1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাবা-মা যখন প্রতিবন্ধী...

আনা পেটার্স/আরবি২৪ মে ২০১৪

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও অনেকে নিজস্ব পরিবার গড়ে তুলতে আগ্রহী৷ নানা রকম অসুবিধা কাটিয়েও উঠতে পারেন তাঁরা৷ তবে প্রতিবন্ধী মা-বাবার চাহিদা পূরণে রাষ্ট্র যে খুব সফল তা বলা যায় না৷ আঙ্কে কুরৎসমান এমনই এক প্রতিবন্ধী মা৷

ছবি: picture-alliance/dpa

এমন একটা সময় তাঁর কেটেছে, যখন সবকিছুই আবর্তিত হতো অসুখকে ঘিরে৷ ব্যতিব্যস্ত থাকতে হতো ডাক্তার, ক্লিনিক ও অসুস্থতা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে৷ আর যে সব মানুষের সংস্পর্শে আসতেন তিনি, তাঁরাও ছিলেন ‘মাল্টিপল এসক্লেরোসিস'-এ আক্রান্ত রোগী৷ অবস্থাটা ছিল অনেকটা কানাগলিতে ঘোরার মতো৷

এক ঘটনা সব কিছু পালটে দেয়

২০-এর কোঠায় এসেই অবসর নিতে হয়েছে তাঁকে৷ কিন্তু হঠাৎ এক ঘটনা সব কিছু ওলট পালট করে দেয়৷ সন্তানসম্ভবা হন আঙ্কে কুর্তসমান৷ এক সুস্থ পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তিনি৷ নাম রাখেন আর্ট্যুর৷ ‘‘অবশেষে স্বাভাবিক মানুষজনের সংস্পর্শে আসি আমি৷ কথাবার্তা শুধু অসুখবিসুখ নিয়ে নয় বরং বাচ্চাকে ঘিরে হতে থাকে৷''

আর্ট্যুরের বয়স এখন ১৩৷ দ্বিতীয় ছেলে ব্রুনোর ৬৷ বেঁচে থাকাটা এখন আর অর্থহীন নয় এই মায়ের কাছে৷

হুইলচেয়ারে বসা মানেই অন্যের উপর নির্ভর করাছবি: picture-alliance/dpa

সিঙ্গেল মা৷ তাও আবার হুইল চেয়ারে আবদ্ধ৷ আজ ৪০ বছর বয়সে এসেও দৈনন্দিন জীবনের নানা বাধাবিঘ্ন পার করতে হয় তাঁকে৷ যেমন শিশু চিকিত্সকের কাছে যেতে হলে৷ ডাক্তারের চেম্বার দোতলায়, কোনো লিফট নেই৷ ‘‘প্রথম দিকে স্বাস্থ্যবিমার পক্ষ থেকে সাহায্য পাওয়া গিয়েছিল৷ এক সাহায্যকারী আমাকে বহন করে ওপরে নিয়ে যেতেন'', বলেন আঙ্কে৷ তবে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সংস্কারের ফলে এইসব বিশেষ সাহায্য বাতিল হয়ে যায়৷ এরপর থেকে ডাক্তারের কাছে যেতে হলে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনকে অনুরোধ করতে হয়৷

সব কাজ একা সামলানো সম্ভব নয়

বাচ্চারা যতদিন ছোট ছিল, ততদিন যুবদপ্তর থেকে সাহায্য পাওয়া যেত৷ দপ্তর থেকে এক কর্মী নিয়মিত আর্ট্যুরকে স্কুলে নিয়ে যেতেন৷ এতে করে ছোট ছেলেকে দেখাশোনা করতে সুবিধা হতো৷ আঙ্কের কথায়, ‘‘সব কিছু একা করতে হলে মধ্যরাত দুইটার সময় বিছানা ছেড়ে উঠতে হতো আমাকে৷''

ক্যার্স্টিন ব্লোখব্যার্গারও শারীরিক দিক দিয়ে প্রতিবন্ধী৷ সন্তানের মা৷ ১৫ বছর ধরে প্রতিবন্ধী মা-বাবার ফেডারেল সোসাইটিতে সক্রিয় তিনি৷ এটা এক ধরনের ‘সেল্ফ হেল্প গ্রুপ'৷ প্রতিবন্ধী মা-বাবার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করাই হলো এই সমিতির লক্ষ্য৷ ‘‘আমাদের প্রজন্ম যে ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে, পরবর্তী প্রজন্ম যেন তার হাত থেকে রক্ষা পায়, সেব্যাপারে লক্ষ্য রাখাই আমাদের উদ্দেশ্য'', বলেন ক্যার্স্টিন৷

