শারীরিক প্রতিবন্ধী বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ তৈরি করেছেন রোবটচালিত পা যা পরিচালনা করা যাবে মস্তিষ্কের তরঙ্গের মাধ্যমে৷ বিজ্ঞানীদের এই উদ্ভাবন ইতোমধ্যে সাড়া জাগিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
হুইলচেয়ার ছাড়া তাদের জীবন এতকাল প্রায় অচল ছিল৷ তবে মিগুয়েল নিকোলেলিসের এক প্রকল্প পরিস্থিতি বদলে দিচ্ছে৷ প্রকল্পের নাম ‘ওয়াক এগেইন' বা ‘আবারো হাঁটা'৷ এমনকি বিশ্বকাপের উদ্ভোধনীতে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল এই প্রকল্প৷ রোবটচালিত নকল পা ব্যবহার করে বলে শট নিয়েছিলেন এক পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তি৷
এই রোবট পা প্রতিবন্ধীদের আবারো হাঁটতে সহায়তা করছে৷ আর এটি পরিচালিত হয় মস্তিষ্ক থেকে পাওয়া তরঙ্গের ভিত্তিতে৷ নকল পায়ের নাম: বিআরএ সান্তোস ডুমমোন্ড ১৷
চালকবিহীন গাড়ি
গুগল সহ কয়েকটি কোম্পানি স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি নিয়ে গবেষণা করছে৷ ফলে সামনের দিনগুলোতে রাস্তায় হয়ত চালকবিহীন গাড়ি দেখা যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্বনিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রিক গাড়ি
গুগলের ‘সেলফ-ড্রাইভিং কার প্রজেক্ট’-এর পরিচালক ক্রিস উর্মসন গুগল ব্লগে জানিয়েছেন, কয়েক বছরের মধ্যে স্বনিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রিক গাড়ি নামানোর পরিকল্পনা করছে তারা৷
ছবি: Getty Images
গবেষণা চলছে
অনেকদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে নিজেদের সদর দফতরে পরীক্ষামূলকভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালিয়ে আসছে গুগল৷ তবে গাড়ি নিজে চললেও এখনো সবসময় একজন ড্রাইভার পাশে থাকছেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
দুর্ঘটনা এড়ানো
সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত গাড়ির স্তূপ এটি৷ চোখে স্পষ্ট দেখতে ব্যর্থ হওয়া সহ নানা কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷ তবে গুগল আশা করছে বুদ্ধিমান রোবট দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেন্সরযুক্ত গাড়ি
গুগল-এর স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে অনেক ধরনের সেন্সর থাকবে৷ যেমন এই লেজার সেন্সরটি রাস্তার ত্রিমাত্রিক ছবি তুলবে৷
ছবি: DW/Fabian Schmidt
জার্মান প্রযুক্তি
একটু আগে গুগল-এর যে লেজার সেন্সরের কথা বলা হলো, সেটা জার্মানির বুন্ডেসভেয়ার ইউনিভার্সিটিও তাদের স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে ব্যবহার করছে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, লেজার সেন্সর যে ত্রিমাত্রিক ছবি তুলেছে সেটা গাড়িতে থাকা কম্পিউটারে পাঠিয়ে দিয়েছে৷
ছবি: Universität der Bundeswehr/TAS
৬ডি-ভিশন
ছবির এই বস্তুটি একটি ক্যামেরা৷ গাড়ির উইন্ডশিল্ডের পেছনে লাগানো আছে এটি৷ রাস্তায় যা কিছু ঘটে তার ছবি তোলে এই ক্যামেরা৷ ডাইমলারের একদল গবেষকের ‘৬ডি-ভিশন’ প্রকল্পের আওতায় উদ্ভাবিত এই ক্যামেরা ২০১১ সালে ‘জার্মান ফিউচার অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছিল৷ এর কাজ সম্পর্কে জানা যাবে পরের ছবিতে৷
ছবি: Deutscher Zukunftspreis/Ansgar Pudenz
আলোর খেলা
আগের ছবিতে যে ক্যামেরাটি দেখা গেছে সেটির তোলো ছবিগুলো গাড়ির কম্পিউটারে চলে যায়৷ এই ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে সামনে কোনো ঝুঁকি আছে কিনা – তা বুঝতে পারেন চালক৷ এই ছবিতে পথচারীকে কমলা রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ আর সবুজ চিহ্নটি চলমান একটি গাড়ির৷ অর্থাৎ কোনো বিপদ নেই৷ এভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালক ছাড়াই সামনে চলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷
ছবি: Deutscher Zukunftspreis/Ansgar Pudenz
কম্পিউটার নাকি মানুষ?
