ে হলেও আমাদের দেশ রক্ষা করবো এবং যদি বেঁচে থাকি এক হাতেই আবার যুদ্ধ করবো৷ তুমি এই এক পায়ের জন্য এতোটা কান্নাকাটি করছো৷ তা না করে তুমি বরং শত্রুদের মুখে তোমার এই পা ছুঁড়ে দাও৷ দেখবে তোমার আবার শক্তি হবে৷ আরেক পা নিয়েই তুমি আবার যুদ্ধ করতে পারবে৷' তাদের এমন উদ্দীপনাময় কথায় রোকন বেশ শক্ত হলো এবং পরের দিন তার পাটি কেটে ফেলা হয়৷ এছাড়া আমরা প্রায় দিনই সকাল বেলা দেখতাম যে, বালতিতে করে এরকম অনেক হাত-পা এক জায়গায় ফেলা হতো৷ এগুলো দেখে কোন কোন মেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতো৷ এভাবে বাংলার সাহসী ছেলেরা তাদের সবকিছু দিয়ে নিজেদের দেশ স্বাধীন করেছে৷'' ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হৃদয় বিদারক ঘটনার কথা জানালেন বীর সাহসী নারী মুক্তিযোদ্ধা কাওসার বেগম৷

Week 50/ 12 Women 1: Kawser Begum (Part 2) - MP3-Mono

This browser does not support the audio element.

ভারতে গিয়ে সূর্যমনি শরণার্থী শিবিরে ওঠেন কাওসার বেগম৷ সেখানে প্রথমে অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ নেন৷ কিন্তু আহত মুক্তিযোদ্ধাদের করুণ অবস্থা দেখে তিনি পরে তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়াটাকেই অধিকতর ভালো মনে করেন৷ তাই পরে সেবিকা হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে জেবি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার কাজে যোগ দেন৷ দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত সেবিকা হিসেবে আহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন কাওসার বেগম এবং তাঁর বোন সালেহা বেগম৷

স্বাধীন দেশে ফিরে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন৷ এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন কাওসার বেগম৷ ১৯৮১ সালে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পরিদর্শক পদে যোগ দেন৷ দীর্ঘ আঠাশ বছর কোন পদোন্নতি ছাড়াই চাকুরি করে গেছেন তিনি৷ অবসরে যাওয়ার মাত্র বছর খানেক আগে শুধুমাত্র সুপারেনটেন্ডেন্ট হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি৷ চলতি বছরের শুরুর দিকে এলপিআর এ গেছেন৷

তবে তাঁর বড় আক্ষেপ হলো, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি যথার্থ মর্যাদা পাননি এবং উপযুক্ত পদোন্নতি পাননি৷ এছাড়া সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সসীমা দু'বছর বাড়ালেও কিছুদিন পর আবারও সবার ক্ষেত্রেই বয়সসীমা দু'বছর বাড়িয়ে দেওয়া হয়৷ সরকারের এমন সিদ্ধান্তের ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের চাকুরির বয়সসীমা দু'বছর বাড়ানোটা একেবারে অর্থহীন হয়ে যায় এবং এর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান এবং অপদস্থ করা হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কাওসার বেগম৷ পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সাথে জড়িয়ে রয়েছেন তিনি৷ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, মহিলা সমিতি এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এই বীর সাহসী নারী মুক্তিযোদ্ধা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