প্রতিবন্ধীদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদছবি: picture-alliance/dpa

একটি ঘটনার কথা মনে হলে আঙ্কে কুরৎসমান এখনও রাগ সামলাতে পারেন না৷ দ্বিতীয় ছেলের জন্মের সময় প্রসব সাহায্যের ব্যাপারে আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এক কর্মী ঐ সন্তানের জন্মের পর লাইগেশন বা বন্ধ্যাকরণের পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁকে৷ ‘‘এতেই বোঝা যায় সমাজে প্রতিবন্ধী মা-বাবার ইন্টিগ্রেশন এখনও সফল হয়নি'', জানান আঙ্কে৷

ক্যার্স্টিন ব্লখব্যার্গার বলেন, ‘‘অনেক সময় এও শোনা যায়, ‘তাঁরা তো আগেই জানতেন যে, সন্তান হলে সাহায্যের প্রয়োজন হবে৷ তাহলে কেন তাঁরা গর্ভবতী হলেন৷' এটা তো রীতিমত মানবাধিকার লঙ্ঘন৷''

কোনো দপ্তরেই যেতে চান না অনেকে

এই ধরনের আচরণে অনেক প্রতিবন্ধী মা-বাবা এমন আঘাত পান যে সাহায্যের জন্য কোনো দপ্তরেই যেতে চান না তাঁরা৷ এমনকি সন্তানদের দত্তক দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয় কোনো কোনো জায়গা থেকে৷ জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী অধিকার কনভেনশন অনুযায়ী প্রতিবন্ধী মানুষদেরও নিজস্ব পরিবার গড়ে তোলা ও সন্তান লালনপালনের অধিকার রয়েছে৷ এই নীতিমালা ২০০৮ সাল থেকে কার্যকর৷ জার্মানির ক্ষেত্রেও এই আইন প্রযোজ্য৷ কিন্তু জার্মানিতে আইনটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হোঁচট খাচ্ছে বলেই যেন মনে হয়৷

প্রতিবন্ধী মা-বাবাদের সমস্যাগুলিকে অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্ব দেওয়া হয় না৷ বহু দালানে হুইল চেয়ার ঢোকে না৷ অন্ধদের জন্য বিশেষ সাহায্য পাওয়া যায় না৷ বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য দোভাষীর ব্যবস্থা থাকে না ইত্যাদি ইত্যাদি৷

প্রতিবন্ধী মা-বাবার সংখ্যা বেড়েছে

আগে প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের অল্পবয়সেই ‘লাইগেশন' করে দেওয়া হতো৷ ১৯৯২ সাল থেকে আইন করে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বন্ধাকরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ তারপর থেকে প্রতিবন্ধী মা-বাবার সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে৷

জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী কনভেনশন অনুযায়ী রাষ্ট্র ভুক্তভোগীদের এমনভাবে সাহায্য করবে, যাতে তাঁরা নিজেরাই সন্তান লালন পালন করতে পারেন৷ ‘‘প্রতিবন্ধী মা-বাবা সন্তান লালন পালনের ক্ষেত্রে যাতে সাহায্যকারী পান সেটা আইন করে নিশ্চিত করতে হবে৷'' এই দাবি ক্যার্স্টিন ব্লখব্যার্গারের৷

আঙ্কে কুরৎসমান তাঁর ছেলেদের নিয়ে একাই দৈনন্দিন কাজকর্ম সামলান৷ মাঝে মাঝে অবশ্য বুঝে উঠতে পারেন না, আর্ট্যুর ও ব্রুনোকে গৃহস্থালীর কাজে কতটা সম্পৃক্ত করবেন৷ তিনি বলেন, আমি সন্তানদের এই ধারণা দিতে চাই না যে, ওদের সাহায্যের ওপর আমি নির্ভরশীল৷ আর দশটা বাচ্চার মতোই যেন তারা বেড়ে ওঠে৷ এই আমার আশা৷ ‘‘শৈশবকালকে উপভোগ করার অধিকার থাকতে হবে শিশুদের'', বলেন এই মা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