রোবট চালিত গাড়ি যদি দুর্ঘটনায় পড়ে তাহলে তার জন্য কাকে দায়ী করা হবে? এর নির্মাতা, নাকি সফটওয়্যার প্রোগ্রামারকে৷ নাকি গাড়ির মালিককে? রাজনীতিবিদ ও আইনজীবীদের ভবিষ্যতে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে৷
ছবি: DW/Fabian Schmidt
অন্য কাজে
যুদ্ধের সময় পণ্য পরিবহণ কাজে কোনো চালককে কাজে না লাগিয়ে কিংবা পরমাণু দুর্ঘটনার পর সেই বিষাক্ত অঞ্চলে কোনো মানুষকে না পাঠিয়ে সেখানে স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি পাঠানো যেতে পারে৷
ছবি: DW/Fabian Schmidt
9 ছবি1 | 9
এমন পা তৈরিতে সতের মাস কাজ করেছেন বিজ্ঞানীরা৷ তবে গবেষণা শুরু হয়েছিল বহু আগে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষকরা একত্রে কাজ করেছেন৷ ‘ওয়াক এগেইন' প্রকল্পের মিগুয়েল নিকোলেলিস এই বিষয়ে বলেন, ‘‘এটা এক সম্মিলিত উদ্যোগ৷ গত ৩০ বছর প্রাণীদের দিয়ে এ বিষয়ে গবেষণা করা হয়েছে৷ সেই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান আমরা গত চার বছর ক্লিনিক্যাল টেস্টে কাজে লাগিয়েছি৷ আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষকদের সঙ্গে কাজ করেছি: জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, ব্রাজিল...মোট ২৫টি দেশ৷''
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা ব্যবহারকারীর মাথায় থাকা ক্যাপের মাধ্যমে মস্তিষ্কের তরঙ্গ রোবট চালিত নকল পায়ে পৌঁছায়৷ ইলেকট্রিক সিগন্যাল এভাবে চার্ট তৈরি করে৷ প্রক্রিয়াটি জটিল৷
নিকোলেলিস বলেন, ‘‘নকল পায়ের উপরের অংশে রয়েছে ককপিট৷ আর রোগীর মাথায় থাকা ক্যাপ মস্তিষ্কের কার্যকলাপের দিকে নজর রাখে৷ মস্তিষ্ক মোটর সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এমপ্লিফায়ারে লিপিবদ্ধ হয়৷ আর সিগন্যাল শনাক্ত করা গেলে নকল পায়ের সঙ্গে যুক্ত কম্পিউটার সেটি পর্যালোচনা করে এবং ব্যবহারকারীর ইচ্ছা বোঝার চেষ্টা করে৷
তিনি বলেন, ‘‘উদাহরণস্বরুপ হাঁটা কিংবা শ্যুটের কথা বলা যায়৷ রোগীর সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে রোবটটি নিতম্ব, হাঁটু এবং পায়ের গতিবিধি নির্ধারণ করে৷ নকল পায়ের বিভিন্ন অংশ সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নেয়, ঠিক যেমনটা ব্যবহারকারী চান৷''
তবে নিরাপদে হাঁটতে হলে ব্যবহারকারীকে মাটির স্পর্শও অনুভব করতে হবে৷ বিজ্ঞানীরাও বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছেন৷ এজন্য তারা কৃত্রিম চামড়া তৈরি করেছেন৷ এই চামড়ায় বিশেষ সেন্সর বসানো রয়েছে যা চাপ, তাপমাত্রা এবং গতি শনাক্তে সক্ষম৷ রোবটচালিত কৃত্রিম পায়ের তলায় তা যুক্ত আছে৷
মনে হতে পারে হলিউড সিনেমা থেকে বোধহয় এমন প্রকল্পের উদ্ভব৷ বিজ্ঞান আর ব্রাজিলের জন্য এটি আরেক সম্ভাবনা৷